10
কাশ্মীরের যে অংশটা পাকিস্থান দখল করে রেখেছে সেটা উদ্ধারের কথা শেখ আব্দুল্লা কোন দিন বলেননি। এই বিলে পাকিস্থান থেকে দলে দলে মুসলমানদের চলে আসার আইনী ব্যবস্থা করা হল। উড়িষ্যার প্রাক্তন আই জিমিঃ এস. কে. ঘােষ একটি বই লিখেছেনঃ মুসলীম ইন ইন্ডিয়ান পলিটিকাল রিসার্চ ইনষ্টিটিউট থেকে বইটা প্রকাশিত। তাতে তিনি লিখেছেন ? এই বিলের ফলে এয়ার মার্শাল আসগর খানও এখন শ্রীনগরে এসে নাগরিক হতে পারেন, যিনি বলেছিলেন শ্রীনগর দখল করতে না পারলে বম্বিং করে ধ্বংস করে দিয়ে আসবে। কাশ্মীরের সংবিধানে আছে কোনাে কাশ্মীরী দশ বছর কাশ্মীরের বাইরে থাকলে তার নাগরিকত্ব চলে যাবে।
আগে এটা পড়ুন….ছাগলাদ্য নেতৃত্ব ও কাশ্মীর- শিবপ্রসাদ রায় (প্রথম পর্ব)
অথচ পাকিস্থানের লােকদের কাশ্মীরে এলে নাগরিকত্ব দেবার জন্য এই সাংঘাতিক বিলটি পাশ করানাে হলাে। অবাক হবার মত ঘটনা, ১৯৪৬ সালে প্রত্যক্ষ সংগ্রামের সময় হাজার বিশেক হিন্দু পশ্চিম পাঞ্জাব থেকে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছিল জম্মু-কাশ্মীরে। এখন তাদের সংখ্যা পঁচাত্তর হাজার। এরা আজ পৰ্য্যন্ত কাশ্মীরের নাগরিকত্ব পায়নি। নিজের নামে জমি কিনতে পারে না। ব্যবসা করতে পারে না। বিধানসভার ভােট দিতে পারে না। লােকসভায় ভােট দিতে পারে। তারা ভারতের নাগরিক কিন্তু কাশ্মীরের নাগরিক নয়। কাশ্মীরে তারা অবাঞ্ছিতউৎপাত। ভারতীয় জনতা পার্টি ব্যতীত এইবিল এবং এই অবস্থাকে সব রাজনৈতিক দল সমর্থন করে। সাংবাদিক বুদ্ধিজীবিরাও এবিষয়ে প্রতিবাদমুখর নয়। এইরাজনৈতিক নেতা এবং বুদ্ধিজীবিদের ছাগলাদ্য বুদ্ধির অধিকারীবিশেষণ যথার্থ বলেই মনে হয়। শেখ সাহেব আরাে একটি কাজ করে গেছেন যা অনেকে ভাবতেই পারেন না। তিনি রেশন ব্যবস্থাতেও বৈষম্য ঘটিয়েছেন। মুসলমানদের চেয়ে হিন্দুরা রেশন কম পাবে। জম্মু-কাশ্মীরে প্রতিটি হিন্দু, মুসলমানদের অপেক্ষা রেশনে মালকম পায়।এটিও প্রয়াতা প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর অভিযােগ জম্মুর নির্বাচনী সভায়। প্রতিকার তার হাতে ছিল, তা কিন্তু করেননি। অভিযােগটি তুললেন হিন্দু ভোেট পাবার জন্য।
ছাগলাদ্য নেতৃত্ব এবং কাশ্মীর
ফারুক আবদুল্লা আর এক বিতর্কিত ব্যক্তি, যিনি লন্ডনের নাগরিক। বাবার আগ্রহে ভারতে এসে এমপি হয়ে গেলেন, কিন্তু ভারতের নাগরিক নন তখনও। অনেক পরে নাগরিক হয়েছেন। সেটাও ভারতীয় জনতা পার্টির সােরগােলের ফলে। অন্য দলগুলি এ বিষয়ে ছিল নির্বাক। তারপর ফারুক সাহেব মুখ্যমন্ত্রী হলেন। আসলে প্রধানমন্ত্রী। আজও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রীদের বলা হয় “উজিরে আজ”মানে প্রধানমন্ত্রী কাশ্মীরের বেতার এখনও আকাশবাণী নয়। অল ইন্ডিয়া রেডিও নয়, রেডিও কাশ্মীর। ফারুকের আমলে পাকিস্থানী পতাকা উড়তে লাগল বেশী করে। চোদ্দই আগষ্ট পালিত হতে থাকল পাকিস্থানের স্বাধীনতা দিবস। কাশ্মীরের যেখানে সেখানে। খালিস্থানীদের ট্রেনিং সেন্টার তৈরী হলাে বিভিন্ন স্থানে। ষ্টেডিয়ামে ফারুকের উপস্থিতিতে ভারত ওয়েষ্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট খেলার সময় পাকিস্থানী পতাকা দেখানাে এবং ভারতীয় খেলােয়াড়দের পচা ডিম ছুঁড়ে মারা হলাে। দুবছরে তিনশাে হিন্দু মন্দির ধ্বংস করা হলাে। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা আশােক সিংঘল ফারুকের সঙ্গে দেখা করে এবিষয়ে বলতে তিনি বললেন ও মন্দির তৈরি করলে যখন মুসলমানেরা ভেঙে দিচ্ছে তখন আবার নতুন মন্দির তৈরী করবার দরকার কি? ধর্মনিরপেক্ষ বাপের উপযুক্ত ধর্মনিরপেক্ষ ছেলে। এইরকম একজন হিন্দুধর্ম বিদ্বেষীকে কাঁধে তুলে নাচানাচি করল ভারতের সব বিরােধী দল। মার্ক্সবাদীরা মুসলীম ভােট সংগ্রহের জন্য নির্বাচনের সময় তাকে কাজে লাগালাে। রাজীব গান্ধী তার সঙ্গে আঁতাত করে কাশ্মীরে ক্ষমতার ভাগীদার হলেন। ফারুক সাহেবের বায়না ছিল কাশ্মীরের প্রধান বিচারপতি অন্য রাজ্যের হলে চলবেনা।কাশ্মীরী এবং অবশ্যই তিনি মুসলমান হবেন। এরপর কে অবিশ্বাস করবে কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ নয়?
এই হচ্ছে আমাদের রাজনীতি। বিশুদ্ধ এবং বৃহৎ ছাগলাদ্য রাজনীতি। এখন একটা ছেলেমানুষেও জানে কাশ্মীর পরােপুরি পাকিস্থানের নিয়ন্ত্রণে। যিনি কাশ্মীরকে ভারতের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারতেন, পাকিস্থান এবং তার তাবেদার দলগুলির ইচ্ছায় সেই জগমােহনকে কাশ্মীর থেকে সরিয়ে নিয়ে আসা হলাে। পাকিস্থানের রাস্তায় মিছিলে মিছিলে শ্লোগান দেওয়া হলাে জগমােহন,
ছাগলাদ্য নেতৃত্ব এবং কাশ্মীর
ভাগমােহন। সে আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালিত হয়ে গেল ভারতে। সব দলের আগ্রহে। কাশ্মীরে প্রতিটি মসজিদ থেকে অহােরাত্র ভারত বিরােধী অর্থাৎ হিন্দুবিরােধী প্রচার চালানােহয়। হিন্দুবিরােধী বক্তৃতার টেপ চালিয়ে টেপরেকর্ডার বেঁধে দেওয়া হয় কুকুরের গলায়। তবু ভারতীয় শব্দটি কাশ্মীরে সম্পূর্ণ নয়। ভারতীয় কুত্তা বললে তবে সম্পূর্ণ হয়। কাশ্মীরে ভারতীয় সময় বাতিল। পাকিস্থানের সময় অনুসরণ করা হয়। ভারতের অপেক্ষা পাকিস্থানের ঘড়িএকঘন্টা এগিয়ে থাকে। কাশ্মীরেও তাই। হিন্দু বিবাহিতা মহিলাদের সিঁদুর পরা চলবে না। সবাইকে বােরখা পরতে হবে। পাকিস্থানের নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেককে ডানহাতে ঘড়িবাঁধতে হবে।বাঁহাতে বাঁধলে প্রাণ দিতে হবে।নমস্তের বদলে আদাব এবং শ্রীর বদলে জনাব ব্যবহার হবে। দুরদর্শনে মহাভারত প্রদর্শনের সময় কাশ্মীরে মহাভারত দেখা অপরাধ ছিল। দেখলে প্রাণদন্ড। তিন লক্ষাধিক হিন্দুকে কাশ্মীর থেকে প্রাণটুকু মাত্র নিয়ে পালিয়ে আসতে হল। তখন তাে আরাে এগিয়ে গেছে উগ্রপন্থী মুসলীম যুবকেরা। তারা ইস্তাহার ছাপছে ইংরাজী ভাষায়। তার বিষয় হচ্ছে হিন্দু যদি কাশ্মীরে নিরাপত্তা চাও তাহলে তােমাদের মেয়েদের আমাদের হাতে তুলে দাও। সংবাদপত্রে নিত্য এইসব সংবাদ পাঠ করছেন সকলেই।তথাপি এদেশের রাজনৈতিক নেতা এবং পন্ডিত বুদ্ধিজীবিরা বলছেন কাশ্মীর সমস্যা সম্পূর্ণ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক। হিন্দু মুসলমানের কোনাে ব্যাপার নেই। র্যাডিক্যাল নেতা বােম্বে হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি ভি. এম. তারকুন্ডে একদল বুদ্ধিজীবিকে সঙ্গে নিয়ে কাশ্মীর ভ্রমণ করে এসেবিবৃতি দিলেন, কাশ্মীরে বাস্তবিক পক্ষে সমস্যা সৃষ্টিকরেছেR. S. S. এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। এই ছাগলাদ্য বুদ্ধিজীবিদের তৈরীকরা কৃত্রিম পরিবেশ থেকেই গােলা জনগণের একাংশ মন্তব্য করেন এসব হচ্ছে রামচন্দ্রের মন্দির নির্মাণের জন্য। যেন এর আগে কাশ্মীর ছিল ঝিলম নদীর মত নিস্তরঙ্গ। চেনার গাছগুলির মত শান্ত নিস্তব্ধ। সি পি এমন সাইফুদ্দিন চৌধুরী, এমপি প্রতিটি সভায় বলছেন, আমি কাশ্মীরে গিয়ে দেখে এসেছি হিন্দু-মুসলমানের ঐক্য।রাত জেগে মুসলমানেরা
ছাগলাদ্য নেতৃত্ব এবং কাশ্মীর
১৩
হিন্দুদের বাড়ী পাহারা দিচ্ছে। ঐক্য পাহারার ঠেলায় লক্ষ লক্ষ হিন্দু পালিয়ে আসছেকাশ্মীর ছেড়ে।তথাপি এদেশের জনগণকে এই ধরণের কথা শুনতে হয়। আর এক র্যাডিক্যাল লেখক গৌরকিশাের ঘােষ ঘটনার দশমাস পরে ভাগলপুরে গেলেন মনুষ্যত্বের সন্ধান করতে। ক্ষেত্র শুধু মুসলমান পাড়াগুলি। মুসলমানেরা কিভাবে হিন্দুদের বাঁচিয়েছে তার বিবরণ। রামশিলার মিছিল প্রথম আক্রমণ করে মুসলমানেরা,ইউনিভার্সিটি হােষ্টেলে আনসারী নামে এক গুণ্ডার মুসলমান গুণ্ডার নেতৃত্বে ৪৫০ জন হিন্দু ছাত্রকে হত্যা করা হয়। একথা তিনি উল্লেখের প্রয়ােজন মনে করলেন না।এই হচ্ছে এদেশের মহান সাহিত্যকারের মনুষ্যত্বের অনুসন্ধান।
কাশ্মীরের ব্যাপারে প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মুফতি মহম্মদ সঈদ থেকে শুরু করে অনেকেই বােঝাতে চেয়েছেন কাশ্মীরের সমস্যা হিন্দু মুসলমান সমস্যা নয়। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সমস্যা। বেছে বেছে হিন্দু হত্যা হিন্দু মন্দির ধ্বংস হিন্দু বিতাড়ণ দেখেও প্রকৃত সত্য কেউ উচ্চারণ করছেন না। মৌলভী ফারুকের মত দুচারজন মুসলমান মরছে ঠিকই, সেটা কিন্তু তাদের ভারতপ্রীতির জন্য নয়। ওটা হচ্ছে পাকিস্থানপন্থী এবং স্বাধীন কাশ্মীরপন্থীদের আভ্যন্তরীণ লড়াইয়ের ফল। ভারত কিন্তু দুপক্ষেরই সমান দুশমন। ভারতের মুল সমাজ এটি বুঝতে অক্ষম। তার কারণ ইসলাম সম্পর্কে শুধু তাদের অজ্ঞতাই নয়, নিজেদের আরােপিত ধারণার স্বরচিত অন্ধকারে তারা নিমজ্জিত। ইসলাম বা ইসলামিক রাষ্ট্রের ধারণার পিছনে আছে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসী মানসিকতা। ইসলাম ধর্মীয় নয় রাজনৈতিক ক্ষমতা বিস্তারের এক মারাত্মক অস্ত্র। ধর্মের আড়ালে সাম্রাজ্য বিস্তারইসলামের মূল লক্ষ্য। যুদ্ধের মাধ্যমে জোর করে কোনাে দেশ বা জাতিকে ইসলামের নিয়ন্ত্রণে আনা ধর্মীয় আদেশ হিসাবেসকল মুসলমানের দ্বারা স্বীকৃত। শুধুমাত্র এই কারণে সকল মুসলীম রাষ্ট্র স্বাধীন কাশ্মীর অথবা পাকিস্থান অনুগত কাশ্মীরের অন্ধ সমর্থক। এদেশের মুসলমানদের একটি সংগঠনও কাশ্মীর বিষয়ে প্রতিবাদ করেনি। মৌলানা বুখারী প্রমুখ কিছু মুসলীম নেতা প্রকাশ্যে কাশ্মীরের
১৪
ছাগলাদ্য নেতৃত্ব এবং কাশ্মীর
স্বাধীনতা আন্দোলনকে স্বাগত জানিয়েছেন। প্রকৃত মনােভাবের অনুসন্ধান চালালে দেখা যাবে ভারতের অধিকাংশ মুসলমান কাশ্মীর প্রশ্নে পাকমনােভাবের পক্ষে। অথচ এদেশের ছাগলাদ্য রাজনৈতিক পরম্পরায় কোনাে সরকার সত্যবাক্য ঘােষণা করতে পারে না। স্পষ্ট ভাষায় সকল মুসলীম এবং মুসলীম রাষ্ট্রগুলিকে জানিয়ে দেওয়া উচিতঃকাশ্মীরে মুসলমানরা যদিভারতকেমাতৃভূমি হিসাবে মেনে নিতে পারে তাহলে দেশভাগের পর এদেশে যে সমস্ত মুসলীম রয়ে গেছেন তাদের পত্রপাঠ পাকিস্থানে চালান করাহবে।কারণ তারা পাকিস্থানের পক্ষ নিয়ে ভারতেবসবাসকরবে এটা সহ্য করা যায় না।এইএকটি বাক্য উচ্চারণে ভারতের রাজনীতির স্থিতিশীলতা ফিরে আসত। পাকিস্থান ভারত আক্রমণের উন্মাদনার পরিবর্তে উদ্বাস্তু আগমনের আশংকায় সংযত থাকত। আমরা সত্যি সত্যি পাকিস্থানকে বন্ধুরূপে পেতাম। কিন্তু আমাদের রাজনীতির সেই ট্রাডিশন সমানে চলে আসছে। সত্যের সঙ্গে নয় আত্মপ্রবঞ্চনার সঙ্গেই আমাদের রাজনীতির ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ।
ভারতবর্ষ একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। কাশ্মীর ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চাইলেও আমরা তা মেনে নিতে পারি না। নিরাপত্তার দিক দিয়ে চিন্তা করলে কাশ্মীরের অবস্থান আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হিমালয়ের পশ্চিমে বিমানঘাঁটি হিসাবে কাশ্মীর উপত্যকার কোনাে বিকল্প নেই। পাকিস্থান যেহেতু চিনের অনুচর সেহেতু পাকিস্থান কাশ্মীর হাতে পেলে ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে বিপর্যস্ত করতে পারে। সুতরাং কোনাে সুস্থ মস্তিষ্ক সরকার যার বিন্দুমাত্র দেশের প্রতি দায়িত্ববোেধ আছে সে কিছুতেই কাশ্মীর হাতছাড়া করবে কিংবা স্বাধীন কাশ্মীরের দাবী মেনে নেবে না। কাশ্মীরের জনগণ কি ভাবছে তা আমাদের ভাবার প্রয়ােজন নেই। যারা ভারতে থাকতে রাজী নয় তারা স্বচ্ছন্দে পাকিস্থানে চলে যেতে পারে, আমরা বাধা দেব না। কিন্তু কাশ্মীরের বা ভারতের সুচাগ্র ভূমিও আমরা ছাড়ব না। এই সহজ সঠিক সিদ্ধান্ত না নিয়ে সবাই কাশ্মীরের আগুনে ঘৃতাহুতি দিয়ে চলেছেন।
কাশ্মীর সমস্যার ছাগলাদ্য নেতৃত্ব এবং কাশ্মীর সমাধান চাইলে বৃহৎ ছাগলাদ্য রাজনৈতিক ঐতিহ্য থেকে মুক্তি নিতে হবে, সেইসঙ্গে কাশ্মীর সমস্যাকে আন্তর্জাতিক ইসলামের গতি প্রকৃতির আলােকে বিচার করতে হবে। তবেই ঘটবে সমস্যা সমাধানের নামে অলীক কল্পনার অবসান। মনে রাখতে হবে পাকিস্থান সরকারই শুধু কাশ্মীরে সাহায্য দেয় না, জনগণও চাঁদা তুলে পাঠায়। ইরান আমাদের কি ঘনিষ্ট বন্ধু! বন্ধুত্বের পরাকাষ্ঠা দেখাবার জন্য পৃথিবীতে সর্বপ্রথম না পড়েই আমরা রুশদির লেখা স্যাটানিক ভার্সেস নিষিদ্ধ করে দিলাম। খােমেনির মত একটি ব্যক্তির মৃত্যুতে সাতদিন রাষ্ট্রীয় শােক পালিত হলাে। কাশ্মীর প্রশ্নে ইরান কিন্তু ভারতের বিরুদ্ধে। আফগানিস্থানের মুজাহিদিনরা গেরিলা হিসাবে কাশ্মীরে এসে অন্তর্ঘাত চালিয়ে যাচ্ছে। দুএকটি আরব রাষ্ট্র পাকিস্থানের পক্ষে নয় বলে যে সরকারী প্রচার চলছে তা নেহাৎই আত্মপ্রবঞ্চনাঘটিত আত্মপ্রসাদ। সকলের আন্তরিক ইচ্ছা প্রকাশ্যে প্রকটিত হয়েছিল রাষ্ট্রসঙ্ঘে। ১৯৫৭ সালে কৃষ্ণামেননের বক্তৃতার পর। এরপরেও যারা প্যান ইসলামের লক্ষ্যকে কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে মেলাতে পারছেন না তাদের একটি গুপ্ত হ্যান্ডবিলের কথা জানা উচিত। কাশ্মীরে এটি ব্যাপকভাবে প্রচারিত। প্রচারক জামাতে ইসলামী। তাতে পরিষ্কার লেখা হয়েছেঃ আমাদের শত্রুতা হিন্দুস্থানের সঙ্গে। এতে কি ভাবে ধ্বংসাত্মক কাজ চালাতে হবে, আতংক সৃষ্টি করতে হবে, হত্যা করতে হবে তার ব্লুপ্রিন্ট আছে। পুরাে অভিযানটির সাংকেতিক নাম অপারেশন টোপাক। এতে আছে আমরা একটি স্বাধীন ইসলামী রাষ্ট্ররূপে কাশ্মীরকে দেখতে চাই। আমাদের হাতে সময় অত্যন্ত কম। খােদার ফজলে আমাদের কাছে আধুনিকতম অস্ত্রের ভান্ডার আছে। আমাদের কাছে এমন কিছু তরুণ আছে যারা হিন্দুস্থানের সেনাদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত। এরা গ্রামে গ্রামে প্যালেষ্টাইনী মুক্তিযােদ্ধা বা আফগান মুজাহিদদের মত গেরিলা লড়াই চালিয়ে যাবে। চীনের বন্ধুরা যথাসময়ে চীন-ভারত সীমান্তে গন্ডগােল করে হিন্দুস্থানী সেনাদের ব্যস্ত করে রেখে দেবে। আমাদের মনে রাখতে হবে ভারতের সঙ্গে মুখােমুখী
১৬
ছাগলাদ্য নেতৃত্ব এবং কাশ্মীর
যুদ্ধে আমরা কোনদিন পারব না। চোরাগােপ্তা অন্তর্ঘাত, সরকারী সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি, হঠাৎ সেনাবাহিনীর ওপর আঘাত, হিন্দু সরকারী অফিসারদের হত্যাকান্ড চালিয়ে যেতে হবে। একেবারে শেষে লেখা, আমাদের উদ্দেশ্য ঃ ইসলাম হামারা মকসদ হ্যায়, কুরাণ হামারা দস্তুর হ্যায়, জিহাদ হামারা রাস্তা হ্যায়। মানে ইসলাম আমাদের লক্ষ্য, কোরাণ আমাদের পাথেয়, জিহাদ মানে নিরস্তুর অমুসলমানদের নিধন করা আমাদের পথ। এই হ্যান্ডবিলের বিবরণ দেশের গুরুত্বপূর্ণ হিন্দী ইংরেজী কাগজে প্রকাশিত হয়েছে। তথাপি ছাগলাদ্য বুদ্ধিজীবি ও নেতারা মিথ্যার প্রতিযােগিতায় একটি ধোঁয়াশা সৃষ্টি করে জনগণকে বুঝতে দিতে চায় না কাশ্মীরের প্রকৃত অবস্থাটিকে। অতীতের চক্রান্ত এবং ভবিষ্যতের পরিকল্পনা জেনেও দেশকে ঠেলে দেয় সর্বনাশের দিকে। ফারুকের প্রথম মন্ত্রীসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান আতাউল্লা সুরাবর্দী সংবাদপত্রে বিবৃতি দিয়েছিলেন, আমরা কাশ্মীরীরা ইচ্ছা করলেই পাকিস্থানে যুক্ত হতে পারতাম। পাকিস্থানে যুক্ত না হয়ে আমরা হিন্দুস্থানে এলাম কেন? গােটা দেশকে পাকিস্থান বানাবাে বলে। তারও আগে থেকে শকুনির দৃষ্টি ছিল মহম্মদ আলি জিন্নার। এখন প্যান-ইসলামের সহযােগিতায় কাশ্মীরকে লেবাননের পৰ্য্যায়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। লেবাননের পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারলে ভারতের চিরস্থায়ী মাথা ধরার বিষয় হয়ে উঠবে কাশ্মীর। আর সে ব্যাধি ধীরে ধীরে সম্প্রসারিত করা যাবে ভারতবর্ষের সর্বত্র। এখনই প্রায় লেবাননের মত পরিস্থিতি কাশ্মীর এবং পাঞ্জাবে। সমস্যাকে সঠিকভাবে তুলে না ধরে বুদ্ধিজীবি ও রাজনৈতিক নেতারা শৈথিল্য এবং উদাসীনতা দেখিয়ে কাশ্মীর নিয়ে গােটা দেশকে বিপদে ফেলে দিচ্ছেন। এ এক অসহনীয় অবস্থা। যাদের মধ্যে দেশের প্রতি বিন্দুমাত্র ভালােবাসা আছে এবং সমস্যাটি সঠিক ভাবে বুঝতে পেরেছেন তাদের রক্তে কিন্তু আগুন ধরে যাচ্ছে। ষ্টেটম্যানে প্রাক্তনকর্ণেল জে. কে. দত্ত অস্থির হয়ে লিখেছেন কাশ্মীর সম্পর্কে আমাদের চরমপন্থা অবলম্বন করতে হবে। অবিলম্বে ৩৭০ ধারা উচ্ছেদ করে কয়েক লক্ষ হিন্দুকে বিভিন্ন রাজ্য থেকে এনে কাশ্মীরে বসবাসের ব্যবস্থা করতে
১৭
ছাগলাদ্য নেতৃত্ব এবং কাশ্মীর হবে। সঙ্গে সঙ্গে কঠোর সামরিক ব্যবস্থা নিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহীদের নির্মূল করে দিতে হবে। এটা না পারলে কাশ্মীর ছেড়ে দেওয়া হাে। হাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহীদের পালন পােষণ করে কাশ্মীরকে লেবানন করার কোনাে প্রয়ােজন নেই।
যে কোনাে সুস্থ ব্যক্তিই বুঝতে পারবেন কাশ্মীর সমস্যা সমাধানের একমাত্র সূত্র ৩৭০ ধারার উচ্ছেদ। পেটে টান পড়লে বিপ্লব অনেকটা ম্রিয়মান হয়ে যাবে। বিভিন্ন রাজ্য থেকে কয়েক লক্ষ হিন্দুকাশ্মীরে এলে জনসংখ্যার ভারসাম্য ফিরে আসবে। অন্যান্য রাজ্যের মত কাশ্মীর তখন শন্তিপুর্ণ হয়ে যাবে। নইলে কাশ্মীরের ক্ষত সম্প্রসারিত হবে। হবে না, হতে শুরু হয়েছে। নাগাল্যান্ডে, মিজোরামে ৩৭১ ধারা যুক্ত হয়েছে। মিজো ছাড়া, নাগা ছাড়া ওখানে কেউ নিজের নামে জমি কিনতে পারে না, ব্যবসা করতে পারবেনা। মেঘালয় ৩৭১ ধারার জন্য দাবী জানাচ্ছে। এইসব প্রদেশে অন্য রাজ্যের লােকেদের বসবাস অনিশ্চয়তায় আশংকায় দোদুল্যমান হয়ে উঠেছে। নিকট ভবিষ্যতে এইসব রাজ্য হয়ে উঠবে এক একটি কাশ্মীর। এই সব অঞ্চলগুলিতে অন্য একটি সাম্রাজ্যবাদ সক্রিয় রয়েছে।খ্রীষ্টিয় সাম্রাজ্যবাদ।মুসলমানের সংখ্যা, খ্রীষ্টানদের সংখ্যা বাড়লেই সেখানে ভারত বিরােধিতা বিচ্ছিন্নতা দেখা দিচ্ছে, এই সরল সত্যটি এদেশের ছাগলাদ্য নেতৃত্বের অনুভবে কিছুতেই আসছে না। ভারতকে যারা এখনও এক রেখেছে ও রাখতে পারে সেই হিন্দু সমাজ সংগঠিত হলে,
শক্তিশালী হলে এই ছাগলেরা আতংকবােধ করছে।
কাশ্মীর যে আক্ষরিক অর্থে ভারতের নয় এবং এদেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলগুলি কাশ্মীরকে ভারতে রাখতে চায়না, তার শেষতম প্রমাণ বিদ্যার্থী পরিষদের কাৰ্য্যক্রম। ভারতের বৃহত্তম জাতীয়তাবাদী ছাত্র সংগঠন বিদ্যার্থী পরিষদশ্রীনগরে জাতীয় পতাকা তুলতে চেয়েছিল। তাদের পতাকা তুলতে দেওয়াহয়নি।এনিয়ে কোনাে রাজনৈতিক দলের মাথাব্যথা নেই। কোনাে অপমানবোেধনেই। মাের্চা সরকার গঠিত হবার পর কাশ্মীর সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে একটি সর্বদলীয়।
আগে এটা পড়ুন….ছাগলাদ্য নেতৃত্ব ও কাশ্মীর- শিবপ্রসাদ রায় (প্রথম পর্ব)
এটি একটি ধারাবাহিক তিন পর্বে পোস্ট, আজ প্রথম পর্ব বাকি পর্ব পড়ার জন্য নজর রাখুন আমদের পেজে।-ধন্যবাদ
ছাগলাদ্য নেতৃত্ব ও কাশ্মীর
লেখক- শিবপ্রসাদ রায়