ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিক্রম

ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিক্রম; চীনের কাছ থেকে ছিনিয়ে এনেছে ভূমি- কৃত্তিবাস ওঝা

ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিক্রম; চীনের কাছ থেকে ছিনিয়ে এনেছে ভূমি । স্বাধীনতার পর থেকে চীন ও পাকিস্তান ভারতের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে আগ্রাসী অপতৎপরতা চালিয়ে এসেছে। ভারত পাকিস্তানকে পাল্টা বেধড়ক মার দিয়ে দ্বিখণ্ডিত করতে সমর্থ হলেও, ১৯৬৭ সালে নাথুলা সীমান্তে সংক্ষিপ্ত সংঘর্ষে বিজয় ব্যতীত, চীনের বিরুদ্ধে ভারতের কোন বড় সামরিক সাফল্য নেই।

 

বরং ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর নির্লজ্জ চীনের দালালির সুযোগ নিয়ে, চীন ১৯৬২ সালে লাদাখের ‘অক্ষয়-চীন’- নামক এক জনবিরল ভূখণ্ড দখল করে নিয়েছে। চীনের দখলকৃত বরফাচ্ছাদিত ঐ এলাকাটি মানববসতির অনুপোযোগী হলেও, ঐ এলাকা থেকে উৎপন্ন হয়েছে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নদী। ফলে ঐ অঞ্চলের জল সম্পদের নিয়ন্ত্রণ নিতে- অক্ষয় চীনের যথেষ্ট স্ট্র্যাটেজিক গুরুত্ব রয়েছে।

 

জহরলাল নেহেরুর কাণ্ডজ্ঞানহীনতার নজির এখানেই শেষ নয়। পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে ভারতকে ভেটো পাওয়ার সহ রাষ্ট্রসঙ্ঘের স্থায়ী সদস্য পদ গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছিল আমেরিকা। নেহেরু ঐ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন,”ভারত জোট-নিরপেক্ষ থাকবে; রাষ্ট্রসঙ্ঘের স্থায়ী সদস্যপদ বরং চীনকে দেওয়া হোক।”

কমিউনিস্ট বিপ্লবের পর চীন একঘরে হয়ে পড়েছিল। নেহেরু ব‍্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে চীনকে বিশ্বসভায় ফিরিয়ে এনেছিলেন। চীন স্থলবেষ্টিত দুর্বল রাষ্ট্র তিব্বত দখল করে নিলে,আমেরিকা তিব্বত উদ্ধারের উদ্দেশ্যে ভারতের কাছে ভূমি ব্যবহারের অনুমতি চেয়েছিল।

 

নেহেরু আমেরিকার সেই প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছিলেন। স্মরণ করা যেতে পারে, আমেরিকা চীনের জবরদখল থেকে দক্ষিণ কোরিয়াকে উদ্ধার করে দিয়েছিল। আমেরিকার বিরুদ্ধে সেই যুদ্ধে, চীন হারিয়েছিল এক লক্ষ তিরাশি হাজার সৈন্য। অকালকুষ্মাণ্ড নেহেরু যদি চরম আহাম্মকি না করতেন এবং আমেরিকা যদি তিব্বত উদ্ধার করে দিতে পারত,তাহলে ভারত ও চীনের মধ্যে কোন সীমান্ত থাকতো না এবং সীমান্ত সংঘর্ষের কোন প্রশ্নই আসতো না।

বিগত তিন দশকের সম্পর্ক উন্নয়নের সমস্ত প্রচেষ্টায় জল ঢেলে দিয়ে, গত ১৫ই জুন রাতে চীন হঠাৎ করে ভারতীয় সীমান্তে আগ্রাসী অপতৎপরতা শুরু করে। রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় জীবন উৎসর্গ করেন ২০ জন ভারতীয় সৈন্য। ভারতীয় সেনাবাহিনীর দাঁতভাঙ্গা পাল্টাজবাবে চীন সৈন্য হারানোর কথা স্বীকার করলেও কতজন সৈন্য হারিয়েছে, তা এখন পর্যন্ত প্রকাশ করতে পারেনি। নিরপেক্ষ বিশ্লেষকদের অভিমত- ভারত চেয়ে চীনের নিহত সৈন‍্যের সংখ্যা বেশি ছিল, যে কারণে চীন লজ্জায় নিহত সৈন্যের সংখ্যা প্রকাশ করছে না।

 

গত ২৯ ও ৩১ আগস্ট লাদাখ সীমান্তে চীন পুনরায় আগ্রাসন শুরু করার পর, এই প্রথম ভারতের আক্রমণাত্মক অগ্রাভিযানের মুখোমুখি হয়েছে । আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী-  কয়েক হাজার ভারতীয় সৈন্য প্রায় ছ’ঘন্টা পাহাড় বেয়ে প্যাংগং সো লেকের দক্ষিণ তীরের কাছে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পাহাড় চূড়া দখল করে নিয়েছে। লেকটির আয়তন সিঙ্গাপুর রাষ্ট্রের সমান। ১৯৬২ সালের যুদ্ধে যে পার্বত্য এলাকার দখল নিয়েছিল চীন, সেই এলাকাতেই এখন উড়ছে ভারতের জাতীয় পতাকা।

 

শুধু প্যাংগং লেকের দক্ষিণ প্রান্তই নয়, স্পানগার গ্যাপ এলাকাও দখল নিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। ঐ এলাকাটি সেনা মুভমেন্টের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কৌশলগত দিক থেকে ঐ এলাকায় যে দেশ প্রভাব ধরে রাখতে পারবে, সেই দেশ সামরিক ও ভূকৌশলগত দিক দিয়েও যথেষ্ট সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবে।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর এই ঐতিহাসিক সাফল্যের পর,গতকাল বুধবার চীনের পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র হুয়া চুনিং সংবাদ সম্মেলন ডেকে, ভারতের বিরুদ্ধে চুক্তিভঙ্গ ও একতরফা স্থিতাবস্থা পরিবর্তনের অভিযোগ এনেছে। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে, ভারতীয় সেনা-কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি হয়নি।

 

মে মাসে অচলাবস্থা শুরুর পর থেকেই ভারত ও চীন উভয় দেশই সীমান্ত এলাকায় হাজার হাজার সৈন্য, ট্যাংক, কামান ও জঙ্গিবিমান মোতায়েন করেছে। ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য জয়দেব রানাডে জানিয়েছেন, ভারতীয় সেনা বাহিনী কর্তৃক চীনের অপদখলীয় ভূখণ্ড উদ্ধার, ভারতের রক্ষণাত্মক প্রতিরক্ষা কৌশলেরই অংশ। পরিবর্তিত পরিস্থিতির উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ জারি রাখতে, ভারতের সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল মনোজ মুকুন্দ নারাভানে, দু’দিনের জন্য লাদাখে অবস্থান করছেন।

 

চীনের আগ্রাসী অফতৎপরতার প্রতিশোধ নিতে, সম্প্রতি ভারত জনপ্রিয় গেমিং অ্যাপ ‘পাবজি’-সহ ১১৮টি চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করেছে। এর আগে জনপ্রিয় টিকটকসহ ১০৮টি চীনা অ্যাপ ভারত সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। তাছাড়া ভারত সরকার কর্তৃক চীনের বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং ভারতীয় জনগণ চাইনিজ পণ্য বর্জনে উৎসাহিত হওয়ার ফলে, চীন হারিয়েছে ভারতের বিশাল বাজার।

সুতরাং ভারতের বিরুদ্ধে সীমান্ত আগ্রাসনের ফলে, চীনের লোকসান ছাড়া কোনো লাভ হবে না। বরং চীনের উপর নির্ভরশীলতা কমাতে ভারত সরকার গ্রহণ করেছে ‘আত্মনির্ভর ভারত’-বিনির্মাণের কর্মসূচি। স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, “এখন আর মেক ফর লোকাল নয়, আমাদের লক্ষ্য মেক ফর গ্লোবাল।”

 

ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিক্রম; ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিক্রম; ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিক্রম; ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিক্রম; ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিক্রম; ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিক্রম; ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিক্রম; ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিক্রম;

 

লেখক-কৃত্তিবাস ওঝা,ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষক।
লেখকের আরো লেখা……