ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে হিন্দুরা সংখ্যালঘুতে পরিণত হওয়ার বিপত্তি । যদি কোন কারণে চীন-ভারত যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়,তাহলে সাথে সাথে পাকিস্তান ভারতকে আক্রমণ করতে পারে এবং পর্বতসঙ্কুল এলাকায়, ভারতকে দেশদু’টির বিরুদ্ধে একসঙ্গে বিভিন্ন ফ্রন্টে যুদ্ধ করতে হতে পারে।
সেক্ষেত্রে যুদ্ধ সম্প্রসারিত হয়ে যাবে বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরে। ভারত তখন চেষ্টা করবে মালাক্কা প্রণালীতে চীনের বানিজ্যিক লাইন কেটে দিতে; আর আরব সাগরে পাকিস্তানের করাচি ও গোয়াদার বন্দর টার্গেট করে বম্বিং করতে হবে।
জহরলাল নেহেরু বঙ্গোপসাগরের কোকো দ্বীপ বার্মাকে উপহার দিয়েছিলেন। এর কিছুদিন পরে বার্মায় সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে। নেহেরু বার্মার সামরিক সরকারকে স্বীকৃতি না দেওয়ায়, বার্মার সামরিক জান্তা ক্ষুব্ধ হয়ে,সেই কোকো দ্বীপ চীনের কাছে ইজারা দেয়। সেখানে চীন গড়ে তুলেছে বিশাল নৌঘাঁটি। চীন কোকো দ্বীপের নৌঘাঁটি থেকে, ভারতের পূর্ব-উপকূলবর্তী চেন্নাই, বিশাখাপত্তনম, কলকাতা প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর ও মহানগরীর উপর তীক্ষ্ণ নজরদারি করছে।
ভারত-আমেরিকা স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ সম্পর্কিত একটি সেমিনারে প্রদত্ত বক্তব্যে ভারতের চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়াত বলেছেন, “লাদাখে চলমান চীন-ভারত উত্তেজনার সুযোগ নিতে পারে পাকিস্তান। যদি তেমন কিছু ঘটে,তাহলে ভারতও কঠোর জবাব দিতে প্রস্তুত। দু’মুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে যথেষ্ট সক্ষম ভারতীয় সেনাবাহিনী।
প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি ফ্রন্ট নির্ধারণ করা হবে। উত্তর সীমান্তে যদি কোনও হুমকি তৈরি হয়, পাকিস্তান তার সুযোগ নিতে পারে এবং ভারতের জন্য সঙ্কট সৃষ্টি করতে পারে। তবে আমরা প্রস্তুত রয়েছি, যেন পাকিস্তান কোনভাবেই এমন অপতৎপরতা না চালাতে পারে। পাকিস্তান সেই অপচেষ্টা চালালে, ইসলামাবাদের কপালে চরম দুর্ভোগ রয়েছে।”
চীন ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য যুদ্ধে, ভারত পরীক্ষিত বন্ধুদেশ হিসেবে জাপানকে পাশে পাবে। জাপান বলেছে, যেসব জাপানি কোম্পানি চীন থেকে সরে গিয়ে ভারত, ভিয়েতনাম,বাংলাদেশ ও আশিয়ানভুক্ত দেশগুলোতে বিনিয়োগ করবে, সেই সমস্ত কোম্পানিকে জাপান সরকার বিশেষ ভর্তুকি দেবে।
বিনিয়োগ সক্ষমতায় চীনের ঠিক পরেই জাপানের অবস্থান। কিন্তু জাপান অর্থনৈতিক পরাশক্তি, সামরিক পরাশক্তি নয়। আরেকটি দেশ সর্বদা ভারতের পাশে থাকবে- সেই দেশটি ভিয়েতনাম। কিন্তু ভিয়েতনাম তুলনামূলক দুর্বল দেশ। ভিয়েতনাম ভারত থেকে অস্ত্র কেনে। ভারতের পরীক্ষিত অন্যান্য বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত আমেরিকা, ইসরাইল,ফ্রান্স ও রাশিয়ার চীনের সঙ্গে বিরাট স্বার্থ জড়িত রয়েছে। ভারতের পরীক্ষিত
আমেরিকা মুখে যতই গরম কথা বলুক, চীনে রয়েছে আমেরিকার সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ। ভারতের স্বার্থ রক্ষার্থে আমেরিকা নিশ্চয়ই নিজের এই বিশাল বিনিয়োগকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে না।
চীনে স্বৈরশাসন; সেখানে যেকোনো ধরনের বিরুদ্ধবাদীকে গুলি করে মেরে ফেলা হয়। ভারতে গণতান্ত্রিক শাসন; সেক্যুলার বিরোধী দলগুলো,পাকিস্তান ও চীনের পক্ষ নিয়ে কথায় কথায় সরকারকে বিব্রত করে। ১৯৫০ সালে ভারত ও চীনে প্রায় সমান সংখ্যক মুসলমান ছিল। চীনের সেই ৩.৫০ কোটি মুসলমানের সংখ্যা কমতে কমতে আজ মাত্র ১কোটি ৭৫ লক্ষ অবশিষ্ট আছে।
জিনজিয়াং প্রদেশের মসজিদগুলোকে চীন সরকার টয়লেটে রূপান্তরিত করলেও, বিশ্বের মুসলিম রাষ্ট্রগুলো চীনের ভয়ে টুঁ শব্দটি করতে সাহস পায় না। পক্ষান্তরে ভারতের সাড়ে তিন কোটি মুসলমান আজ বেড়ে হয়েছে একুশ কোটি। পাশাপাশি ভারতে উদ্বেগজনক ভাবে কমছে হিন্দু জনসংখ্যা হার।
ভারতে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলে বসবাসকারী সংখ্যালঘু হিন্দুরা,হরহামেশা ভয়ঙ্কর সাম্প্রদায়িক হামলার শিকার। হিন্দুরা যদি সেই সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস প্রতিহত করার চেষ্টা করে, তাহলে মুসলিম দেশগুলো ঐক্যবদ্ধ ভাবে মুসলমান নির্যাতনের অভিযোগ এনে, ভারত সরকারের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে।
মুসলমানরা কাশ্মীরের প্রায় তিন লক্ষ হিন্দুকে মেরে-কেটে-নারী ধর্ষণ করে বাস্তুভিটা থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। এত বড় সাম্প্রদায়িক আক্রমণ ও উচ্ছেদের নজির সমসাময়িক বিশ্বে বিরল। ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান বিপন্ন হিন্দুদের রক্ষা করতে পারেনি। ধর্মনিরপেক্ষতার নামাবলী গায় দেওয়া অমর্ত্য সেন-অরুন্ধতী রায়ের মতো বুদ্ধিজীবীরা, তখন জেহাদিদের পক্ষ নিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বলেছে, “ধর্মনিরপেক্ষতার জয় হয়েছে।”
কাজেই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যদি যুদ্ধ বেধে যায় এবং যদি যুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষে ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি ঘটে; তাহলে ভারতে বসবাসরত পাকিস্তানের এজেন্টরা, হিন্দু সংখ্যালঘু অধ্যুসিত অঞ্চলে ভয়াবহ প্রতিশোধ মূলক হামলা চালাতে পারে। ভারতের মুসলিম জনসংখ্যা হারই কেবল বাড়ছে না, হিন্দুদের মগজে ঢুকিয়ে দেওয়া ধর্মনিরপেক্ষতা ও যত মত তত পথ- তত্ত্বের প্রভাবে, খ্রিস্টান জনসংখ্যা এত অধিক হারে বেড়েছে- দেখতে দেখতে উত্তর-পূর্ব ভারতের পাঁচটি রাজ্য এখন খৃস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ।
ঐ সমস্ত রাজ্যে সংখ্যালঘু হয়ে পড়া হিন্দুদের অস্তিত্ব আজ বিলুপ্তির পথে। খ্রিস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যগুলোতে চীনের মদতে সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যক্রম চলছে। সমসাময়িক সীমান্ত উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে চীন- বিচ্ছিন্নতাবাদী উগ্র খ্রিস্টান সংগঠনগুলোকে, উত্তর পূর্ব ভারতের সংখ্যালঘু অসহায় হিন্দুদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিতে পারে। ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের এই বিষয়সমূহ মাথায় রাখতে হবে।
হিন্দুরা সংখ্যালঘু হিন্দুরা সংখ্যালঘু হিন্দুরা সংখ্যালঘু হিন্দুরা সংখ্যালঘু হিন্দুরা সংখ্যালঘু হিন্দুরা সংখ্যালঘু