১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের ইতিহাসে নিয়ত ছিল, কারো স্বপ্ন বঙ্গের, কারো স্বপ্ন গড়ার ইতিহাস।

যোগেন বাবু স্বপ্ন

যারা বর্তমানকে গুরুত্ব দেয় না, তারা ইতিহাসে মুখ থুবড়ে পড়বেই। মনে আছে যোগেন মন্ডলের কথা? যাকে ইতিহাস ক্ষামা করেনি, ৪৭ এ যোগেন ভারতের বিপক্ষে গিয়ে বর্তমান যশোর, ফরিদপুর পূর্ব পাকিস্তানের অংশ করার পক্ষে মত দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন ব্রাক্ষণের পায়ের নিচেয় থাকার চেয়েও মুসলিমদের সাথে গলা জড়িয়ে থাকা অনেক ভালো। সেই যোগেনই একটা সময় বাংলাদেশ থেকে লাথি খেয়ে কলকাতাতে আশ্রয় নিয়ে ছিল। তাই বলতে আজ আর দ্ধিধা নাই যোগেন মণ্ডলদের জন্য ইতিহাস বড়ই কঠিন। ৪৭ সালের পূবে যোগেন বাবু যে স্বপ্ন দেখে ছিলেন সে স্বপ্ন, মাত্র ২-৩ বছরের মধ্যে ভেঙ্গে চুরমার। উঁচু বর্ণের হিন্দুদের সাথে নিম্ন বর্ণের হিন্দুরা পেরে উঠছে না শিক্ষা দীক্ষায়া । তারা দিন দিন পিছিয়ে পড়ছে, আর মুসলমলিরা তো আলাদা জাতি, তারা স্রষ্টার আশীর্বাদ প্রাপ্ত, বিশ্বের যেখানে সংখ্যায় বেশি হবে সেখানেই তাদের আলাদা দেশ তৈরি করবে, এটাই আরব্য সংস্কৃতি। উঁচু বর্ণের হিন্দুদের সাথে মুসলিম বা নিম্ন বর্ণের হিন্দুরা উঠছে না, তার জন্য সংস্কার প্রয়োজন হতে পারে কিন্তু তাই বলে আলাদা দেশে? সেই দেশ ভাগের কতটা সুফল নিম্ন বর্ণের হিন্দুরা পেয়েছিল তা আজ সারা বিশ্বে দেখেছে। পূর্ব পাকিস্তান সৃষ্টির পরপরী,পূর্ব পাকিস্তানে বেশির ভাগই নিম্নবর্গের হিন্দুরা থেকে গিয়েছিল তার সাথে কিছু উঁচু বর্ণের হিন্দুরাও। যারা রাজনৈতিক সচেতন ছিল তারা পূর্ব পাকিস্তানে ত্যাগ করে পশ্চিম বাংলায় চলে এসেছিল। দেশ ভাগ করে কি পেল সেই নিম্নবর্গের হিন্দু তথা তাদেরনেতা যোগেন মন্ডল? হ্যা, যোগেন মন্ডল পেয়েছিল পাকিস্তানে মন্ত্রীত্ব কিন্তু সেটা বেশি দিন কপালে সহে নাই। এখানে ইতিহাস বড়ই জটিল।

যোগেন বাবু পদত্যাগ পত্র

যে উঁচু বর্ণের হিন্দুদের নিপীড়নে হাত থেকে বাঁচার জন্য যোগেন মন্ডল এবং বাঙালী মুসলমানরা পাকিস্থানে পক্ষে দাড়িয়ে ছিল তার ঘোর কাটতে যোগেন মন্ডলে বেশি সময় লাগেনি। তবে এবার এই নিম্নবর্গের হিন্দু নিপীড়নে নায়ক হল তাদের পেয়ারে বাঙালী মুসলমান ভাইরা । ৪৭ দাঙ্গার পর থেকে উঁচু বর্ণের হিন্দুরা বুঝে গিয়েছিল বাঙালী বাঙালী করে দেশ ভাগ করে শেষ রক্ষা হবে না। তাই তার ভরতে থাকার পক্ষে মত দিয়েছিল। কি হল, দেশ ভাগের ৩ বছরে মধ্যে অর্থৎ ১৯৫০ দাঙ্গা, অবশ্য দাঙ্গা বলা ভুল হবে, দাঙ্গা তো দু-পক্ষের মধ্যে হয় এটা তো ছিল এক তরফা। সেই দিনের ভয় ভয় তা হয় তো বর্তমান প্রজন্মের বেশির ভাগ জানে না। যোগেন বাবু কি করল ? তিনি প্রাণ বাঁচাতে সেই উঁচু বর্ণের হিন্দুদের কাছে পালিয়ে আসতে বাধ্য হল। যদিও তিনি তখন পূর্ব পাকিস্তানের মন্ত্রী। এতো দিনে তার মোহ ভঙ্গ হয়েছে, কিন্তু জানেন কি সেই মোহ ভঙ্গের নায়ক কারা ছিলো? কোন পাঠান নয়, কোন পাঞ্জাবীও নয়, পেয়ারে বাঙ্গালি মুসলিম ভাই। তিনি কলকাতা এসে নিজের দেশের হিন্দুদের ভয়াবহ দেখে পদত্যাগ পত্র লিখলেন। পদত্যাগ পত্রে লিখেছিলেন-

‘আমার পক্ষে এটা বলা অন্যায্য নয় যে পাকিস্তানে বসবাসকারী হিন্দুদের উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে ‘নিজ ভূমে পরবাসী’ করা হয়েছে, আর এটাই এখন হিন্দুদের কাছে পাকিস্তানের পূর্ণাঙ্গ চিত্র। হিন্দু ধর্মেবিশ্বাস করাটাই এদের একমাত্র অপরাধ। সুদীর্ঘ ও উদ্বেগময় সংগ্রামের পর শেষ পর্যন্ত আমাকে একথাই বলতে হচ্ছে যে পাকিস্তান আর হিন্দুদের বাসযোগ্য নয়। তাঁদের ভবিষ্যতে প্রাণনাশ ও ধর্মান্তরকরণের কালো ছায়া ঘনিয়ে আসছে। অধিকাংশ উচ্চবর্ণের হিন্দু ওরাজনৈতিক সচেতন তফসিলি জাতির লোকেরা পূর্ববঙ্গ ছেড়ে চলে গেছে। যে সমস্ত হিন্দুরা এই অভিশপ্ত দেশে অর্থাৎ পাকিস্তানে থেকে যাবে, আমার দৃঢ বিশ্বাস ধীরে ধীরে এবং সুপরিকল্পিত ভাবে তাদের মুসলমানে পরিণত করা হবে বা নিশ্চিহ্ন করা হবে’ (মহাপ্রাণযোগেন্দ্রনাথ, জগদীশ মণ্ডল, ১ম খন্ড)।

ভারতে দালাল

 আজও বাংলাদেশে কোন হিন্দু বিশিষ্ট ব্যক্তি যদি বাংলাদেশের হিন্দুদের নিপীড়ন,নির্যাতনের ইতিহাসের কথা তুলে ধরে, তবে সে অবশ্যই একদল প্রগতিশীল মুসলিম দ্বারয় হিন্দুত্ববাদী বা সাম্প্রদায়িক বলে চিহিৃত হবে। বাংলাদেশে সেক্যুলার আর জামাত মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ শুধু সময়ের অপেক্ষায় থাকে। যে দু-এক জন মুসমানদে মধ্যে থেকে হিন্দুদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলে তারা হয়, অবশ্যই হিন্দু এবং ভারতে দালাল। কিন্তু সেই সকল মুসলিম সেক্যুলার, প্রগতিশীলরা কখনোই বাংলাদেশের আরব্য চরিত্র নিয়ে টু-শব্দ করে না। মদিনা সনদ, ওআইসি, কথা না হয় বাদই দিলাম। এই প্রগতিশীলরাই হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের মতো সংগঠনকে এনিয়ে বিনিয়ে জামাত, হেফজতে মতো একটা সাম্প্রদায়িক সংগঠন রুপ দেওয়ার চেষ্টা করে। আজ যোগেন মণ্ডলকে এই প্রগতিশীল মুসলিমরা কট্টরহিন্দুত্ববাদী হিসাবে চিহিৃত করতে পিছপা হয় না। যোগেন বাবু “তফসীলি জাতি” তথা নমঃ হিন্দুদের মুসলমানদের পাকিস্তান দাবীর  পক্ষে সামিল হয়েছিলেন। দুঃখের বিষয় এই যোগেন মণ্ডল আজ বাংলাদেশের সেক্যুলার, প্রগতিশীলদের চোখে কট্টর হিন্দুত্ববাদী।

পাকিস্তানে ধর্মীয় সংখ্যালঘু

সেক্যুলার, প্রগতিশীলদের বলতে চাই, আসুন নিজেদের পাপ ঢাকার জন্য সেই সাম্প্রদায়িক হিন্দুত্ববাদী যোগেন মন্ডলকে কষে চপেটা আঘাতে মতো একটা গালি দিয়ে আসি। না হলে তো আপনাদের প্রগতিশীল, সেক্যুলার বুদ্ধিজীবী কেউ বলবে না। সারা জীবন উচ্চ শ্রেীর ঘৃণিতর হাত থেকে বাঁচার জন্য, যে যোগেন মন্ডল ভারত ভাগ করে যশোর, ফরিদপুর পাকিস্তানের অংশ করার জন্য অকুণ্ঠ হিন্দুদের সমর্থন যুগিয়েছিল পাকিস্থানে পক্ষে। জীবনের প্রারম্ভে এসে যোগেন বাবু দেখেছিল, ভারতের কোন ধর্মীয় সংখ্যালঘুর অর্থৎ মুসলমানদের জীবন এবং ধর্ম বাচানোর জন্য ভারত ত্যাগ করতে হয়েনি। অথচ পাকিস্তানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জীবন এবং ধর্ম  বাঁচানোর তাগিতে কি পরিমানে পার্শ্ববর্তী দেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিল। কারন পাকিস্তান সৃষ্টির শুরু থেকেই ছিল ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য একটা নরক কুণ্ড। পূর্ব পাকিস্তানে যখন ১৯৬৫ সালে পুনরায় হিন্দুদের উপর নির্যাতনের খড়গ নেমে এলো। পূর্ব বাংলায় তখনো কিন্তু সেই দাঙ্গাবাজেদের ভূমিকায় ছিল পেয়ারে বাঙ্গালি ভাই। লক্ষ, লক্ষ হিন্দু প্রাণ বাঁচানোর দাগিতে ভরতে আশ্রয় নেয়। তার মাত্র ছয় বছর পর বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও, স্বাধীন বাংলাদেশ সেই হিন্দুদের গ্রহণ করতে অনিচ্ছুক প্রকাশ করে । ৬৫ সালে দেশ ত্যাগ জন্য পাকিস্তান সরকার হিন্দু সম্পত্তি ‘এনিমি প্রপার্টি’ নামক আইন দ্বারায় দখল করল,  বাংলাদেশ স্বাধীনতা পরে সেই আইন আর তোলা হয় নাই, সময় টা বেশি নয় মাত্র ৬ বছর। বাংলাদেশ এই হিন্দুদের ফিরিয়ে নিতে কতটা অনিচ্ছুক ছিল তা উন্মুক্ত ভাবে প্রকাশ পায় এম আর আখতার মুকুল এর লেখা ‘আমি বিজয় দেখেছি’ বইতে। এখন যখন মায়নমার থেকে কাতারে কাতারে মানুষ জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে অশ্রয় নিয়েছে, তখন হয় তো বাংলাদেশর বেশির ভাগ বর্তমান প্রজন্মের এই ইতিহাস জানেই না। আর যদিও কেউ জানে তবে কোন ভাবেই তা শিকার করেবে না। এটা অনেকটা সরিষার মধ্যে ভূত মত।

হিন্দু শরণার্থী

 ৬৫ সালের দাঙ্গার পর মাত্র ছয় বছরের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ কারণে বাংলাদেশের প্রায় ১ কোটিশরণার্থীর ভারতে জীবন বাঁচানোর তাগিতে অশ্রয় নেওয়। সত্য কথা হল এই যে ১ কোটি শরণার্থীর মধ্যে ৬৯ লাখ ৭১ হাজার ছিল হিন্দু বাকিরা ছিলো মুসলিমসহ অন্যান্য শরণার্থীর (সূত্র:০৭-১২-২০১০ তারিখে প্রকাশিত আশফাক হোসেন লিখা, একাত্তরের শরণার্থী প্রথম আলো) এ বার কি মনে হয় না হিন্দু শরণার্থীর সংখ্যা এতো বেশি কেন হয়ছিল? এর কারণ আর কিছুই না,পাকিস্তানীরা মনে প্রাণে বিশ্বাস করত কাফের হিন্দুরাই হল পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের স্বাধীন করার মূল হোতা। তাই সেই হিন্দুদের ঝাড়ে নির্বংশ করার জন্য পাকিস্তানি সেনাদের নির্দেশ দিয়া হয়েছিল। যার দরুণ হিন্দু নারীদের উপর অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছিল, এর মানেই এই না মুসলিম নারীদের উপর নির্যাতন হয়নি। কিন্তু হিন্দু নারীদের উপর যে নির্যাতন হয়েছিল তার ভয়াবহতার কাছে সেটা কিছুই না। লাখ মানুষের প্রাণে বিনিময়ে যে স্বাধীনতা এলো, সেই স্বাধীনতার উপর আবার রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বা সংবিধানের প্রথমে বিসমিল্লাহ লাগিয়ে যদি বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা সবার সাথে মিলেমিসে বাস করতে পারে, তবে এই শান্তির আবাস ভূমি হত বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা স্বর্গ।যে মুসলমানদের দেশকে সমর্থন করে, যোগেন বাবু কে দেশ ছাড়তে হলো স্বাধীনতার পর যদি তাতে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম লাগিয়ে সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় রক্ষা হত তবে কিছু বলার ছিলনা। এমন কি, স্বাধীন দেশের প্রধানমন্ত্রীর মাথার উপর কালেমা খচিত আরবী ওয়ালমেট থাকলে তা নিয়ে হীনমন্যতার কারণে কেউ প্রশ্ন করবেন না। তারা শুধু রাষ্ট্রের কাছে একটু ভবিষ্যতের নিরাপত্তা আসাই এই ধরনের ব্যবস্থা যে কোন বাধাহীন চিত্রে মেনেনিবে।

ভাসানী স্বপ্নে

 “আসাম আমার, পশ্চিমবঙ্গ আমার, ত্রিপুরাও আমার, এগুলো ভারতের কবল থেকে ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা  মানচিত্র পূর্ণতা পাবেনা”,  কথা গুলো ছিল মাওলানা ভাসানীর। তবে তিনি এই কথা গুলোর মধ্যে একটি কথা উহ্য রেখেছেন আর তা হলে, ঐ অঞ্চল বাংলাদেশ হলে, সেখান কার হিন্দুসহ বিভিন্ন জাতি-সম্প্রদায়ের কি হবে। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগ হবার পর জিন্নাহ ১১ই অগাস্ট কনস্টিটিউয়েন্ট এসেম্বলির বিভিন্ন দেশের সাংবাদিকদের বলেছিলেন পাকিস্তান হবে সব ধর্মের মানুষের এবং সকল জাতির। তাই পাকিস্তানের সংখ্যালঘুদের স্বীকৃতি চিহৃ হিসাব পতাকা সাদা অংশটি দেখান হয়েছিল। জিন্নাহ এই কথা গুলো যে মিথ্যে ছিল তা ঐ সময়ে অনেকেই বুঝেগিয়েছিল। করান ভারত যাতে ভাগ না হয়, তার জন্য এই একই কথাই ভারতের সব বড় বড় সেক্যুলার নেতারা বলেছেন। কিন্তু জিন্নাহ জিৎ ভারত ভেঙ্গে হল পাকিস্তান। সেই পাকিস্তানের সকল জাতির সমান অধিকার হল একটা অলীক স্বপ্ন। জিন্নাহ কতটা মিথ্যাবাদী ছিল তা বোঝার জন্য বেশি দিন অপেক্ষা করতে হয় নাই। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে পাকিস্তানের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর নেমে আসে ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ এর অমানবিক নির্যাতন। যার ফলে জিন্নাহর পেয়ারে পাকিস্তান থেকে কাতারে কাতারে ধর্মীয়সংখ্যালঘুরা ভারতে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছিল বা ধর্ম ত্যাগ করে মুসলিম হতে বাধ্য হয়েছে। ভাসানী তার শেষ বয়সে এসে তার সেই স্বপ্নের কথা ভুলে নাই। তাই তিনি জীবনে প্রারম্ভ এসে চিঠি দ্বারা ইন্দিরা গান্ধীকে জানিয়েছিলেন তাকে যেন এক টুকরো জমি দেওয়া হয় আসামে, যেখানে তিনি বাকি জীবন অতিবাহিত করতে চাই।

শত্রু সম্পত্তি

এক বারের জন্য ভেবে বলুন তো, ঢাকা বায়তুল মোকাররম মসজিদের জায়গায় সরকার কোন কারনে দখল করে নিয়ে বলল, তোমরা মসজিদ অন্য কোথায় তৈরি করে নেয়, কেমন হতো কথাটা বলুন তো? ঠিক একই ভাবে রমনা কালী মন্দির জমি সরকার দখল করল। অন্য দিকে কি হল, ‘শত্রু সম্পত্তি’ আইন বহল থাকল। যে সম্পত্তি পাকিস্তানিরা করেছিল ‘শত্রু সম্পত্তি’ । তা আজ স্বাধীনতার স্বপক্ষের মানুষ গুলো দখল করে নিল। এর পরেও দাদা আপনি এসে বলবে ‍হিন্দুদের ভারত প্রীতি কারনে দেশ ত্যাগ করছে? যে জাতি প্রথমে ইসলাম প্রীতি কারনে মূল ভারত থেকে আলাদা হলো। সে জাতি কি কখনো পাঞ্জাবীদের কাছে বৈষম্যের শিকার না হলে বাঙালী,বাঙালী আওয়াজ তুলতো? আমার মনে হয় বঙ্গবন্ধুও নয়, কারণ বঙ্গবন্ধও চেয়েছিল শেষ পর্যন্ত আলোচনা মাধ্যমে সমাধান। প্রথম পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুও স্বাধীনতার চিন্তা করে নাই। এ বার চিন্তা করুন তো এই বৈষম্যের শিকার না হলে কি পূর্ব পাকিস্তানের নেতারা দ্বিজাতি তত্ত্ব থেকে বের হয়ে এসে ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি ধজা ধরত? বাংলাদেশের বর্তমান প্রজন্মর একটা মোটা সংখ্যক জনসাধারণ বোঝাতে সক্ষম হয়েছে তারা, যে এই স্বাধীনতা যুদ্ধ দ্বারা ভারত ইসলামী পাকিস্তানকে ভেঙে দিয়েছিল ৭১ সালে, এটা ছিল ভারতে একটা ষড়যন্ত্র । তৎকালীন পাকিস্তান সরকার যদি গণতান্ত্রিক নিয়ম মেনে ভোটের রায় কে স্বীকার করতো তবে কি পূর্ব পাকিস্তানের নেতাদের কখনোই ধর্মনিরপেক্ষ চিন্তা করতো? মোটেও না, তাই যারা বাংলাদেশের স্বাধীনাতার পরে এসে তারা বুক ফুলিয়ে বলতে চাই বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হবে। সেটা অনেকটা গল্পের গরু গাছের ডালে তোলা মতো নয় কি?

মুসলিম বাংলা

“আবুল ফজল, স্মৃতিকথা রেখাচিত্র, ১৯৬৫” থেকে জানা যায়- ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহকে তিনি একটি চিঠি লিখেছিলেন, যেখানে সাহিত্যিক আবুল ফজল শহিদুল্লাহ কাছে আবেদন করেছিলেন,“মুসলমানের আবেগ অনুভূতি, ধ্যান ধারণা আর রুচিতে যে সব রচনা আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে তা এখন পাঠ্য তালিকা থেকে বাদ দেওয়াই উচিত। আর উচিত এখন থেকে মুসলমান লেখকদের কিছু কিছু বই পাঠ্য তালিকা ভুক্ত করা। তা হলেই পাকিস্তান হাসিলের সঙ্গেরক্ষিত হবে সংগতি আর মুসলমানদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক চেতনাও পাবে কিছুটা তৃপ্তি”  লেখক আহমদ ছফার কথা তো শুনেছেন,তিনি তার প্রতিটি লেখারতেই দাদা বাবুদের ধুতির কাছা না টেনে ছাড়তেন না। দাদের কাছা খোলার জন্য তিনার আকর গ্রন্থ চ্যাটার্জির লিখিত বই। জয়া চ্যাটার্জি সম্পকে আমার কোন ধারণই ছিল না। একদিন বাংলাদেশের এক শিবিরের ছেলের মাধ্যমে জয়া চ্যাটার্জির লেখা সম্পকে জানলাম। পরে বুঝলাম জয়া চ্যাটার্জির বই বাংলাদেশের শিবিরের ছেলেরা অনেকটা আকর গ্রন্থ হিসাবে দেখে। বর্তমান বাংলাদেশের বিভিন্ন যে সকল ইসলাম সাহিত্যিক, ইসলাম দল এবং সংগঠন আছে তাদের স্বপ্ন কলকাতা,আসাম, ত্রিপুরা এক দিন বৃহত্তম বাংলাস্থান হবে। জানি না, সেটা হবে কি না, তবে তাদের আগের প্রজন্ম যেমন ফজলুল হক, ভাসানী যে স্বপ্ন দেখিয়েছিল তা যদি আজ বাস্তবায়িত হত তবে হিন্দু বাঙ্গালিদের ভারতে কোন রাজ্যে জাগায় হত, সেটা কি ভেবে দেখেছেন একবার? পাঠক ঐ সময়, অর্থৎ১৯৬৫ ‘মুসলিম বাংলা’ ধারনাটা কিন্তু চরমোনাই পীর, হেফাজত বা বর্তমান জামাতিরা দেওয় নাই। দিয়েছেন আপনার আমার কাছে অপেক্ষা উদার মানুষ গুলো। ‘হিন্দু’ লেবেল লাগিয়ে যেমন যোগেন মন্ডল বাংলার একটা মোটা অংশ পাকিস্তানের সাথে যোগ করতে পেরেছিল। তার বিপরীত শরৎবসু বুঝতেই পারে নাই সোহরাওয়ার্দীকে দিয়ে বাংলার অখন্ড কখনো রক্ষা পাবে না।

নেতাজী সুভাষ বসু চিন্তা ছিল ভাষা ও সংস্কৃতির নিরভার করে একক ভারতীয় ইউনিয়ন তৈরি হক। কিন্তু ভাগ্য সুপ্রসন্ন না থাকায় ধর্মীয় দ্বিজাতি তত্বে আজ উপমহাদেশের মানুষ গুলো এক অভিশাপ বহন করে চলেছে। ৪৭ সালের পর থেকে উভয় বাংলায় যত গুলি দাঙ্গা হয়েছে লক্ষ্য করে দেখুন, কোন স্থান থেকে মুসলিমরা পালাই না। শুধু হিন্দুরাই পালিয়েছে, এমন কি ৪৭ সালের কলকাতার দাঙ্গার পর দেশ ভাগ হলেও মুসলমানরা কোথায় পালিয়ে যায়নি। মাজার বিষয় হলো খালেদা, নজরুল ভারতে জন্মগ্রহন করেও একজন মুসলিম বাংলাদেশী হিসাবে পরিচিত। সুতরাং আরব্য সংস্কৃতির সব কিছু জটিল। হিন্দু বা ভারতের কথা নাই বাদ দিলাম, দেখুন তো ইহুদী সাথে মুসলিমদের সম্পক কেমন? খ্রিস্টানদের সাথে ভাল না, এমন কি বর্তমানে বৌদ্ধদের সাথে। এই জটিল সমীকরণ নিয়ে বর্তমান বিশ্বের দ্বিতীয় জতিগোষ্ঠি হিসাবে গর্ভ করে হয় তো মনের শান্তি মিলবে। কিন্তু বিশ্ব শান্তি?

ভাসানীর স্বপ্নের বাংলাস্থান পথে পশ্চিম বাংলা

পশ্চিম বাংলার অবস্থা দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। ৭৫% হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ থাকা শতেও, পশ্চিম বাংলার জেলখানার, ৮০% মানুষ এখন মুসলমান সম্প্রদায়ের । মাত্র ২৫% মিলে পশ্চিম বাংলার ৭৫% মানুষের জীবন চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এখন এখানে মন্দির ভাঙ্গা এবং মূর্তিভাঙ্গা নিত্য দিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেটা বাংলাদেশে হতো শুনতাম আজ তা এই বাংলায় শুরু হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে একটি জরিপে দেখা গিয়েছে প্রায় ১৬% মুসলিম নিজেদের ভারতীয় ভাবার থেকে আরবীয় ভাবাতে বেশি ভাল বাসে। তার ভারতকে আরবি করণের জন্য যে কোন ধরনের গণতন্ত্র বিরুদ্ধ কাজ করতে পিছপা হচ্ছে না। যে ভাবে বর্তমান মমতা সরকার এই সকল কর্মকান্ড কে আড়াল করে চলেছছে, মনে হয় না আর বেশি দিন লাগবে ভাসানীর স্বপ্নের বাংলাস্থান হতে।

আহমদ ছফা এবং জয়া চ্যাটার্জি বই এখন বাংলাদেশের জামাতি ছেলেদের অনুপ্রেরণা। তবে এনারা ইতিহাস বিশ্লেষণ করার সময় উপরে বিষয় গুলি কখনো মনে রাখে নাই। কেন যেন আজ মনে হয় পৃথিবীর সভ্য জাতির সভ্যতা, অসভ্য বর্বর জাতি প্রধান অস্ত্র। সেটা আমাদের এই দেশে আজ অহর অহর উদাহরণ রহয়েছে। বর্তমানে ভারতে জয়া চ্যাটার্জি, সুক্রিতি রঞ্জন, শুশান্ত এবং অরুন্ধতী রায়দের মতো সেকুলাঙ্গার বুক ফুলিয়ে দেশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কম কাণ্ড করাতে কতটা তৎপর। ঠিক এর বিপরীতটা কী পাকিস্তান বা বাংলাদেশ ভাবা যায়? উভয় বাংলাতে মুসলিম ৫৬% আর হিন্দু ৪৪%ভাসানীর সেই  ইচ্ছে পূরণের অনেক নমুনা বর্তমানে পশ্চিম বাংলায় দেখা যাচ্ছে। আর এটা যদি সত্য হয় তবে পশ্চিম বাংলা হিন্দুদের অবস্থাহবে কাশ্মীরি পন্ডিত বা পূব বাংলার হিন্দুদের মতো হবেই।