সমুদ্র মন্দির

সমুদ্র মন্দির: ত্রিনিদাদে সাগর ভরাট করে এক সাধুর মন্দির নির্মাণ, অপরুপ সেই ছবি দেখুন।

সমুদ্র মন্দির ভারতের বাইরে ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর ওয়াটারলুতে সমুদ্রের মধ্যে অবস্থিত একটি হিন্দু তীর্থস্থান। মন্দিরটি তৈরি করে শিবদাস সাধু , যিনি একজন ভারতীয় অভিবাসী। তিনি অভিবাসী হিসাবে ভারত থেকে ত্রিনিদাদ এবং টোবাগোতে এসেছিলেন । মন্দিরটি অনেকটা মরিশাসের সাগর শিব মন্দিরের মতো দেখতে।

পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষ আছে যাদের কাজ, তাদেরকে পৃথিবীর বুকে চিরদিন বাঁচিয়ে রাখবে। ত্রিনিদাদে এমন একটি মন্দির রয়েছে যে মন্দিরটি একজন সাধুর অপার ভালোবাসার প্রমাণ। মন্দিরটি সিউইদাস সাধুর (Siewdass Sadhu)  25 বছরের প্রয়াস ছিল।

বহুদিন আগে একজন সাধু একটা মন্দির স্থাপন করবে বলে মন স্থীর করলো। কিন্তু সেই মন্দির স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় জমি সে কোথাও পেল না। মন্দিরে স্থাপনের জন্য সে বহু লোককে এক টুকরো জমি দান করার কথা বলল। 

কষ্টের হলেও সত্য সে কারো কাছে এক টুকরো জমি পেল না। কিন্তু সাধু ছেড়ে দেয়ার পাত্র ছিলেন না তিনি মন স্থির করলেন সাগর ভরাট করে মন্দির মন্দির স্থাপন করবেন। যেই ভাবা সেই কাজ সমুদ্রের উপকূল ঘেঁষে কৃত্রিমভাবে সাগরে বালি, মাটি এবং ময়লা আবর্জনা ফেলে নতুন ভূমি তৈরি করলেন।

সমুদ্র মন্দির
সমুদ্র মন্দির

 

একটা সময় তার অদম্য অধ্যবসায়ের কাছে তার সকল প্রতিকূল অবস্থার পরাজায় ঘটল এবং সে একটি মন্দির তৈরি করলেন।ওয়াটারলু মন্দির  সমুদ্রের মন্দির হিসাবে বেশি পরিচিত। 

মন্দিরটির গঠন করলেন তিনি অষ্টভুজাকার আকৃতির সেই সাথে কালারফুল কাঠামো দিয়ে। যদি কখনো আপনি এই স্থানে ভ্রমণ করতে বা প্রার্থনা করার জন্য যান তাহলে দেখবেন মন্দিরে প্রবেশপথেই সাধুর মূর্তি দাঁড়িয়ে আছে। চারিপাশে পতাকা এবং প্রবেশদ্বার সাধুর মূর্তি দ্বারা সীমানার সজ্জিত করা হয়েছে।

এ তো গেল মন্দিরের বাইরে অংশ মন্দিরের ভিতরে বিভিন্ন ঠাকুর দেবতার মূর্তি দ্বারা সজ্জিত করা হয়েছে। এরমধ্যে ভগবান হনুমান, ভগবান গণেশ, ভগবান শিব ও মা দুর্গার মূর্তি অন্যতম। এইসকল মূর্তির চারিপাশে বিভিন্ন ফুল দাঁড়ায় সবসময় সজ্জিত করা থাকে।

মন্দিরটির ইতিহাস ঘাটলে জানা যায় ১৯৪৭ সালে একজন সাধু যার সংস্পর্শে এসে অনেকেই সাধু হয়েছিলেন। বহুদিন যাবৎ তার মনে একটা স্বপ্ন ছিল সে পূজার জন্য একটি মন্দির নির্মাণ করবেন। সেই লক্ষ্যে তিনি সর্বপ্রথম একটি মন্দির নির্মাণ করেন।

সমুদ্র মন্দির
সমুদ্র মন্দির

নির্মাণের ঠিক পাঁচ বছরের মাথায় তৎকালীন রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জমির উপর করার কারণে সরকার সেই মন্দিরটি ধ্বংস করে দেয়।

মন্দিরটি ধ্বংসের পরে তিনি নিরুৎসাহিত না হয়ে পুনরায় মন্দিরটি সমুদ্রের ভিতরে স্থাপন করার চিন্তা করেন। যেহেতু পূর্বের মন্দিরটির সরকার ভেঙে দিয়েছিল সেহেতু তিনি এ ধরনের ঘটনা এড়াতেই মন্দিরটি সমুদ্রের ভিতরে নির্মাণ করেন।

তবে এখানে উল্লেখ করার মতন একটা বিষয় থেকে যায় সেটা হল মন্দিরটি নির্মাণ করার জন্যও সাধুকে প্রায় 25 বছর অধ্যবসায় করতে হয়।

25 বছর ধরে সাধু ব্যক্তিটি সাইকেলে করে বিভিন্ন জায়গা থেকে পাথর সংগ্রহ করে মন্দির স্থাপনের জন্য সাগর ভরাট করার কাজ করেছিলেন।

তবে 1994 সালের দিকে ভারতীদের ত্রিনিদাদে আসার দেড়শ বছর পূর্তি উপলক্ষে সরকার এই মন্দির নির্মাণে তাকে সহায়তা করে। ওয়াটারলু মন্দিরে উচ্চ জোয়ারের সময় সহজেই অ্যাক্সেস করা যায় তা নিশ্চিত করার জন্য একটি জেটি  সংযুক্ত করা হয়েছিল।

এই মন্দিরটির 85 ফুট উঁচু হনুমান স্ট্যাচু তৈরি করা হয়েছে। বলা হয়ে থাকে ভারতবর্ষের বাইরে হনুমানজির এটাই সর্বোচ্চ স্ট্যাচু। ত্রিনিদাদ কারাপিচাইমার ওয়াটারলুতে (Waterloo in Carapichaima) অবস্থিত এই হিন্দু মন্দিরটি হল হিন্দু ধর্মের প্রতি এক সাধুর ভালবাসার প্রমাণ। 

এই পর্যন্ত শোনার পরে হয়তো আপনার এই বিষয়টি অনেকটা গল্পের মতো মনে হবে। তবে এটা গল্পের মতো শুনতে হলেও এটা সম্পূর্ণ সত্য এবং একজন সাধুর ধর্মের প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। ভালোলাগলে লাইক…. সমুদ্র মন্দির

তথ্যসূত্র-

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ 

“Hindu temples across the world”। সংগ্রহের তারিখ ১০ অক্টোবর ২০১২

“সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি”। ২০১৮-০৭-১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৪-১২

আর পুড়ন……