মানব দেহতত্ব: শারীরিক সম্পর্ক ছাড়াই কি একজন মানুষ সম্পূর্ণভাবে জীবনযাপন করতে পারে? একজন শিষ্য যিনি এমন একজন গুরুর শিষ্য ছিলেন যার আশ্রমে মহিলাদের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল ️।
গুরু যে আশ্রমে থাকতেন সেই আশ্রমের পাশের গ্রামে কিছু রোগ ছড়িয়ে পড়ল। গ্রামের লোকেরা গুরুর কাছে প্রার্থনা করেছিল যে, যদি কোনও প্রতিকার থাকে তবে তা করুন যাতে গ্রাম রোগ মুক্তি হয়।
তারপর গুরু একটি অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত নেন যার অধীনে গ্রামের লোকদের তাদের বাড়িতে থাকতে বলা হয়েছিল। এবং গুরু তার অন্যান্য সুপণ্ডিত শিষ্যদের সাথে আচার অনুষ্ঠান করতে শুরু করেন আশ্রমে।
এখানে বলে রাখি যারা গুরু ও তাঁর শিষ্যদের খাবারের ব্যবস্থা করতেন তারা মূলত গ্রামেই থাকতেন। তাই গুরু তার কনিষ্ঠ শিষ্যকে গ্রামে ভিক্ষা নিতে পাঠান। তিনি বলেন, এই রাস্তাটি সরাসরি গ্রামের দিকে নিয়ে গিয়েছে। আর গ্রামে গিয়ে পর্যাপ্ত খাবার নিয়ে এসো।
সেই শিষ্য জীবনে আগে কোন নারীকে দেখেনি, জন্মের সাথে সাথেই তার পিতামাতা তাকে গুরুর সেবায় নিবেদন করেন।
শিষ্য একটা বড় ব্যাগ আর একটা লাঠি নিয়ে গ্রামের দিকে গেল। গ্রামে পৌঁছে তিনি একটি বাড়ির বাইরে ভিক্ষা চাইলেন।
ঘরের ভিতর এক ভদ্রমহিলা তার মেয়েকে বললেন যাও, বাইরে থেকে সাধু এসেছেন, তাকে কিছু রুটি দিয়ে এসেছে। মেয়ে তখন যৌবনে। যখন তিনি খাবার নিয়ে কিশোর শিষ্যের কাছে গেলেন, শিষ্যটি দেখলেন তিনি কেমন মানুষ, যার বুক প্রসারিত। কারণ সে আগে কোনো নারীকে দেখেনি, তাই সে ভাবল হয়তো গ্রামের সেই রোগ কারণই হয় তো তার বুকের এমন অবস্থা। এমন কি তার বেশ বয়স হওয়ার পরও তার গোঁফ নেই, দাড়িও নেই।
তাই কৌতূহলবশত রুটি দিতে আসা মেয়েটির স্তন স্পর্শ করলেন শিষ্য। মেয়েটি এটি স্পর্শ করার সাথে সাথে চিৎকার করতে শুরু করে এবং দৌড়ে তার মাকে ডেকে নিয়ে আসে। শিষ্য মাকে দেখে তার কণ্ঠস্বর শুনে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন এবং ভাবলেন হয় তো এটা খুবই ভয়ানক রোগ। মেয়েটির মা সেই শিষ্যকে ভালো-মন্দ বললেন, তুমি কত নির্লজ্জ, তুমি ঋষির ছদ্মবেশে নেকড়ে। তুমি আমার মেয়েকে জ্বালাতন করছ তার জন্য তোমার লজ্জা নেই।
একথা শুনে শিষ্য জিজ্ঞেস করলেন, এই গ্রামে যে রোগ ছড়াচ্ছে, তাতে কি আপনাদের শরীরে এই পরিবর্তন হয়েছে? এ জন্যই কি আপনাদের বুক এত বড় হয়ে গেছে আর গলার স্বর চিকন হয়ে গেছে, সাথে দাড়ি-গোঁফও পড়ে গেছে। এই কৌতূহলের কারণে আমি এটি স্পর্শ করছিলাম।
একথা শুনে ভদ্রমহিলা তাকে বললেন, আমার স্বামী জানতে পারলে মেয়েটির শ্লীলতাহানির জন্য তোমাকে খুব কঠোর শাস্তি দেবে। তুমি চলে যাও এখান থেকে, তুমি খুব নরম এবং সংসার সম্পর্কে অজ্ঞ, আমি চাই না তুমি আমার স্বামীর কাছে মার খাও।
শিষ্য অবাক হয়ে সেখান থেকে গুরুর কাছে ফিরে গেলেন। সে কি ভুল করেছে? যা নিয়ে তাকে এত ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে।
ফিরে আসার পর তিনি সরাসরি তার গুরুর কাছে পুরো ঘটনাটি বর্ণনা করলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন এর রহস্য কী।
মানব দেহতত্ব
গুরু বললেন প্রতিটি যোনিতে একজন পুরুষ ও একজন নারী থাকে। আপনি এখানে যাদের দেখেছেন তারা সবাই পুরুষ এবং আপনি যাকে দেখেছেন তারা সবাই গ্রামের মহিলা।
শিষ্য জিজ্ঞাসা করলেন, তাহলে কেন তার বুক এতটা ধুকপুক করছিল? গুরু আরও গভীরে গিয়ে বললেন, ভগবান নারীর ভিতরে একটি গর্ভ তৈরি করেছেন। মেয়েটি যখন বড় হতে শুরু করে, তখন ধীরে ধীরে তার স্তনও বড় হতে থাকে। যাতে সে বড় হয়ে গর্ভধারণ করে, তার গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া শিশুটি এই পৃথিবীতে এসে দুধ পান করতে পারে।
মানব দেহতত্ব
শিষ্য জিজ্ঞেস করলেন শুধু দুধ কেন? গুরু বললেন যে শিশুরা জন্মের সাথে সাথে খুব অসহায় থাকে। আর মায়ের দুধ ছাড়া সে কিছুই হজম করতে পারে না। তাই ভগবান তার খাবারের ব্যবস্থা করেছেন।
কথা গুলো শুনে শিষ্য সব বুঝলেন। গুরুকে বলতে লাগলেন যে হে গুরুদেব, আমাকে ক্ষমা করুন যখন সেই অনাগত সন্তানের জন্য ভগবান ইতিমধ্যেই খাবারের ব্যবস্থা করে রেখেছেন। কিন্তু আগামীকাল কি ঘটবে তা নিয়ে চিন্তায় আমি বোকা ছিলাম। এখন আমার সমস্ত সমস্যা এবং উদ্বেগ সমাধান হয়েছে।
সেই পরমাত্মা আমার জন্মের আগেই আমার জন্য সম্পূর্ণ ব্যবস্থা করে রেখেছেন। আমি জানি না কোথায় কী কারণে আমি নিজেকে কর্তা ভেবে জীবনযাপন করছিলাম, আমার সাথে যা ঘটছে, আমি তা করছি এটা আমার ভূর ধারণা ছিল।
আমার আঁধার কেটে গেছে, গুরু জী, আমি আর চিন্তিত নই। সেই পরমাত্মা নিজেই সকলকে কর্তা মায়ায় ফেলে কর্তা। তাঁর ভক্তি ছাড়া আমার আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। আমি ওনার দিকে এগিয়ে গেলাম!
গুরু শিষ্যকে বললেন, তোমার শিক্ষা সমাপ্ত হয়েছে, তুমি এবার ভক্তিতে মগ্ন হও।
মানব দেহতত্ব
যখন আমাদের অজ্ঞতা দূর হয়, তখন এই ধরনের বৈরাগ্য জন্ম নেয়। আর তার পর আর ভোগ করার ইচ্ছা থাকে না।
এই পৃথিবীতে সবকিছুই সম্ভব। যতক্ষণ যৌন মিলনের ইচ্ছা মনের মধ্যে থাকে, ততক্ষণ মানুষ তা থেকে দূরে থাকতে পারে না। যে ব্যক্তি বলে সে শারীরিক সম্পর্ক করে না, তখন সে হয়তো শারীরিক সম্পর্ক করেনি বা করতে পারেনি, কিন্তু তার মন সব করেছে।
এই গল্পের মূল কথা হলো, মন যখন সম্পূর্ণ নিঃস্ব হয়ে যায়, তখন মানুষ সব সম্পর্ক থেকে মুক্ত হয়।
- ভাষার জননী: সংস্কৃতকে ‘ভাষার জননী’ বলা হয় কেন?
- মায়া সভ্যতা: ভারতের সঙ্গে মায়া সভ্যতার কী সম্পর্ক, জেনে নিন রহস্য
- প্রাচীন ভারতের সবচেয়ে চমকপ্রদ রহস্য কি?
- মুসলিম ব্যক্তির কৃষ্ণ মন্দির নির্মাণ: শ্রীকৃষ্ণ স্বপ্নে এসেছিলেন তার আদেশেই পার্থ সারথি মন্দির নির্মাণ করলেন নওশাদ শেখ।
- পাকিস্তানে ২৩০০ বছরের পুরনো মন্দির ও গুপ্তধন আবিষ্কার, যা তক্ষশীলার চেয়েও প্রাচীন।