মহাভারত যুগের অস্ত্র

মহাভারত যুগের অস্ত্র: পাওয়া গেল চার হাজার বছরের পুরনো অস্ত্র, এগুলো দিয়ে কি মহাভারতের যুদ্ধ হয়েছিল?

মহাভারত যুগের অস্ত্র: পাওয়া গেল চার হাজার বছরের পুরনো অস্ত্র, এগুলো দিয়ে কি মহাভারতের যুদ্ধ হয়েছিল? প্রত্নতাত্ত্বিকদের কৌতূহল বেড়ছে। মইনপুরীতে মহাভারত যুগের অস্ত্র পাওয়া গেছে: প্রশ্ন হল এই অস্ত্রগুলি কি কুরুক্ষেত্রের মহাভারতের যুদ্ধেও ব্যবহৃত হয়েছিল? গবেষণা করলেই এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে।তবে অস্ত্রগুলো পরীক্ষা করে প্রত্নতাত্ত্বিকরা একে ‘রোমাঞ্চকর’ বলেছেন।

 

উত্তরপ্রদেশের মইনপুরি জেলার একটি ক্ষেত থেকে চার হাজার বছরের পুরনো অস্ত্র পাওয়ায় প্রত্নতাত্ত্বিকদের কৌতূহল বেড়েছে। এই অস্ত্রগুলি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সময়কাল অর্থাৎ দ্বাপর যুগের কথা বলা হচ্ছে। অস্ত্রের তদন্তের পর যে গবেষণার ফলাফল এসেছে তাতে প্রত্নতাত্ত্বিকরা বেশ রোমাঞ্চিত। এমনকি প্রাচীনকালেও ভারতীয় যোদ্ধাদের কাছে উন্নত অস্ত্র ছিল বলে জানা যাচ্ছে। বড় বড় অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করত যোদ্ধারা। তারা বড় বড় তরবারি ব্যবহার করত। তখন চার ফুট পর্যন্ত লম্বা অস্ত্র ছিল। অস্ত্রগুলো ছিল ধারালো এবং অত্যাধুনিক আকৃতির। স্টারফিশ আকৃতির অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল।

প্রশ্ন হল কুরুক্ষেত্রের মহাভারতের যুদ্ধেও কি এই অস্ত্রগুলি ব্যবহার করা হয়েছিল? গবেষণা করলেই এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে। তবে অস্ত্রগুলো পরীক্ষা করে প্রত্নতাত্ত্বিকরা একে ‘রোমাঞ্চকর’ বলেছেন।

চার হাজার বছরের পুরনো অস্ত্র
চার হাজার বছরের পুরনো অস্ত্র

ময়নপুরীর গণেশপুর গ্রামে এক কৃষক তার দুই বিঘা জমিতে চাষ করছিলেন। জমির অনেক জায়গায় মাঠের উচু নিচুর কারণে তা সমতল করা হচ্ছিল। সমতল কালে মাঠ থেকে তামার তলোয়ার ও হারপুন পাওয়া গেছে। কৃষক সেই সব অস্ত্র তার বাড়িতে নিয়ে যায়।

তিনি ভেবেছিলেন, এই সব অস্ত্র সোনা বা রূপার তৈরি মূল্যবান ধাতুর। তবে জমি থেকে অস্ত্র পাওয়ার খবর পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে কেউ এ ব্যাপারে স্থানীয় পুলিশকে খবর দেয়। এরপর বিষয়টি নজরে আসে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার। সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার কৃষকের কাছ থেকে এসব অস্ত্র সংগ্রহ করে এবং তা তদন্ত করেছেন।

কৃষকের ক্ষেত থেকে পাওয়া অস্ত্রগুলি পরীক্ষা করার পরে, কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক এটিকে অ্যান্টেনা তলোয়ার এবং হারপুন উপাধি দিয়েছেন। এর নিচে একটি হুক ছিল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, 4000 হাজার বছর পুরানো তামার এই অস্ত্র। অস্ত্রের এই সংগ্রহের পুঙ্খানুপুঙ্খ পরিক্ষা করার পর এর সময় কাল জানা গিয়েছে। 

এএসআই-এর প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের পরিচালক ভুবন বিক্রমের দাবি, এই তামা অস্ত্রগুলিকে তাম্রযুগের। ওচার রঙিন পাত্রের (ওপিসি) উপস্থিতির কারণে এটি অনেকাংশে প্রমাণিত। ব্রোঞ্জ ছিল হরপ্পা যুগের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য। এটি তাম্র যুগের নগর সভ্যতা হিসেবেও পরিচিত। তবে গবেষণায় দেখা গেছে এই ধরনের অস্ত্র মূলত তামা দিয়ে তৈরি। এগুলোতে ব্রোঞ্জ ব্যবহার করা হয়নি।

 

মহাভারত
মহাভারত যুগের অস্ত্র মহাভারত যুগের অস্ত্র মহাভারত যুগের অস্ত্র

 

4000 বছরের পুরানো
OCP সংস্কৃতিকে সাধারণত 2000 থেকে 1500 BCE এর মধ্যে বিবেচনা করা হয়। এই সময়ের মৃৎশিল্পে একটি লাল স্লিপ ব্যবহার করা হত, তবে এটি স্পর্শ করলে গেরুয়া রঙ বের হয়। তাই, প্রত্নতাত্ত্বিকরা এর নাম দিয়েছেন ওপিসি সংস্কৃতি। এএসআই-এর মুখপাত্র এবং সংরক্ষণ পরিচালক বসন্ত স্বর্ণকার বলেছেন যে ময়নপুরিতে পাওয়া অস্ত্রগুলি প্রায় 3800 থেকে 4000 বছরের পুরানো । তিনি আর বলেন, কাছাকাছি সানৌলি (বাগপত), মাদারপুর (মোরাদাবাদ) এবং সাকাতপুর (সাহারানপুর) সাইট থেকে নেওয়া নমুনার উপর একটি কার্বন ডেটিং পরীক্ষা করা হয়েছিল। এগুলি খ্রিস্টপূর্ব 2000 (4000 বছর আগে) তা প্রমাণিত হয়েছে।

সাধারণ মানুষের কাছে অস্ত্র নেই,
বসন্ত স্বর্ণকার বলেন, অস্ত্র পাওয়া যাওয়ার পর বোঝা গেছে, এ সময়ের মানুষ যুদ্ধ করত। জমি বা অধিকারের জন্য দুই দলের মধ্যে এই যুদ্ধ হতে পারে। এসব অস্ত্র দেখার পর দাবি করা হচ্ছে এগুলো সাধারণ মানুষের অস্ত্র নয়। সে সময় এই ধরনের অস্ত্র নিশ্চয়ই সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে ছিল।

মহাভারত যুগের অস্ত্র
মহাভারত যুগের অস্ত্র মহাভারত যুগের অস্ত্র মহাভারত যুগের অস্ত্র মহাভারত যুগের অস্ত্র মহাভারত যুগের

 

চান্স ডিসকভারি আবিষ্কারের কথা জানান
সুপারিনটেনডিং প্রত্নতত্ত্ববিদ রাজকুমার প্যাটেল ময়নপুরীর মাঠে পাওয়া অস্ত্রকে চান্স ডিসকভারি বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, এটি একটি বড় আবিষ্কার। খননের সঙ্গে জড়িত বিক্রম বলেন, প্রাচীন যে অস্ত্র পাওয়া গিয়েছে তা কিভবে এখানে এলো তা গবেষণা করে দেখতে হবে।  অস্ত্রগুলো কার রেখে ছিল বা কারা তৈরি করেছিল? তা জনার জন্য গবেষণা প্রয়োজন।

এএমইউর ইতিহাসবিদ ও প্রত্নতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. মানবেন্দ্র পুন্ডীর বলেছিলেন যে এই অস্ত্রগুলি বড় দলগুলির মধ্যে লড়াইরত যোদ্ধাদের ছিল বা শিকারের জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল বলে মনে হচ্ছে। যাইহোক, সানৌলিতে পূর্বে খননের সময়, যুদ্ধে ব্যবহৃত একটি রথ পাওয়া গিয়েছিল, যা যোদ্ধা তত্ত্বকে সমর্থন করে। অনুসন্ধানগুলি থেকে এটি স্পষ্ট যে তাম্র যুগে যুদ্ধ সাধারণ ছিল না। তবে এ বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।