জ্ঞান হওয়ার পর থেকে প্রতিটি হিন্দু শিশুর মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, ‘সর্বধর্ম সমন্বয়’ কিংবা ‘যত মত তত পথ’। ফলে প্রতিটি হিন্দুর মনে বদ্ধমূল ধারণার সৃষ্টি হয় যে, প্রতিটি ধর্মই সমান। এজন্য হিন্দুরা যখন দেখে, তার ধর্মের লোকেরা প্রলোভন ও প্রতারণার ফাঁদে পড়ে অন্য ধর্মে চলে যাচ্ছে, তখন সে প্রতিবাদ করেনা; উল্টো সে ধর্মনিরপেক্ষতার দামামা বাজাতে শুরু করে দেয়। এভাবে ধর্মান্তরিত হতে হতে যে এলাকায় হিন্দুরা সংখ্যালঘু হয়ে পড়ে, তারা টের পায় – কত ধানে কত চাল, কত গমে কত আটা।
যেমন কাশ্মীরের সংখ্যালঘু হিন্দুরা বুঝেছে, উত্তর পূর্ব ভারতের পাঁচ রাজ্যের সংখ্যালঘু হিন্দুরা বুঝেছে, পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ, মালদাহ,বসিরহাট,ডায়মন্ড হারবার; এমনকি কলকাতা শহরের পার্ক সার্কাস, রাজাবাজার,খিদিরপুর,মেটিয়াব্রুজ প্রভৃতি অঞ্চলের সংখ্যালঘু হিন্দুরা বুঝতে পেরেছে ― অন্য ধর্মের লোকেরা ভুলেও বলে না যে, সকল ধর্ম সমান। অন্য ধর্মের লোকেরা বলে, হিন্দুরা একেশ্বর কর্তৃক অভিশপ্ত; হিন্দুরা স্বর্গে গিয়ে ৭২ জন অনন্ত যৌবনা নারী সম্ভোগ করতে পারবেনা।
সমকামের জন্য নাদুসনুদুস বালক পাবেনা, মদিরা পান করতে পারবে না। হিন্দু হত্যা করলে একেশ্বর খুশি হয় ; হিন্দু নারী ধর্ষণ করে – তার গর্ভে স্বজাতি জন্ম দিতে পারলে, একেশ্বর আরো অনেক বেশি খুশি হয় ; হিন্দুর বিষয়-সম্পত্তি, সহায়-সম্বল কেড়ে নিয়ে ভিটেছাড়া করতে পারলে, ইহকালে যেমন সুখ-সমৃদ্ধি আসে এবং পরকালেও তেমনি স্বর্গে গমনের রাস্তা সুগম হয়ে যায়।
অন্য ধর্মীদের, যে কথা-সেই কাজ। তারা কাশ্মীর থেকে সংখ্যালঘু হিন্দুদের মেরে-কেটে, লুণ্ঠন-ধর্ষণ করে তাড়িয়েছে; একই প্রক্রিয়ায় উত্তর-পূর্ব ভারতের পাঁচটি রাজ্য হয়ে উঠেছে হিন্দু বধ্যভূমি; মিনি পাকিস্তান ঘোষিত পশ্চিমবঙ্গের বিধর্মী সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকাগুলোতে চলছে মধ্যযুগীয় কায়দায় হিন্দু নির্যাতন। হিন্দুদের গণপ্রতিরোধের শিকার হয়ে, যদি ভিন্নধর্মের কোন ছিনতাইকারী বা ডাকাতও নিহত হয়,অমনি সেক্যুলার নামধারী উগ্র হিন্দু-বিদ্বেষী রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবীদের মিথ্যাচারের বিষবাষ্পে বিশ্ব-বাতাস ভারি হয়ে ওঠে।
অথচ ভিন্নধর্মীদের একের পর এক পরিকল্পিত সন্ত্রাসী আক্রমণে, প্রতিবছর হাজার হাজার নীরিহ হিন্দু নিহত হচ্ছে – তখন ঐ বর্বরতার বিরুদ্ধে কোন সেক্যুলার রাজনীতিবিদ বা বুদ্ধিজীবী টু-শব্দটি পর্যন্ত করে না; বরং অপরাধীদের রক্ষা করতে সেক্যুলার বেজন্মাগুলো ধর্মনিরপেক্ষতার দোহাই দিয়ে বলে, সন্ত্রাসীদের কোন জাত নেই, ‘যত মত তত পথ’ ও ‘সর্বধর্ম সমন্বয়’ – এই আমাদের চিরায়ত শিক্ষা।
অল্প কিছুদিন আগে, মহারাষ্ট্রে বিধর্মী সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকায় দু’জন হিন্দু সন্ন্যাসীকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করার ভিডিও বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া সত্বেও, কোন অমর্ত্য সেন মুখ খোলেনি,কোন অরুন্ধতী রায় প্রতিবাদ করেনি; পশ্চিমবঙ্গের কোন সেক্যুলার বুদ্ধিজীবী কাপড় খুলে দেখাতে চায়নি। উল্টো ইতালীয় বংশোদ্ভূত খ্রিষ্টধর্মালম্বী সোনিয়া গান্ধী, তার স্বজাতি খ্রিষ্টান খুনিদের অপরাধ আড়াল করতে – সংবাদ সম্মেলন ডেকে এনডিএ সরকারের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িকতার মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপন করেছিলেন।
সোনিয়া গান্ধীকে পাশ্চাত্য থেকে বিশেষ উদ্দেশ্যে ভারতে পাঠানো হয়েছে। অতীতে ‘যত মত তত পথ’ ও ‘সর্বধর্ম সমন্বয়’ নামক ভাইরাস দু’টিও পাশ্চাত্য থেকে অত্যন্ত কূটকৌশলে হিন্দু জাতির মধ্যে সংক্রামিত করা হয়েছে। এই ভাইরাস দুটিকে লুফে নিয়েছে ধর্মনিরপেক্ষ নেতারা – যারা ভারত ভূমি থেকে হিন্দুজাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চায়। ধর্মনিরপেক্ষতার বিষাক্ত ছোবলে, স্বাধীনতার পর ভারতের হিন্দু জনসংখ্যা হার ৮৫ শতাংশ থেকে ৭৮ শতাংশে নেমে এসেছে। আরব সাম্রাজ্যবাদীদের আগ্রাসনে সুজলা-সুফলা ভারত ভূমি,রক্তস্নাত হয়ে ক্রমাগত খণ্ড খণ্ড মরুভূমিতে পরিণত হয়ে যাচ্ছে।
সুতরাং কোন হিন্দুর উচিত নয়, তার সন্তানকে ‘সর্বধর্ম সমন্বয়’ কিংবা ‘যত মত তত পথ’ শিক্ষা দেওয়া। প্রতিটি হিন্দু শিশুর মাথায় ঢুকিয়ে দিতে হবে যে, সনাতন ধর্ম-ই শ্রেষ্ঠ মানবিক ধর্ম। মানবিক ধর্ম কখনও খুনি-অমানবিক ধর্মের সাথে সমন্বয় করতে পারে না। মানবতার পথ-ই হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ পথ; কাজেই মানবিক হিন্দুর পথ আর রক্ত পিপাসু মরু-ডাকাতদের পথ, কখনোই এক হতে পারেনা।
লেখক-কৃত্তিবাস ওঝা,ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষক।লেখকের অন্য লেখা।