রাম মন্দির পুনর্নির্মাণে ‘কে কে মহম্মদ’-এর অবদান স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।কেরল রাজ্যের কালিকটের বসিন্দা সদাহাস্যময় কারিঙ্গামান্নু কুঝিয়ুল মহম্মদ। তিনি ‘কে কে মহম্মদ’ নামে স্বনামধন্য। ভারতের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ বা আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার অবসরপ্রাপ্ত রিজিওনাল ডাইরেক্টর।
১৯৭৬ সালে বিতর্কিত স্থাপনা ‘বাবরি মসজিদ’-এ খনন কাজ চালানোর সময় তিনি ১২টি স্তম্ভ দেখতে পান – যা ভেঙে ফেলা রাম মন্দিরের অংশ এবং তা দিয়ে মসজিদটি তৈরি। কে কে মহম্মদের ভাষায় “স্তম্ভের গোড়ার দিকে হিন্দুদের পবিত্র অষ্টমঙ্গল চিহ্নের অন্যতম পূণ্য-কলসির অস্তিত্ব রয়েছে, যা প্রমাণ করে যে ওই স্থানে মসজিদ নির্মাণের পূর্বেই মন্দির ছিল।
কেননা দিল্লির কুতুবমিনার মসজিদেও ওই একই ধরনের হিন্দু প্রতীকসমূহের পরিস্কার উপস্থিতি বিদ্যমান এবং সেখানে পরিষ্কার ভাষায় লেখা আছে যে, ২৭টি হিন্দু মন্দির ভেঙে কুতুব মিনার মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে।”
পরবর্তী সময়ে কে কে মহম্মদ আরোও জানান, “২০০৩ সালে বিতর্কিত স্থানে দু’ টুকরো হয়ে যাওয়া ‘বিষ্ণু হরি শিলা ফলক’ – পরিলক্ষিত হয়েছে; যেখানে উল্লেখ ছিল, এই মন্দির বিষ্ণুর সেই অবতারকে উৎসর্গ করে তৈরি, যিনি পৌরাণিক চরিত্র কিষ্কিন্ধ্যারাজ বালি এবং ১০ মাথা বিশিষ্ট এক রাক্ষসকে হত্যা করেছিলেন।
সেই মন্দিরের ১৭টি স্তরে, এই ধরনের সনাতন ধর্মের প্রতীক-সম্বলিত আরোও ৫০টি স্তম্ভের অস্তিত্ব রয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই এই সমস্ত পুরাতাত্ত্বিক প্রমাণ থেকে সহজেই প্রতীয়মান হয় যে, হিন্দু শাস্ত্রীয় দেবতা রামচন্দ্রের মন্দির ভেঙেই এই বিতর্কিত স্থাপনা ‘বাবরি মসজিদ’ – নির্মাণ করা হয়েছিল।”
শুধু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনই নয়, প্রাক্তন এই এএসআই কর্মকর্তা কে কে মহম্মদের দাবি, বিভিন্ন ঐতিহাসিক তথ্যেও ওই স্থানে মন্দির থাকার উদাহরণ মিলেছে। তিনি বলেন, “আবুল ফজলের বিখ্যাত ‘আইন-ই-আকবরি’-গ্রন্থের তৃতীয় খণ্ডে উল্লেখ রয়েছে – অযোধ্যার ওই অংশে হিন্দুদের উপাসনস্থল থাকার কথা।
তাছাড়া ১৬১১ সালে ভারতে আসা ঐতিহাসিক ‘উইলিয়াম ফিঞ্চ’-এর লেখায়; তারপরে ওলন্দাজ ঐতিহাসিক ‘জন ডিলান’ এবং ক্যাথলিক ধর্মযাজক ‘জোসেফ টেলর’-এর লেখাতেও রয়েছে – অযোধ্যায় ‘রাম মন্দির’ – ভেঙে মসজিদ নির্মাণ করার কাহিনী।”
আদালতর রায় ঘোষণার পর কে কে মহম্মদ সংবাদ মাধ্যমে প্রদত্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, “খননকার্য চালানোর সময় ২৬৩টি টেরাকোটা নিদর্শনের সন্ধান মিলেছিল, যাতে নর-নারী এবং একাধিক দেব-দেবীর আকৃতির ভাস্কর্য ছিল। ওই স্থানে চিরকাল মসজিদ থাকলে, সেখানে নর-নারী এবং একাধিক দেব-দেবীর ভাস্কর্য থাকা সম্ভব নয়; কারণ ইসলাম ধর্ম মতে, মসজিদের কোনও অংশে জীবিত প্রাণীর স্থান থাকতে পারে না।
এ ছাড়াও মন্দিরের অংশে থাকা বিগ্রহকে অভিষেকের সময় স্নান করানোর জন্য কুমিরমুখী নালার সন্ধান পাওয়া গিয়েছে; যা হিন্দুমতে ‘মকর প্রণালী’ বা গঙ্গা-স্নানের নিদর্শন। গ্রাউন্ড পেনিট্রেটিং রেডার (জিপিআর) প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরীক্ষার পুরো প্রক্রিয়াটি ভিডিয়োগ্রাফিও করা হয়েছিল।”
বস্তুত কে কে মহম্মদ প্রদত্ত রিপোর্টেই সর্বপ্রথম সুস্পষ্টভাবে দাবি করা হয়েছিল যে,অযোধ্যায় বিতর্কিত স্থাপনা বাবরি মসজিদ চত্ত্বরে – মসজিদ প্রতিষ্ঠার অনেক আগে থেকেই সেখানে একটি প্রাচীন হিন্দু মন্দিরের অস্তিত্ত্ব ছিল।
কে কে মহম্মদের সেই রিপোর্টের উপর ভিত্তি করেই সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিগণ মেনে নিয়েছেন যে, অবৈধ স্থাপনার নিচে বহু পুরনো আর একটি মন্দিরের কাঠামো ছিল – যেটি ‘ইসলামি ঘরানা’-য় নির্মিত নয়।
সেই ঐতিহাসিক রায় ঘোষণার পর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে কে কে মহম্মদ বলতে দ্বিধা করেননি, “এটা একেবারে পারফেক্ট জাজমেন্ট। আমার মতে এর চেয়ে ভাল রায় আর কিছু হতেই পারে না! মন্দির বানানোর রায়ের মধ্যে দিয়ে আমার দীর্ঘদিনের প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা ও পরিশ্রমই স্বীকৃতি পেয়েছে।
আমি একজন মুসলিম হয়েও কীভাবে অযোধ্যার বিতর্কিত ধর্মীয় স্থানে মন্দির ছিল বলে আজীবন সওয়াল করে এসেছি – তার জন্য নিজের মুসলিম সমাজের লোকজনের কাছ থেকে বহু অপবাদ শুনতে হয়েছে। অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়েছে। হুমকি-ধামকিও এসেছে।
কিন্তু কোন কিছুই আমাকে সত্যানুসন্ধান থেকে পিছু হটাতে পারেনি। আবার কিছু বিশিষ্ট মুসলিম ব্যক্তিত্ব প্রকাশ্যেই আমাকে সমর্থন জানিয়েছেন।”
কে কে মহম্মদ আরোও জানিয়েছেন, “ইরফান হাবিবের মতো বামপন্থী ইতিহাসবিদরা কংগ্রেস শাসনামলে সাংঘাতিক প্রভাবশালী ছিলেন। ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব হিস্টোরিকাল রিসার্চ’-এ তখন ইরফান হাবিবের মতো বাম ঘরানার লোক-জনদেরই একচেটিয়া দাপট; ফলে তারা আমাদের গবেষণাকে একেবারেই গুরুত্ব দেননি,প্রতিটি পদে পদে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে।”
হিন্দু-বিদ্বেষী কুখ্যাত গান্ধী-নেহেরু পরিবারের দীর্ঘ অপশাসনকালে – পাকিস্তানের রিমোট কন্ট্রোলে মাদ্রাসা-প্রভাবিত ইরফান হাবিবদের নেতৃত্বে ভারতের ইতিহাস বদলে দেওয়ার উদ্দেশ্যে জঘন্য ষড়যন্ত্রের জাল বিছানো হয় – যেখানে ভারতীয় হিন্দু মহানায়কগণের চরিত্রহনন করার পাশাপাশি, বহিরাগত ইসলাম ধর্মালম্বী খুনি-ধর্ষক দখলদারদের মহামানব হিসেবে চিত্রায়িত করার অপচেষ্টা চালানো হয়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র রুখে দাঁড়িয়েছিলেন কে কে মহম্মদ।