কে প্রথম বাংলা সাল গণনা শুরু করেন, বঙ্গ সনের উৎপত্তির ইতিহাস কেন বিকৃত হলো? (দ্বীতিয় পর্ব)?

কে প্রথম বাংলা সাল গণনা শুরু করেন, বঙ্গ সনের উৎপত্তির ইতিহাস কেন বিকৃত হলো? (দ্বীতিয় পর্ব)?

প্রথম পর্ব পর থেকে…

বাংলাদেশের শামসুজ্জামান খান, সৈয়দ আশরাফ আলী, সিরাজুল ইসলাম, আহমেদ জামাল এনারই মূলত হলেন “আকবর_বঙ্গাব্দের_প্রতিষ্ঠাতা”, এই মতের প্রধান প্রবক্তা। এই মতের সাথে এবাংলার কিছু বামপন্থি  নিজেদের সুর মিলিয়ে ছিলো।

তবে আরো একটা মজার বিষয় আছে, সেটা হলো,এনাদের মধ্যে আবার কেউ কেউ অবাঙ্গালি আকবরকে বাদ দিয়ে অবাঙ্গালি আলাউদ্দিন হুসেন শা-কে বঙ্গাব্দের প্রবর্তক বলে মনে করেন। তা হলে তো হুসেন শাহের রাজত্বকাল নিয়ে এবার একটু অংক করতে হয়।

ইংরেজি ১৪৯৪ থেকে ইংরেজির ১৫১৯ সাল অব্দি ছিলো হুসেন শাহের রাজত্বকাল। যদি পরবতী মত কে গুরুত্ব দিয় তা হলে কি দাড়ায়? হুসেন শাহের বঙ্গাব্দের প্রবর্তক হলে ২০১৯ এসে বঙ্গাব্দের বয়স ৫০০ বছরের বেশি হবে না।

এবার মনে প্রশ্ন আসা সাবাবিক, তাহলে কেন বাংলাদেশের ঐ সকল মুসলমান ঐতিহাসিকরা বারেবারে এরকম অবাস্তব মত প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন? কেন বাংলার কোন ভূমিপুত্র কে বাদ দিয়ে তারা বাংলার বঙ্গাব্দ প্রতিষ্ঠার সম্মান অবাঙালি আকবর কিংবা বহিরাগত হুসেন শাহ-এর হাতে তুলে দিতে চান?

এখানে অনেক গুলো প্রশ্ন আরো চলে আসে, তাহলে বাঙালির এতদিন যাবৎ অথ্যাৎ আকবর বা হুসেন শা আসার আগে চাষবাস, পূজার্চনা ইত্যাদি কিভাবে, কোন বর্ষপঞ্জি মতে করে থাকত? সত্য এই যে বাংলায় আকবরের বহু শতাব্দী আগে থেকেই নানান বর্ষপঞ্জি প্রচলিত।

যেমন মল্লাব্দ, বুদ্ধাব্দ, বঙ্গাব্দ, চৈতন্যাব্দ ইত্যাদি সম্পুর্নভাবেই বাঙালির সৃষ্ট বর্ষপঞ্জি। তাহলে বাংলাদেশের শামসুজ্জামান-সিরাজুল-আহমেদ জামালদের ভূমিপুত্র বাঙালিকে কৃতিত্ব দিতে কেন এবং কিসের এত অনীহা? এখানে দাড়িয়ে ভাবতে বোকা বোকা লাগে,যে বাঙালি জাতির বয়স পাঁচ হাজার বছরেরও বেশি, নিজেদের জন্য সামান্য একটা বর্ষপঞ্জিও কি তারা তৈরি করতে পারবে না, তার জন্য মোগল-পাঠান বাদশাদের এসে তৈরি করে দিয়ে যেতে হবে?

কে প্রথম বাংলা সাল গণনা শুরু করেন
কে প্রথম বাংলা সাল গণনা শুরু করেন ?

বঙ্গ সনের উৎপত্তির ইতিহাস কি বলে

সম্রাট আকবরে বঙ্গাব্দ চালুর ব্যাপারে তারই আমলের রচিত ইতিহাস কি বলে, কতটুকু বা স্বীকৃতি দেয়!সম্রাট আকবরের রাজত্বকালের সময়ের একটি বিখ্যাত ইতিহাস গ্রন্থ হলো “আইন-ই-আকবরী” সেই গ্রন্থেও বাংলা সন বা ফসলী সন প্রচালন বিষয় কোন কথা উল্লেখই নেই।

তবে আকবর যে ১০৭৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ইরানে প্রচলিত ‍জেলালি সৌর পঞ্জিকা অনুসরণে ভারতে ১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দে ‍তারিখ-ই-ইলাহী নামে একটি সৌর পঞ্জিকা চালু করেন, কিন্তু কয়েক দশক পর এই ‍তারিখ-ই-ইলাহী পঞ্জিকার ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে মুখ থুবড়ে পড়ে।

আসুন আর একটু তুলনামূলক আলোচনায় যাওয়া যাক। আকবরের রাজ্যভিষেক হয় ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ই ফেব্রুয়ারি। তা হলে যদি সেই সময় থেকে বাংলা সন চালু হলে পহেলা বৈশাখ ১৫ ই এপ্রিল না হয়ে নিশ্চয়ই ১৪ই ফেব্রুয়ারি হত। কিন্তু আমরা কি দেখি ১৪ই ফেব্রুয়ারি নয়, পহেলা বৈশাখ ১৪ বা ১৫ই এপ্রিল হয়। মাত্র ১৩ বছর বয়সে আকবরের রাজ্যভিষেক হয়।

এত কম বয়সে কি তার পক্ষে খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য, ফসল তোলার সাথে সঙ্গতি রেখে এত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে পঞ্জিকা চালু করাসম্ভব ছিল? এর বিপরীতে ১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দে সম্রাট আকবরের”‍তারিখ-ই-ইলাহীর” মত সৌর পঞ্জিকা প্রচলন অনেক বেশি যুক্তিসঙ্গত, কারণ তখন তার বয়সে এবং রাজ্যত্ব পরিচালনা কাল বেশ কিছুদিন হয়েছিলো এবং আরবী হিজরী সালের ভারতের জন্য অবাস্তবতা, তাকে একটি সৌর পঞ্জিকা প্রণয়নের করতে তাগিদ দিয়েছে।

তাছাড়া ইতিহাস বলে এই সময়ের পূর্বে ইরান থেকে নূরজাহানের পিতা, আকবরের সভায় এসেছিলেন। সুতরাং তাঁর কাছ থেকে ইরানী সৌর পঞ্জিকা এবং তার কার্যকারিতার বিষয়ে জানা আকবরের কাছে অসম্ভব কিছু না।

বঙ্গাব্দের প্রতিষ্ঠাতা কে, আসল সত্যি কি?

আকবর যে বঙ্গাব্দের প্রতিষ্ঠাতা সেটা এখন আর গোঁজামিল দিয়া ইতিহাস দিয়ে কোন ভাবেই সহজ সরল অঙ্কের হিসেব বা যুক্তির হিসেব, মিলছে না। এখন প্রশ্ন থেকে যায় তা হলে আসল সত্যিটা কি? কেই বা করল এই বঙ্গাব্দের প্রতিষ্ঠা। আমরা আবার অঙ্কের হিসেবে ফিরে যাব এই প্রশ্নের উত্তর খুজতে। উপরের আলোচনা থেকে আমাদের কাছে একটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে যে বাংলা বছরের সাথে ইংরেজি বছর সময় কালের সাথে অনেক বছরের ফারাক আছে।

২০১৯-১৪২৬ বিয়োগ করে পাই ৫৯৩ সাল। এখান থেকে একটি বিষয় পরিষ্কার বাংলা সন, ইংরেজি ৫৯৩ সালে দিকে প্রচালন হয়েছে। এবার প্রশ্ন আসে তাহলে,কে ছিলো ঐ সময় বাংলার সিংহাসনে, কার হাতেই চালু হয়েছিলো বাংলা বর্ষপঞ্জি। ইতিহাস থেকে আমরা জানতে পাই ঠিক ঐ সময়ে বহু খণ্ডে বিভক্ত বাংলাকে একত্রিত করে বাংলা সিংহাসনে বসেন মহারাজ নরেন্দ্রাদিত্য শশাঙ্ক।

কারো কারো মতে তিনি ৫৯০ সনে বাংলার সিংহাসনে বসেন। যদিও বেশির ভাগ ইতিহাস বিদদের মতে তিনি ৫৯৩ সালে বাংলার সিংহাসনে বসেন। শশাঙ্ক প্রথম বাঙালি সম্রাট ও প্রথম স্বাধীন বাঙালি নৃপতি।

বঙ্গাব্দের প্রতিষ্ঠাতা কে
বঙ্গাব্দের প্রতিষ্ঠাতা কে, আসল সত্যি কি?

মহারাজ শশাঙ্ক ছিলেন ঘোর শৈব, তাই শৈবদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বার সোমবারে তিনি সিংহাসনে আরোহণ করেন। হিসেব করলে দেখা যায়, প্রথম বঙ্গাব্দের শুরুর দিনটিও ছিল সোমবার। ষষ্ঠ এবং সপ্তম শতকের কিছু সময় বাংলা তথা গৌড়ের রাজা ছিলেন শশাঙ্ক। তিনি প্রথমে গুপ্ত সাম্রাজ্যের অধীনস্থ পূর্বাঞ্চলীয় এলাকা অর্থাৎ বর্তমান ভারত-বাংলাদেশের বাংলা এলাকার সামন্ত শাসক ছিলেন। ষষ্ঠ শতকের শেষ দশকে শেষ গুপ্ত সম্রাট হীনবল হয়ে পড়লে, শশাঙ্ক গুপ্ত অধীনতা মুক্ত হয়ে নিজেকে বাংলা তথা গৌড় রাজ্যের রাজা হিসেবে ঘোষণা করেন ৫৯৩ সালে ।

এই ঘটনা পরে ৫৯৩ খ্রিষ্টাব্দের এবং সেই বছর থেকেই বাংলা সনের চালু হয় ৫৯৩ শুন্য ধরে। শশাঙ্কের অধীনস্থ গঞ্জামের (উড়িষ্যা) রাজা মাধববর্মার তাম্রশাসন (৬১৯ খ্রিষ্টাব্দের), হর্ষবর্ধনের বাঁশখেরা ও মধুবন তাম্রশাসন এবং কামরূপের রাজা ভাস্কর বর্মনের নিধানপুর তাম্রশাসন থেকে তাঁর সম্পর্কে জানা যায়। শশাঙ্কের উৎকীর্ণ স্বর্ণ ও রৌপ্যমুদ্রাও পাওয়া গেছে।

গুপ্তদের পতন ও শশাঙ্কের উত্থানের মধ্যবর্তী সময়ে বাংলায় বেশ কিছু স্বাধীন শাসকের উদ্ভব ঘটে। এঁদের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানা যায় অল্প কিছু লিপি এবং স্বর্ণ মুদ্রার ভিত্তিতে। রোহতাসগড়ে প্রাপ্ত সিলের ছাঁচে লিখিত ‘শ্রী মহাসামন্ত শশাঙ্ক’, বাণভট্টের সমসাময়িক সাহিত্য উপকরণ, চৈনিক তীর্থযাত্রী হিউয়েন-সাং এর বিবরণ এবং বৌদ্ধ গ্রন্থ আর্যমঞ্জুশ্রীমূলকল্প শশাঙ্কের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। উইকিপিডিয়ার ভাষ্য অনুযায়ী সিংহাসনে আরোহণ করে তিনি বঙ্গাব্দ চালু করেন।

বাংলা পঞ্জিকা সংস্কার

বাংলা আসপাশের রাজ্যগুলির  সাথে মিল রেখে ৫৯৩ খ্রিষ্টাব্দের ১২ই এপ্রিল আদি বিন্দু ধরে মহারাজা শশাঙ্ক প্রবর্তিত করেন বাংলা সন। পরে বাংলা পঞ্জিকা বেশ কয়েকবার সংস্কারের কারণেই  ১২ই এপ্রিল বর্তমানে ১৪ বা ১৫ই এপ্রিলে এসে পৌঁছেছে।

যদিও ভারতে অন্য অনেক রাজ্য এখনো ১২ই এপ্রিল বছরের প্রথম দিন ধরা হয়ে থাকে। তবে ১২,১৩,১৪,১৫ই- এপ্রিল মধ্যে প্রায় সব রাজ্যে এখনও হিন্দু পঞ্জিকার প্রথম দিন প্রচালন রহয়েছে। এবার একটা বিষয় পরিষ্কার  ১৫৫৬ সালে ১৪ই ফেব্রুয়ারি সম্রাট আকবরের নামে চালানো বাংলা সনের আদি বিন্দু কিছুতেই ১৫ই এপ্রিলে এসে পৌঁছতে পারে না।

পঞ্জিকা সংস্কারের কারণে যদি বলা হয়, ১৪ই ফেব্রুয়ারি, বর্তমানের ১৪/১৫ই এপ্রিলে পৌঁছেছে, তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে এই পঞ্জিকা কে, কবে সংস্কার করল, আর কেনই বা এত দিনের ফারাক? ‘বঙ্গাব্দের উৎস কথা’ শীর্ষক একটি পুস্তিকায় শ্রী সুনীল কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‍”সৌর বিজ্ঞান ভিত্তিক গানিতিক হিসাবে ৫৯৪ খ্রিষ্টাব্দের ১২ এপ্রিল সোমবার, সূর্যোদয় কালই বঙ্গাব্দের আদি বিন্দু”। বাঙ্গালি বহু ভাষাবিদ রহমতুল্লাহ তাঁর ‍বঙ্গাব্দের জন্মকথা গ্রন্থেও ৫৯৪ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গাব্দের সূচনা এবং বঙ্গাব্দের প্রবর্তক রাজা শশাঙ্কই বলে মত প্রকাশ করেছেন।

বাংলা পঞ্জিকা সংস্কার কে করেন
বাংলা পঞ্জিকা সংস্কার

বঙ্গাব্দ প্রতিষ্ঠার নামে কেন কেন এই মিথ্যাচার?

আকবর বা হুসেন শা-কে বঙ্গাব্দ প্রতিষ্ঠার সাথে জড়িয়ে দেবার মরিয়া চেষ্টার কারণটা কি? সেটা বুঝতে হলে বেশি চিন্তা করতে হবে না, একটু তলিয়ে ভাবলেই চলবে।বেশি দিনের আগের কথা নয় মাত্র দু তিন দশক আগে যখন জেনারেল এরশাদ রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের ঠিক তখনকের কথা।

রাষ্ট্রপতি এরশাদ সাহেব বাঙালির চিরাচরিত বর্ষ গণনা পদ্ধতিকে উল্টেপাল্টে করে একটি নতুন কৃত্রিম বর্ষগণনা পদ্ধতি আবিষ্কার করে সেটিরও নাম রাখেন বঙ্গাব্দ। এই কৃত্রিম বঙ্গাব্দকে এরশাদ “বাংলাদেশের জাতীয় বর্ষপঞ্জি” হিসেবে চালু করেন। সাবাবিক ভাবে এখন প্রশ্ন আসে ৯০% মুসলমানের দেশ বাংলাদেশে, সেখানে প্রধান উৎসব হল ঈদ, মহরম ইত্যাদি।

কিন্তু এই উৎসব গুলো কি এরশাদ রচিত কৃত্রিম বঙ্গাব্দ বাংলা সন অনুসারে পালন করা হয়? জানি, উত্তর হল কখনোই না। সেই উৎসব গুলো সব সময় পালন করা হয় হিজরী সন গণনা পদ্ধতি অনুসারে। তাহলে কেন এই বঙ্গাব্দ-র গণনাপদ্ধতি পাল্টালেন জনব এরশাদ? আমরা জানি বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় পূজা-পার্বন পালন করে থাকে বঙ্গাব্দ অনুসারে।

সম্ভবত্ব এখানে সাবাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠে “বঙ্গাব্দ সংস্কার”- তবে কি তাদের পূজা-পদ্ধতিতে ব্যাঘাত ঘটানোর উদ্দেশ্যেই? সে প্রশ্ন উত্তর খোজার দায়ত্ব আমি আপনাদের উপর ছেড়ে দিলাম। এখানে সোজাসাপ্টা যেটা দাড়ালো সেটা হলে বাংলা নববর্ষ_দখল এর প্রচেষ্টা।

ঠিক সেই উদ্দেশ্যকে সফল করতে তাতে হাত লাগালো বাংলাদেশের সিরাজুল-আশরাফ আলী-শামসুজ্জামানরা। তাদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার তার বঙ্গাব্দের ইতিহাস থেকে বাঙালির নামগন্ধটুকু মুছে ফেলতে চাই। বঙ্গাব্দ থাকবে, কিন্তু তার গণনাপদ্ধতি পাল্টে দেওয়া হবে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে।

বঙ্গাব্দ থাকবে কিন্তু তার প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে থাকবে কোন মোগল-পাঠানের নাম। তবেই তো বাঙালির কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া যাবে তার নববর্ষ। নববর্ষ দখল সম্পুর্ন হলে মূলবাঙালির কাছ থেকে হারিয়ে যাবে বাঙালির এক অমূল্য ইতিহাস।

এবার লেখাটা শেষ করতে হবে। লেখাটি শেষ করার আগে ৩টি প্রশ্ন আপনাদের কাছে করতে চাই। যার উত্তরের মাঝেই রহয়েছে বাংলা সনের আসল প্রবর্তক কে তার উত্তর।

১। সম্রাট আকবর কি শুধু বাংলার সম্রাট ছিলেন নাকি সমগ্র ভারতের?

উত্তর- সমগ্র ভারতের সম্রাট ছিলেন সম্রাট আকবর।

২। চাষ আবাদ বা ফসল উৎপাদন কি শুধু বাংলাতেই না সমগ্র ভারতে?

উত্তর- শুধু বাংলায় নয় সমগ্র ভারত জুড়েই।

৩। আকবর সমগ্র ভারতের সম্রাট এবং ফসল সমগ্র ভারত জুড়ে হওয়া সত্ত্বেও কেন তিনি শুধু বাংলার জন্য একটি আলাদা সন চালু করল এবং তার কি শুধু বাংলারি খাজনা বা কর আদায়ের প্রযোজন ছিলো নাকি সমগ্র ভারতের?

আকবরকেই বাংলা সনের প্রবর্তক
আকবরকেই বাংলা সনের প্রবর্তক ?

যারা আকবরকেই বাংলা সনের প্রবর্তক তাদের কাছে এই সকল প্রশ্নের জবাব আদেও আছে কি?

এই তিনটি প্রশ্ন মধ্যে প্রথম দুটির উত্তর দরকার নেই, শুধু শেষ প্রশ্নটার উত্তর দিতে হবে ঐ সকল মানুষদের যারা সম্রাট আকবরকে বাংলা সনের প্রবর্তক মনে করেন। যারা ইতিহাসে নিজেদের খুজে পাই না। তারাই ইতিহাসকে উল্টে পাল্টে এক ককটেল ইতিহাস তৈরি করে ক্ষামতার অপব্যবহার করে।

কিন্তু সত্য তো চিরকাল সত্যই । শুধু মাঝে মাঝে উপরে মরিচিকা পড়ে মাত্র। বাঙ্গালি যদি সজাগ না থাকে তবে তার সাংস্কৃতি অন্যের হাতে তুলে দিবার জন্য ঘর শত্রু বিভীষণ সর্বক্ষন ওত পেতে বসে আছে। তাই বাঙালিকে সবসময় সজাগ থাকতে হবে এই আগ্রাসন এর বিরুদ্ধে।

আমাদের সংস্কৃতির অমূল্য অংশ সেটা রক্ষা করা আমাদের দায়ত্ব

সংস্কৃতির প্রতিটি জাতির পরিচয় বহন করে তাই আমাদের নববর্ষ, আমাদের সংস্কৃতির অমূল্য অংশ সেটা রক্ষা করা আমাদের দায়ত্ব। যে জাতির ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যত দুর্লভ হয়, সেই জাতির ইতিহাস বেদখল হবার সুযোগ তত বাড়ে। আর এর উদাহরণ আমাদের সামনেই রয়েছে।

বাঙালির অজ্ঞানতাকে কাজে লাগিয়ে আকবরকে বঙ্গাব্দের প্রতিষ্ঠাতা বানাতে চায় কিছু শুকুনের দল। এই আগ্রাসনকে মুকবেলা জন্য আমাদের ইতিহাস সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান থাকা খুব প্রযোজন। ভুলে যাবেন না, কোন বিদেশী বাদশা আকবর নন, বঙ্গাব্দের প্রতিষ্ঠাতা হলেন বাংলার ভূমিপুত্র রাজা শশাঙ্ক।

এই ভয়ানক সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের দিনে, যখন মিডিয়ায়, ওয়েবসাইটে, খবরে, ভিডিওয় ক্রমাগত মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে বঙ্গাব্দের নামে, তখন বঙ্গাব্দের প্রতিষ্ঠাতা শশাঙ্কের নাম মনে রাখা এবং এই তথ্যটিকে সমস্ত চেনা পরিচিতের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়াটাই হল বাঙালির “সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ”।

এই সাংস্কৃতিক প্রতিরোধের অঙ্গীকার দিয়েই শুরু হোক নববর্ষ ১৪২৬।এতো দিন আমরা এই মিথ্যাগুলোকে খেতে এবং বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়েছি এবং এখনও হচ্ছি। সময় এসেছে এসব মিথ্যা থেকে বের হয়ে সত্য খুঁজতে এবং সত্যের পথে চলতে।

 এই লিখাটি প্রথম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

বিস্তারীত আর যদি জানতে চান এখান থেকে জানুন

সূত্র-

  1. বঙ্গাব্দ – উইকিপিডিয়া
  2. বাংলা সনের ইতিহাস : প্রসঙ্গ বাংলা বর্ষ পঞ্জিকা
  3. বাংলা সনের জন্মকথা
  4. বাংলা সাল ও পহেলা বৈশাখ…ইতিহাস কী বলে?
  5. শূন্য (০) থেকে বাংলা সন শুরু হয় নি।
  6. পহেলা বৈশাখ ও বাংলা সনের কথা
  7. ১ম বাংলা সন প্রবরতন করেন কে ? অনেকে বলেন আকবর।
  8. বাংলা সনের প্রবর্তক কে?
  9. বাংলা সনের উৎস সন্ধান
  10. বাংলা সালের সূচনা ও বিবর্তন
  11. হিজরি থেকেই বাংলা সনের উৎপত্তি
  12. বাংলা সনের প্রবর্তকের খোঁজে
  13. বাংলা সনের প্রবর্তক কে?
  14. বাংলা সনের প্রবর্তক কে?

লেখক- সুমন বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা বিশ্ব বিদ্যালয়।