ক্যালকুলাস

ক্যালকুলাস কি নিউটন আবিষ্কার করেন? সেরকমই জানতাম l কিন্তু……

ক্যালকুলাস কি নিউটন আবিষ্কার করেন? সেরকমই জানতাম l 2001 এ ব্যাঙ্গালোরে চাকরি করতে গিয়ে এম কে নরসিমহাইয়া নামের ভদ্রলোককে পাই বস হিসেবে l পাঞ্জাব সেচ দপ্তরের মুখ্য প্রযুক্তিবিদ হিসেবে অবসর নিয়ে শেষ জীবনে ব্যাঙ্গালোরে একটি পরামর্শদাতা কোম্পানিতে আমাদের বস হিসেবে কাজ করতেন l সত্যি নাকি জানি না, অনেকে বলতেন উনি শকুন্তলা দেবীর মামা l

 

অসাধারণ মুখে মুখে অংক করার ক্ষমতা ছিল 82 বছর বয়সেও l 2004 এ কাজ ছেড়ে শহর ছেড়ে চলে আসার সময় ‘লীলাবতী গণিত’ বইটি উপহার দিলেন l ১০০০ বছরের পুরোনো ভারতীয় গণিতের বই দেখে চমকে যাই lক্যালকুলাস

পরে জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সংগে যুক্ত হবার পর, লীলাবতী গণিতম বইটি খুঁজে বের করি এবং তাঁর পিতা তথা লেখক ভাস্করচার্যকে নিয়ে কাজ শুরু করি l কোন বাঙালী কিন্তু আমাকে লীলাবতী গণিত তো দূরের কথা, যাদব চক্রবর্তীর পাটিগণিত কিনতেও কেউ বলেন নি l

হয়তো আমাদের রাজ্যে সেই সংস্কৃতিই আমাদের জ্ঞান হবার পূর্বেই ( বঙ্গেশ্বরের জামানায় ) চলে গেছিল l ভাস্করচার্যকে নিয়ে কাজ করে যেটা জেনে সবচেয়ে আশ্চর্য হলাম যে, শুধু শূন্য আবিষ্কার নয়, কলনবিদ্যা অর্থাৎ ক্যালকুলাসও আমাদেরই আবিষ্কার l 

সিদ্ধান্ত শিরোমনি কবে লেখা সেটাও একটা পাজল অর্থাৎ ধাঁধার মাধ্যমে লিখে গেছেন ভাস্কর পণ্ডিত l মোহাম্মদ ঘুরি ভারত আক্রমণের একশ কুড়ি বছর আগে l বইটি চারটি ভাগে বিভক্ত l প্রথমভাগ লীলাবতী গণিতম, এর তেরটি অধ্যায়, অনির্ধারিত  সমীকরণ, শূন্য এবং শূন্য দ্বারা ভাগ, সংখ্যা তত্ব, ঋণাত্মক সংখ্যা, সূচক ইত্যাদি l এছাড়াও অনুপাত এবং সমানুপাতের তিনের সূত্র যা ইউরোপ এর পাঁচশো বছর আগে লিপিবদ্ধ করা l এছাড়াও অসাধারণ সব ধাঁধা l লীলাবতী অল্পবয়সে বিধবা হন এবং তার সময় কাটানোর সাথী হিসেবে ভাস্করচার্য লেখেন ওই ধাঁধা l

দ্বিতীয়ভাগ বীজগণিত : এখানে বারোটি অধ্যায় l ঋণাত্মক সংখ্যার বর্গমূল ইতিহাসে প্রথম লিপিবদ্ধ হয় সিদ্ধান্ত শিরোমনির দ্বিতীয় ভাগে l উনি বলে গেছেন কোন জিনিসকে শূন্য দিয়ে ভাগ করলে সেটা অপরিসীম হয় l ইউরোপীয়রা যাকে এখনো অসংজ্ঞায়িত বলে থাকে l

এখান থেকে উনি লিমিটের প্রথম উল্লেখ করেন l চক্রবল্ল পদ্ধতি উনি এখানে বিস্তারে বলেন যা 628 সালে লিপিবদ্ধ করে গেছেন ব্রহ্মগুপ্ত, পরে জয়দেব 900 সালে l Pell’ equation নামে যে সমীকরণ চালানো হয় তা iপেলের 500 বছর আগে এই বইতে লিখে গেছেন ভাস্কর l ভাস্করাচার্য এর সমাধান করে গেছেন, কিন্তু পেল পারেননি l তবু এটা তাঁর নামেই l দ্বিঘাত সমীকরণ এবং তার সমাধানের উল্লেখ আছে এই বইতে l

 

তৃতীয় ভাগে ফলিত জ্যোতির্বিদ্য l এখানে ব্রহ্মগুপ্তের মাধ্যাকর্ষণ সূত্রের উপর ভিত্তি করে উনি গ্রহ উপগ্রহের উপবৃত্তাকার কক্ষপথ বর্ণনা করেন l ব্যাখ্যা করেন অক্ষা\°শ এবং দ্রাঘিমাংশ l উনি বলে গেছেন এক বছর 365.2588 দিন l আধুনিক বিজ্ঞান 365.25636 দিন l পার্থক্য তিন মিনিট l সাম্প্রতিককালে ইউরোপ, আমেরিকা মেনে নিয়েছে ভাস্করচার্য ঠিক এবং তারা ভুল l

চতুর্থ ভাগ গোল অধ্যায় অর্থাৎ spherical geometry. এখানে আছে ত্রিকোণমিটির সূত্র l এখানে আছে মহাকাশবিদ্যা, ভূগোল, পৃথিবীর উপবৃত্তিয় গতিপথ, চন্দ্রের কক্ষপথ l এই চারটি অধ্যায় সিদ্ধান্ত শিরোমনিকে এমন এক উচ্চতায় নিয়ে যায় যা স্পর্শ করা অসম্ভব l ক্যালকুলাস

কিন্তু সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য, ক্যালকুলাসের উপর তার কাজ l Differential Calculus, Integral Calculus, Mathematical analysis এর উল্লেখ তিনি করে গেছেন নিউটনের বহু শতক আগেই l. তাঁকে অনুসরণ করে মাধব এবং কেরালার জেষ্ঠদেব এই বিদ্যা আরও এগিয়ে নিয়ে যান l মাধ্যাকর্ষণ শক্তির উল্লেখও করে গেছেন তার সূর্যসিদ্ধান্ত নামক বইয়ে নিউটনের বহু আগে l পৃথিবীর ব্যাস, পরিধি, বুধ, মঙ্গল, বৃহস্পতি এবং শনির প্রদক্ষিণ সময় তিনি ক্যালকুলেটর ছাড়া যা গণনা করেছেন তা আজকের আধুনিক বিজ্ঞানের গণনা ফলের খুব কাছাকাছি l

আধুনিক গণিত শাস্ত্রের ZERO থেকে INFINITE ELEMENT সব কিছুই ভারতের আবিষ্কার l কিন্তু সেটা জানতে শিখতে হবে সংস্কৃত ভাষা l জেষ্ঠদেবের কলনবিদ্যা, চরক সংহিতা কিম্বা সুশ্রুত সংহিতায় যে খনি এখনো লুকিয়ে তা জানার জন্য সারা পৃথিবী যখন দৌড়াচ্ছে, সারা দেশ যখন দৌড়াচ্ছে, তখন কেন পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে বোঝানো হয় সংস্কৃত পড়ে কোন লাভ নেই?

(ছবিতে ভাস্করচার্য, মাধব এবং জেষ্ঠদেব)
সুদীপ্ত গুহ