বাঙালি হিন্দু সমাজে মানুষরূপী ভগবানের অভাব নেই। কিন্তু দু’জন আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব যথেষ্ট অগ্রসর চিন্তা-সম্পন্ন ছিলেন। তাদের একজন রাজা রামমোহন রায়; আরেকজন হরিচাঁদ ঠাকুর। এই দুই মহামানব অগনিত দেবদেবীর হট্টগোলের মধ্যেও একেশ্বরবাদ প্রচার করেছেন। রাজা রামমোহন রায় ভারতবাসীকে পাশ্চাত্যের আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাথে পরিচিত করিয়েছিলেন,এজন্য তাঁকে বলা হয় ভারতীয় রেনেসাঁর জনক।
রাজা রামমোহন রায় ব্রিটিশদের সহায়তায় হিন্দু বিধবাদের জীবন্ত অবস্থায় স্বামীর চিতায় পুড়িয়ে মারা বন্ধ করতে সমর্থ হয়েছিলেন। বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর ত্রাণকর্তা হরিচাঁদ ঠাকুর যুগোপযোগী ‘দ্বাদশ বাণী’ প্রচার করে, অস্পৃশ্য-অবহেলিত মানুষদের হিন্দু সমাজে ধরে রেখেছেন। হরিচাঁদ ঠাকুর জন্মগ্রহণ না করলে, বাঙালি হিন্দুদের বিরাট অংশ ধর্মান্তরিত হয়ে যেত।সমাজ সংস্কার ও শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও গুরুচাঁদ ঠাকুরের অবদান প্রাতঃস্মরণীয়।
পুণ্যাত্মা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর আধুনিক বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান স্থপতি। শিক্ষা বিস্তারের পাশাপশি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, বিধবা বিবাহ প্রচলন তথা নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অক্লান্ত প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। মহামানব হরিচাঁদ ঠাকুরের সুযোগ্য পুত্র মহর্ষি গুরুচাঁদ ঠাকুর – পিছিয়ে পড়া অধিকার বঞ্চিত মানুষের সামাজিক স্বীকৃতি আদায়ের জন্য জীবনভর কঠোর সংগ্রাম করে গেছেন। তিনি গ্রামীণ এলাকায় ১৮১২ টি বিদ্যালয় স্থাপন করে, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের শিক্ষার সংস্পর্শে এনেছিলেন।
সাহিত্য চর্চা তথা জাতির মানস গঠনের ক্ষেত্রে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অগ্রগামী। সাহিত্য সম্রাট নামে খ্যাত বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সর্বপ্রথম ভারতের ভূমি সন্তানদের সমন্বয়ে একটি ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠনের কথা চিন্তা করছেন। তিনি ছিলেন ভবিষ্যত দ্রষ্টা, এজন্য তাঁকে বলা হয় ঋষি। ডঃ আহমেদ শরীফ লিখেছেন,’বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় হিন্দু জাতীয়তাবাদের জনক।’
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো বহুমুখী সাহিত্য প্রতিভা পৃথিবীতে বিরল। মানব-মননের এমন কোন বিষয় নেই, যা রবীন্দ্র-সাহিত্য স্পর্শ করে নি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্য কর্মে প্রতিফলিত হয়েছে,উপনিষদের শাশ্বত চিন্তাধারা। সনাতন ধর্মের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মনীষা মহামানব গৌতম বুদ্ধের পরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দ্বিতীয় ভারতীয় – যিনি বিশ্ব বিবেক জয় করতে সমর্থ হয়েছেন।
দু’জন বঙ্গ সন্তান, পৃথিবীর শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানীদের কাতারে উচ্চ প্রশংসিত আসনে অধিষ্ঠিত। একজন আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু, অপরজন সত্যেন্দ্রনাথ বসু। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুও ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। দু’জনেই ছিলেন আলোকিত মহামানব রাজা রামমোহন রায় প্রতিষ্ঠিত ব্রহ্মসমাজের অনুসারী। আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু বিশ্ববরেণ্য পদার্থ বিজ্ঞানী ; একই সঙ্গে উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ও জীববিজ্ঞানী।
আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রেডিও বিজ্ঞানের জনক হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছেন। অত্যন্ত সীমিত সুযোগ-সুবিধা ও আর্থিক অসচ্ছলতার মধ্যে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর আবিস্কৃত ‘অদৃশ্য আলোক(একস্থান থেকে অন্যস্থানে প্রেরণকৃত বৈদ্যুতিক তরঙ্গ)’ – এর রূপান্তর রেডিও, রাডার, টেলিফোন, টেলিভিশন প্রভৃতি। জগদীশচন্দ্র বসুর এই অভিনব আবিষ্কার, মানব সভ্যতাকে হাজার হাজার বছর এগিয়ে দিয়েছে।
জগদীশচন্দ্র বসু বৈজ্ঞানিকভাবে সর্বপ্রথম প্রমাণ করেছেন যে, উদ্ভিদের প্রাণ আছে। বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী মহামতি আলবার্ট আইনস্টাইন লিখেছেন,’জগদীশচন্দ্র বসু পৃথিবীতে যে সমস্ত অমূল্য তথ্য উপহার দিয়েছেন, তার যে কোন একটির জন্য বিজয়স্তম্ভ স্থাপন করা উচিত।’ এই মহান বিজ্ঞানী সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন,’ভারতের কোন বৃদ্ধ ঋষির তরুণ মূর্তি তুমি হে আর্য আচার্য জগদীশ।’
আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু এত উঁচু মানের বাংলা গদ্যে বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ উপস্থাপন করেছেন – যা পাঠ করে বিমুগ্ধ রবীন্দ্রনাথ তাঁর বন্ধু সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন, ‘জগদীশচন্দ্র যদি সাহিত্য সাধনা করতো,তাহলে নিশ্চিত আমার আসন টলিয়ে দিতো।’ আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর সুযোগ্য ছাত্রবৃন্দের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী ছিলেন সত্যন্দ্রনাথ বসু। মহান বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু বিদেশের একটি নামজাদা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক পদে মনোনীত হয়েছিলেন।
কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানালো, সত্যেন্দ্রনাথ বসুকে কোন বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানীর স্বীকৃতিপত্র আনতে হবে। সত্যেন্দ্রনাথ বসু তার সুরূদ বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনকে পত্র লিখলেন। উত্তরে মহামতি আইনস্টাইন লিখলেন, ‘সত্যেন বোসের মতো বৈজ্ঞানিক প্রতিভাকে স্বীকৃতি দেওয়ার যোগ্যতা আইনস্টাইনের নেই। অন্য বিজ্ঞানীর নিকট থেকে স্বীকৃতি নিয়ে যদি ক্ষণজন্মা বিজ্ঞানী সত্যেন বোসকে চাকরি করতে হয়, সে চাকরি না করাই শ্রেয়।…’
সত্যেন্দ্রনাথ বোস ও আলবার্ট আইনস্টাইনের যৌথ গবেষণায় আবিস্কৃত, ‘বোস-আইনস্টাইন ঘনীভবন’ ও ‘বোস-আইনস্টাইন পরিসংখ্যান’ পদার্থবিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় অনবদ্য ভূমিকা রেখেছে। পরাধীন ভারতের মহান বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু জীবদ্দশায় তেমন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান নি ; তাচ্ছিল্যবশত তাঁকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়নি। যদিও তাঁর আবিস্কৃত তত্ত্বের উপর গবেষণা করে অনেকেই নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন।
অবশ্য পরবর্তী সময়ে সত্যেন্দ্রনাথ বসুর নাম অনুসারে তাঁর আবিস্কৃত, পদার্থবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক কণার নামকরণ করা হয় – ‘বোসন’। বাঙালি হিন্দু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বগণ ধর্মনিরপেক্ষতার অভিনব মহামারীতে আক্রান্ত। গাছের আগায় বসে গোড়া কাটার আত্মঘাতী স্রোতের বিপরীতে গিয়ে নাতিদীর্ঘ পরমায়ুর শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় জাতীয় স্বার্থে সিংহ বিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় দেশ বিভাগের সময় বাঙালি ও পাঞ্জাবী হিন্দু এবং শিখদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য হোমল্যান্ড স্থাপনের গুরুত্ব উপলব্ধি করে – পাকিস্তান ভেঙে হিন্দু ও শিখ অধ্যুসিত অঞ্চল ভারতের সাথে সংযুক্ত করেছিলেন।
- মুসলিম দেশে স্থাপিত হলো বিশ্বের বৃহত্তম বিষ্ণু গরুড় মূর্তি।-সোজাসাপ্টা
- নিখিল হত্যা,”Justice for Nikhil” প্রতিবাদ হয়ে গেল নিউইয়র্কে।-সোজাসাপ্টা
- হিন্দু ধর্ম যেভাবে আফ্রিকার দেশ মরিশাসের প্রধান ধর্ম হয়ে উঠলো!-সোজাসাপ্টা।
- ৫০০ বছরের পুরনো মন্দিরের চূড়া ভেসে উঠল নদীর বুকে! সোজাসাপ্টা
- যে মাহাত্ম্যের কারণে সনাতন ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে আধুনিক বিশ্ব।-সোজাসাপ্টা
- আবারো,পাকিস্তানে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ভয়ঙ্কর চিত্র সামনে আসলো। গুড়িয়ে দেয়া হলো বেশ কিছু বাড়ি।
- আবারো-পশ্চিমবাংলার শিক্ষা ব্যবস্থা আরবি করনের পথে আর ধাপ এগিয়ে গেল।