ঠেকাতে হবে পাকিস্তান ও সেক্যুলারদের মিলিত ষড়যন্ত্র। পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ‘অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস অব পাকিস্তান’ – জানিয়েছে, গতকাল (২২/৭/২০২০খ্রিঃ) বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোন আলোচনার সময় ইমরান খান উল্লেখ করেছেন যে, পারস্পরিক বিশ্বাস, পারস্পরিক সম্মান এবং সার্বভৌম সমতার ভিত্তিতে বাংলাদেশের সাথে ভ্রাতৃত্বমূলক সম্পর্ক গভীর থেকে গভীরতর করতে পাকিস্তান প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ সময় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখতে – তার দেশের গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টি, শেখ হাসিনার নিকট তুলে ধরেন।
গত মার্চ মাসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে পত্র পাঠিয়েছিলেন ইমরান খান। চিঠিতে তার বক্তব্য ছিল, “পাকিস্তানের জনগণ, সরকার এবং আমার নিজের পক্ষ থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি।”
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর, ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী ঘাতক-দালালদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করলে, পাকিস্তান তীব্র আপত্তি জানিয়েছিল। ফলে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক দূরত্ব সৃষ্টি হয়। পাকিস্তানের হঠকারিতার কারণে সৃষ্ট কূটনৈতিক ফাটল মেরামত করতে, ইমরান খান যথেষ্ট উদ্যোগী।
একদা ভারতের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ সরকার, বিগত বছরগুলোতে সুস্পষ্টভাবে চীনের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। বাংলাদেশে বিনিয়োগ, বানিজ্য, বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণে ঠিকাদারি প্রভৃতি ক্ষেত্রে – চীনের একচেটিয়া প্রাধান্য। চীন দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের সিংহভাগ সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করে আসছে।
ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে,বাংলাদেশে তীব্র ভারত-বিরোধী প্রচারণা চালানো হয়; অথচ চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি – ভারতের সাথে বানিজ্য ঘাটতির প্রায় দ্বিগুণ; অথচ ওই বিষয়ে বাংলাদেশ কেউ টুঁ শব্দটি পর্যন্ত করে না।
পাকিস্তান ও সেক্যুলার: চীন ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সক্রিয় বিরোধিতাকারী। বাংলাদেশ যাতে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে জাতিসংঘে স্বীকৃতি না পায় – এজন্য চীন পরপর তিনবার নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো দিয়েছিল। নামাজ,রোজা,বোরখা-হিজাব,দাড়ি রাখা ইত্যাদি নিষিদ্ধ করে, চীন যে ইসলাম-বিরোধী দুঃসাহস দেখিয়েছে – অত সাহস পৃথিবীর অন্য কোনো রাষ্ট্র দেখাতে পারেনি।
এতকিছুর পরেও চীন বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কাছে পরীক্ষিত বন্ধু। পক্ষান্তরে ধর্মনিরপেক্ষ ভারত সংখ্যালঘু মুসলমানদের যত সুযোগ-সুবিধা দেয়, ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সম্প্রদায় ওই সুযোগ-সুবিধার কথা চিন্তাও করতে পারে না; এমনকি কোন মুসলিম রাষ্ট্রও তাদের দেশের মুসলমানদের ভারতের মতো অতো সুযোগ-সুবিধা দেয় না; তা সত্ত্বেও বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী, মুসলিম নির্যাতনের কাল্পনিক অভিযোগ তুলে ভারতকে যত ঘৃণা করে – ইসরাইল ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোন রাষ্ট্রকে তারা অত ঘৃণা করে না। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য,ভারতীয় জনগণের চামড়া তুলে বাংলাদেশীদের জন্য জুতা বানিয়ে দেওয়ার বোকামিকে, বাংলাদেশে বলা হয় – ‘পাকিস্তান ভাঙার ষড়যন্ত্র’।
কাজেই এহেন ভারত-বিরোধী তৃতীয় বৃহত্তম ইসলামী রাষ্ট্রটির সাথে যদি পাকিস্তান ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে, তাহলে সেটা নতুন দিল্লির জন্য যথেষ্ঠ উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে বাধ্য। লাদাখ সীমান্তে চাইনিজ আগ্রাসন সাফল্যের সঙ্গে প্রতিহত করার পর, ভারত চেষ্টা করছে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ভিয়েতনাম প্রভৃতি দেশকে নিয়ে চীন-বিরোধী মহাগঠবন্ধন গড়ে তুলতে।
ঠিক সেই সময়, পাকিস্তান ইসলামী ভাবাবেগ কাজে লাগিয়ে, ইরানকে ভারতের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলে – চীনের ঋণের জালে জড়িয়ে দিয়েছে। তাছাড়া ভারতের সেক্যুলার রাজনৈতিক শক্তির ছত্রছায়ায় – পাকিস্তান দীর্ঘমেয়াদি প্রচেষ্টায় ভারতের অভ্যন্তরে গড়ে তুলেছে শক্তিশালী একটি ‘তৃতীয় পাকিস্তান’। এই তৃতীয় পাকিস্তান ও বিশ্বাসঘাতক সেক্যুলারদের সম্মিলিত শক্তি – ভারতের যত ক্ষতি করতে পারবে, পৃথিবীর অন্য কোন দেশ, ভারতের অত ক্ষতি করতে পারবে না।
এই তৃতীয় পাকিস্তানটিকে সম্প্রসারিত করতে, পাকিস্তান বিভিন্ন কূটকৌশলে ভারতের ভিতরে ঢুকিয়ে দিচ্ছে, উচ্চপ্রশিক্ষিত জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের।
অনুপ্রবেশকারী জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করার উদ্দেশ্যে, ভারত সরকার National Population Register (NPR) এবং NRC (National Register of Citizens) করার উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু পাকিস্তানের দুধেল গাই – কালনাগিনীর NPR ও NRC বিরোধী বিষাক্ত নিঃশ্বাসে আক্রান্ত হচ্ছে নিরীহ হিন্দুরা। এই কালনাগিনীদের বিষদাঁত ভেঙে দিতে না পারলে, ভারতের ঐক্য ও সংহতি বিপন্ন হয়ে পড়বে।
অনুপ্রবেশকারী ইসলাম ধর্মালম্বী জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের খুন-ধর্ষণের বিরুদ্ধে যখনই প্রতিবাদ করা হয়, অমনি হিন্দু নামধারী সেক্যুলাররা দেশে-বিদেশে চিৎকার শুরু করে দেয়,”হিন্দু-মুসলমান বিভেদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। বাইরে থেকে যেসব মুসলমান অতিথিরা ভারতে এসেছেন বা আসবেন, তারা সবাই ভারতীয়। বিদেশী মেহমানদের খুন-ধর্ষণ নীরবে সহ্য করা, হিন্দু জাতির আবহমান সংস্কৃতি এবং এটাই ‘সর্বধর্ম সমন্বয়’।”
অথচ এই সেক্যুলাররাই ভারতের খণ্ডিত অংশ থেকে উদ্বাস্তু হয়ে আসা হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার বিরুদ্ধে জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন করে বলে, “ভারতকে ধর্মের ভিত্তিতে বিভক্ত করা হচ্ছে।”
এই সেক্যুলারদের বুঝানো যায়না যে, ধর্মের ভিত্তিতে ভারত ভাগ হয়েছিল বিধায় – পাকিস্তান,বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান থেকে হিন্দুরা সব হারিয়ে শুধু প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে ভারতে এসে আশ্রয় নিয়েছে। ইসলামী রাষ্ট্র থেকে মুসলমানরা ভারতে আসে, ভারতকে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য। ভারত যদি ইসলামী রাষ্ট্রে পরিণত হয়, তাহলে আজ যে সেক্যুলার দালালরা পাকিস্তানের পয়সা খেয়ে অনুপ্রবেশকারীদের দালালি করছে – ওই সেক্যুলারদেরই সবার আগে খতম করে দেওয়া হবে। কারণ ইসলামী রাষ্ট্রে সেকুলারদের বেঁচে থাকতে দেওয়া হয় না; ইতিহাসে তার ভুরিভুরি দৃষ্টান্ত আছে।
নিজেদের মধ্যে আত্মকলহ, ভ্রান্ত ও উদ্ভট আধ্যাত্মিক বিশ্বাস প্রভৃতি কারণে, যেতে যেতে বহু দেশ হিন্দুদের হাতছাড়া হয়ে গেছে। বাকি আছে শুধু নেপাল ও ভারত। এই দু’টো দেশ ছিনিয়ে নিতে পাকিস্তান ও আরব সাম্রাজ্যবাদীরা, অভ্যন্তরীণ শত্রুদের ব্যবহার করছে – যারা দিন-রাত উদারতা,সহিষ্ণুতা,ধর্মনিরপেক্ষতা ইত্যাদি আত্মঘাতী মাদকের অপপ্রয়োগ করে হিন্দুদের মগজ পচিয়ে দিচ্ছে।
সুতরাং ঘরে-বাইরে ভয়ঙ্কর সব শত্রুদের মোকাবেলায়, ভারতকে আরও বাস্তবমুখী-কর্তৃত্ববাদী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে অভ্যন্তরীণ শত্রুদের মোকাবেলায়, অত্যাধিক কঠোরতা অবলম্বন আবশ্যক। আত্মরক্ষা ও দেশরক্ষার জন্য চৌকস যুবশক্তির সামরিক-প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা উচিত। সেই সঙ্গে যদি কঠোর ভাবে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা না হয় – শত্রুরা জনবিস্ফোরণ ঘটিয়ে ভারত দখল করে নেবে।