পাকিস্তানে সামরিক অভ্যুত্থান

পাকিস্তানে সামরিক অভ্যুত্থান : পাকিস্তানে কি আবার সামরিক অভ্যুত্থান পথে হাটঁছে, কেন এমন প্রশ্ন উঠছে?

সামরিক অভ্যুত্থান: পাকিস্তানে কি আবার সামরিক অভ্যুত্থান পথে হাটঁছে, কেন এমন প্রশ্ন উঠছে? ভারতের প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানে আবারও অভ্যুত্থানের সম্ভাবনা রয়েছে। সেখানে ইমরান খান ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মধ্যে সবকিছু ঠিকঠাক চলছে না

ভারতের প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানে প্রথম অভ্যুত্থান ঘটে স্বাধীনতার কয়েক বছর পর। এখন আবার একই ঘটনা ঘটতে পারে পাকিস্তানে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এখন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের প্রতি মোহভঙ্গ হয়েছে। এখন ইমরান খানের সরকারের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের চেষ্টা রয়েছে। এর তিনটি বড় কারণ রয়েছে।

সামরিক অভ্যুত্থান  তিনটি কারণে ইমরান বিপর্যস্ত

প্রথমত– পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে ইমরান খানের সম্পর্কের সম্পূর্ণ অবনতি হয়েছে। দ্বিতীয়ত, পাকিস্তান সরকার কট্টরপন্থী ইসলামী সংগঠনগুলোর সামনে মাথা নত করেছে। তৃতীয়– পাকিস্তানে মুদ্রাস্ফীতি শীর্ষে।

এখন এক এক করে এই তিনটি কারণ বিশ্লেষণ করা যাক। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর নতুন প্রধান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল নাদিম আঞ্জুম। পাকিস্তানে, আইএসআই, সেনাবাহিনীর সাথে, দেশের বেশিরভাগ বড় সিদ্ধান্ত নেয়। তবে আইএসআই প্রধান হিসেবে নাদিম আঞ্জুমকে নিয়োগ দেওয়ায় খুশি নন ইমরান খান। নাদিম আঞ্জুমের নাম অনুমোদন করতে তিন সপ্তাহ সময় লেগেছে বলে জানা গেছে।

সামরিক অভ্যুত্থানের বড় কারণ হয়ে ওঠেন ফয়েজ হামিদ

নাদিম আনজুম প্রাক্তন আইএসআই প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফয়েজ হামিদের স্থলাভিষিক্ত হবেন, যিনি ইমরান খানের খুব কাছের বলে বিবেচিত। 2018 সালের নির্বাচনে ইমরান খানের দলকে জয়ী করতে ফয়েজ হামিদ একটি বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন। 

আগামী বছর অর্থাৎ 2022 সালে, পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া অবসর নিচ্ছেন এবং পরের বছর অর্থাৎ 2023 সালে পাকিস্তানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইমরান খান চেয়েছিলেন ফয়েজ হামিদকে নতুন সেনাপ্রধান করা হোক এবং বিনিময়ে ফয়েজ হামিদ তাকে ২০২৩ সালের নির্বাচনে জয়ী করতে সাহায্য করুক। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এর জন্য প্রস্তুত ছিল না এবং ইমরান খানের এই পরিকল্পনা অকেজো হয়ে পড়ে।

এদিকে পাকিস্তান সরকারও কট্টরপন্থী সংগঠন তেহরিক ল্যাবব্যাক পাকিস্তান অর্থাৎ টিএলপির কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। এই একই সংগঠন কয়েক মাস আগে লাহোরের রাজপথে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভের আয়োজন করেছিল। 

প্রকৃতপক্ষে, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ নবী মোহাম্মদের কার্টুনকে মত প্রকাশের স্বাধীনতা বলে অভিহিত করেছিলেন এবং এটিকে সমর্থন করেছিলেন। এরপর থেকে এই সংগঠনটি ফরাসি রাষ্ট্রদূতকে পাকিস্তান থেকে ফেরত পাঠানো এবং ফ্রান্সের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি জানিয়ে আসছে।

 

ইমরানের ঝামেলা বাড়িয়ে দিল টিএলপি

টিএলপির সমর্থকরা কয়েক মাস ধরে পাকিস্তানের অনেক রাস্তা অবরোধ এবং হাইওয়ে দখল করে রেখেছিল। এরপর এই সংগঠনের নেতা সাদ হোসেন রিজভীকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং এই সংগঠনটিকেও নিষিদ্ধ করা হয়। 

তারপর আবারও এই সংগঠনের লোকজন রাজপথে নেমে তাদের নেতার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছে। এই কট্টরপন্থী সংগঠনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পরিবর্তে পাকিস্তান সরকার মাথা নত করেছে। এর দুই হাজারের বেশি সমর্থককে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে এবং এর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞাও উঠে নিয়া হয়েছে।

এর বাইরে তৃতীয় কারণ পাকিস্তানে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি। পাকিস্তানে চিনি, পেট্রোল ও বিদ্যুতের দাম আকাশ ছোঁয়া। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম বেড়েছে নতুন করে আর ১ টাকা ৬০ পয়সা বেড়েছে। পাকিস্তানে, এক কেজি চিনি পাওয়া যাচ্ছে ১০৭ টাকায়, যেখানে পেট্রোলের দাম প্রতি লিটার ১৪৫ টাকা ছাড়িয়েছে।

সামরিক অভ্যুত্থান ফিছনে কারন পাকিস্তানে ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি 

মানুষ বলছে ইমরান খানের নয়া পাকিস্তান এখন দামি পাকিস্তানে পরিণত হয়েছে। পাকিস্তানে মূল্যস্ফীতির হার ৭০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। পাকিস্তানে আগামী ৬ মাস মূল্যস্ফীতি এভাবেই বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই সব কারণ একসঙ্গে ইমরান খানের সরকারকে অস্থিতিশীল করতে পারে।

পাকিস্তানের বিরোধী দল পিএমএল (নওয়াজ) এর নেতা এবং নওয়াজ শরিফের মেয়ে মরিয়ম নওয়াজ পাকিস্তানে ইমরান খানের বিরুদ্ধে বড় সমাবেশ করছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আগামী নির্বাচনে ইমরান খানের দলের জয় পাওয়া খুবই কঠিন। পাকিস্তানের ইতিহাস সাক্ষী যে, যখনই রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয়, সেনাবাহিনী ক্ষমতাচ্যুত করার সুযোগ পায়। 

একইভাবে, 1999 সালে, যখন পাকিস্তান ভারতের হাতে কার্গিল যুদ্ধে হেরেছিল, তখন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল পারভেজ মোশাররফ এটিকে একটি অজুহাত দেখিয়ে নওয়াজ শরিফের সরকারকে উৎখাত করেছিলেন। এরপর মোশাররফ নিজেই পাকিস্তানের নতুন প্রেসিডেন্ট হন।

এটা সম্ভব যে এবারও পাকিস্তান সেনাবাহিনী একই রকম কিছু করার কথা ভাবছে। বিশেষ করে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাওয়াজা অবশ্যই এটি করতে পছন্দ করবেন কারণ তার মেয়াদ আগামী বছর শেষ হচ্ছে এবং তিনি একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমেই পাকিস্তানের ক্ষমতা দখল করতে পারেন।

আর পড়ুন……