পাকিস্তান ক্রিকেট

পাকিস্তান ক্রিকেট ‘হিন্দুদের মধ্যে নামাজ পড়া’ নিয়ে মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইলেন ওয়াকার ইউনুস।

পাকিস্তান ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক এবং কোচ ওয়াকার ইউনিস ‘হিন্দুদের সামনে মোহাম্মদ রিজওয়ানের নামাজ পড়া আমার জন্য খুব বিশেষ ছিল’ মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন।

ওয়াকার ইউনুস টুইটারে এই ক্ষমা প্রার্থনার একটি ভিডিও রিটুইট করেছেন।

ভিডিওতে ওয়াকার বলছেন, ‘আমার এমন কোনো ইচ্ছা ছিল না। আমি কখনো ধর্মীয় বিষয়ে মন্তব্য করি না।না, আমি খুব উত্তেজিত ছিল. ম্যাচ জিতেছে পাকিস্তান। আমি রিজওয়ানকে দেখেছি এবং তাতে এমন কিছু শব্দ ব্যবহার করেছি, যা হয়তো কারো অনুভূতিতে আঘাত করেছে। আমি এই জন্য ক্ষমাপ্রার্থী. আমার মন্তব্যে কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে তার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আমার এমন কোনো ইচ্ছা ছিল না।”

ওয়াকার ইউনূস ভুল স্বীকার করেছেন। তবে ওয়াকার ইউনিসও বলেছেন, ‘ম্যাচে পাকিস্তান জিতেছে, তাই বেশি হাওয়া দেওয়া হয়েছে। তবে আমি এখনও একমত যে আমার এটা বলা উচিত হয়নি।” এই ভিডিও ছাড়াও ওয়াকার ইউনুসও টুইট করে ক্ষমা চেয়েছেন।

আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তানের বড় জয়কে এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ রশিদ ইসলামের জয়ের সাথে যুক্ত করেছিলেন। ওয়াকার ইউনুস তখন বলেছিলেন যে 24 অক্টোবর দুবাইয়ে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে মদ্যপানের সময় তিনি মোহাম্মদ রিজওয়ানকে নামাজ পড়া উপভোগ করেছিলেন।

এআরওয়াই নিউজের অ্যাঙ্কর কাশিফ আব্বাসির শো ‘অফ দ্য রেকর্ড’-এ ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের বড় জয় নিয়ে বিতর্কে ওয়াকার ইউনিস বলেছিলেন, “পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের মধ্যেও আগ্রাসন ছিল। স্ট্রাইক রোটেশনও ছিল। সেই আত্মবিশ্বাস তার মুখে ফুটে উঠল। সবচেয়ে ভালো কাজ যেটা করেছে রিজওয়ান। হিন্দুদের মাঝে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়লেন। এটা আমার কাছে খুব স্পেশাল ছিল।”

ওয়াকার ইউনুস যখন এসব বলছিলেন তখন হোস্ট কাশিফ আব্বাসি হাসছিলেন। এই বিতর্কে শোয়েব আখতারও উপস্থিত ছিলেন।

শোয়েব আখতারও রিজওয়ানের নামাজ পড়ার ভিডিও ক্লিপ টুইট করে লিখেছেন, “আল্লাহ অন্য কারর সামনে মাথা নত করার অনুমতি দেন না। সুবহান আল্লাহ।”

পাকিস্তানের সেরা ক্রিকেটার হয়েছেন ওয়াকার ইউনিস। তিনি পাকিস্তান দলের কোচ, অধিনায়ক এবং ফাস্ট বোলারও ছিলেন। পাকিস্তান থেকে আসা মন্তব্যের আলোকে ‘ক্রিকেট হল ভদ্রলোকদের খেলা’ কথাটি আরও হাস্যকর হয়ে উঠেছে।

ওয়াকার ইউনূসের এই বক্তব্যকে মানুষ তাদের বিরুদ্ধে নিচ্ছে। ক্রিকেট বিশ্লেষক হর্ষ ভোগলে টুইট করেছেন, “ওয়াকার ইউনিসের মতো একজন ব্যক্তি যখন এমন মন্তব্য করেন তখন এটা আমার জন্য খুবই হতাশাজনক।”

ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার ভেঙ্কটেশ প্রসাদ ওয়াকারকে নিয়ে টুইট করেছেন। তার টুইটে তিনি লিখেছেন, ‘হিন্দুদের মধ্যে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়াটা আমার জন্য খুব স্পেশাল ছিল- ওয়াকার; খেলায় এই জিহাদি মানসিকতা। এই লোকটা কত লজ্জাজনক।”

বিজেপির সাধারণ সম্পাদক বিএল সন্তোষ টুইট করেছেন, “আমরা প্রতিদিন প্রচার করি যে প্রেম, খেলাধুলা এবং শিল্পের কোনও সীমা নেই। শেখ রশিদ ও ওয়াকার ইউনূস ঘটনায় ‘ অসাম্প্রদায়ীক পুরো গ্যাং নীরব। যারা বিভ্রান্ত করছে তাদের থেকে দেশের জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে।

পাকিস্তান ক্রিকেট পাকিস্তান ক্রিকেট পাকিস্তান ক্রিকেট পাকিস্তান ক্রিকেট

পাকিস্তানের সিনিয়র সাংবাদিক রাজা আহমেদ রুমি টুইট করে ওয়াকার ইউনুসের মন্তব্যকে লজ্জাজনক বলে বর্ণনা করেছেন। রুমি তার টুইটে লিখেছেন, “এটি ওয়াকার ইউনুসের একটি লজ্জাজনক মন্তব্য। ভারতে প্রচুর মুসলিম জনসংখ্যা রয়েছে। পাকিস্তানে হিন্দু আছে। খেলাটা একটা খেলা, এটা দুই ধর্মের লড়াই নয়।

পাকিস্তানে ক্রিকেট এবং ধর্মের মিশ্রণ নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়। 2006 সালে, ডঃ নাসিম আশরাফকে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান করা হয়। তারপরে তিনি তার খেলোয়াড়দের তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে সম্পর্কিত কার্যকলাপ প্রকাশ্যে প্রদর্শন না করতে বলেছিলেন। তবে ডক্টর নাসিমের বক্তব্য পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের ওপর কোনো প্রভাব ফেলেনি।

ডক্টর নাসিম আশরাফ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, “কোনো সন্দেহ নেই যে খেলোয়াড়দের ধর্মীয় বিশ্বাস তাদের অনুপ্রাণিত করে। এটি একসাথে ধরে রাখে। তবে ক্রিকেট ও ধর্মের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে হবে।

“আমি দলের অধিনায়ক ইনজামাম-উল হকের (তৎকালীন অধিনায়ক) সাথে এই বিষয়ে কথা বলেছি।ব্যক্তিগত বিশ্বাসে আমাদের কোনো আপত্তি নেই, কিন্তু ইনজামামকে বলেছি যে ইসলাম অন্যের ওপর নিজের মতামত চাপিয়ে দেওয়ার অনুমতি দেয় না।

ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার সাবা করিমকে যখন জিজ্ঞাসা করেছিল যে খেলা চলাকালীন প্রকাশ্যে ধর্মীয় জিনিস প্রদর্শন করা জায়েজ কি না? এই প্রশ্নের জবাবে সাবা করিম সরাসরী উত্তর না দিয়ে বলেছিলেন,  “ধর্মচর্চায় কারো ক্ষতি হয় না, তবে খেলাধুলাকে একে অপরের ধর্মের বিরুদ্ধে দাঁড় করানো উচিত নয়।” 

পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ রশিদ টি-টোয়েন্টি বিশ্বে কাপি ভারতের বিপক্ষে জয়কে ইসলামের জয় বলেছেন। রোববার জয়ের পরপরই টুইটারে একটি ভিডিও বার্তা পোস্ট করেন রশিদ এবং তাতে এ কথা বলেন।

তবে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এমন বিবৃতি এই প্রথম নয়। 2007 টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারতের কাছে হেরে যাওয়ার পর পাকিস্তানের তৎকালীন অধিনায়ক শোয়েব মালিক মুসলিম বিশ্বের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন।

ভারতের কাছে হারের পর শোয়েব মালিক বলেন, ‘আমি আমার দেশ পাকিস্তান এবং বিশ্বের মুসলমানদের সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানাই। অনেক ধন্যবাদ এবং আমি বিশ্বকাপ জিততে না পারার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। যদিও আমরা খেলায় আমাদের শতভাগ দিয়েছি।

পাকিস্তানি দলে থাকা হিন্দু খেলোয়াড় দানিশ কানেরিয়ার বিরুদ্ধে বহুবার ধর্মীয় বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে।অন্তত ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে এমন অভিযোগ দেখা যায়নি।

তবে গত ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে ভারতের হারের পর কিছু মানুষ সামীর বিরুদ্ধে সামাজিক মিডিয়তে বাজে মন্তব্য করলে শচীন টেন্ডুলকার মতন ভারতীয় ক্রিকেটার সহ বিভিন্ন মহল থেকে এর প্রতিবাদ করা হয়েছে। কিন্তু দু:খের বিষয় পাকিস্তান থেকে সেটা আশা করা যায় না।

ভারতে এর আগে বহু মুসলিম পেলেয়ার ভারতের হয়ে খেলেছে । কিন্তু এর আগে কোন পেলেয়ারকে  এমন পরিস্থিতে পরতে হয় নি। তবে কি ভারতেও দেখা দেখি চাষ শুরু হচ্ছে? অন্য দিকে বাংলাদেশ একই দিকে শ্রীলংকার কাছে পরাজয়ী হয় সেখানেও লিটন দাসকে তার ধর্মের জন্য নুংড়া কথা শুনতে হয়েছে।

এখন প্রশ্ন  উঠতে শুরু করেছে আই সি সির এর পরেও খেলার সময় মাঠে কোন ধর্ম পালন করতে দেওয়া ঠিক হবে কি? সামাজিক মিডিয়াতে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে এটা বন্ধ হওয়ার দরকার। যদি কেউ ধর্ম পালন করতে চাই তবে সে মাঠের বাইরে গিয়ে ধর্ম পালন করুক। আপনার কি মত?