হিন্দু রাজতন্ত্র ও শৈবতীর্থ

ভিয়েতনামের মাটিতে সহস্র বছরের হিন্দু রাজতন্ত্র ও শৈবতীর্থর এক অজানা ইতিহাস।। 

হিন্দু রাজতন্ত্র ও শৈবতীর্থ: ভিয়েতনামের মাটিতে সহস্র বছরের হিন্দু রাজতন্ত্র, ও শৈবতীর্থর এক অজানা ইতিহাস।। 

বৈদিক যুগ এবং বৈদিক উত্তর যুগে সমগ্র এশিয়া মহাদেশে  হিন্দু ধর্মের অবাধ বিচরণ ছিল। আজ আলোচনা করছি বহু প্রাচীন ভিয়েতনামের শৈব তীর্থ ‘মাই সন’-কে নিয়ে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ঘন অরণ্যে পূর্ণ একটি সুন্দর, দেশের নাম ভিয়েতনাম। ভারতের সাথে প্রাচীন যুগ থেকেই ভিয়েতনামের মৈত্রীর বন্ধন রয়েছে। পূর্বে ভারতীয় বৌদ্ধ ধর্ম এবং সনাতন ধর্মের একটি বিচরণক্ষেত্র ছিল ভিয়েতনাম। খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীতে রাজা দ্বিতীয় ইন্দ্রবর্মণের শাসনকালে মধ্য ভিয়েতনামে একের পর এক শিব মন্দির নির্মিত হয়েছিল।

এই রাজবংশের একটি ধারা ছিল বংশের প্রত্যেক উত্তরপুরুষ তার রাজত্বকালে একটি শিবলিঙ্গ সহ মন্দির নির্মাণ করতেন। তাই ভিয়েতনামের এই প্রদেশ জুড়ে ভারত এবং ভিয়েতনামের শিল্প রীতিতে তৈরি হয়েছিল একাধিক শিব মন্দির। সেই সময় সমগ্র এশিয়ায় একটি শৈবতীর্থের রূপ নেয় ভিয়েতনামের এই ” মাই সন”।

 

১৮৫৮ থেকে ১৮৮৭ পর্যন্ত ভিয়েতনামে ফরাসিদের আগ্রাসন চলেছিল। ১৮৯৭-তে ফরাসি সৈনিকের এক বিশাল রেজিমেন্ট দুর্গম অরন্যের ভেতর থেকে পাথরের এই ‘মাই সন’ শৈবতীর্থের সন্ধান পান। তারা সাথে সাথে ভিয়েতনাম থেকে এই মন্দিরের যাবতীয় তথ্য ফ্রান্সে পাঠিয়ে দেন।

 

১৮৯৯ সালে একটি ফরাসি গবেষক সংস্থা চার বছর ধরে ১৪২ হেক্টর জঙ্গল অঞ্চলে শৈব তীর্থের এই ইতিহাস উদ্ধার করেন। বেরিয়ে আসে হিন্দু ধর্ম ও সংস্কৃতির পীঠস্থান ” মাই সনের “একের পর এক মন্দির। সমগ্র বিশ্ব জানতে পারে ভিয়েতনামের প্রায় এক হাজার বছর ধরে চলা একটি সমৃদ্ধশালী হিন্দু রাষ্ট্রের কথা। 

 

ভিয়েতনামের চাম-গোষ্ঠীর মানুষরাও সেই সময়ে হিন্দু ধর্ম কে আপন করেছিলেন। ফলে ভিয়েতনামে তৈরি হয়েছিল একটি শক্তিশালী হিন্দুরাষ্ট্র। এই রাষ্ট্রের রাজধানী ছিল ‘সিমহাপুরা’। পরবর্তীকালে এই রাজারা রাজধানী অপরূপা ‘ইন্দ্রপুরী’-তে স্থানান্তরিত করেন।

 

এখানে ‘মাই সন’ কথাটির অর্থ হল ‘অপরূপ পর্বতশ্রেণী’। ‘মাই সন’-এর পাশের পাহাড় কে কৈলাস ও মহাপর্বত বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছিল। আশ্চর্যের বিষয় এই কৈলাস পাহাড় থেকে নেমে আসা একটি ঝর্নাকে সেই সময় ভিয়েতনামের মানুষ গঙ্গা নামে অভিহিত করেছিল। ‘মাই সন’-কাছেই ছিল সমৃদ্ধশালী হিন্দু নগর ‘ইন্দ্রপুরা’।

 

ধর্মবিশ্বাসে চম্পার রাজারা ছিলেন শৈব, তারা বিশ্বাস করতেন ভিয়েতনাম অর্থাৎ চম্পাদেশের রক্ষাকর্তা স্বয়ং শিব বা মহাদেব। তাই এই রাজাদের রাজত্বকালে গড়ে তুলেছিলেন ৩০০টি সু-বিশাল মন্দির যার মধ্যে ৭১টি বড় শিব মন্দির ছিল মাত্র দুই কিলোমিটারের মধ্যে। বর্তমানে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (ASI) ‘মাই সন’-এ এই মন্দিরের খননকার্য এবং প্রত্নতত্ত্ব উদ্ধারে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছে।।

সুরথ চক্রবর্তী
মন্দির ও শিল্পের ইতিহাস।।