শ্রী কৃষ্ণের শিক্ষা

যুবকদের জন্য সাফল্যের টিপস যা, ভগবান শ্রী কৃষ্ণ দিয়েছিলেন।

শ্রী কৃষ্ণ: শ্রীমদ্ভাগবত গীতাতে ভগবান শ্রী কৃষ্ণের শিক্ষা আজও যুবকদের জন্য ততটা গুরুত্বপূর্ণ, যতটা সেই সময় অর্জুনের জন্য ছিল। শ্রী কৃষ্ণের সেই জিনিসগুলি আজকের এই যুগে কারও পক্ষে সাফল্যের মন্ত্রের চেয়ে কম নয়। আসুন, জেনে নিন শ্রী কৃষ্ণের এই সাফল্যের টিপসগুলি কী-

 

১. ভগবান শ্রী কৃষ্ণের মতে, আমাদের উচিত সৎকর্ম করা এবং সেটির চর্চা চালিয়ে যাওয়া। আমাদের সময় নষ্ট করা উচিত নয় এবং কাওকে ভয় না পাওয়া উচিত।

২. ভগবান কৃষ্ণ কঠিন সময়ে পাণ্ডবদের সমর্থন দিয়ে প্রমাণ করেছিলেন যে, বন্ধুরা হ’ল সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতিতে আপনাকে সমর্থন করে। বন্ধুত্বের শর্তের জন্য কোনও স্থান নেই, সুতরাং আপনারও উচিত এমন বন্ধুকে আপনার চারপাশে রাখা। যারা প্রতিটি কঠিন পরিস্থিতিতে আপনার সমর্থক হবেন।

৩) মহান যোদ্ধা অর্জুন কেবল তাঁর গুরুের কাছ থেকে শিখেননি, তাঁর অভিজ্ঞতা থেকেও অনেক কিছু শিখেছিলেন। এটি শেখায় যে আমাদের শিক্ষক বাদে আমাদের ভুল এবং ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত।

৪. পাণ্ডবদের যদি ভগবান শ্রী কৃষ্ণের কৌশল না থাকত তবে যুদ্ধে তাদের পক্ষে জয়লাভ করা অসম্ভব ছিল, সুতরাং যে কোনও প্রতিযোগিতার আগে কৌশল তৈরি করা প্রয়োজন।

৫. শ্রী কৃষ্ণ প্রতিটি ফ্রন্টে বিপ্লবী ধারণায় সমৃদ্ধ হয়েছেন। তিনি কখনই কোনও আবদ্ধ ফাঁস করেননি, তিনি উপলক্ষ অনুযায়ী তার ভূমিকা পরিবর্তন করেছিলেন সেই সাথে অর্জুনের সারথী হওয়া থেকে বিরত হননি।

৬. স্বপ্নদ্রষ্টা হওয়ার কারণে একজন ব্যক্তির প্রতিটি পরিস্থিতি যাচাই করা উচিত।

৭. শ্রী কৃষ্ণ বলেছেন যে আমাদের সমস্যার সময় বা সাফল্য না পেলে আমাদের সাহস হারা উচিত নয়। পরিবর্তে, পরাজয়ের কারণগুলি জেনে আমাদের এগিয়ে যাওয়া উচিত। সমস্যার মুখোমুখি হয়ে যদি ভয়টি কাটিয়ে ওঠে, তবে সাফল্য নিশ্চিত।

৮. শ্রীকৃষ্ণ হ’ল পরিচালনার সর্বশ্রেষ্ঠ গুরু। শৃঙ্খলায় বেঁচে থাকার, বৃথা চিন্তা করবেন না এবং ভবিষ্যতের পরিবর্তে বর্তমানের দিকে মনোনিবেশ করার মন্ত্র দিয়েছেন।

 

৯. ভগবান কৃষ্ণ যেমন তাঁর দরিদ্র বন্ধু সুদামাকে তাঁর কুঁড়েঘরকে রাজবাড়ি বানিয়েছিলেন, তেমনি বন্ধুত্বের ক্ষেত্রেও কখনও দরিদ্রতা দেখা উচিত নয়। বন্ধুত্ব সত্য এবং সততা বজায় রাখা উচিত।

১০. শ্রী কৃষ্ণের মতে, যখন আমাদের বিরোধীদের উপরের হাত রয়েছে তখন আমাদের কূটনীতির পথ অবলম্বন করা উচিত কারণ তখন সরল পথটি জয় করা যায় না। এ কারণেই শ্রী কৃষ্ণকে একজন মহান কূটনীতিকও বলা হয়।

এই বাণী ছাড়াও ভগবান শ্রীকৃষ্ণের  আর কিছু বাণী যা দ্বারা মানুষ তার জীবনে সঠিক পথ খুঁজে পায়। 

১)”ক্ষুধার্ত মানুষের কাছে নীতির কথা আর রাগী মানুষের কাছে উচিত অনুচিত কথা অর্থ হীন”

শ্রীকৃষ্ণ
বেঁচে থাকতে মানুষের প্রয়োজন খাদ্য, বস্ত্র এবং বাসস্থান। এই মানুষ যখন খিদেতে ছটফট করে তখন তার জন্য নীতির কথার মূল্য ঠিক ততই থাকে না যতটা তার কাছে খাবারের মূল্য থাকে। শান্ত, ধীর স্বভাবের মানুষের যেমন উচিত অনুচিত বোধ থাকে তেমনি রাগী, বদ্-মেজাজী মানুষ ঠিক ততটাই অক্ষম নিজেকে সেই উচিত অনুচিত বোধকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে। তাই, ক্ষুধার্ত আর রাগী উভয়েই নীতি বোধ এবং উচিত অনুচিত বোধ থেকে বঞ্চিত হয় এবং তা তাদের কাছে মূল্যহীন হয়ে ওঠে।

২)”ধর্ম,সততা,পরিচ্ছন্নতা, সহ্যশক্তি, ক্ষমতাশীলতা, আয়ু, শারীরিক ক্ষমতা এবং স্মৃতি শক্তি সবই কলিযুগে সময়ের সাথে সাথে হ্রাস পাবে।”

শ্রীকৃষ্ণ
সময় কারো জন্য দাড়িয়ে থাকে না। সময়ের সাথে অনেক কিছু বদলে যায়। দ্বাপর যুগে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বাণী দ্বারা হিন্দু ধর্মের শেষ তথা কলিযুগের যে বর্ণনা ফুটে উঠেছে তা স্পষ্ট করে আমাদের শারীরিক এবং মানসিক ক্ষমতা হ্রাস পাবে সেই সঙ্গে স্মৃতিশক্তি, আয়ু ইত্যাদি অনেকাংশেই কমবে। এখানে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ পাপের পরিমাণ পূর্ণের থেকে কম হওয়াকে সমস্ত কিছুর হেতু বলে চিহ্নিত করেছেন। যা জীবনধারণ থেকে শুরু করে প্রতিটি পর্যায়ে প্রভাব বিস্তার করবে।

৩) “জ্ঞানীর নিকট সত্যই পরম ধর্ম”

শ্রী কৃষ্ণের শিক্ষা
আমরা তাই শুনি বা দেখি বা বুঝি যা আমাদের মন শুনতে, বুঝতে বা দেখতে চায়। সত্যিটা কী- তা খুব কম সংখ্যক মানুষের কাছে ধরা দেয়। তাই একটা জিনিসের ব্যখ্যা অনেক মানুষের কাছে অনেক রকম। যে শুধু সত্যি জানতে বা বুঝতে চায় ভগবান তাকেই প্রকৃত জ্ঞানী বলেছেন। সত্য অন্নেশন সবার দ্বারা হয় না। সেই ব্যক্তির কার্য সত্য তাই তার ধর্মও সত্য; কারণ, কার্যই প্রকৃত ধর্ম।

৪) “দূর্বল কেবল ভাগ্যকে দোষারোপ করে আর বীর ভাগ্যকে জয় করে”

শ্রী কৃষ্ণের শিক্ষা
দূর্বল বা ভীরু প্রকৃতির মানুষ নিজের অক্ষমতাকে ঢাকতে পরিস্থিতি থেকে শুরু করে সমস্ত কাছের মানুষ, বন্ধু সবাইকে দোষারোপ করে। কিন্তু নিজেদের ভুলকে শুধরানোর কথা খণিকের জন্য মনে করেনা। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বাণী তাই যথার্থ সাহসী তথা বীরের কথা বলে যারা শুধুমাত্র জয়ের চিন্তা করে, তাদের ভুল শুধরাতে নিজের অপমান বোধ হয় না বরং তাতে তারা সঠিক শিক্ষা পাওয়ার আনন্দ খুঁজে পান। সেই সময়ের জন্য হেরে গেলেও বারবারের জন্য উঠে দাঁড়াতে শিখে যায়।

৫) “মাতৃঋণ কোনো সন্তানই কখনোই শোধ করতে পারে না।”

শ্রী কৃষ্ণের শিক্ষা
“মা” হল পৃথিবীর সর্ব শ্রেষ্ঠ উপহার একজন সন্তানের কাছে। কথিত,ভগবান সবার সাথে থাকতে পারে না বলেই তিনি মায়ের সৃষ্টি করেছেন। “মা” তাই ভগবানের রূপ প্রতিটি সন্তানের কাছে। এই মায়ের অবদান শোধ তাই দূরের কথা কোনো সন্তান কখনো পৌঁছাতে পারবে না কারণ এটি ভালোবাসা,যত্ন,আত্মত্যাগ, যা মাপার উর্ধ্বে।

৬) “সময় কখনও মানুষের নির্দেশিত পথে চলে না, মানুষকে সময়ের নির্দেশিত পথে চলতে হয়”

শ্রী কৃষ্ণের শিক্ষা 
সময় এবং বাক্ যা বেরিয়ে গেলে আর ফিরে আসে না। তাই এর যথার্থ ব্যবহার করতে না পারলে চরম বিপদের সম্মুখীন হতে হয় মানুষকে। সময়ের সাথে যারা চলতে পারে তারাই প্রকৃত অর্থে সফলতা অর্জন করে থাকে। মানুষ সঠিক সময়ে সঠিক ভাবে কাজ না করলে পরে সেই কাজের জন্য যথেষ্ট সময় তো দূরের কথা আর সুযোগই পায়না। মানুষের তাই সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে কাজ করার কথা মাথায় রেখে সর্বদা সময় নষ্ট থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে হবে।এবং সময়কে বুঝে চলতে হবে।

৭) “যখন সংসারে দেখার মতো কিছু থাকে না তখন মানুষ ঈশ্বরের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।”

শ্রীকৃষ্ণ
মানুষ জীবনের চারটি অধ্যায়। এই চারটি অধ্যায়ের তিনটিতে মানুষ তার জীবনের যত দায়-দায়িত্ব পালন করে থাকে। শেষের দিকে যখন তার সব দাবি, দায়, দায়িত্ব, ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা, কামনা, বাসনা শেষ হয়ে যায় তখন সে নিজে থেকেই নিজেকে পরিচালনা করে ঈশ্বরের নিকট। এই জগত সংসার তার জানা হয়ে যায় তাই আধ্যাত্মিক পথে নিজেকে পরিচালনার মাধ্যমে নিজের জীবনের শান্তি খুঁজে পায়।

৮) “দান তাকে বলে যাতে দানী হারায় আর যাচক প্রাপ্তি লাভ করে। কিন্তু বলিদান সেটাই যেটা দানী দেয় আর সারা জগত প্রাপ্ত করে।”

শ্রীকৃষ্ণ
দান এবং বলিদান এই দুই ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বাণী বরাবর গুরুত্বের দাবি রাখে। একজন মা বা শিক্ষক যে ছাত্র বা ছাত্রী তৈরী করেন তাতে তারা পরবর্তীকালে দেশের জন্য নিজেদের নিয়োগ করে যা সমগ্র দেশের প্রাপ্তি ঘটে। দেশ তথা দশের জন্য করা হল সার্বিক ভাবে উন্নতি করন। যা দানের অনেক ওপরে স্থান পায়।

৯) “যদি কোনো ঘটনায় মানুষ ভয়প্রাপ্ত তবে তার পরাজয়ই হয়। আর যে সব হারিয়ে শান্ত আর একাগ্র থাকে সেই আসল জয়ী”

শ্রীকৃষ্ণ
ভয় মানুষকে পিছনে ফেলে রেখে যায় তাই ভয় কোনো পরিস্থিতির ফলাফল হতে পারে না। মানুষের জীবন যাপন করতে নানা বাধার সম্মুখীন হবে কিন্তু নিজেকে সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হবে যাতে কোনো কিছু তাকে না নিজের পথ থেকে বিতাড়িত করতে পারে। তবেই প্রকৃত মানুষের অর্থে একজন ব্যক্তি পৌঁছে যেতে পারবে।

১০) “নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে কখনো সন্দেহ প্রকাশ করা সঠিক নয়”

শ্রী কৃষ্ণের শিক্ষা

আর পড়ুন…

আমাদের নতুন নতুন পোস্ট পেতে একটি লাইক দিয়ে রাখুন…ধন্যবাদ।

%d bloggers like this: