লাদাখ সীমান্তে চীনের পরাজয় : কংগ্রেস ও রাহুল গান্ধীরও পরাজয়। গত জুন মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে চীন যখন শান্তি চুক্তি ভেঙে লাদাখ সীমান্তে আগ্রাসন চালাচ্ছিল, তখন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের তরফ থেকে নানা ধরনের বিভ্রান্তিকর বিবৃতি আসছিল; বিশেষ করে রাহুল গান্ধীর কাছ থেকে।
রাহুল গান্ধী ও কংগ্রেস নেতাদের নানা ধরনের সরকার-বিরোধী কৌশলী বক্তব্য প্রদানের উদ্দেশ্য ছিল, নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারের মনোবল ভেঙে দেওয়া। রাহুল ও কংগ্রেস নেতারা ভেবেছিলেন, তাদের হঠকারী বক্তব্যে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের যদি মনোবল ভেঙে যায়,তাহলে সরকারের পক্ষে সেনাবাহিনীকে যথাযথ দিক-নির্দেশনা দেওয়া সম্ভব হবে না; পাশাপাশি সরকার কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে ব্যর্থ হবে এবং এর মাধ্যমে ফয়দা লুটবে চীন।
রাহুল গান্ধী বলেছেন,”আমার এই বক্তব্যে কেউ যদি আমাকে দেশদ্রোহী ভাবে,ভাবতে পারে। কিন্তু আমি বিশ্বস্ত সূত্রে নিশ্চিত খবর পেয়েছি যে, চীন লাদাখের বিশাল ভূখণ্ড দখল করে নিয়েছে।” চীন লাদাখের বিশাল ভূখণ্ড দখল করে নিয়েছে, একথা সত্য। কিন্তু সেটা নরেন্দ্র মোদীর শাসনামলে দখল করে দেয় নি; ওই ভূখণ্ড চীন দখল করে নিয়েছিল- রাহুল গান্ধীর পিতা রাজীব গান্ধীর মাতামহ জহরলাল নেহেরুর শাসনামলে- ১৯৬২ সালের চীন-ভারত যুদ্ধে। ঐসময় ভারতীয় সেনাবাহিনী যখন চীনের দখলকৃত ভূখণ্ড উদ্ধার করার জন্য মরিয়া লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিল, তখন চীনের দালাল নামে খ্যাত তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরু- ভারতীয় সেনাবাহিনীর অস্ত্র, গোলাবারুদ, খাদ্য ও শীতের পোশাক সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছিলেন।
শুধু তা-ই নয়, জহরলাল নেহেরু তখন সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, রণ-ভূমি ছেড়ে পালিয়ে আসতে। শুধুমাত্র জহরলাল নেহেরুর অযোগ্যতা ও দালালি-সর্বস্ব মানসিকতার কারণেই, ১৯৬২ সালের সেই যুদ্ধে ভারত পরাজিত হয় এবং ‘অক্ষয় চীন’ নামক ভূখণ্ড ভারতের হাতছাড়া হয়ে যায়।
রাহুল গান্ধী যদিও ইরানি বংশোদ্ভূত ফিরোজ জাহাঙ্গীর-এর পৌত্র,তার মাতৃকুল ইতালীয়। কিন্তু ছদ্মহিন্দু সেজে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য রাহুল গান্ধী,পিতৃপুরুষের ইরানি পরিচয় গোপন রেখে,পদবী বদলিয়ে পিতার মাতৃকুল তথা জহরলাল নেহেরুর উত্তরাধিকার ও রাজনৈতিক পরিচয় ধারণ করে। আজকের উন্মুক্ত তথ্য-প্রবাহের দিনে, জহরলাল নেহেরুর অপকর্মের দায় নরেন্দ্র মোদীর ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা- জনগণ যে গ্রহণ করবে না, একথা সম্ভবত রাহুল গান্ধী সহ কংগ্রেসের শীর্ষ নীতিনির্ধারকরা বুঝতে পারেননি। এই বিতর্ক যখন চলছিল, তখন চীনের কাছ থেকে কংগ্রেসের টাকা খাওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমে চলে আসে। তদন্ত সংস্থার রিপোর্ট থেকে জানা যায়, কংগ্রেসের থিঙ্ক ট্যাংক-এর পিছনে চীন যথেষ্ট মোটা অঙ্কের টাকা ঢেলেছে। অর্থাৎ রাহুল গান্ধী সহ কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ চীনের টাকা খেয়ে, প্রত্যক্ষ ভাবে চীনের দালালি করেছেন।
এটা ১৯৬২ সাল নয়,এখন ২০২০ সাল। এটা জহরলাল নেহেরু মতো মেরুদণ্ডহীন দালালের শাসনামল নয়, এখন ভারতের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ছাপ্পান্ন ইঞ্চি ছাতির নরেন্দ্র মোদী। যার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ভারতীয় সেনাবাহিনী, আক্রমণকারী চাইনিজ বাহিনীকে যে কেবল নাকানি-চুবানি খাইয়ে ছেড়ে দিয়েছে- শুধু তা-ই নয়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং বিশেষ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর-এর দক্ষতায়, ভারত এমন কূটনৈতিক বিজয় অর্জন করেছে- আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চীন একরকম একঘরে হয়ে যাওয়ার উপক্রম। তাছাড়া বিজেপি সরকারের ডিজিটাল স্ট্রাইক ও অর্থনৈতিক অবরোধে চীন যথেষ্ট বেকায়দায় পড়ে গেছে। চীনের এই সঙ্কটময় মুহূর্তে, রাহুল গান্ধীর আবার ভারত সরকারের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছেন। রাহুল গান্ধীর অভিযোগ, বিজেপি সরকার চীন ও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করে ফেলায়, ভারত বন্ধুহীন হয়ে পড়েছে।
বিগত কংগ্রেস সরকারের শাসনামলে ভারতের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক উন্নত হয়েছিল ঠিকই; কিন্তু সেই সম্পর্কোন্নয়ন করতে গিয়ে, কংগ্রেস সরকার ভারতের বিশাল অর্থনৈতিক স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়েছে। ইতালীয় খ্রিষ্টান সোনিয়া গান্ধী(এন্টোনিয়া মাইনো)-র রিমোট কন্ট্রোলে পরিচালিত, মনমোহন সিং-এর সরকার, ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজার চীনের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছিল। কংগ্রেস সরকারের অদূরদর্শী অথবা ইচ্ছাকৃত চীনপন্থী সিদ্ধান্তে- নকল, ভেজাল ও নিম্নমানের পণ্য রপ্তানি করে ভারতীয় জনগণের পকেট কেটে দু’হাতে অর্থ লুটে নিয়ে গেছে চীন। এখন যেটা নরেন্দ্র মোদী বন্ধ করে দিয়েছেন এবং এজন্যই রাহুল গান্ধীর গাত্রদাহ।
বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে কোনোও পরিবর্তন এসেছে বলে, আমার মনে হয় না। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক কংগ্রেস আমলে যেরকম ছিল, বিজেপির আমলে একই রকম আছে। বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের তীব্র ভারত বিদ্বেষী মনোভাব-এর সামান্যতম পরিবর্তন ঘটেনি। আগে বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের মানুষ বলতো, আমেরিকার সপ্তম নৌবহর আবার ভারত মহাসাগরে আসবে; পাকিস্তান ভাঙার বদলা নিতে- ভারত ভেঙে টুকরা টুকরা করবে। ইরাক ও আফগানিস্তানের সঙ্গে আমেরিকার যুদ্ধের পরে, বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের মানুষ এখন আর আমেরিকাকে পছন্দ করেনা; তারা এখন নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করে দিয়েছে- চীন ও পাকিস্তান মিলে ভারতকে পরাজিত ও চূর্ণ-বিচূর্ণ করে, একাত্তরের প্রতিশোধ নেবে।
তবে হ্যাঁ, মনমোহন সিং সরকার- বাংলাদেশকে এক কোটি পিস তৈরি পোশাক, ভারতের বাজারে শুল্কমুক্ত রপ্তানি করার অবাধ সুযোগ প্রদানের পাশাপাশি; মাদক ও তামাকজাত পণ্য ব্যতীত সমস্ত বাংলাদেশি পন্য- ভারতের বাজারে উন্মুক্ত করে দিয়েছিল। কংগ্রেস সরকারের দেশবিরোধী ও বাংলাদেশ-বান্ধব সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে, ভারতের ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিবৃন্দ আন্দোলন করেছিলেন। ভারতের জনগণ কংগ্রেস-কে ভোট দিয়েছিল, নিজের দেশের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য; বিদেশি রাষ্ট্রের পণ্য মার্কেটিং করার জন্য নয়।
রাহুল গান্ধী এবং কংগ্রেস নেতৃবৃন্দকে বুঝতে হবে, ভারতের জনগণ আগের মতো আর অশিক্ষিত নেই। গান্ধী-নেহেরু পরিবার দীর্ঘদিন ধরে বহু ধরনের অপচেষ্টা চালিয়েছে- জনসাধারণকে অশিক্ষিত বানিয়ে রাখতে; কিন্তু সেই অপচেষ্টা সফল হয়নি। ভারতের জনগণ গান্ধী-নেহেরু পরিবারের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র-জাল ছিন্ন করে যথেষ্ট শিক্ষিত হয়েছে এবং শিক্ষিত জনগণ বুঝে গেছে, গান্ধী-নেহেরু পরিবার, মূলত আরব সম্প্রসারণবাদের নগ্ন-দালালি আড়াল করার জন্য-পদবী পরিবর্তন করেছে। আরব সম্প্রসারণবাদের ফ্রন্টলাইন প্লেয়ার পাকিস্তান। চীনের সঙ্গে পাকিস্তানের দহরম-মহরম। আরবি-ফারসি নামধারী পাকিস্তানের ঝানু এজেন্টরা কংগ্রেসের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে বসে আছে।
ইরানি-ইতালীয় হাইব্রিড পরিবারটিকে,পাকিস্তানি এজেন্টরা যেভাবে নাচায়, এই পরিবারটি সেভাবেই নাচে। পাকিস্তানি এজেন্টরা চীনের দালালির ভাইরাস- কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে ভয়াবহ আকারে সংক্রমিত করতে সমর্থ হয়েছে। কথায় বলে, গৃহ শত্রু বিভীষণ! এরা বহিঃশত্রুর চেয়েও অনেক বেশি ভয়ঙ্কর।