প্রতিবেশী দেশগুলির সাথে ভারতের সম্পর্ক

প্রতিবেশী দেশগুলির সাথে ভারতের সম্পর্ক: আন্তর্জাতিক মিডিয়ার প্রোপাগান্ডা- অপু ঢালি

কারণ ওই ব্যক্তি মূলতঃ সেখানে একা থাকে এবং গরু পাচারকারীরা সংঘবদ্ধভাবে অনেকে একসাথে আসেন। এই বিষয়টা পূর্ব থেকেই এলাকার মানুষ বিএসএফকে জানায় কিন্তু আসল কোনো ফলাফল আসে না।

কারণ বিএসএফ এর গুলি করার অনুমতি না থাকার কারণে দুই একজন বিএসএফের পক্ষে 20 থেকে 30 জনের মোকাবেলা করা সম্ভব থাকে না। এই কারণে অনেক সময় বিএসএফ হতাহত বা হত্যা হয়েছে তার নজির আছে। এই বিষয়টা নিয়ে যখন বিএসএফের উচ্চপর্যায়ে কথা ওঠে তখন অনুমতি না দিলেও ফিল্ডের পরিস্থিতি অনুযায়ী অনেক সময় বিএসএফ’ গুলি চালাতে বাধ্য হয়।

এ বিষয়ে একটা বিষয় না বললেই নয়। গত কংগ্রেসের আমলে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড কারণে প্রায়ই কথা উঠত। বিশেষ করে ফেলানী হত্যা টা খুবই আলোড়ন তৈরি করে। এ ধরনের সমস্যা যত এড়িয়ে চলা যায়, তার জন্যই বর্তমান গভমেন্ট অনেক চেষ্টা করেছিল বা করছে।

তার অন্যতম উদাহরণ ছিট মহল বিনিময়। নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর থেকে তার প্রতিবেশীদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য অজস্র চেষ্টা করেছেন। কিন্তু বিধিবাম আসলে পরিস্থিতি অনুকূলে নাই। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক কথা আসলেই আসলে ফেলানী হত্যার কথা। এখানে একটা বিষয় উল্লেখ করা খুবই প্রাসঙ্গিক।

আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ইন্টার্নেশনাল সীমানা প্রাচীরের কোন রঙিন কাপড় পড়ে যাওয়া আইনগতভাবে অবৈধ। তা সত্তেও ফেলানীর মতো অনেকেই প্রতিনিয়ত রঙিন পোশাক করে সীমান্ত পাড়ি দিতে আসে।

 

এখানে একটা বিষয় আরেকটু প্রশ্ন করা দরকার আছে। বাংলাদেশের মানুষ ভারতের বিজেপি গভমেন্ট কে হিন্দুত্ববাদী হিসেবেই জানে। যার ফলে একটা প্রতিবাদ সবসময়ই ছিল। সেই প্রতিবাদের ভাষাটা ফেলানী পর্যন্ত চলে যায়। এখানে মজার বিষয়টি হলো।

ফেলানী হত্যার কারণে বাংলাদেশের মানুষ ভারত বিদ্বেষী মনোভাব পোষণ করলেও। বিজেপ সরকার থেকেও কংগ্রেস সরকার কে বেশি পছন্দ করে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এরা ভুলে যাই এই ফেলানীর হত্যা কংগ্রেস আমলে হয়েছিল। কিছুদিন আগে রাজশাহী সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফ’ একজন  অফিসারকে বাংলাদেশের সীমান্ত বাহিনী হত্যা করেছিল মাথায় গুলি করে। সেটা নিয়ে কিন্তু বাংলাদেশের জনসাধারণ টু শব্দ করে না।

ফেলানী হত্যা বা সীমান্ত হত্যার জন্য বাংলাদেশের জনসাধারণ প্রতিবাদ করতে চাইলে করুক। সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু দুঃখের বিষয় এদের প্রতিবাদ টা আসলে সিলেক্টেড প্রতিবাদ। এরা ফেলানী হত্যার জন্য ভারতকে দায়ী করে বিজেপি সরকারের সমালোচনা করে।

এরা ভুলে যায় ফেলানী কংগ্রেস আমলে হত্যা হয়েছিল। তাই মনের অজান্তে বিজেপির বিরোধিতা করতে গিয়ে কংগ্রেসকে সমর্থন করে বসে। উপরে বললাম সিলেক্টেড প্রতিবাদ।  সীমান্ত হত্যার জন্য ঘৃণা প্রকাশ করতে পারে, কিন্তু সৌদি আরব থেকে প্রতিবছর অজস্র নারী ধর্ষিত হয়ে লাশ হয়ে দেশে ফিরলেও টু শব্দ করে না। এরা ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনায় পাকিস্তানকে সমর্থন করে কিন্তু এরা ভুলে যায় ত্রিশ লক্ষ শহীদ এবং দুই লক্ষ নারীর সম্মানের কথা।

 

এরা চীন ভারত উত্তেজনা চীনকে সমর্থন করে এরা ভুলে যায় রোহিঙ্গাদের কথা। এরা ভুলে যায় 71 সালের চীনর ভূমিকার কথা। এরা ভুলে যায় পৃথিবীর একমাত্র দেশ চীন যারা কুরআন নিষিদ্ধ করেছেন। উইঘুর মুসলিমদের সাথে চীন কি ধরনের আচরণ করছে সেটা সারা বিশ্ব জানে।

বাংলাদেশের মানুষ জানে না। আসলে জানেনা না জানতে চাই না। যদি মুসলমানের কথা আসে তাহলেও পাকিস্তান যেভাবে পাকিস্তান বেলুচিস্তান এবং সিন্ধু প্রদেশের মুসলমানদের উপর কি ধরণের  অত্যাচার করছে। । কিন্তু সে বিষয়ে টু শব্দ করে না।

বিবিসির মতন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কিছু মিডিয়া বাংলাদেশের মানুষদের ভারত বিদ্বেষী হিসাবে গড়ে তোলার পিছনে একটা মোটা অংকের দায়ী। বিবিসির সাম্প্রতিক সময়গুলোতে ভারতকে টার্গেট করে বাংলাদেশের মানুষকে ক্ষেপিয়ে তুলছে। যার যথেষ্ট উদাহরণ বিবিসি নিউজ পোর্টালে গেলে আপনি পাবেন। এ বিষয়ে মনে হয় না নতুন করে আমার কোনো ব্যাখ্যা দেয়ার দরকার আছে। তারপরও যদি কারও লাগে তাহলে নক করবেন আমি দিব।

 

আমি যে কথাটা দিয়ে লেখা শুরু করেছিলাম সেটাই আবার ফিরে আসি। বিবিসি তার সংবাদ প্রচার করেছে ভারতের সাথে প্রতিবেশী দেশ সম্পর্ক ভালো না। কিন্তু দুঃখের বিষয় বিবিসির মতন মিডিয়া চীনের সাথে তার প্রতিবেশী বা পাকিস্তানের সাথে তার প্রতিবেশী বা বাংলাদেশ সাথে তার প্রতিবেশী সম্পর্ক ভালো নেই এই শিরোনামে সংবাদ করার সাহস দেখাতে পারে না।

চিন তার প্রতিবেশী চোদ্দ দেশসহ 18 দেশের জমি দখল করেছে যাদের সাথে তার সম্পর্ক ভালো না। পাকিস্তানের প্রতিবেশী আফগানিস্তান, ইরান, ভারত, চীন। একমাত্র চীনের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক আছে বাকি তিনটি দেশের সাথে কোন যোগাযোগ ও সম্পর্ক নাই। এখানে উল্লেখ্য বিষয় ভারত বাদে বাকি দুটি দেশ মুসলিম দেশ। এবার বাংলাদেশের কোথায় আসি।

ভারতের সাথে থাকবে না বলেই বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছিল পাকিস্তানের মধ্য দিয়ে। তাই ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক ভালো হবে না এটা অস্বাভাবিক কিছু না। যদিও যেটুক হওয়ার সম্ভাবনা ছিল সেটুকু শেষ হয়ে যায় ৭৪ সালে বঙ্গবন্ধুর খুনের মধ্য দিয়ে।

 

সুতরাং বাংলাদেশের সাথে ভারতের বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্ক এটা এক ধরনের মিথ্যাচার বা মিথ্যাচার করা ছাড়া আর কিছু না। বর্তমানে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পিছনে অনেক টাই ভারতের কাছে কৃতজ্ঞ। সেই কারণে হয়তোবা ইচ্ছে থাকলেও বাংলাদেশের সরকার এবং ভারতের সরকার সম্পর্কটা থাকলেও  জনগণের মধ্যে শূন্যের কোটায় পৌছিয়ে গিয়েছে।

তাই উপরে উল্লেখিত বিষয় ছাড়াও আরও অনেক বিষয় আছে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বন্ধুত্ব সম্পর্ক ভিত্তিহীন বলার পিছনে। এখানে একটা বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়। আমার পাশের বাড়ির এক বৃদ্ধ বয়স্ক দাদু বলতেন। তুমি যাকে সাহায্য করো যদি কোন কারণে তার উপর থেকে সাহায্যের হাতটা তুলে নাও তাহলে ওই ব্যক্তি একসময় তোমার বিরুদ্ধে ঘেন্না ছড়াতে থাকবে তোমার শত্রুদের সাথে হাত মিলাবে সাহায্য পাওয়ার জন্য। আর তোমার শত্রুরাই তাকে সাহায্য দিতে এগিয়ে আসবে।

কথাটা আসলেই কতটা সত্য সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। বাংলাদেশ, ভারত, চীনের মধ্যে ঠিক তেমনটাই হয়ে চলেছে। ভারত যখনই তার সাহায্যের হাতটা অনেকটা ছোট করে ফেলেছে ঠিক তখনই সে জায়গাটা দখল করতে এসেছি চীন। ভারত তার এত বড় জনসংখ্যা বিষয়ে যখন চিন্তা করতে শুরু করেছে ঠিক তখনই চিন সুযোগটা কাজে লাগিয়েছে।

 

সর্বোপরি এখানে একটা বিষয় পরিষ্কার করা খুবই দরকার। যদি কাউকে বলা হয় বাংলাদেশের সাহায্য বা সহযোগিতা করেছে এমন দেশের তালিকা তৈরি করো। তো সেখানে যে দেশটির নাম আসবে প্রথমে সেটি হলো ভারত। তারপরে আসবে জাপান। সেই জাপান এখন চীনের জন্য জর্জরিত। বাংলাদেশের জনগণ সেই জাপান কেউ ভুলে গিয়েছে। তৃতীয় যে দেশটির নাম আসে সেটা হচ্ছে ইজরাইল। এই নামটা শুনে হয়তোবা আপনি অবাক হয়েছেন।

কিন্তু আপনি হয়তো জানেও না ইসরাইল বাংলাদেশকে কত বড় সাহায্য করেছে। আমরা সকলে জানি যে বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছে ভারত। আদতে সেটা সত্য না। বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দেয় ইসরাইল যেটা বাংলাদেশ সরকার প্রত্যাখ্যান করে। 71 সালে যুদ্ধের সময় ইসরাইলে হয়তো যুদ্ধ ছিল না কিন্তু ভারতের যত ধরনের উন্নত অস্ত্র ছিল বেশিরভাগই ইসরাইল থেকে এসেছিল।

 

সুতরাং এখন আর নতুন করে এখানে বলার কিছু নাই। বাংলাদেশের মানুষ ভারতবিদ্বেষী হবে বা ভারতের প্রতিবেশী দেশর সাথে ভারতের সম্পর্ক ভালো থাকবে না। আদতে এটা মিডিয়া যেভাবে প্রচার করছে সেটা কতটা সত্য? ভাবুন চিন্তা করুন।

একবার ভাবুন যে দুইটা দেশ জাপান এবং ভারত বাংলাদেশের সৃষ্টিলগ্ন থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার পরও কেন বাংলাদেশের জনগণের কাছ থেকে বিদ্বেষের শিকার হয়। আসলে সীমান্তহত্যা একটা অজুহাত মাত্র। যে কারণেই ৪৭ সালে বাংলাদেশে আলাদা হয়েছিল সেই কারণেই এখন ভারত বিদ্বেষী মনোভাব চর্চা হয়ে চলেছে। যদি তাই না হয় তাহলে বাংলাদেশের মানুষের এত সিলেক্টিভ প্রতিবাদ করে কেন?

১.সৌদি আরবের থেকে নারী নির্যাতন হলে কথা বলে না।

২. 30 লক্ষ শহীদ 2 লক্ষ নারী সম্মান বিষয় নিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কথা বলে না।

৩. কুরআন নিষিদ্ধ এবং ১৪ লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশের ঠেলে দেয়ার পরেও চিন কিভাবে বন্ধু হল সেটা নিয়ে আলোচনা করে না।

 

আসলে উপরের উল্লেখিত বিষয়গুলো সবটাই গৌণ হয়ে যায় যদি থাকে সেখানে ভারত। ভারত বিদ্বেষী বা ভারতের প্রতিবেশী সাথে ভারতের সম্পর্ক ভাল না বলার জন্য ৪৭ সালে ভারত ভাগের মূল কারণটাই একমাত্র কারণ, অন্য কিছু নয়। তাতে আপনি যতই ত্যানা প্যাঁচানো আর যাতে দোষ দেন এগুলো আসলে  ভাওতাবাজি ছাড়া আর কিছু না। বাংলাদেশ ভারতের বন্ধুত্ব সম্পর্ক আদৌ কোন দিন ছিল না, আগামীতেও থাকবে কি না সেটা সময় বলে দিবে। সম্পূর্ণটাই এক ধরনের নাটক ছাড়া আর কিছু না।

আমাদের সাথে চলতে একটি লাইক ‍দিয়ে রাখুন। ধন্যবাদ।

 

আরো দেখুন..