কলম্বো বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশ করল প্রাচীন ভারতেই প্রথম প্লাস্টিক সার্জারী । নেটের কল্যাণে আমরা জানতে পেরেছি প্লাস্টিক সার্জারি আমাদের এই ভারতবর্ষে হয়েছিল। কিন্তু এই বিষয়টা নিয়ে অনেকে দ্বিমত ছিল অনেকে এতদিন বলে আসছিল যে এটা দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক সংগঠন দাঁড়ায় এক ধরনের মিথ্যা প্রচার।
যার কারণে বিষয়টা এতদিন অনেকটাই দোদুল্যমান অবস্থায় ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে কলম্বো বিশ্ববিদ্যালয় সেই বিষয়টি পরিস্কার করে দিয়েছে। কলম্বো বিশ্ববিদ্যালয় সার্জারি বিভাগ তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে সার্জারি প্রাচীন ভারতে সর্বপ্রথম হয়েছিল। আমি আপনাদের আজকে এই বিষয়ে এই এ নিবন্ধে বলবো ।
Columbia University Irving Medical Center‘s website says that,
“Think plastic surgery is a modern luxury? Think again. It turns out that the roots of cosmetic and reconstructive procedures go back more than 2500 years. It’s a common misconception that the “plastic” in “plastic surgery” refers to an artificial material when it actually derives from the Greek word, plastikos, meaning “to mold” or “to give form.”
Photo: Columbia University |
আসুন আমি আপনাদের সন্ধ আগে কাটিয়ে দিই কলম্বো বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের এই লিংকে ক্লিক করে বিস্তারিত জেনে নিন। ,History of Medicine: Ancient Indian Nose Jobs & the Origins of Plastic Surgery.
এই আধুনিক সময়ে এসো আমাদের কাছে প্লাস্টিক সার্জারি এখনো বিলাসিতা। কিন্তু ভাবুন তো আজ থেকে প্রায় ২৫০০ বছর আগেও এই প্লাস্টিক সার্জারি স্থাপন করার কাজ শুরু হয়েছিল। আমাদের সকলের কমবেশি একটি ভুল ধারণা আছে যে “প্লাস্টিক সার্জারি” -এ “প্লাস্টিক” বলতে কোনও কৃত্রিম পদার্থকে বোঝায়। যখন এটি গ্রীক শব্দ প্লাস্টিকোস থেকে এসেছে যার অর্থ “ছাঁচ দেওয়া” বা “ফর্ম/আকৃতি দেওয়া”। কিন্তু আদৌ কি তাই?
আসুন এই নিবন্ধটি পড়ার মাধ্যমে সেই বিষয়টা জানার চেষ্টা করি। সংস্কৃত শব্দ সুশ্রুত অর্থ, ‘সু-শুভ এবং শ্রুত – অবহিত’, অর্থাৎ ‘একজন ভাল জ্ঞাত বা সুপরিচিত ব্যক্তি’, মহাভারতের মতে সুশ্রুত ঋষি বিশ্বমিত্রের পুত্র এবং কাশির রাজা দেবদাস ধনবন্তরীর ছদ্মবেশী ছিলেন। উত্তর ভারতে অবস্থিত একটি পবিত্র হিন্দু স্থান- বেনারশী। যা সুশ্রুত সংহিতার বর্তমান সংমিশ্রনের সাথে মিলে যায়।
তবে অবাক করার মতো বিষয় হলো সুশ্রুত নিজেই তাঁর জন্মস্থান বা সুস্রুত সংহিতায় কোথাও সঠিক পরিচয় উল্লেখ করেন নি যা বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও আয়ুর্বেদবাদীদের মধ্যে কৌতূহল সৃষ্টি করে। তবে তিনি ভারতের দক্ষিণাঞ্চলটির উদ্ধৃতি দিয়েছিলেন। সুশ্রুত সংহিতা ১১,০০০ এরও বেশি রোগের ইটিওলজি, শতাধিক ষধি গাছের ব্যবহার এবং তিন ধরণের ত্বকের গ্রাফ্ট এবং নাকের পুনর্গঠন সহ বেশ কয়েকটি শল্য চিকিত্সা সম্পর্কিত নির্দেশাবলী লিপিবদ্ধ করেছেন।
“সার্জারীর জনক “ প্রাচীন ভারতের ইতিহাস ঘাঁটলে যে কয়েকজন চিকিৎসাবিদ্যায় অবদান রেখেছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলো সুশ্রুত। তিনি ছিলেন প্রাচীন ভারতের একজন ঋষি এবং একজন সার্জন । তিনি সুচিস্মিতা লিখেছিলেন সুস্রুত সংহিতা। সুশ্রুত সংহিতা হল আয়ুর্বেদের ধনবন্তরীয়া সমপ্রদায় (প্রাচীন অস্ত্রোপচার বিদ্যালয়) এর রচনা সংগ্রহ । যা কয়েক সহস্র বছর পরে এসেও আচার্য সুশ্রুত এই জাতীয় সাহিত্য।
তার নীতিগুলি, রোগ নির্ধারণ এবং চিকিত্সা দিয়ে আয়ুর্বেদের প্রতি এক বিরাট অবদান রেখেছেন। এই বইটিতে সবচাইতে উল্লেখযোগ্য যে বিষয়টি এসেছে সেটি হলো- তিনি এই বইটিতে 120 টি চিকিৎসায় ব্যবহৃত অস্ত্র যন্ত্রের বর্ণনা দিয়েছেন। এছাড়াও ৩০০ বেশি শল্যচিকিত্সা পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন।যেগুলো সবই তার নিজের তৈরি বা উদ্ভাবিত যন্ত্র ছিল। সহজভাবে এই যন্ত্রগুলোকে বোঝার জন্য তিনি যন্ত্রগুলোকে আটটি বিরক্ত করেছিলেন।
প্রাচীন ভারতীয় পাঠ্য সুশ্রুত সংহিতা শাস্ত্র এবং কর্তারিকা, অস্ত্রোপচারের যন্ত্র |
আসোপা হাসপাতাল ও গবেষণা কেন্দ্রের নিবন্ধ:
আসোপা হাসপাতাল ও গবেষণা কেন্দ্রের মতে- এই মহান শল্য চিকিৎসক শুধু শল্য চিকিৎসা বা প্লাস্টিক সার্জারি নয়তিনি চোখের ছানি কাটার পদ্ধতি এই ভারতে প্রথম আবিষ্কার করেছিলেন। সুশ্রুত জবামুখী সালাকা নামে একটি বিশেষ সরঞ্জাম ব্যবহার করেছিলেন যা লেন্স আলগা করার জন্য এবং ছানিটিকে দর্শনক্ষেত্রের বাইরে ধাক্কা দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল।
আশোপা হাসপাতাল ও গবেষণা কেন্দ্র আরও দাবি করেছে, প্লাস্টিক সার্জারির যে পদ্ধতিগুলি তারা আজ ব্যবহার করি সেগুলি তার থেকে আলাদা নয়। প্রকৃতপক্ষে, বইটিতে বর্ণিত শল্য চিকিত্সার জন্য কিছু সরঞ্জাম এখনো একাবিংশ শতাব্দীতে তৈরি করা হচ্ছে। এই সার্জারিগুলি এতটাই প্রসিদ্ধ ছিল যে গ্রীক দার্শনিক এবং বিজ্ঞানীরা সুশ্রুত দ্বারা পরিচালিত এই সার্জারিগুলি পর্যবেক্ষণ করতে ভারতে ভ্রমণ করেছিলেন।যেটা ওই সময়কার বিভিন্ন লেখা থেকে জানা যায়।
রচনা প্রকৃতি – সুশ্রুত সংহিতা:
সংস্কৃত ভাষায় লেখা প্রাচীন ভারতের চিকিৎসা শাস্ত্রের একটা বিশাল গ্রন্থ সুশ্রুত সংহিতা। এই বইটি গদ্য এবং কবিতা আকারে রচিত।কবিতা একটি স্মৃতি সহায়ক হিসাবে পরিচিত ছিল। সুশ্রুত সংহিতাটিতে ১৮৬ টি অধ্যায় রয়েছে। আবার অধ্যায়গুলিকে ৬ টি বিভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। প্রতিটি বিভাগ আরও অসংখ্য উপ-অধ্যায়ে বিভক্ত করা হয়েছে।
রয়েল অস্ট্রেলিয়ান কলেজের প্রাচীন ভারতীয় ডাক্তার -সার্জন সুশ্রুতকে উৎস্বর্গকৃত একটি মূর্তি |
বিশেষ বৈশিষ্ট্য:
আধুনিক যুগে এসেও শল্য চিকিত্সা (সার্জারি) নামে পরিচিত আয়ুর্বেদের একটি শাখার প্রতিনিধি হিসাবে সুশ্রুত সংহিতা দৃঢ় ভাবে অবস্থান করছে । প্লাস্টিক সার্জারী আচার্য সুশ্রুতের অনন্য অবদান যার জন্য পুরো বিশ্ব তাঁর কাছে ঋণী। তিনি সর্বপ্রথম পাঁচটি প্রাথমিক হাড়ের কথা উল্লেখ করেছেন।
সেগুলি হলো কপলা (সমতল হাড়), রুচাকা (দাঁত), তরুণ (যুবক), ভালায়া (বাঁকা বা অনিয়মিত হাড়) এবং নলক (নলাকার হাড়)। আচার্য সুশ্রুত এই লেখায় জোর দিয়েছিলেন যে কেবল যে কোন একটি বিজ্ঞান অধ্যয়ন করে সে সঠিক সিদ্ধান্তে আসতে পারবে না, তাই চিকিত্সকের উচিত বিজ্ঞানের প্রাসঙ্গিক সিস্টার শাখাগুলি সম্পর্কে জানা উচিত।
অস্ত্রোপচার যন্ত্র:
আচার্য সুশ্রুত ১০১ টি যন্ত্রে (ভোঁতা যন্ত্র) এবং ২০ ধরণের শাস্ত্র (তীক্ষ্ণ যন্ত্র) বর্ণনা করেছেন। যন্ত্র এবং শাস্ত্র হিসাবে অস্ত্রোপচার যন্ত্রের অনন্য শ্রেণিবিন্যাস আজও ভালভাবে প্রচলিত। মানব হাতকে প্রধান/সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র হিসাবে বিবেচনা করা হয়। কারণ যন্ত্রগুলির সমস্ত ক্রিয়াকলাপ হাতের উপর নির্ভরশীল। ভোঁতা অস্ত্রোপচার যন্ত্রগুলি আরও ৬ টি বিভাগে ভাগ করা হয়েছে।এই কারণেই ভারতকে মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারির প্রাথমিকতম স্কুল হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
সমালোচকদের উত্তর:
উপরের এই সংবাদটা প্রকাশিত হওয়ার পরে অবশ্যই যে সমস্ত বুদ্ধিজীবীরা প্রাচীন ভারতের এই সমস্ত অর্জনগুলোকে খাটো করে দেখতো এতদিন। আশা করি তাদের কাছেও বিষয়টা এখন অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে যাবে। নাসাসহ পশ্চিমা বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে সংস্কৃত, যোগ এবং আয়ুর্বেদ সহ প্রাচীন ভারতের সমৃদ্ধ বৈজ্ঞানিক উত্তরাধিকার সম্পর্কে খোঁজ খবর নিচ্ছে।
- আর্য়ুবেদিক ওষুধে হবে করোনা রোগীর চিকিৎসা সফল শ্রীলংকার একদল চিকিৎসক।
- ত্রিনিদাদে সাগর ভরাট করে এক সাধুর মন্দির নির্মাণ, অপরুপ সেই ছবি দেখুন।
- বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ মৃতদেহ সৎকার দাহর মাধ্যমে সম্পন্ন করছে, নতুন রিপোর্ট দেখুন।
- “হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়” প্রতিষ্ঠিত হলো, ইন্দোনেশিয়ায় সরকারী ভাবে।
সেই জায়গা দাঁড়িয়ে আমাদের অবশ্যই পূর্বপুরুষের কর্মকাণ্ডকে বিরোধিতা না করে বরং আরেকটু সহযোগিতার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে মনে হয় অনেক অজানা বিষয় গুলো আমাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে।ভারতের সমৃদ্ধ যৌক্তিক উত্তরাধিকার এবং মানবতার প্রতি দায়বদ্ধতা বোঝার জন্য আমাদের হিস্ট্রি চ্যানেলের প্রাচীন এলিয়েন( ‘Ancient Aliens’) দেখা উচিত এবং পাশাপাশি বেদ, পুরাণ, দর্শন পড়া উচিত।একটিকে ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে ভারতকে প্রাথমিক ওষুধের স্কুল হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
এমন আর লেখা পেতে আমাদের সাথে থাকুন, তার জন্য একটি লাইক…
তথ্যসূত্রঃ 1. Columbia University
5.প্লাস্টিক সার্জারির আদ্যোপান্ত – Roar Media
6.প্রাচীন ভারতেই প্রথম প্লাস্টিক সার্জারী করা হয়েছিল:মেডিকেল
7.চিকিৎসা বিজ্ঞান – উইকিপিডিয়া – Bn Wikipedia
8.ভারতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ইতিহাস – উইকিপিডিয়া