মর্মান্তিক করোনা আক্রান্ত চিকিৎসক অনিক ও মনিকা দম্পতির দুঃখ গাঁথা জীবন। এই করোনা ক্রান্তিকালে যখন মানুষ তার নিজেকে বাঁচানোর জন্যে ছুটে চলেছে। যখন দেশের নেতারা তাদের আখের গোছানোর জন্য ব্যস্ত। যখন মনুষ্যত্ব সর্বনিম্ন তলানীতে গিয়ে থেকেছে। ঠিক সেই সময় স্রোতের প্রতিকূলে ছুটে চলা এক দম্পতির সংবাদ সামনে আসলো। যাদের কর্মকান্ড বিশ্বমানবতাকে আরেকবার নাড়িয়ে দিয়েছে। কিছুদিন আগে হারিয়েছে মা বাবকে। সর্বক্ষণ আইসোলেশন ডাক্তার স্বামীর পাশে স্ত্রী অন্যদিকে করোনা পজেটিভ ঘরে দুই শিশুসন্তান। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের চিকিৎসক দম্পতি অনীক চন্দ ও তাঁর স্ত্রী মনিকা চন্দ।
এই করোনা ক্রান্তিলগ্নে ডাক্তার দম্পতি যুদ্ধে নেমেছিলেন। সেই যুদ্ধে জয়ী হওয়ার আগে নিজেরাই আক্রান্ত হয়েছে করোনাই। গত দুই সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে জীবনযুদ্ধে যুদ্ধ করে চলেছেন ডাক্তার দম্পতি। এটাতো একটা স্বাভাবিক ঘটনা কিন্তু তার চেয়েও ভয়ংকর ঘটনা হলো। এখন গভীর এক সংকটে পড়েছে পুরো পরিবারটি। তাদের দুটি শিশু সন্তানের শরীরও ভালো নেই। সবচেয়ে বেশি সংকটাপন্ন ছিলেন অনীক চন্দ। তাঁকে চার দিন আগে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। অক্সিজেন স্যাচুরেশান কমে গেছে। হাই ফ্লো নজেল ক্যানুলা দিয়ে অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে। তার আগে তাঁকে প্লাজমা থেরাপি দেওয়া হয়।
অনীকের এজমা রয়েছে আগে থেকেই। তার পরও করোনাকালীন সময়ে তিনি চিকিৎসা দিতে পিছপা হননি। সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন চমেক ফ্লু কর্নার ও করোনা ইউনিটে দায়িত্ব পালন করতেন। বাকি দিনগুলোতে রোগী দেখতেন মেডিসিন বহির্বিভাগে। এই দূঃসময়ে এক সপ্তাহেই বাবা মা দুইজনকে হারান অনিক চন্দ। মা বাবার মৃত্যুর পরও দায়িত্বে অবহেলা করেননি তিনি। গত ১ জুন তাঁর মা জয়শ্রী চন্দ মারা যান। তিনি লিভারের জটিলতাসহ নানা রোগে ভুগছিলেন। তারও আগে মার্চের প্রথম সপ্তাহে তাঁর বাবা অরুন চন্দ মৃত্যুবরণ করেন।
বাবা-মায়ের মৃত্যুর দুই থেকে তিন দিনের মাথায় আবার হাসপাতালে যোগদান করেন অনীক চন্দ। অনীক চন্দ বলেছিলেন, পরিস্থিতি খুব খারাপ। চারদিকে সবাই আক্রান্ত হয়ে যাচ্ছে। ইএমও (চমেক হাসপাতালের চিকিৎসক) মুহিদুল হাসানকে আমিই ওয়ার্ডে রিসিভ করেছিলাম। কিন্তু বাঁচাতে পারলাম না। আমার নিজেরও শরীর ভালো না। এরপরই অনীক চন্দ বাসায় গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। করোনা পজেটিভ হওয়ার পর পরই অনিকের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তখন থেকেই শুরু জীবনযুদ্ধ। এই যুদ্ধ করোনার বিরুদ্ধে। পরম ভালোবাসা আর যত্নে স্বামীর পাশে আছেন চিকিৎসক স্ত্রী মনিকা। একসময় মনিকা জানলেন তিনি নিজেও পজিটিভ।
অনীকের সহকর্মীরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের বিশ্বাস অনীক আস্তে আস্তে আবার সুস্থ হয়ে উঠবেন। সুস্থ হয়ে আবার করোনাযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়বেন। যে নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে মানবিকতায় এগিয়ে যান মানুষের আশীর্বাদ ও ভালোবাসা তাঁর চিরসঙ্গী। স্যালুট অনীক মনিকা ডাক্তার_দম্পতি আপনারাই সত্যিকারের সৈনিক, এই যুদ্ধে আপনজন হারিয়ে ময়দান ছেড়ে পিছিয়ে যাননি। উনারা যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠেন এই শুভকামনা রইল।
আমাদের সাথে থাকতে একটি লাইক দিয়ে রাখুন……………..