কেমন হতে পারে ২০৩০ থেকে ২০৫০ এর সময় কাল? চলুন জেনে নি।

লেখালেখি শুরুর পর থেকে আমার কাছে অনেকেই জানতে চাই আপনি কেন আগামীর বিজ্ঞান নিয়ে এত আশাবাদী। বিশেষ করে ২০৩০ এর পরবর্তী দশক নিয়ে। আজ আমি সেই দুঃসাহস করবো যদিও আমার তেমন জ্যোতিষ বা অন্য কোনো আধিভৌতিক বিষের উপর তেমন কোন জ্ঞান নাই। তবুও স্রেফ নিজের পড়া জ্ঞান এবং চিন্তা শক্তি দিয়ে সেই দুঃসাহস দেখানোর চেষ্টা মাত্র। যে আলোচনার ভিত্তি থাকবে আগামী দিনগুলো আমাদের জন্য কেমন হতে যাচ্ছে। লেখাটি আজ সাজাতে চেষ্টা করব বিভিন্ন তথ্যসূত্র এবং নিজের অর্জিত ভাবনা দিয়ে। তবে পাঠক ঘাবড়ানোর কিছু নেই তথ্যসূত্র এবং ছবি তো থাকবেই সুতরাং দুর্বোধ্য চাপিয়ে দেয়ার মত কোন বিষয় হবে না আশা করি।

আসুন আমরা আলোচনা শুরু করার আগে যারা আশির দশক বা সত্তর অথবা তাদের আগের প্রজন্ম সেই সমস্ত বন্ধুদের বলব একটু নয়ন দুটি বন্ধ করুন। আর স্রেফ মনে মনে চিন্তা করতে থাকুন যে নব্বই এর দশক থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বিশ্বে কি ধরনের পরিবর্তন হয়েছে। অর্থনীতি অঙ্গন থেকে রাজনৈতিক অঙ্গন, রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে বিজ্ঞান/প্রযুক্তি বা অন্যান্য যে কোন অঙ্গনের দিকে যদি আপনারা লক্ষ্য করেন তবে, দেখবেন যে এই সময় কালে বিশ্বজুড়ে কি অস্বাভাবিক পরিবর্তন হয়েছে। বেশি দূর যেতে হবে না, ৯০ দশক থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত শুধু ভাবুন। আমি জোর গলায় বলতে পারি মানব সভ্যতার ইতিহাসে আশির দশক পর্যন্ত যে অগ্রগতি পৃথিবী জুড়ে হয়েছে। তার থেকে ঢের বেশি ৯০ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত অগ্রগতি পৃথিবী জুড়ে হয়েছে। আশা করি যারা একটু এই বিষয় সম্পর্কে সচেতন তারা আমার এই কথা গুলোর সাথে দ্বিমত পোষণ করবে না। তবে এই অগ্রগতির গতি আরো বেশি পরিমার্জন শক্তি বর্ধনের রূপ নিয়েছে ২০০০ সালের পর থেকে। এখন প্রশ্ন হলো তবে আগামীতে আমরা কি দেখতে চলেছি? আগামীতে আমরা যা দেখতে চলেছি তা হল মূল বিষয়ের অভূতপূর্ব পরিবর্তন। এখানে দাঁড়িয়ে আমি আবার জোর গলায় বলব, আগামী দশকে যা হতে চলেছে তা গত ১০০ বছরেও হয়নি। ‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম ‘ সেই অতীতের সোনালী দিনগুলো কথা ভাবিয়া গোছের মানসিকতা মধ্যেই সীমাবদ্ধ ক্লান্ত অনুভব। তবে আপনাদের আমি বলছি না অতীতের সব খারাপ এবং আগামীর সব ভালো। শুধু বলব যে আগামীর উত্তরণের ধারাবাহিকতা এতটাই সর্জিত যে মন্দের ভাগ ঢেকে যায় ভালোর ছোঁয়াতে।

আরে মিয়া এত পেচাল পাড়েন কে রে? কাজের কথা কহন, হ,হ আয়াতাছি, আয়াতাছি।

প্রযুক্তিগত উন্নতির দিক দর্শনের কিছু সম্ভাবনা

জিন প্রযুক্তির উন্নতি

আগামী বছর গুলিতে সবচেয়ে বেশি বৈপ্লবিক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন যে ক্ষেত্রে দেখা যাবে তার মধ্যে চিকিৎসা ক্ষেত্র অন্যতম। এর মধ্যে জিন প্রযুক্তির উপর আসতে চলেছে অসম্ভব রকমের পরিবর্তন যেটা হবে অনেক বেশি উন্নতি মান সম্মত। বার্ধক্য এবং ডায়াবেটিস এর জন্য সম্পূর্ণ দায়ী হলো এই জীন। যাহা প্রাণীকুলকে ধারাবাহিক ভাবে শেষ করে দেয়। চিকিৎসা বিজ্ঞান এই জিন প্রযুক্তির পরিবর্তন এবং নিয়ন্ত্রণ করে  মানুষকে এক নতুন দিগন্তের আলো দেখাবে। এর ফলে শরীর থেকে ক্ষতিকর জিন সরিয়ে আয়ুবর্ধক বা ক্যান্সার প্রতিরোধী জিন প্রতিস্থাপন করবে। ভাবতে পারেন অনেকটাই টিকার মতো। এর ফলে করা সম্ভব হবে ক্যান্সার প্রতিরোধ। আপনারা যদি লক্ষ্য করেন দেখবেন বাজারে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু ক্যান্সারের টিকা চলে এসেছে। তবে পাঠক-পাঠিকাদের সুবিধার্থে বলতে চাই এটা ধর্মের নহে জিনের কেরামতি।

 নতুন অঙ্গ গজাবে

পৃথিবীর বুকে এমন বহু গাছ আছে যে গাছের কোন অঙ্গ ভেঙ্গে বা কেটে গেলে পুনরায় আবার অঙ্গ তৈরি হয়। এমন কি আপনি লক্ষ্য করবেন আমাদের শরীরের কোন অংশের মাংস ক্ষত বা নষ্ট হয়ে গেলে তা পুনরায় আমাদের শরীর পরিপূর্ণ হয়ে যায়। কিন্তু আপনি কি কখন চিন্তা করেছেন শরীর বা ত্বকের এই পরিপূরণ কি ভাবে হয়? অন্য ভাবে আবার চিন্তা করুন তো আমাদের শরীরের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যেমন কিডনি, ফুসফুস, হার্ট ইত্যাদি নষ্ট বা কোন কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা নতুন করে তৈরি হয় কি? কেন হয় না? কারণ ফুসফুস, হার্ট, কিডনি তৈরির জন্য আমাদের শরীরে তেমন কোন প্রোগ্রাম বা ব্যবস্থা নাই। এবার আপনি শুনে একটু অবাক হবেন যে, গাছের মত এই পৃথিবীতে এমন কিছু প্রাণী রয়েছে যাদের বিবিধ অঙ্গ পুনরায় তৈরি হয় শরীরে। ঠিক এই জাগায় চিকিৎসা বিজ্ঞান কাজ করছে। এর ফলে কি হবে অঙ্গ নতুন করে গজানো ওই জীন মানুষের শরীরে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হবে। ফলাফল মানব দেহে নতুন অঙ্গ গজাবে। এক কথায় বলা যায়, এর ফলে আমাদের আয়ু বা শরীরের সুস্থতা বহু গুণ বেড়ে যাবে।

যন্ত্র আর শরীরের সহবস্থান

কৃত্রিম অঙ্গ যেমন চোখ কান হাত পা ইত্যাদি কল্প বিজ্ঞানের সেই সাইবর্গ হাত ধরে বৈদ্যুতিক যন্ত্র এবং প্রযুক্তির সাহায্যে প্রতিস্থাপিত হবে মানব দেহে । মানুষের হাতে এমন কিছু নতুন বৈদ্যুতিক যন্ত্র আসতে চলেছে যা দ্বারা মানুষ হবে আরো বেশি ক্ষমতাবান এবং শক্তিশালী। সেই সাথে বৃদ্ধি পাবে মানুষের উপর রাষ্ট্রের নজরদারি নতুন নতুন পন্থা। তবে আজ রাষ্ট্রীয় নজরদারি বিষয় আলোচনা করব না। এই বিষয় নিয়ে অন্য আর একদিন বিস্তারিত আলোচনা কব।

 কর্মক্ষেত্রে যান্ত্রিক বুদ্ধির ব্যবহার

আপনি নতুন ভাবে প্রবেশ করবেন এক অন্তর্জাল জগতে। যেখানে আপনাকে বুদ্ধি দিয়ে সাহায্য করবে যন্ত্র। ফাইভ জি নিয়ে আলোচনা সময় বলেছিলাম আপনার হাতের স্মার্ট ফোনটি আয়ুষ্কাল আর বেশি দিন নয়। আপনার হাতে আসতে চলেছে ফাইভ জি নেট পরিষেবা যার ফলে আপনি পেতে চলেছেন অসম্ভব দ্রুত আরো অতীব সুরক্ষিত ইন্টারনেট ব্যবস্থা। এমন কি সিক্স জিতে আপনি প্রবেশ করতে পারেন যার ফলে আপনি এক অলখ সর্বব্যাপী অন্তর্জালের জগতে প্রবেশ করবেন। শুধু আপনি বা আপনার হাতের স্মার্ট ফোনটি নয় ঠিক একই সময়ে আপনার বাড়িতে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ গুলো হতে চলেছে বুদ্ধিমান। চিপ বাড়িতে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ যুক্ত থাকে। এর ফলে যন্ত্র গুলো আপনার প্রতিদিনের অনেক কাজের নজরদারি করবে আপনার ব্যবহৃত বাড়ির বৈদ্যুতিক যন্ত্র। কাজের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে পরিবর্তন গুলো দেখা যাবে তা হলো কঠিন পরিশ্রমের কাজের জায়গায় মানুষের স্থলে প্রবেশ করবে যন্ত্র। যার কম বেশি ব্যবহার আমরা ইতোমধ্যে দেখছি। এখন কি স্লোগান দেবেন? স্লোগান দেবের চিন্তা মাথা থেকে ঝাড়ুন, মানুষের জন্য তৈরি হবে অসংখ্য নতুন পেশা। যন্ত্র কোন কারণে মানুষের ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে না। কারণ এই যন্ত্র পরিচালনার জন্য নতুন নতুন ক্ষেত্রে তৈরি হয়ে যাবে। সেই সাথে আমাদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির যে হার তা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। তবে যারা মনে করেন মুখ দেন যিনি খাওনো দেন তিনি। যারা এই ফরমূলায় বিশ্বাসী তাদের জন্য ২ মিনিটের নীরবতা ছাড়া এই মুহূর্তে তেমন কোন আশার বাণী শুনতে পারছি না।

স্মার্ট জীবন

আমার পূর্বের একটি লেখায় বলেছিলাম যে স্মার্ট ফোনের দিন শেষ। স্মার্ট ফোনের জাগায়টি নিতে চলেছি ত্রিমাত্রিক একটি স্ক্রিন যা শূন্যে তৈরী হবে আপনার কাছে। কিছু দৃশ্যমান করতে ব্যবহৃত হবে চশমা এবং ছোট ছোট সংবেদক মাধ্যম, যাহা আপনার কান এবং চোখের মধ্যে সংযুক্ত স্থাপন করবে। এর ফলে আপনি হয়ে উঠবেন এক অমিত শক্তির মালিক। চোখের রেটিনা এবং আঙুলের ছাপ এতো সহজে ব্যবহৃত হবে যে খুব সুরক্ষার সাথে আপনি ব্যাঙ্ক বা অন্য লেনদেন করতে পারবেন। শুধু এ টুকুই নয়, আপনার হাতে মুঠোয় থাকবে এক অফুরন্ত তথ্যের ভাঁড়ার। কোন ব্যক্তিকে দেখে আপনার মনে হতে পারে তাকে আপনি কোথায় দেখেছেন। কিন্তু আপনি মনে করতে পারছেন না, কোন সমস্যা না, আপনার ব্যবহৃত চশমা বা ইয়ারফোন মুহূর্তের মধ্যে বলে দেবে আপনি ঐ ব্যক্তিকে কোথায় এবং কি ভাবে চেন।

আরো মজার বিষয় হলো পৃথিবীর যে কোন ভাষা অতি সহজে আপনার মাতৃভাষায় অনুবাদিত হয়ে যাবে। একটি পণ্য সম্পর্কে যদি আপনার কোন ধারণা না থাকে। তবে যদি আপনি পণ্যটি ক্রয় করতে চান, সে ক্ষেত্রে মুহূর্তে মধ্যে ঐ পণ্যের বিস্তারিত আপনাকে অবগত করবে ঐ চশমা। যার ফলে আপনি পণ্য ক্রয়ের পূর্বে তার দাম এবং গুনাগুন জানতে পারবেন খুব সহজে। তবে এই সকল সুবিধা পাবার জন্য আপনাকে ইন্টারনেট এর গতি বৃদ্ধি বা ফাইভ জি আসার সময়কাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। গন্ধ আর বাস্তবিক অনুভূতির কিছু ভাগ ছাড়া আপনি পেতে চলেছেন পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে তার সৌন্দর্যের স্বাদ পাবার সুবিধা ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে। একদম বাস্তবের মতো জলসা বা সিনেমা দেখবেন। আজ এই আমি বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে চুরিধারী যে লেখাটি আপনাদের সামনে উপস্থাপন করছি তা আর করা যাবে না, অর্থাৎ চুরিধারী দিন শেষ। আপনি লেখাটি পড়া শুরু করলেই বুঝে যাবে কোন জায়গা থেকে কি চুরি করে লিখেছি। আরো মজার বিষয় ধরুন আপনি কোন ওষুধ খুঁজছেন, প্রযুক্তি আপনাকে ডাক্তারি পরামর্শ সহ জানিয়ে দিবে। এর ফলে যে যা হবে আপনার নতুন কোন আবিষ্কার সম্পর্কে অজানা বিষয় থাকবে না।

বিশ্ব ভূ-রাজনৈতিক চিত্র

বিশ্ব জুড়ে আগামী দশক গুলিতে রাজনৈতিক সমস্যা অনেক বেশি বৃদ্ধি পাবে। তার থেকে আমাদের এই উপমহাদেশ মুক্ত থাকবে না, উদ্বাস্তু মানুষ এবং জল নিয়ে তৈরি হবে নতুন সমস্যা। বিশ্বজুড়ে সমস্যার মূল কারণ থাকবে ধর্ম, অর্থনৈতিক এবং মানুষের প্রত্যাশা। তবে আশার বাণী হলো এর জন্য বড় কোন যুদ্ধ হবার সম্ভবনা নাই। তবে আশার বাণী একনায়কতন্ত্রের রাজত্ব ক্রমশ কমে গণতান্ত্ৰিক কাঠামো আরো পোক্ত হবে। এর ফরে বড় যুদ্ধ হবার সম্ভবনা কমে যাবে। কারণ আপনি যদি লক্ষ্য করেন দেখবেন দুটো গণতান্ত্রিক প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বড় কোনো যুদ্ধ হয় না বলেই চলে। তবে সীমান্ত সমস্যা বা সংঘর্ষতের মতন ছোট ছোট সমস্যা থাকবে তবে বড় কিছু হবে না।

যদি আর একটি পরিষ্কার করে বলি তবে এমন বলতে হয় পাকিস্তান, আফগানিস্তানে চীনের ভূমিকা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মত স্বরূপ উন্মোচন হতে থাকবে। তবে গুরুত্বপূণ মানচিত্রে পরিবর্তন হতে পারে মধ্যপ্রাচ্যে। সে ক্ষেত্রে তুরস্কের সমস্যা বাড়িয়ে কুর্দরা নতুন রাষ্ট্রর মালিক হতে পারে। বালুচিস্থান নিয়ে পাকিস্তান নতুন সমস্যা মুখে পড়বে যার ভূমিকায় ইরান থাকবে। তবে এর জন্য ভারতকে আরো বেশি সতর্কতা থাকতে হবে কারণ ভারতের জড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নূতন ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে ইরাক এবং সিরিয়া মধ্যে। ও, নাটের গুরুর একমাত্র বিশ্বস্ত বন্ধু সৌদি আরব দিক থেকে দূরবীন করবেন না ভেলকি দেখলেও, দেখতে পারেন। তবে রোহিঙ্গা, উইঘুর, হ্যান জাতি নিয়ে সমস্যা আর প্রকট হবে। তবে আশার আলো ফটবে আফ্রিকার অধিকাংশ দেশে আশ্চর্যের হলেও সত্য ঐ অঞ্চলে প্রযুক্তির  নিরভর কৃষির সবুজ বিল্পব ঘটবে যার ফল অর্থনৈতিক উন্নতি সাধিত হবে। ওদিকে নাইজেরিয়ারতে আঞ্চলিক সংঘর্ষ বৃদ্ধি কারণে ভেঙে যেতে পারে। সব কথার সার হল কেন্দ্রীয় ক্ষমতার উৎসের রাষ্ট্রগুলোর উপর দিয়ে বড় ঝড় যাবে। প্রযুক্তির উন্নতির ফলে পৃথিবী ছোট হবে ঠিকি তবে সংঘর্ষ এবং তার ক্ষেত্র ছোট হলেও তীব্রতা হবে অনেক বেশি হবে।

শিক্ষাঙ্গন বা বিশ্বের শিক্ষার পরবর্তী অবস্থা

শিক্ষাক্ষেত্রের কথা বলতে গেলে এক কথায় উত্তর হবে এক অসাধারন উজ্জ্বল দিনের প্রতীক্ষার কাউন্টিং করছি আমরা। স্বাধীনতা সময় হাতে গোনা মানুষের স্বাক্ষরতার এই দেশে এখন প্রায় শতভাগের দোরগোড়ায় এসে দাড়িয়েছে। স্বাক্ষরতার এই উন্নতি সত্যিই চমকে ওঠার মতো। আগামীতে মানুষ এক অমিত শক্তির অধিকারী হতে যাচ্ছে সর্বব্যাপী ইন্টারনেট এবং তার সহজলভ্যতা জন্য। পৃথিবীর একটি মানুষও আগামী দু-দশকের মধ্যে শিক্ষার আলো বাইরে থাকবে না। পৃথিবীর বেশির ভাগ জ্ঞানভাণ্ডার থাকবে ইন্টারনেট জগতে তার থেকেও আশার কথা হলো তার জন্য সাধারণ মানুষকে বাড়তি টাকা গুনতে হবে না। একজন সাধারণ আফ্রিকার ছাত্র জ্ঞান বিজ্ঞানের ভান্ডার অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে খুব সহজে জ্ঞান অর্জন করতে পারবে। ছবি আর ভিডিও হবে শিক্ষার প্রধান উপকরণ যেটা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ছাত্র ছাত্রীরা খুব সহজে নেট থেকে সংগ্রহ করতে পারবে। এর ফলে শিক্ষা আর ভীতির বিষয় হয়ে থাকবে না।পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের স্কুল বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে হবে তথ্যে আদানপ্রদান।

শিক্ষা হবে এক বায়বীয় সর্বব্যাপী ব্যপার। এর ফলে আগামীর প্রজন্ম হবে অতীব মেধাবী ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে মেধার ফারাক কমে যাবে। তাই শিক্ষক বিন্দু আপনারা সতর্ক হন জানার ক্ষেত্রে শিক্ষক এবং ছাত্র মধ্যে ফারাক কমে যাবে। খাতা কলমের পাঠ থাকবে না বলেই চলবে। আসতে চলেছে ভার্চুয়াল স্কুল বা কলেজ যার ফলে বই খাতার খরচ এবং সময় উভয়ই বেঁচে যাবে। তবে মজার বিষয় হলো একজন শিক্ষক শিক্ষা দিতে পারবে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রীকে এক সাথে।

তবে এমন হতে পারে, থাকবে না কোন শিক্ষার বয়স এবং সিলেবাস। যদি কোন মানুষ তার ইচ্ছা পূরণ করতে পারেনি লাল ফিতের এবং অন্য আর্থিক বা সামাজিক কারণে, তিনিও পারবে মধ্যবয়স্ক এসে তার সেই সাধ মিটাতে। শিক্ষাগত অর্জনের কারণে যেতে পারবেন নতুন কোন পেশায়। মূল ধারার শিক্ষাঙ্গন গুলো আমূল পরিবর্তন ঘটবে, থাকবে না সেই চিরাচরিত ডিগ্রি কোর্স। যক্তি হবে নতুন নতুন বিষয় সেই সাথে জানার পরিধি বেড়ে যাওয়ায় ছাত্র এবং শিক্ষকের বয়সের পার্থক্য কমে আসবে। শিক্ষা মূল উদ্দেশ্য হবে প্রয়োগ মুখী যা শিখেছেন তাই হবে প্রয়োগ। এর ফলে ডিগ্রি আর ডিপ্লোমা মূল্য থাকবে না, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অঙ্গন হয়ে উঠবে অদৃশ্য এক জ্ঞানের ক্ষেত্র, প্রতিটি মানুষের পরিচয় হবে তার কাজ। তাই জোর দিয়ে আবার বলছি অনাগত দিনগুলো হতে চলেছে এক উজ্জ্বল সম্ভবনা।

আরো সার্বিক মহাকাশ সফর এবং পর্যবেক্ষন

মহাকাশ মানুষের জন্য আর পরীক্ষা নিরীক্ষার পর্যায় থাকবে না, ধনী মানুষের প্রমোদ সফরের গন্তব্য হবে। তবে শত শত নয়, হাজার হাজার নয় লাখ মানুষ তাদের প্রমোদ সফরের গন্তব্য করবে। স্বর্গের সিঁড়ি মানে স্পেস এলিভেটর হতে পারে সেই যাত্রার বাহন। সেই সাথে আয়ত্বের মধ্যে থাকবে সফর খরচ।বহু বেসরকারি কোম্পানি এই যাত্রা ব্যবস্থা করবে ইতিমধ্যেই ইলন মাস্ক আর ভার্জিন এয়ারলাইন্স এর স্যার ব্র্যানসন এই কাজ শুরু করে দিয়েছেন। প্লেন সফর যেমন ট্রেন সফরের যেমন মানুষের কাছে সাধারণ বিষয় হয়ে গিয়েছে তেমনি এই সফর হয়ে উঠবে। এ হাত ধরে আপনি প্রবেশ করবেন অকল্পনীয় গতির দুনিয়াতে।

বাণিজ্যিক বা কর্মক্ষেত্রের পট পরিবর্তন:

মানুষের জন্য কোনো নির্দিষ্ট কাজের স্থান মানে অফিস থাকবে না, অজস্র মানুষ কাজ করবে তার নিজের সুবিধা মতো স্থান থেকে। মানুষ তার কাজের সাথে ইন্টারনেটর মাধ্যমে আর নানা কর্মগত প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রতিটি মুহূর্তে যোগ থাকবে। পোশাক বা চশমা ঘড়ি ইত্যাদির হবে এই বায়বীয় কর্মক্ষেত্রর বাহক। মানুষ আগের মতো ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত স্রেফ নির্দিষ্ট কয়েকটি ক্ষেত্র ছাড়া বাকি জায়গায় এক স্বনিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতেই হবে। মানুষ শুধু স্রেফ সৃষ্টি ধর্মী বা একান্ত মানবিক বিষয় নিয়ে তার মাথা ঘামাবে বাকি ক্ষেত্রগুলো নিয়ে নিবে যন্ত্র।পচনশীল বস্তুর সংরক্ষণ আর তার উপভোগ মানুষের জন্য আরো বেশি সহজ হয়ে যাবে কারণ যোগাযোগ ব্যবস্থা এমন দ্রুত গতি সম্পূর্ণ হবে যে আঞ্চলিক কোন পণ্য মুহুর্তের মধ্যে বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পৌছিয়ে যাবে। কমে যাবে মধ্যস্বত্বভোগীদের দূরত্ব সোজা কথা দালালদের ভূমিকা। মানুষের কাছে তথ্যের ভাণ্ডার থাকার কারণে কমে যাবে ‘লোক ঠকানো ‘ দাম বা অন্য কুকীর্তির পরিমান। বিজ্ঞাপনের দিন বা পণ্য বিক্রির জন্য প্রলোভিত দিন শেষ কারণ মানুষের সচেতনতা বেড়ে যাবে নিজে তাতে তথ্যভাণ্ডার থাকার কারণে। ঘুষের রাজত্ব তার ক্ষমতা হারাবে কারণ সর্বব্যাপী অন্তর্জাল আর নথি বা ফাইল হবে বৈদ্যুতিন। কোনঠাসা হয়ে উঠবে বেআইনি লেনদেন কারণ পৃথিবী সকল ব্যবস্থা হবে ডিজিটাল। পাশাপাশি সকল কর্ম পদ্ধতি হবে সরল এবং সহজ।

জলবায়ু আর অন্য পরিবর্তন

মানুষে মাঝে বাড়বে সচেতনা মানুষ প্রকৃতির প্রতি ক্রমশ আরো যত্নবান হয়ে উঠবে। পাশাপাশি কার্বন উৎপাদন হয় এবং শক্তির উৎস ছেড়ে পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তির উৎস মানুষ বেশি বেশি স্থাপন করবে। খুব অল্প সময়ে মধ্যে বিশ্বের একটা মোটা সংখ্যক দেশে তাদের শক্তির চাহিদা সৌর এবং বায়ু শক্তি দ্বারা পূরণ করবে। এর পাশাপাশি আঞ্চলিক জলবিদ্যুৎ বা অন্য শক্তির উপর নির্ভরশীলতা বাড়বে। যার ফলে পৃথিবী হবে এক কম যোগ্য উর্বর ভূমি। এক পর্যায়ে স্বল্প পরিসরে হয়তো বেতার বিদ্যুৎ প্রকল্প সফল হতে পারে। যার ফলে মোবাইল নেটওয়ার্কের মতো বিদ্যুৎ ব্যবস্থা পরিচালিত হতে পারে। প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে হিমবাহ নিয়ে পারস্পরিক ঝগড়ার হলেও হতে পারে।

মরু অঞ্চলের যদি এক অতীব অসাধারন পদার্থ যার নাম গ্রাফিন। তার উৎপাদন যদি বৃদ্ধি করা সম্ভব হয় তবে চেহারা পাল্টে যাবে মরু অঞ্চলের, ফলে মরু অঞ্চল হয়ে উঠবে সবুজ । সমুদ্রের নোনা জলের ওই নুনের পরিস্রুত করার কাজ হবে এই গ্রাফিনের মাধ্যমে। আমরা এক বৈপ্লাবিক পরিবর্তন দেখতে পারবো গ্রাফিনের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হওয়ার পরেই। কোনো বিশাল আতঙ্কের কিছু নেই আগামীর ওই দশকগুলোতে। তবে যেমন ভালো আছে তেমন মন্দ হবে পৃথিবী থেকে অনেক প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। কিন্ত মানুষ তার জ্ঞান দ্বারা ঐ সকল বিলুপ্ত প্রজাতির দেহ সংরক্ষন পুনরায় ফিরিয়ে আনবে, তবে তার জন্য হয় তো আরো কিছু দশক অপেক্ষা করতে হবে।প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো অধুনা অবলুপ্ত ম্যামথ মানে লোমশ সেই অতিকায় হাতিকে ফিরিয়ে আনার কাজ কিন্তু সমানতালে চলছে! যৌনতার প্রলোভন থেকে মানুষ দুরে সরে যাবে এর ফরে মানুষ উৎপাদান ক্ষামতা কমে যাবে।যেটা পৃথিবীর জন্য ভালোই হবে বিপুল এই জনসংখ্যা কম হওয়া সময়ের দাবি।

প্রত্যেকটি বিষয়কে ছুয়েছি মাত্রা অনেক বিষয় বাদ থেকে গিয়েছে। আগেও অনেকবার এই উদ্ভাবনগুলো নিয়ে আলাদা করে লিখেছি তাই অনেক কিছুই আর লিখলাম না। ইচ্ছা করেই বিবাদ না বাড়াতে অনেকের আগ্রহের বিষয় ধর্মের কি গতি হবে আগামীর দুই দশকে ওটা লিখি নি। একই ভাবে একাই একটি আলাদা লেখা হওয়ার যোগ্য বলে প্রত্নতাত্ত্বিক বিষয়ে আজকের বাস্তবের ইন্ডিয়ানা জোনস হলে কি কি ব্যবহার করবে বা প্রত্যেকেই এক একজন ইন্ডিয়ানা হওয়ার সুযোগ নিয়েও বলি নি। একটাই কথা বলি,এই দুনিয়া ক্রমশ আরো বেশি স্পস্ট হয়ে উঠবে মানুষের কাছে। ইচ্ছা করেই অনেক কুফল তুলে ধরি নি কারণ আমি মনে করি যে কোনো নতুন কিছু নিয়ে আসে অল্প হলেও বিপরীত ফলাফল তবে আমি নিশ্চিত মানুষ তার অমিত প্রজ্ঞা আর উদ্ভাবনী ক্ষমতায় ওই প্রতিকুলতা অতিক্রম করবে অনায়াসে। পৃথিবীর আগামীর দিনগুলো হতে চলেছে অতীব সুন্দর, তবে তার ফলাফল দেখবে আগামীর প্রজন্ম। একটাই আফসোস,” জীবন এত ছোট ক্যারে! ”

ধৈর্য ধরে এবং সময় নিয়ে এই লেখা পড়ার জন্য আপনাকে কৃতজ্ঞতা জানাই। ভালো থাকুন সবাই! পারলে শিয়ার করে অন্যকে জানার সুযোগ করে দিন।

সুমন গাঙ্গলী

কলকাতা বিশ্ববিদ্যলনয়, কলকাতা, ভারত।

 

তথ্যসূত্র উৎস….

  1. জিনের কেরামতি জানার জন্য এখানে খোচা মারুন।
  2. অঙ্গ গজাবে নিজ দেহে বিস্তারীত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  3. বিবর্তন বা কেমন হবে আগামীর দিন তা জানতে এইখানে গুতো
  4. বৈজ্ঞানিক খোচাখুচি ভু রাজনৈতিক সংঘর্ষের উপর চাপদিন এখানে।
  5. বিল গেটস এর অসাধারণ একটি স্বাক্ষাতকার ভিডিওটি