নরেন্দ্র মোদীর ‘অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি’ বনাম জাতীয় শত্রুদের ষড়যন্ত্র ।প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারের পররাষ্ট্রনীতির মূল স্তম্ভ ‘নেইবারহুড ফার্স্ট’। অর্থাৎ ‘সবার আগে প্রতিবেশী’। নরেন্দ্র মোদীর পূর্বসূরী তথা বিজেপির প্রথম প্রধানমন্ত্রী, অটল বিহারী বাজপেয়ী বলতেন, “সবকিছু বদলানো যায়,কেবল প্রতিবেশী বদলানো যায় না।”
গান্ধী-নেহেরু পরিবারের শাসনাধীন ভারতের পররাষ্ট্রনীতি ছিল মূলত আরব-কেন্দ্রিক। গান্ধী-নেহেরু পরিবার ভারতের স্বার্থের চেয়ে, আরবের স্বার্থকে বাড়াবাড়ি ধরনের প্রাধান্য দিত। গান্ধী-নেহেরু পরিবার, পৃথিবীর একমাত্র ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়নি। ইহুদিরা সংখ্যায় অনেক কম হলেও,পৃথিবীর পুঁজি ও প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রণ ইহুদিদের হাতে। ইহুদি রাষ্ট্রটিকে স্বীকৃতি না দেওয়ায়,
ভারতে পাশ্চাত্যের পুঁজি ও প্রযুক্তি বিনিয়োগ হয়নি। কর্মসংস্থানের অভাবে ভারতের মানুষ ছিল দরিদ্র ও অশিক্ষিত। গান্ধী-নেহেরু পরিবার, আরব-এজেন্টদের সাথে মিলে সবসময় চেষ্টা করেছে- যাতে হিন্দু জাতি কখনো মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। এই হিন্দু-বিদ্বেষী পরিবারটি ধর্মনিরপেক্ষতার নামে এমন আইন-কানুন প্রবর্তন করেছে- যার দ্বারা সেক্যুলার শাসকগোষ্ঠী ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুজাতিকে অবদমিত করে রাখতে পেরেছে।
সহজ সরল হিন্দুরা বুঝতে পারেনি যে, ধর্মনিরপেক্ষতা প্রকৃতপক্ষে হিন্দুজাতির মরণফাঁদ। গান্ধী-নেহেরু পরিবার, ধর্মনিরপেক্ষতার নামে হিন্দুজাতিকে জাতপাত ও বর্ণভেদে বিভক্ত করে রেখেছে। যেমন, নব্বই দশকের শেষ দিকে যখন মুসলমানরা কাশ্মীর থেকে হিন্দুদের মেরে-কেটে-নারী ধর্ষণ করে তাড়িয়ে দেয়, তখন কংগ্রেস প্রচার করত- কাশ্মীর থেকে কেবল ব্রাহ্মণ পণ্ডিতদের তাড়ানো হয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে কাশ্মীর থেকে সমস্ত বর্ণ ও জাতের হিন্দুদের তাড়ানো হয়েছে, কিন্তু কংগ্রেস ব্রাহ্মণ বিদ্বেষের সুযোগ নিয়ে, ‘শুধু ব্রাহ্মণ তাড়ানো হয়েছে’- প্রচার করে মুসলমানদের সেই ভয়ঙ্কর সাম্প্রদায়িকতা আড়াল করার চেষ্টা করেছে।
‘ব্রাহ্মণ’ শব্দের অর্থ ‘জ্ঞানী’। যে কোন জাত বা বর্ণে জন্ম নেওয়া হিন্দুরাই স্বীয় যোগ্যতায় ব্রাহ্মণ হতে পারে। বিদেশি মুসলমান দখলদাররা এসে, ব্রাহ্মণদের বেপরোয়া হত্যা তো করেছেই, সেই সঙ্গে তারা হিন্দু জাতির মধ্যে প্রবল ব্রাহ্মণ-বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেয়। বিদেশি দখলদার মুসলমানরা যখন সমস্ত সনাতন ধর্মশাস্ত্র পুড়িয়ে দিয়েছিল, ব্রাহ্মণরা তখন সনাতন ধর্মশাস্ত্র মুখস্থ করে রেখেছিল।
বিদেশি দখলদার মুসলমানরা বিশ্বাস করত, ভারতভূমি থেকে যদি ব্রাহ্মণদের নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া যায়, তাহলে সনাতন ধর্মশাস্ত্র বিলুপ্ত হয়ে যাবে এবং ধর্মশিক্ষার অভাবে ভারতের হিন্দুরা ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলমান হয়ে যাবে। ভারতবর্ষ ব্রাহ্মণশূন্য করার অর্থই হচ্ছে,হিন্দু জাতিকে জ্ঞানশূন্য করা। জ্ঞানবিহীন কোন জাতির পক্ষে পৃথিবীতে টিকে থাকা সম্ভব নয়। ভারতে ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দল নামে পরিচিত কংগ্রেস, বামপন্থী ও সমাজবাদীরা আসলে আরব সাম্রাজ্যবাদীদের দালাল।
এই বেইমানরা আরবদের সাথে মিলে ষড়যন্ত্র করে, বর্ণভিত্তিক সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালু করার মাধ্যমে- হিন্দু জাতিকে স্থায়ীভাবে বিভক্ত করে ফেলেছে।
গান্ধী-নেহেরু পরিবার গণরোষে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হলে, এক দক্ষিণী তেলেগু ব্রাহ্মণ নরসিমা রাও ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে, ভারতের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক-পলিসি ও পররাষ্ট্রনীতি আমূল বদলে দিয়েছিলেন। নরসিমা রাও ভারতকে সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্যে, বিদেশি বিনিয়োগ উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন। বিশ্বব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণকারী ইহুদি প্রভাবিত ইউরোপ ও আমেরিকার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপনের উদ্দেশ্যে, তিনি ইসরাইল রাষ্ট্রটিকে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। নরসিমা রাও পাশ্চাত্যের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপনের পাশাপাশি ‘লুক ইস্ট পলিসি’- গ্রহণ করেছিলেন।
‘লুক ইস্ট পলিসি’- হচ্ছে পূর্ব এশিয়ার সেই সমস্ত চীন-বিরোধী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন – যে রাষ্ট্রগুলো ভারতীয় ধর্ম-সংস্কৃতি অথবা ভাষার উত্তরাধিকার বহন করে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সেই ‘লুক ইস্ট পলিসি’-কে ‘অ্যাক্ট ইস্ট(পূর্বমুখী নীতির বাস্তবায়ন) পলিসি’-তে রূপান্তরিত করে- চীনকে ঘিরে ফেলার পাশাপাশি পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় দুর্ভেদ্য শক্তি-বলয় গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
‘অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি’-র সুবাদে উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের আঞ্চলিক কানেক্টিভিটির নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। এর ফলে উপকৃত হতে যাচ্ছে উভয় দেশই। এই মুহূর্তে বাংলাদেশ, সীমান্তবর্তী ভারতীয় রাজ্যগুলো থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছে। এছাড়া ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন দিয়ে বাংলাদেশ অচিরেই ভারত থেকে জ্বালানি তেল আমদানি করবে। সুদূর মধ্যপ্রাচ্য থেকে জ্বালানি তেল আমদানি করতে বাংলাদেশকে যে প্রচুর বাড়তি পরিবহন খরচ বহন করতে হয়; ভারত থেকে জ্বালানি তেল আমদানি করলে, সেই বাড়তি পরিবহন ব্যয় সাশ্রয় হবে।
বৈচিত্র্যপূর্ণ সৌন্দর্যমণ্ডিত উত্তর-পূর্ব ভারতে পর্যটন শিল্প বিকশিত হওয়ার বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া উত্তর-পূর্ব ভারতের সস্তা জলবিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা আড়াই লক্ষ মেগাওয়াটের অধিক। উত্তর-পূর্ব ভারতের উদ্বৃত্ত সস্তা জলবিদ্যুৎ থেকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের লাভবান হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।
‘অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি’-র অন্যতম শক্তিশালী অংশীদার জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে, উত্তর-পূর্ব ভারত সফর করার পরিকল্পনা করেছিলেন, বিনিয়োগ সম্ভাবনা যাচাই করতে। কিন্তু তখন মুসলমান ও সেক্যুলাররা মিলে- পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান থেকে মুসলমানদের অত্যাচারে উদ্বাস্তু হয়ে আসা হিন্দু,বৌদ্ধ ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার উদ্দেশ্যে প্রণীত CAA-আইনের বিরুদ্ধে এমন নাশকতা শুরু করে দিয়েছিল; যার ফলে শিনজো আবে উত্তর-পূর্ব ভারত সফর বাতিল করতে বাধ্য হন। আন্দোলনকারীরা মূলত চীন ও পাকিস্তানের স্বার্থ রক্ষায়, জাপানি বিনিয়োগ প্রতিহত করার চেষ্টা করেছে।
অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি