মেয়ে ভালোবেসে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করায় মাকে একঘরে করে দিল গ্রামবাসী।-সোজাসাপ্টা

বর্ধমান জেলা প্রতিনিধি : মেয়ে ভালোবেসে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করায় মাকে একঘরে করে দিল গ্রামবাসী।  ভারতে ধর্মীয় সংহতি রক্ষার দায়িত্ব কোন একক সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীর না। সকলে মিলেই যখন এই দায়িত্ব বহন করার সম্ভব হবে তখনই ভারত হবে সত্যি কারের ভারত। কিন্তু মাঝে মাঝে এমন কিছু ঘটনা আমাদের সামনে আসে যা দেখলে আমাদের চেনা দেশটাকে অচেনা মনে হয়।  যে দেশটির মূল ভিত্তি হলো ধর্মীয় ঐক্য,সম্প্রীতি ও সংহতি। রাঢ়বঙ্গ তথা বর্ধমানের সঙ্গেও এই ধর্মীয় সম্প্রীতির যোগ অতি প্রাচীন। তবুও কেন মাঝে মাঝে সে পথ থেকে হারিয়ে যায় ধর্মান্ধতার অন্ধকারে। আজও মুক্তি পায়নি দেশ সেই ধর্মান্ধত্ব থেকে। আর এর পিছনে রয়েছে পূর্ব বর্ধমান জেলার মাধবডিহি থানার মসজিদপুর গ্রামের কতিপয় কিছু মানুষ ।

 

এই গ্রামের তরুণী কাশ্মীরা ভিন্ন ধর্মের যুবক কৌশিক মণ্ডলকে বিয়ে করায় তার মাশুল দিতে হচ্ছে তাঁরই বৃদ্ধা মা সুফিয়া বেগমকে। অভিযোগ উঠেছে মেয়ে হিন্দু ধর্মের ছেলেকে বিয়ে করায় গ্রামের কিছু মাতব্বররা তরুণী আমাকে একঘরে করে জরিমানা ধার্য করেছে মোটা অংকের। এই পরিস্থিতিতে বৃদ্ধ মহিলা কিছু না করতে পেরে প্রতিকার চেয়ে রায়না ২ ব্লক প্রশাসনের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। তবে সেখানেও প্রশাসন থেকে সুফিয়া বেগম কোন সুবিধা পায় নাই। পরে অসহায় সংখ্যালঘু বয়স্ক মহিলা সুফিয়া বেগম জেলাশাসকের দ্বারস্থ হয়েছেন।

 

 

কাশ্মীরা হলেন সুফিয়া বেগমের বড় মেয়ে। তার সঙ্গে ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে মাধবডিহির কাইতির কুরচিগড়িয়া নিবাসী হিন্দু পরিবারের যুবক কৌশিক মণ্ডলের। বছর চার আগে তারা বিয়ে করে। কৌশিক ও কাশ্মীরা দুজনেই কাজকরে একটি বেসরকারী সংস্থায় । বর্তমানে এই দম্পতি কাজের সূত্রে বর্ধমান শহরের বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকে। ইতিমধ্যে তাদের একটা পুত্র সন্তান হয়েছে। প্রথমদিকে কাশ্মীরের মা এই বিয়ে মেনে নেননি। কিন্তু বিয়ের এক বছর পরে আস্তে আস্তে তিনি বিষয়টা মেনে নেন। কাশ্মীরার মা জেলাশাসককে চিঠি লিখে তেমনটি জানিয়েছে।

 

সম্প্রতি তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন । তাঁকে দেখতে তাঁর মেয়ে কাশ্মীরা ও জামাই  কৌশিক মসজিদপুর গ্রামের বাড়িতে আসে । এরপরই থেকে তাঁর উপর শুরু হয় নিপিড়ন । গ্রামের কিছু মাতব্বর তাকে একঘরে করে দেয়। ভিনধর্মে বিয়ে করা মেয়ের সাথে কোনো সম্পর্ক রাখা যাবেনা বলে তারা ফরমান জারি করেছে । সুফিয়া বেগম বলেন, নিপিড়নের এখানেই শেষ নয় । তাঁর দশ হাজার টাকা জরিমানাও ধার্য করা হয়েছে । একই সঙ্গে নিদান দেওয়া হয়েছে গ্রামের কেউ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখলে তাঁকেও ছয় হাজার টাকা জরিমানার মেটাতে হবে ।

 

 

আদৌ কি এই ভারত বর্ষ আমাদের সেই ভারত বর্ষ। 2020 সালে এসে এ ধরনের আইন কোন ভারতবর্ষের বুকে এটা পর্ন বিস্ময়কর। ভারতবর্ষে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধর্মে ধর্মান্তর খবর আমরা দেখে থাকি। একটা ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হিসেবে এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু 2020 এ দাঁড়িয়ে ধরনের ঘটনাগুলো অবশ্যই আমাদেরকে আবার প্রশ্নবিদ্ধ করে দেয়। সেকুলারিজম বা অসাম্প্রদায়িকতা কি বিশেষ কোন এক সম্প্রদায়ের জন্য?

 

 

সুফিয়া বেগম অভিযোগ করেছেন ,তিনি যাতে তাঁর স্বামীর তৈরি বাড়িতে থাকতে না পারেন এবং স্বামীর সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করারও চেষ্টার চলছে ।  সবথেকে আশ্চর্যের বিষয় মাতব্বররা এমন মধ্যযুগীয় ফরমান জারি করলেও সুফিয়ার পাশে দাঁড়ায়নি তাঁর ছেলে, দেওর ,ননদ, এমনকি অন্য আত্মীয়রাও । সুফিয়া বলেন ,তাঁর উপর হওয়া নিপিড়নের কথা তিনি মাধবডিহি থানায় জানিয়ে ছিলেন । কিন্তু কোন প্রতিকার মেলেনি ।তাই বাধ্য হয়েই জেলাশাসকের দ্বারস্থ হয়েছেন ।

 

 

কাশ্মীরা ও তাঁর স্বামী কৌশিক মণ্ডল বলেন , “ভিন ধর্মে বিবাহ সংক্রান্ত মামলায় ২০১৮ সালে দেশের সর্বোচ্চ আদালত যুগান্তকারী রায় ঘোষণা করেছে। কেরলের হোমিওপ্যাথি কলেজের পড়ুয়া অখিল আশোকানা ও শাফিন জাহানের বিবাহ সংক্রান্ত মামলায় সর্বোচ্চ আদালত ওই রায় ঘোষণা করেছিল । রায়ে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়, কোনও সাবালক পুরুষ কিংবা মহিলার বৈবাহিক বিষয়ে কারুর কোনও মত প্রকাশের অধিকার নেই। ওই বিবাহ একান্ত ভাবেই ওই স্বামী স্ত্রীর ব্যক্তিগত বিষয় ।” কাশ্মীরা বলেন , দেশের সর্বোচ্চ আদালত রায় ঘোষণা করে এমনটা স্পষ্ট করে দিলেও তাঁর বিয়ে নিয়ে তাঁদের গ্রামের কিছু মাতব্বর মধ্যযুগীয় কায়দায় ফতোয়া জারি করেছে। বৃদ্ধা সুফিয়া বেগম বলেন, জেলাশাসক যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন এই প্রত্যাশা তাঁদের রয়েছে 

আমাদের সাথে থাকতে একটি লাইক দিয়ে রাখুন।-ধন্যবাদ