আপনার এই দৌড়ের উপর থাকা জীবনে যদি পুরো লেখাটা সময়ে করে পড়ে ফেলেন তাহলে আপনাকে আমার পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ! কিছু দিন যাবত ভাবছি 5G নিয়ে নিয়ে লিখব, কিন্তু সময়ের সাথে সব কিছু পেরে উঠা আসলেই বড় দায়। তারপরও চেষ্টা করেছে এই অধম, আপনাদের কাছে নতুন কোন তথ্য তুলে ধরার। বর্তমান আমাদের জীবনে সাথে G অক্ষর টি অঙ্গা অঙ্গি ভাবে জড়িয়ে গিয়েছে। আর প্যাচাল নয় সোজা সুজি আলোচনা। নেটওয়ার্কের কথা আসলেই চলে আছে ইংরেজি G অক্ষর টি। এখানে এই G অক্ষর টি দ্বারা মূলত বুঝানো হয়েছে জেনারেশন। তাই 5G মানে নতুন করে আর বলার অপেক্ষা রাখে না, তবু বলছি 5G হলো পঞ্চম প্রজন্মের নেটওয়ার্ক। এখন মনে করছেন সেটা আবার কি? আলোচনার কোন না কোন পর্যায়ে আশা করি সেটা বুঝতে পারবেন। 5G মূলত মোবাইল ফোন ব্যবস্থার তথ্য আদান প্রদান এর আর শক্তিশালী ব্যবস্থা। এক কথায় বলা যায় বেতার দূরাভাষ আরো শক্তিশালী মাধ্যম। বর্তমান বিশ্বের প্রায় বেশির ভাগ দেশের মানুষ 4G অর্থাৎ চতুর্থ প্রজন্মের নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা সাথে প্রায় পরিচিত। দেশে বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানির নেটওয়ার্ক উন্নতি কারণে আমরা ঘরে বসেই যে কোন ধরনের ভিডিও দেখতে পাচ্ছি খুব দ্রুত। এবার আপনার মনে হুকি মারতে শুরু করেছে তাহলে 5G এর কি দরকার। দাঁড়ান এক বারে মগ ডালে যাবেনা, দরকার তো আছেই। বর্তমান সময়ে আমরা প্রযুক্তি জগতের মধ্যে ঢুকে পড়েছি, সেটা কি বুঝতে পারছেন? আমাদের প্রতিদিনের কাজের সাথে প্রযুক্তি এমন ভাবে জড়িয়ে গিয়েছে, যে প্রযুক্তি ছাড়া আমাদের জীবন কল্পনা করা কঠিন হয়ে উঠছে। হ্যাঁ, আগামীতে এই মাত্র আরো বৃদ্ধি পাবে। আর তার জন্য প্রয়োজন হবে আর বেশি গতির নেটওয়ার্ক। তার জনই এই 5G যাত্রা। চালকবিহীন গাড়ি চলবে, বিভিন্ন পরিষেবা দেবার জন্য ড্রোন কাজ করবে, বাড়ি হতে কারখানা গুলোতে কাজের জন্য রোবট ব্যবহার হবে। আর এর জন্য প্রয়োজন হবে উচ্চ গতি সম্পূর্ণ নেটওয়ার্ক। সেই কারণেই কাজের জায়গার ওয়াইফাই কে পাল্টে ফেলার প্রযুক্তি প্রয়োজন। যেটা মেটাবে এই 5G প্রযুক্তি।
এখনি দৌড়াবেন না 5G স্মার্টফোন কেনার জন্য। একটু দাঁড়ান আগে কথা গুলো মন দিয়ে শুনুন। দুঃখের বিষয় এই পরিষেবা সাধারণ মানুষের জন্য এখনো আসেনি, কিছু পরিক্ষা হয়েছে মাত্র। ধারণা করা হচ্ছে এ বছরেই আমেরিকায় চালু হবে সাধারণের জন্য। AT&T ,স্যামসাং ,নকিয়া এবং অন্য কোম্পানি গুলো ইতিমধ্যেই এই প্রযুক্তির জন্য প্রচুর পরিমান ডলার বিনিয়োগ করেছে। কারণ এই প্রযুক্তির জন্য সেকেন্ডে ১০ থেকে ২০ গিগাবাইট গতি সম্পূর্ণ ডিভাইস লাগবে। এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে এখানে খোঁচা মারুন। দাঁড়ান দাঁড়ান বলছি, 4G তে গতি কত থাকে? 4G সর্বোচ্চ গতি যেটা আমরা দেখে থাকি তা হলো সিঙ্গাপুর এবং দক্ষিণ কোরিয়াতে। সেই গতি সেকেন্ডে ৪৮ MBPS এর মতো। আরো জানতে ক্লিক করুন এখানে।
আলোচনার প্রথম দিকে পঞ্চম জেনারেশন নিয়ে সামান্য আলোচনা করেছিলাম। মোবাইল ফোন আশার পর থেকে বিভিন্ন দূরাভাষ কোম্পানিগুলো প্রজন্মের জন্য এক একটি ধাপ নিয়ে এসেছে। সেই ধাপগুলো আমরা গত দশক গুলোতে পর্যায়ক্রমে দেখেছি। 1G নেটওয়ার্ক পৃথিবীতে সর্বপ্রথম আসে ১৯৮২ সালে। তার ঠিক ১০ বছর পর ১৯৯২ সালে আসে 2G এবং তার সাথে আসে ডিজিটাল ফোন। ঠিক তার ১১ বছর পর আসে 3G নেটওয়ার্ক ২০০৩ সালে। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১২ সালে 4G নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা আসে। 3G নেটওয়ার্ক এবং 4G নেটওয়ার্ক সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ঢু মারেন এখানে । সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই প্রজন্মের জন্য আলাদা আলাদা সংস্থা তৈরি হচ্ছে।5G জন্য মাত্র একটি সংস্থা পুরো বিষয়টি নিয়ে কাজ করবে। Next Generation Mobile Networks (NGMN) নামের সংস্থ। সংস্থটি গবেষণা থেকে শুরু করে যন্ত্র নির্মাতা এমনি দূরাভাষ পরিষেবা পাওয়ার কোম্পানি গুলো আর সম্পৃক্ত অন্য কোম্পানিগুলো এক জায়গায় করার কাজ করছে। 5G পরিষেবা এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো, বর্তমান ইন্টারনেট পরিষেবা ব্যবহার করলে সেভাবে ব্যাটারির চার্জ শেষ হয় সেটা এই পরিষেবা তে হবে না। NGMN সম্পর্কে জানতে হুকি মারুন এখানে।
এবার মনে অবশ্যই প্রশ্ন উঠেছে আরে মিয়া এতো প্যাচাল মারছেন, তো এত বেশি গতি সম্পূর্ণ নেট নিয়ে আমরা কি করুম? আইতাছি দাদা, সে কথায় আইতাছি। আগামীতে আপনি যে সকল যন্ত্রাদি ডিভাইস ব্যবহার করতে যাচ্ছেন প্রতিটি ডিভাইস থাকবে নেটওয়ার্ক এর আওয়াতায়। অর্থাৎ জীবন হবে সম্পূর্ণ স্মার্ট, যার কাজ হবে সব সময় আপনার হাতে ধরা স্মার্ট ডিভাইস সাথে তথ্য আদান প্রদান জন্য যুক্তি থাকা। ফ্রিজ থেকে শুরু করে আপনার বাড়ির মিউজিক সিস্টেম অথবা টিভি, সব থাকবে একটি নেটওয়ার্ক এর আওয়াতায়। উপরেই আলোচনা করেছি চালক বিহীন গাড়ি এবং ড্রোনের কথা। তো এবার বলুন তো এখন যে স্পিডে এর নেট আপনি ব্যবহার করেছেন সেটা দিয়ে কি এটা করা সম্ভব? মোটেও না, তার জন্যই এই 5G পরিষেবা। 5G পরিষেবা আপনার জন্য নতুন নতুন স্বপ্নের দুয়ার খুলে দেবে।5G পরিষেবার ফলে মেশিন থেকে মেশিনের সংযোগের যুগের সূচনা হবে, এর ফলে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার ধরে নতুন সূর্যের আলো আসবে মানব সভ্যতার ঘরে। যেমন ধরুন আপনার ঘরের ফ্রিজ এ ডিম নাই এর জন্য আপনাকে খবরদারি করতে হবে না। যখনি ফ্রিজ এর ডিমের ট্রেটি খালি হবে, ফ্রিজ আপনার পূর্ব নির্দেশনা অনুযায়ী আপনার পরিচিত ডিপার্টমেন্টাল স্টোর কে অর্ডার করে দেবে। খুব সহজেই আপনি আপনার বাসার টিভি দিয়ে বিশ্বের যে কোন স্থানে, যে কোন ধরনের Live বিষয় দেখতে পারবেন। না তার জন্য আপনাকে কোন টিভি চ্যানেলের উপর নির্ভর করতে হবে না।
মূলত 5G হলো মিলিমিটার ওয়েব প্রযুক্তি। যাহা মাপা হয়ে থাকে ওয়েব লেন্থ দিয়ে। মজার বিষয় হল যত ছোট লেন্থ তত উঁচু ফ্রিকুয়েন্সি মানে দ্রুততা এবং বেশি তথ্যের আদান প্রদান। এই মিলিমিটার ওয়েল দিয়ে ফ্রিকোয়েন্সি 5G ব্যবহার করবে ৩০ থেকে ৩০০ গিগাহার্জ বেতার তরঙ্গ আদান প্রদান করা যাবে। এর ফলে তথ্যা আদান প্রদানে জন্য এখনকার মতো দাতা আর গ্রহীতার মধ্যে সময় লাগবে না। এক সাথে অনেক বেশি তথ্য দাতা এবং গ্রহীতা খুব দূরত্ব কাজ করতে পারবে কোন বাধা ছাড়াই। যার ফলে সময় অনেক বেশি বেঁচে যাবে। বর্তমানে 4G নেটওয়ার্কে ৭০ মিলি সেকেন্ড এর ফারাক দেখা যায়, 5G আসলে সেটা বেড়ে ১ মিলিসেকেন্ড হবে। এখন প্রশ্ন আসলে এই ফারাক কমিয়ে কি হবে? হ্যাঁ, লাভ অনেক, চালক বিহীন গাড়ির কথা এক বার চিন্তা করুন তো, আপৎকালীন নির্দেশ এর ওই মিলি সেকেন্ড এর ফারাক অনেক বড় দুর্ঘটনা থেকে বাঁচাতে পারবে না। যাহোক, বাড়ীর খেয়ে এর বেশি জ্ঞান দিতে পারব না। এই সম্পর্কিত দুই টি সূত্র দিলাম যদি আরো জানতে চান দেখে নিন, ১ম এবং ২য় একটি কষ্ট করে খোঁচা দিন।
5G এর দুর্বলতা কি ?
সুবিধা নিবেন আর সমস্যা ভোগ করবে না সেটা কি করে হয় দাদা? এর প্রধান সমস্যা বা চ্যালেঞ্জ হলো প্রয়োগের। আমরা উপরে আলোচনা করেছি এর ক্ষুদ্র তরঙ্গের কথা সেটাই এর বড় এর দুর্বল জায়গা। এই ব্যবস্থার জন্য আপনাকে ছোট দূরত্বের মধ্যে সংযোগ ঘটাতে হবে। অর্থাৎ কি দাঁড়ালো আরো বেশি টাওয়ার এর প্রয়োজন পড়বে। এই নেটওয়ার্কের প্রচুর গাছ এবং উঁচু দালানের দেয়াল বাধা সৃষ্টি করে। এমনিতেই এতো টাওয়ার তার উপর আরো টাওয়ার, খুব চিন্তার বিষয় তাই না? তবে আশার কথা এই সমস্যার সমাধান পাওয়া গিয়েছে। টাওয়ার বাড়াতে হবে না বরং কমাতে হবে। কারণ ছোট ছোট সংযোগকারী যন্ত্র বাড়ির উঁচু জায়গায় অথবা লাইটপোস্ট প্রতিস্থাপন করা যাবে। ২৫০ মিটার বা ৮২০ ফিটের অন্তর ম্যাপিং করে যন্ত্র স্থাপন করতে হবে। এর ফলে কি হবে আপনাকে ইন্টারনেট সংযোগ এর জন্য আর তারের উপর নির্ভর করতে হবে না।কবে থেবে চালু হবে 5G সেবা?
কেউ কেউ বলতে শুরু করেছে 5G সেবা চালু হয়ে গিয়েছে, একদম বিশ্বাস করবেন না ! ২০১৮ সালের ১লা জানুয়ারি, নো কিয়া ও রসটেলিকম স্কোকোভো ইনোভেশন সেন্টারে ৫জি এর পরীক্ষা শুরু করে। ৯ই ফেব্রুয়ারি ২০১৮, দক্ষিণ কোরিয়ায় ২০১৮ শীতকালীন অলিম্পিকে পরীক্ষামূল্ক ভাবে ৫জি চালু করা হয়। ২২ মার্চ ২০১৮ তারিখে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সংসদ সদস্যরা নতুন নেটওয়ার্কের জন্য জায়গা তৈরি করতে ২০২০ সালে মধ্যে ৩.৬ ও ২৬ গিগাহার্জ ব্যান্ড খুলে দেয়ার জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে।২ই এপ্রিল ২০১৮ তারিখে, যুক্তরাজ্যে ভোডাফোন ৩.৪ গিগাহার্জ তরঙ্গ ব্যবহার করে পরীক্ষামূলক ভাবে ৫জি চালু করে। উপরে দেখা যাচ্ছে যে এখনো এটি পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে। একটি তথ্যসূত্র ও দেওয়া হলো এখানে…. । তবে একটা বিষয় অন্তত পরিষ্কার যে আমরা বর্তমানে যে স্পিড পেয়ে থাকি তা অকল্পনীয় ভাবে বেড়ে যাবে। তবে মাথা রাখতে হবে এই 5G সেবা জন্য প্রয়োজন হবে সম্পূর্ণ আলাদা যন্ত্রপাতি এবং পরিকাঠামো। তাই NGMN সংস্থা ২১ বিলিয়ন ডলার এর একটি ফান্ড গঠন করেছে। তার জন্য আপনার আমার মতো জনগণের পকেট ফাঁকা হবে এ আর কি। তারপরও বেচারা আমরা জনগণ প্রস্তুত এই নতুন পরিষেবা গ্রহনের জন্য। নতুন জগৎ বলে কথা, এই আর কি।
পকেট খালি করার আরো বিষয় আছে
তবে এই আশার বাণীর সাথে আমজনতার আরো মন খারাপ হবার কারণ আছে। সেই মন খারাপ হবার মূল কারণ হল আপনার বর্তমান ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি এই নেটওয়ার্ক কাজ করবে না। আমরা যেমন এখন 4G ফোন দিয়ে 3G পরিষেবা পেয়ে থাকি তেমন 4G সেট দিয়ে 5G সেবা পাওয়া যাবে না।আর নতুন ফোনগুলোর সাথে ইনবিল্ট অতীব ক্ষুদ্র অভ্যন্তরীণ এন্টেনা থাকবে যা ওই উপরে বলা ছোট ছোট সংযোগকারী যন্ত্রগুলোর সাথে যোগাযোগ করবে যেটা কাছে পাবে ওটারসাথে।
5G থেকে কি কি সুবিধা পাওয়া যাবে
অবশ্যই অনেক নতুন সুবিধা তো থাকবেই তার মধ্যে উল্লেখ্য আপনি ভার্চুয়াল রিয়েলিটির প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা দিতে পারবে। এই যেমন আপনি ঘরে বসেই বিশেষ সানগ্লাসের মাধ্যমে মরু অঞ্চলের প্রকৃতি দেখে নিতে পারবেন। কোন রকম সেই স্থানে উপস্থিতি না হয়ে, বরং মরু বুকে উপস্থিত অনুভূতি অনুধাবনের মাধ্যমে। ঠিক একই ভাবে কোনো কনসার্ট বা গেম খেলবেন একদম বাস্তবের মতো। তবে তার জন্য অবশ্যই আপনাকে আরো সময় অপেক্ষা করতে হবে। এই বছরের শেষে আমেরিকায় চালু হবার কথা আছে। তবে উপরেই আলোচনা করেছি এটা দক্ষিণ কোরিয়ার পিয়ং চ্যাং এ উইন্টার অলিম্পিক এ ২০১৮ তে পরীক্ষামূলক চালু করা হয়েছিল। কি আর করা ততদিন অপেক্ষা করুণ। এই আনুষ্ঠানিক শুরুর সম্পৃক্ত লিংক মন চাইলে খোঁচা দিন। তথ্যসূত্র গুলো উপরে লেখার মাঝে মাঝে দিয়েছি তাই নতুন করে আর দিলাম।
পাঠক বন্ধুরা, আশা করি আপনাদের জন্য কিছু নতুন দিতে পেরেছি। কমেন্ট করে জানালে ভালো লাগবে। পারলে একটা শেয়ার দিয়ে অন্যকে জানার সুযোগ করে দিন।
অমিত বন্দ্যোপাধ্যায়
ইউনিভার্সিটি কলেজ (UCL), লন্ডন।