উদীয়মান পরাশক্তি ভারত রাষ্ট্রের তাৎপর্যপূর্ণ ১৫ই আগস্ট। ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শক্তিগুলির বিপরীতে,এশিয়ায় একটিমাত্র দেশ মাথা তুলে দাঁড়াতে পেরেছিল- সেই দেশটি হচ্ছে জাপান।
ইউরোপের সর্ব বৃহৎ পরাশক্তি, জার শাসিত রাশিয়াকে পূর্ব দিকে ব্যস্ত রাখতে – ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ জাপানকে প্রযুক্তি ও সামরিক ক্ষেত্রে যথেষ্ট সহায়তা দিয়েছিল। ব্রিটিশ প্রদত্ত আধুনিক ইউরোপীয় জ্ঞান-কে আত্মীকরণ করে, জাপানের অত্যন্ত মেধাবী চিন্তানায়কগণ নিজস্ব দেশকে ইউরোপ ও আমেরিকার সমপর্যায়ে উন্নীত করতে সমর্থ হয়েছিলেন।
১৯০৫ সালে বৃটেনের সহায়তায়, তৎকালীন বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সুপারপাওয়ার রাশিয়াকে স্থল ও নৌযুদ্ধে পরাজিত করে বিশাল ভূখণ্ড দখল করে নিয়েছিল জাপান। এই যুদ্ধজয় জাপানকে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী ও অতি আগ্রাসী করে তোলে। জাপান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে এবং সাবেক মিত্র বৃটেন ও চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে – যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করে। উদীয়মান পরাশক্তি ভারত
১৯৪১ সালের ৭ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে জাপান, হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের পার্ল হারবারে অবস্থিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিমান ও নৌ-ঘাঁটিতে অতর্কিতে ভয়াবহ হামলা চালায়। ওই হামলায় চারটি মার্কিন যুদ্ধজাহাজ তাৎক্ষণিকভাবে ডুবে যায়। ধ্বংস হয় ১৮৮টি মার্কিন যুদ্ধ বিমান। নিহত হয় প্রায় আড়াই হাজার মার্কিন সৈন্য। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাপানের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করতে বাধ্য হয়।
জাপান অহেতুক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে নিজের পতন অনিবার্য করে তুলেছিল। জাপান যদি সংযম প্রদর্শন করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে পারতো, তাহলে জাপান হয়তো আজ পৃথিবীর প্রধান দু’টি পরাশক্তির একটি থাকতো এবং ভৌগোলিক আয়তন ও জনসংখ্যায় কয়েকগুন বড় থাকতো।
আমেরিকার পারমাণবিক হামলায় জাপানের পতন সুনিশ্চিত হয়। ১৯৪৫ সালের ১৫ই আগস্ট ইঙ্গ-মার্কিন নেতৃত্বাধীন মিত্র বাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করে জাপান। বৃটেনের প্রভাব-প্রতিপত্তিকে ছাপিয়ে গিয়ে, বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ পরাশক্তিতে পরিনত হয় আমেরিকা।উদীয়মান পরাশক্তি ভারত
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যোগদানে পূর্বে, ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শক্তিগুলোকে আমেরিকা শর্ত দিয়েছিল যে, যুদ্ধে জয়ী হলে ওই সমস্ত সাম্রাজ্যবাদী দেশকে – তাদের অধীনস্থ উপনিবেশগুলো স্বাধীন করে দিতে হবে। যুদ্ধ জয়ের পর সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো পদানত উপনিবেশগুলোকে স্বাধীনতা দিতে গড়িমসি করছিল। তখন আমেরিকা চাপ দেয় যে, কলোনিগুলো স্বাধীন করে না দিলে – ব্রিটেন, ফ্রান্স, পর্তুগাল,নেদারল্যান্ডস প্রভৃতি সাম্রাজ্যবাদী দেশকে আমেরিকা আর্থিক সাহায্য দেওয়া বন্ধ করে দেবে।
জার্মানির আক্রমণে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া ওই সমস্ত সাম্রাজ্যবাদী দেশ তখন মার্কিন অর্থসাহায্য ব্যতীত দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার উপক্রম। ইউরোপের ঔপনিবেশিক দেশগুলো তখন নিরুপায় হয়ে,দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশকে স্বাধীনতা প্রদান করতে বাধ্য হয়।
দ্বিখণ্ডিত ভারতের স্বাধীনতা প্রদানের ক্ষেত্রে, জাপানের আত্মসমর্পণের দিবস ১৫ই আগস্ট-কে বেছে নেয় ব্রিটিশরা। সর্বশেষ ব্রিটিশ ভাইসরয় লর্ড মাউন্টব্যাটেন বলেছিলেন,”আমরা যে ভারত রাষ্ট্রটিকে পৃথিবীর দরিদ্রতম রাষ্ট্র হিসেবে রেখে গেলাম, এই দরিদ্রতম ভারত রাষ্ট্রটি-ই পরবর্তী এক শতাব্দীর মধ্যে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী রাষ্ট্রে পরিণত হবে।
যে ১৫ই আগস্ট দিনটিতে এশিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ পরাশক্তি জাপানের পতন ঘটেছিল; সেই ১৫ই আগস্ট দিনটিতেই আগামী দিনের সম্ভাব্য পরাশক্তি ভারত-এর অগ্রযাত্রা শুরু হল।” উদীয়মান পরাশক্তি ভারত
যদিও গান্ধী-নেহেরু পরিবারের জঘন্য ষড়যন্ত্রে ভারত কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করতে পারেনি; তবে নব্বই দশকের গোড়ার দিকে প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাও ভারতের অর্থনৈতিক ও পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে যে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছিলেন – তারই ধারাবাহিকতায় একজন যুগনায়ক-এর আবির্ভাব ঘটেছে – তার নাম নরেন্দ্র মোদী।
নরেন্দ্র মোদীর সুদক্ষ নেতৃত্বে, ভারত এখন পরাশক্তি হওয়ার দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছে। সেক্যুলার ও জেহাদীরা মিলিতভাবে যতই ষড়যন্ত্র করুক, ভারতের পরাশক্তি হওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনাকে তারা আর ধ্বংস করতে পারবে না।
ভারতের খণ্ডিত অংশে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রটি,১৯৭১ সালে ভারতের উপর হামলা চালাতে গিয়ে, নিঃশর্তভাবে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। ভারতের সহায়তায় ‘বাংলাদেশ’ – নামক একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে।
১৯৭৫ সালে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করতে – পাকিস্তানপন্থী বাংলাভাষীরা ভারতের স্বাধীনতা দিবস ১৫ই আগস্ট-কে বেছে নিয়ে, ভারতকে বিশেষ বার্তা দিয়েছে।