ধর্মনিরপেক্ষতার প্রকৃত স্বরূপ – কৃত্তিবাস ওঝা:
পৃথিবীর সমস্ত মানুষ কোন না কোন ভাষা বা ধর্মীয় সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। এজন্য প্রতিটি মানুষ জন্মগ্রহণের পর থেকে মৃত্যু অবধি ইচ্ছানিরপেক্ষভাবে কোনো না কোনো সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করে। মানুষ যদি ধর্ম পরিবর্তন করে, তাহলে সে এক সম্প্রদায় থেকে অন্য সম্প্রদায়ে স্থানান্তরিত হয়। এমনকি যারা ঈশ্বর বিশ্বাস করে না, তারাও নাস্তিক সম্প্রদায়ের অন্তর্গত। অর্থাৎ যেকোনো মানুষকে সারা জীবন কোন না কোন একটি সম্প্রদায়ের মধ্যে থেকে, নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার তাগিদে ওই সম্প্রদায়ের স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করতে হবে।
যেহেতু জগতের প্রত্যেকটি মানুষ, নিজ সম্প্রদায়ের স্বার্থ রক্ষার জন্য সচেষ্ট; এজন্য কোন মানুষই সাম্প্রদায়িকতার উর্ধ্বে নয়; তাই পৃথিবীর প্রতিটি মানুষই সম্প্রদায়িক। প্রতিটি জাতি নিজস্ব সাম্প্রদায়িক স্বার্থ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্র গঠন করে। একটি রাষ্ট্রের সুরক্ষা বলতে বুঝায়, ওই রাষ্ট্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের সুরক্ষা। কোন রাষ্ট্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের অস্তিত্ব যদি বিপন্ন হয়, তাহলে ওই রাষ্ট্র নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে বাধ্য। সুতরাং সাম্প্রদায়িকতা দেশপ্রেমের প্রধান অঙ্গ এবং যে জাতি যত সাম্প্রদায়িক – ওই জাতির রাষ্ট্র তত সুরক্ষিত।
ধর্মনিরপেক্ষতার প্রকৃত স্বরূপ
হিন্দু সমাজে ‘সাম্প্রদায়িকতা’একটি গালি হিসেবে পরিচিত। হিন্দু সমাজে কাদের সাম্প্রদায়িক বলা হয়? যে সমস্ত হিন্দুরা স্বজাতি ও দেশপ্রেমের পক্ষে কথা বলে, তাদেরকে সাম্প্রদায়িক বলে গালি দেওয়া হয়। কারা গালি দেয়? গালি দেয় হিন্দু নামধারী একটি প্রবল পরাক্রান্ত গোষ্ঠী – যারা নিজেদের সেক্যুলার পরিচয় দিয়ে গর্ব বোধ করে। হিন্দু নামধারী সেক্যুলারদের বক্তব্য হচ্ছে – “মধ্যযুগে যখন ভারতভূমি বিদেশি মরু ডাকাত দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে,আমরা তখন দেশীয় শাসকদের বিরুদ্ধে গিয়ে বিদেশী দখলদারদের সাহায্য-সহযোগিতা করে উদারতার পরিচয় দিয়েছি।”
সেক্যুলাররা আরো বলে, কেবল উদারতাই নয়, তারা যে সহিষ্ণুতার পরিচয় দিয়েছে, তার নজির পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই। হিন্দু নামধারী সেক্যুলাররা, কেমন সহিষ্ণুতার পরিচয় প্রদর্শন করেছে? সেক্যুলাররা বলে, “বিদেশি মরু ডাকাতরা ভারত ভূমি দখল করে নেওয়ার পর, আমাদের সমুদয় ধন-সম্পত্তি কেড়ে নেয়, আমরা ‘জগৎ মিথ্যা’ – তত্ত্বের প্রতি আস্থাশীল থেকে, ‘টাকা মাটি মাটি টাকা’- বলে বিদেশি দখলদারদের হাতে আমাদের লুকিয়ে রাখা সোনাদানা পর্যন্ত হাসিমুখে তুলে দিয়েছি।
আমাদের উদারতার কাহিনী এখানেই শেষ নয় – দখলদার মরুদস্যুরা আমাদের ঘরের মা-বোনদের ধর্ষণ করেছে। আমরা এতটুকু বিচলিত হই নি। কেন বিচলিত হব! কলিযুগে আমরা সবাই দাস; আমাদের ঘরের মা-বোনেরা সবাই দাসী। বিদেশী প্রভুর সেবা করাই দাস-দাসীর পরম ধর্ম। বিদেশী প্রভুর মনোরঞ্জন করতে হবে, তাতে আমাদের ঘরের মেয়েরা কষ্ট পাবে তো পাক,তাতে কি হয়েছে! মরু ডাকাতরা কুল-ললনাদের শরীর ছিন্নভিন্ন করে ফেলেছে,গর্ভবতী নারীদের জঠর ফেড়ে গর্ভস্থ অপরিনত শিশু বের করে এনে অট্টহাসিতে ফেটে পড়েছে।
কূল-ললনাদের আর্তনাদ-আহাজারি শুনে, পাছে কেউ মহান বিদেশি অতিথিদের ভুল না ভাবে – এজন্য ‘ওম শান্তি ওম শান্তি’ ও ‘অহিংসা পরম ধর্ম’ – বলে চিৎকার দিয়েছি। তা সত্ত্বেও যখন দেখেছি,মাতা-কন্যা-স্ত্রী-ভগ্নীর বুকফাটা আর্তনাদে গগন বিদীর্ণ হয়ে যাচ্ছে – মেদিনী প্রকম্পিত হচ্ছে; আমরা তখন খোল-করতাল নিয়ে আঙিনায় নেচে নেচ উচ্চস্বরে গান গেয়েছি, মেরেছিস কলসির কানা তাই বলে কি প্রেম দেব না…” সেক্যুলারদের ভাষায় – “ভারত ভূমিতে আমাদের এতবড় উদারতা,সহিষ্ণুতা ও ধর্মনিরপেক্ষতার সুদীর্ঘ ঐতিহ্য-পরম্পরা ভেঙে একদল উগ্র সাম্প্রদায়িক – বিদেশি মেহমানদের শাসন ক্ষমতায় থেকে উচ্ছেদ করার জন্য যুগে যুগে যুদ্ধের ডাক দিয়েছে।
সাম্প্রদায়িকদের কত বড় সাহস! তারা বলে কিনা, মা-বোনদের সম্মান রক্ষার জন্য জাতিকে অস্ত্র হাতে তুলে নিতে হবে; মরু ডাকাতদের কবল থেকে জাতির কষ্টার্জিত ধন-সম্পদ উদ্ধার করতে হবে … আমরা সাম্প্রদায়িক অপশক্তির এই উগ্রতা-অসহিষ্ণুতা বরদাস্ত করিনি। আমরা দেশীয় উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তিকে নির্মূল করতে, আরবদের পরে তুর্কিদের বরন করে নিয়েছি, তারপর সাদর সম্ভাষণ জানিয়েছি উজবেকদের। এরা ব্যর্থ হওয়ায় ব্রিটিশদের শরণাপন্ন হয়েছি। ব্রিটিশরা দেশীয় সাম্প্রদায়িক শক্তিকে দমন করছে না দেখে, চেষ্টা করেছি ভারতভূমি জাপানের হাতে তুলে দিতে।
ধর্মনিরপেক্ষতার প্রকৃত স্বরূপ
জাপান পরাজিত হওয়ায়, সোভিয়েত রাশিয়া ও চীনকে নিয়েও অনেক স্বপ্ন দেখেছি… বৃটিশের বিদায় যখন অনিবার্য হয়ে উঠল, তখন অনুপ্রবেশকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ করতে সেক্যুলার শিবিরের নেতৃত্বভার তুলে দেওয়া হলো কংগ্রেসী গান্ধী-নেহেরু হাতে… অনুপ্রবেশকারীরা বলে,আমরা কিছুতেই ভারতীয় হবো না। আমরা বিদেশ থেকে এসে হিন্দুদের গোলাম বানিয়ে রেখেছি, তাই আমরা গোলামদের ভারতীয় পরিচয়ে কেন পরিচিত হব! আমরা পাকিস্তানি… কংগ্রেস অনুপ্রবেশকারীদের বুঝায় – আপনারা দুই দেশে বিভক্ত হয়ে গেলে হিন্দুদের শায়েস্তা করা কঠিন হয়ে পড়বে। অনুপ্রবেশকারীরা অধৈর্য হয়ে,বিভিন্ন জায়গায় হিন্দু কিলিং শুরু করলো।
গান্ধীজী হত্যাকারীদের পক্ষ নিয়ে ছলছাতুরি করতে গিয়ে ধরা খেয়ে গেলেন। তবে ধুরন্ধর জহরলাল নেহরুর ও তার উত্তরাধিকারীদের বিষাক্ত ষড়যন্ত্রের ছোবল হিন্দু জাতিকে দীর্ঘস্থায়ী দারিদ্র ও অশিক্ষার অন্ধকারে নিমজ্জিত করলো। অধৈর্য হয়ে ওঠা পাকিস্তানপন্থী ও তাদের কমিউনিস্ট দোসরদের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড অব্যাহত থাকে। ক্ষমতাসীন গান্ধী-নেহেরু পরিবারের তরফ থেকে পাকিস্তান ও অনুপ্রবেশকারীদের আশ্বস্ত করা হলো,”বোকা হিন্দুরা আমাদের বিশ্বাস করে বসে আছে; এই সুযোগে আমরা এমন ভাবে সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ঢুকিয়ে দিয়েছি – যেখানে হিন্দুদের ধর্ম শিক্ষার অধিকার নেই, আপনাদের ধর্ম শিক্ষার পূর্ণ সুযোগ রেখেছি; সেই সঙ্গে হিন্দুদের বঞ্চিত করে আপনাদের জন্য এত বিশাল প্রণোদনার ব্যবস্থা করে দিয়েছি, তাতে ধর্মশিক্ষাহীন দরিদ্র হিন্দুরা অর্থের লোভে ধর্মান্তরিত হতে উৎসাহিত হবে।
হিন্দুরা গাধার খাটনি খেতে আয়কর দেবে,আমরা তা আপনাদের হাতে তুলে দেব; আপনারা আরামসে ঘরে বসে খাবেন,আর জনসংখ্যা বৃদ্ধি করতে থাকবেন। আপনারা যাতে সহজেই হিন্দু জনসংখ্যাকে টপকে যেতে পারেন,এজন্য আপনাদের বহু বিবাহ করার সুযোগ রেখেছি,হিন্দুদের ওই সুযোগ দেই নি … সুতরাং একটু ধৈর্য ধরুন,আপনারা সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে ভারতের শাসন ক্ষমতা পেয়ে যাবেন; তখন সাম্প্রদায়িক শক্তিকে একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দেবেন… কোন চিন্তা করবেন না – সাম্প্রদায়িক শক্তি হিন্দুজাতিকে ঐক্যবদ্ধ করবে! তার সামান্যতম সুযোগ আমরা রাখি নি। আমরা বর্ণভিত্তিক সংরক্ষণ প্রথা চালু করে দিয়েছি, যাতে হিন্দুরা না না জাতপাতে স্থায়ীভাবে বিভক্ত হয়ে যায় …”
গান্ধী-নেহেরু পরিবার ইরান ও ইতালিয়ান বংশোদ্ভূতের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার পর, ভারতে বিদেশি ধর্মের প্রভাব-প্রতিপত্তি আরোও বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশী-বিদেশি মিলিত যড়যন্ত্রে, পাকিস্তান প্রভাবিত মাদ্রাসার সিলেবাস অনুযায়ী তারা পাঠ্যসূচি সাজিয়েছে। কংগ্রেস-পাকিস্তানি- বাম মিলিত চক্রান্তে রচিত ইতিহাস পুস্তকে – বিদেশি দখলদারদের মহামানব হিসেবে চিত্রায়িত করা হয়েছে; দেশপ্রেমিক স্বাধীনতা সংগ্রামীদের চরিত্র হনন করা হয়েছে ন্যাক্কারজনক ভাবে।
আরবের তেল বেচা অর্থে পাকিস্তানি মাফিয়া ডনদের দিয়ে কুরুচিপূর্ণ সিনেমা বানিয়ে হিন্দু সংস্কৃতি ধ্বংস করে ফেলার অপচেষ্টা চালিয়েছে, লাভ জিহাদ- যৌন জিহাদ উৎসাহিত করা হয়েছে। দেশপ্রেমিক স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হলে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার নামে সেসব চলচ্চিত্র ব্যান্ড করে দেওয়া হয়। যারা দেশের স্বাধীনতা রক্ষায়, মা-বোনদের ইজ্জত রক্ষার জন্য জীবন দিয়েছেন, তাদের সম্পর্কে আলোচনা করা-লেখালেখি করা ‘উগ্র সাম্প্রদায়িকতা’ – আখ্যায়িত করে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির ছত্রছায়ায় পাকিস্তানের উচ্চ প্রশিক্ষিত ধর্মযোদ্ধারা মন্দির, পার্লামেন্ট, হাসপাতাল, হোটেল প্রভৃতি স্থানে একের পর এক জঙ্গি হামলা চালিয়ে যখন নিরীহ মানুষ হত্যা করছিল, তখন পাকিস্তানি জঙ্গি সন্ত্রাসীদের অপকর্ম আড়াল করতে সোনিয়া গান্ধী-রাহুল-গান্ধী-আহমেদ প্যাটেল প্রমূখ কংগ্রেস নেতৃত্ববৃন্দের কন্ঠে ধ্বনিত হতো গগনবিদারী গর্জন “হিন্দু জঙ্গিবাদ-গৌরিক সন্ত্রাস”। হিন্দু জাতির চরিত্রহননে সেক্যুলারদের কি জঘন্য অপপ্রয়াস! রাহুল গান্ধী পার্লামেন্টে পাকিস্তানের এক শীর্ষ জঙ্গি-সন্ত্রাসীকে ‘জনাব’ সম্বোধিত করে সম্মানিত করেছিলেন। অথচ ওই সন্ত্রাসী ভারতের সমস্ত জঙ্গি হামলার মূল পরিকল্পনাকারী।
ধর্মনিরপেক্ষতার প্রকৃত স্বরূপ
রাহুল গান্ধীর ওই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে পরিষ্কার হয়ে যায়, ‘সেক্যুলার-পাকিস্তানি’ দোস্তি। এখন মা-বেটা মিলে সদলবলে লাফাচ্ছে চীনের পক্ষে। এদের উদ্দেশ্য সেনাবাহিনীর মনোবল ভেঙে দেওয়া। ক্ষমতায় থাকাকালে সোনিয়া গান্ধীর চেষ্টা করেছিলেন, সেনাবাহিনীর মধ্যে এমন কোটা সিস্টেম চালু করতে – যাতে অনুপ্রবেশকারীদের সাথে পাকিস্তানি এজেন্টরা সেনাবাহিনীতে ঢুকে গিয়ে দেশের পিঠে ছুরি চালাতে পারে। সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যাপক সচেতনতামূলক প্রচারে, ওই ভয়াবহ চক্রান্ত নস্যাৎ হয়ে যায়। প্রচণ্ড গণ-আক্রোশে কংগ্রেস টানা দু’বার বিরোধী দলের মর্যাদা হারিয়েছে। তাই বলে হিন্দু জাতির বিরুদ্ধে বাম-কংগ্রেসী ষড়যন্ত্র থেমে নেই। এরা যাতে ক্ষমতায় ফিরে আসতে না পারে – এজন্য হিন্দুজাতিকে সর্বদা সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে।
আমাদের সাথে থাকতে একটি লাইক দিয়ে রাখুন।-ধন্যবাদ