হিন্দু জাতির অস্তিত্ব রক্ষা

হিন্দু জাতির অস্তিত্ব রক্ষায় প্রয়োজন আরেকটি রেনেসাঁ – কৃত্তিবাস ওঝা

হিন্দু জাতির অস্তিত্ব রক্ষায় প্রয়োজন আরেকটি রেনেসাঁ।  হিন্দু জনসংখ্যা যেভাবে কমছে, এভাবে চলতে থাকলে অদূরভবিষ‍্যতে হিন্দু জাতির সর্বশেষ আশ্রয়স্থল ভারত-এ হিন্দু জনসংখ্যা হার ৫০ শতাংশের নিচে নেমে আসবে। বিশ্বের যে দেশেই হিন্দু জনসংখ্যা ৫০ শতাংশের নিচে নেমে গেছে, সেইসব দেশ থেকেই হিন্দুদের রাতারাতি নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হয়েছে।

পৃথিবীতে সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে মুসলমানদের সংখ্যা; তারপরে খ্রিস্টানদের সংখ্যা। পাশাপাশি তাদের রাষ্ট্রের সংখ্যাও বাড়ছে। আর পৃথিবীতে সবচেয়ে ক্ষয়িষ্ণু জাতি হচ্ছে হিন্দুরা। হিন্দুরা যত রাষ্ট্র হারিয়েছে,জনসংখ্যা হারিয়েছে; আর কোন জাতি অত রাষ্ট্র বা জনসংখ্যা হারায়নি।

 

মুসলমানরা যে দেশেই বসবাস করে, সেখানেই তাদের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্যতিক্রম শুধু চীন ও মিয়ানমার। দুনিয়ায় শুধুমাত্র এই দু’টিরাষ্ট্র-ই সাফল্যের সঙ্গে মুসলিম জনসংখ্যা কমাতে পেরেছে- সেই সঙ্গে সুরক্ষিত রাখতে পেরেছে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা।

আর হিন্দুরা পৃথিবীর যে সমস্ত অঞ্চলে রয়েছে, সর্বত্রই তাদের জনসংখ্যা কমছে। যেসব দেশে একসময় শতভাগ হিন্দু ছিল, সেসব দেশ থেকে হিন্দুরা একেবারে মুছে গেছে, যেমন আফগানিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন,পাকিস্তান,মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, উজবেকিস্তান ইত্যাদি।

 

ভারতে হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও, সংখ্যালঘুদের হাতে লজ্জাজনক ভাবে মার খাচ্ছে। মুসলমানরা কাশ্মীরে মেরে-কেটে-নারী ধর্ষণ করে প্রায় তিন লক্ষ হিন্দুকে নির্মমভাবে উৎখাত করেছে; নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও ভারতের হিন্দুরা সেই ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক আক্রমণের বিরুদ্ধে সামান্যতম প্রতিরোধ গড়ে তোলা তো দূরের কথা, মৌখিক প্রতিবাদটুকু পর্যন্ত করতে পারেনি।

কসাইখানায় যখন ছাগল-গরু জবাই করা হয়, আশপাশের জীবিত গরু-ছাগলগুলো নীরবে সেই দৃশ্য উপভোগ করে; তারা বুঝতে পারে না যে, কিছুক্ষণ পরে তাদের পরিণতিও একই রকম হবে।

 

হিন্দুদের অবস্থাও তদ্রুপ- স্বাধীন ভারতে হিন্দুরা কাশ্মীর থেকে উৎখাত হয়ে গেছে, নর্থইস্ট থেকে উচ্ছেদ হয়ে গেছে; হিন্দুরা পশ্চিমবঙ্গ, কেরল, আসাম প্রভৃতি স্থানে যেভাবে একতরফা মার খাচ্ছে,তাতে ওইসব রাজ্যে সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়ে- হিন্দুদের নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে সময় লাগবে না।

হিন্দুরা গান্ধী-নেহেরু পরিবারকে একচেটিয়া ভোট দিয়ে দীর্ঘদিন কেবল ক্ষমতায়-ই রাখেনি, তাদের একেবারে দেবতার আসনে বসিয়ে দিয়েছিল। হিন্দুদের এই মূর্খতার সুযোগ নিয়ে,গান্ধী-নেহেরু পরিবার ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠানের নামে- হিন্দু জাতিকে সাংবিধানিকভাবে তথাকথিত উচ্চবর্ণ ও নিম্নবর্ণে বিভক্ত করে ফেলেছে, দুর্বল করে ফেলেছে।

 

হিন্দু জাতির সম্ভাব্য বিলুপ্তি পর্যন্ত এই বিভাজন প্রলম্বিত করতে, শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে বর্ণভিত্তিক সংরক্ষণ ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছে। শুধু তাই নয়,সংখ্যালঘুরা যাতে হিন্দুদের অবাধে কচুকাটা করতে পারে,এ জন্য গান্ধী-নেহেরু পরিবার সংসদে উত্থাপন করেছে, ‘কমিউনাল ভায়োলেন্স অ্যাক্ট’।

বর্ধনশীল ভূমি, জনসংখ্যা ও সুসংহত-রাষ্ট্র ব‍্যবস্থা ছাড়া, বিশ্ব ইতিহাসে কোন জাতির টিকে থাকার নজির নেই। কিন্তু হিন্দুদের আধ্যাত্মিক দর্শনটাই এমন, কামিনী-কাঞ্চন ত‍্যাগের নামে হিন্দুদের একেবারে বিষয় বিমূখ ও যৌনতা বিমুখ করে ফেলা হয়েছে।

 

যার ফলে হিন্দুরা হারাচ্ছে ভূমি, কমছে হিন্দু জনসংখ্যা। বিপুলসংখ্যক হিন্দু নারী, যৌনতা বিমুখ স্বজাতি পুরুষদের প্রতি বিতৃষ্ণ হয়ে, ভিন্নধর্মী যুবকদের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে এবং কুল-ধর্ম ত্যাগ করে তাদের সাথে চলে যাচ্ছে। তাছাড়া হিন্দু সমাজে ‘সর্বধর্ম সমন্বয়’ কিংবা ‘যত মত তত পথ’- ইত্যাদি বিভ্রান্তি ছড়িয়ে হিন্দুদের ধর্মান্তরিত হতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

হিন্দু জাতিকে যদি পৃথিবীতে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হয়,তাহলে আধ্যাত্মিক দর্শন বদলে ফেলে, হিন্দু সমাজের প্রবেশ দরজা খুলে দিতে হবে। হিন্দুদের বিষয়মুখী হতে হবে এবং কীভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধি করা যায় এবং অধীনস্থ ভূমিতে বর্ধিত জনসংখ্যা কীভাবে ধরে রাখা যায়, তার উপায় উদ্ভাবন করতে হবে।

 

এই প্রসঙ্গে আমি অনেক আধ‍্যাত্মিক-বিশেষজ্ঞের সাথে আলোচনা করেছি। তারা বলেছে- আপনি কী হিন্দুদের আব্রাহামিক ধর্ম বা পাশ্চাত্যের মতো বিষয়বাদী ও ভোগবাদী করে তুলতে চান? এই জ্ঞানপাপী আহাম্মকদের কে বুঝাবে, পাশ্চাত্যের আবিষ্কার ব্যতীত আমরা এক মুহূর্ত চলতে পারিনা।

আমাদের আধ্যাত্মিক দর্শন কোনো কিছু আবিষ্কার-উদ্ভাবন করতে পারেনি। আমাদের আধ্যাত্মিক দর্শন জাতিকে উপহার দিয়েছে অমোচনীয় ভেদ-বিদ্বেষ, অস্পৃশ্যতা, নারীবিদ্বেষ, বর্ণ বিভাজন, বিষয়বৈরাগ্য এবং অগণিত কুসংস্কার ও অন্ধ আনুগত্য।

 

আমাদের আধ্যাত্মিক দর্শন আমাদের পুষ্টিকর আহার পরিহার করে, অখাদ্য কুখাদ্য পানভোজন করে শরীর দুর্বল করে ফেলতে উৎসাহিত করেছে। ফলশ্রুতিতে রাষ্ট্রের পর রাষ্ট্রে দুর্বল হিন্দুদের নিশ্চিহ্ন করে ফেলা, সহজ থেকে সহজতর হয়েছে।

হিন্দু জাতিকে সদা-সর্বদা মনে রাখতে হবে,পৃথিবীতে মানুষের জন্ম ভোগের জন্য এবং উদ্দেশ্য বংশধরদের যেকোন মূল্যে ভূমন্ডলে টিকিয়ে রাখার যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা। অর্থাৎ আত্মরক্ষা ও প্রজাতি রক্ষার মধ্যেই মানব জীবনের সার্থকতা। আর জাতির সার্থকতা জাতি-রাষ্ট্র বিনির্মাণে।হিন্দু জাতির অস্তিত্ব রক্ষায়হিন্দু জাতির অস্তিত্ব রক্ষায় হিন্দু জাতির অস্তিত্ব রক্ষায় হিন্দু জাতির অস্তিত্ব রক্ষায়

 

লেখক-কৃত্তিবাস ওঝা,ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষক।
লেখকের আরো লেখা……

শীর্ষ অস্ত্র রপ্তানিকারক রাষ্ট্রে পরিণত হতে চলেছে ভারত – কৃত্তিবাস ওঝা