ধর্ম অবমাননার দায়ে দায়ী, আসিয়া বিবি পাকিস্থানে এক হতভাগীর নাম………………।

পাকিস্থানের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়

৩৩০০ ১৩০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ সিন্ধু সভ্যতা জন্ম কাল। সিন্ধু নদরে তীরেই রচিত হয়েছিল আজকের ভারতীয় উপমহাদেশের আধুনিক সভ্যতার পঠন পাঠন।এখানেই সিন্ধু নদের তীরে জন্ম হয়েছিল বেদ নামক জ্ঞান বৃক্ষের চারাটি। যাকে বেশির ভাগ মানুষ সেভ একটা ধর্মগ্রন্থ নামে জানে বা চেনে। কিন্তু বেদ যতটা না ধর্মগ্রন্থ তার থেকেও অধিক বেশি জ্ঞানগ্রন্থ। কারণ আজ আমারা যে সামাজিক জীবন প্রণালী মধ্য দিন জীবন অতিবাহিত করছি তার অন্তবীজ রুপিত আছে বেদ নামক গ্রন্থে। তাই বেদের অপর নাম জ্ঞান বলা হয়।কিন্তু আপনার হয় তো অবহিত আছেন সেই সিন্ধু সভ্যতার জন্মভূমিতে আজ এক সন্ত্রাসবাদীদের আখড়ায় হয়ে উঠেছে।করাচি শহর একটা সময ছিলো নামি দামি গুণিদের সমন্বয় প্রাণকেন্দ্র আর সিন্ধুপ্রদেশ কথা তো বলার অফেক্ষা রাখে না। কিন্তু কালে বিবর্তনে, বিবর্তনের সেই রং তা আজ সব ফিকে হয়ে গেছে।

৪৭ সালে দেশ ভাগের ফলে সিন্ধু পাকিস্থানের অংশ হয় যাহা আজ এক ধর্মান্ধ ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণিত হয়ছে। সম্ভত আপনার মনে, এই প্রশ্নটাই হুকি মারছে মহম্মদ আলি জিন্নার সে স্বপ্নের ইসলামিক দেশ পাকিস্থানের আজ কি হাল? যেখানে গাল গফ ভরা স্বপ্নের সেই ইসলামি দেশ আজ তার কি অবক্ষয়? সত্যিই বড়ই দুঃখজনক এবং অসম্মানজনক।ভাবতে খুব কষ্ট হচ্ছে পাঠক? হ্যা, এটাই সত্য, এটাই হবার কথা ছিল। যে রাষ্ট্রের জন্ম একটা অলীক কল্পনা দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে সেখানে এর থেকে আর কি আশা করছেন? পৃথিবীর চুরান্ত ব্যর্থ রাষ্ট্রটি নাম সেই মদিনা সনদে পরিচালিত পাকিস্তান। যে দেশে, বর্তমান আধুনিক যুগে এসেও চলছে মধ্যযুগীয় আইন। যে আইনের মূল টার্গেট সে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। যাদেরকে দিনের পর দিন ধর্মের নামে মৃত্যুকুপে ঠেলে দিচ্ছে।

পাকিস্থান ব্যর্থতা রাষ্ট্র

এখন পাঠক আপনাদের মনে স্বাভাবিক প্রশ্ন আসবে এই এই ব্যর্থতার সূত্রপাত কি ভাবে শুরু হলো? সমযটা ছিলো ১৯৭৮ সাল জিয়াউর হক এর শাসনামল, তার শাসনামলই প্রবর্তন হয় পাকিস্থানে একের পর এক ধর্মীয় কট্টর আইন।তিনি দেশের প্রচালিত আইনকে ‍বৃদ্ধ আঙ্গুল দেখিয়ে প্রবর্তন করতে থাকে একের পর এক শরিয়তি আইন। যেমন চোখের বদলে চোখ, প্রকাশ্যে ফাঁসি, পাহাত কাঁটা ইত্যাদি। এই সকল শরিয়তি আইন প্রবর্তন করে কার্যত তিনি পাকিস্থানে মধ্যযুগীয় শাসন ব্যবস্থা চালু করেন।তার সেই আইন গুলো মধ্যে অন্যতম ছিল “ব্ল্যাসফেমি’’ বা ধর্মদ্রোহিতার আইন। “ব্ল্যাসফেমি’’ আইন অনুযায়ী ইসলাম বা ইসলামের নবীকে কেউ যদি সমালোচনা করে তবে ব্যক্তিকে রাষ্ট্র সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড সুনিশ্চিত করবে।যার ফলে কি হলো, সাধারণ মুসলমান সুকৌশলে এই আইনটা সংখ্যালঘু মানুষের উপর প্রয়োগ করতে শুরু করে যা বর্তমান।এই আইনে দ্ধারায় সংখ্যালঘু পাশা,পাশি সাধারণ মুসলমানরা অনেক সময় নির্যাতন হতে হয়েছে। প্রধানত হিন্দু, খ্রিষ্টান, শিখ প্রভৃতি ধর্মের মানুষকে টার্গেট করে এই আইনের দ্বারায় মৃত্যুমুখে ঠেলে দিয়া হয়।

ধরুন আপনি রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছেন। আপনার সাথে রাস্তাই কারুর সাথে কোন বিষয় নিয়ে ঝগড়া বাদল এবং পরে তা মিটেও গেল।এখন ব্যাক্তি কিছু দিন পর বা পরের দিন আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনলেন যে, তিনি শুনেছেন আপনি ইসলাম নবীর সমালোচনা বা নবীকে নিয়ে বিরুপ মন্তব্য করেছেন; ব্যাস আর কি? আপনার বিরুদ্ধে আর কিছু প্রযোজন হবে না। এটুকু আপনাকে ফাঁসিতে ঝোলানোর জন্য যথেষ্ঠ।এটাই হলো; ইহাই সহি ইসলামিক রাষ্ট্র পাকিস্তানের বিচার ব্যবস্থা! এমন এক আইন যে আপনি যত বড়ই নেত, মহান, সম্মানিও মানুষ হন না কেন। আপনাকে ইসলাম নবীর উপর বাধ্যতামূলক সম্মান এবং তার স্বীকৃতি প্রদর্শন না করার কোন সুযোগ নাই।এ ব্যতীত যদি কেউ আপনার বিরুদ্ধে ইসলাম নবী বিরুদ্ধে নিন্দাবাচক কথা বলেছেন, অভিযোগ আনে তবে এটা আপনার জীবন শেষ করার জন্য যথেষ্ঠ। যারা ফলে আপনি দুই পাযে জানোয়ারের হাতে আথাবা রাষ্ট্রিয় যন্ত্রের হাতে যে কোন সময় প্রাণ হারাতে পারেন।

হতভাগী আসিয়া বিবির কথা:

ভাবেই পাকিস্থানে মারা হয়েছে কত শত নিরীহ মানুষকে তার কোন হিসাব নাই। যার প্রতি ফলন আমরা বর্তমানে বাংলাদেশে দেখেছি।মনে আছে; সেই দুর্ভাগা ছেলেটা মশাল খানের কথা যাকে, ধর্মানুভূতির আঘাতের কারণে এক দল দু পায়ে জানোয়ার অনেকটা দেখতে মানুষের মতন পিটিয়ে এবং পরে গুলি করে মৃত্যুর ঘরে পাঠিয়ে দিয়েছিল।আজ তেমনি আর এক হতভাগা নারীর গল্প শুনাব আপনাদের। পুরো নাম আসিয়া নৌরিন সংক্ষেপে আসিয়া বিবি। বর্তমান সময়ের এক আলোচিত হতভাগ্য পাকিস্থানি খ্রিষ্টান নারী।

ঘটনার সূত্রপাত:

সময় টা ২০০৯ সাল ১৪ জুন কোন খবরের সূত্রে দিন আসিয়া প্রতিবেশি সাথে ফল পড়ছিল আসিয়া বিবি এই সময় বালতি থেকে একটি কাপ ব্যবহার করে জল খান তাতে ওই মহিলারা দাবি করেন পানি অপবিত্র হয়ে গেছে এই নিয়ে বিবাদ ঝগড়া দেখা যায়। আবার কোন খবরে সূত্রে প্রতিবেশি তিন মুসলিম মহিলা সাথে জমিতে পানি দিয়া নিয়ে গ্রাম্য ঝগড়া বাদে। খবরে প্রকাশ ঝগড়ার মাঝে সন্তানের মা আসিয়া, ইসলামে নবী মহম্মদের নামে অবমাননা কর কথা বলেছেন এই অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে। এই ঘটনার পর এক গ্রামের সালিশীতে জুন মাসের ১৯ তারিখ সে নাকি তার সব অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমাও চেয়েছে নেওয়। ব্যাস,আর কি? এবার দাও ঝুলিয়ে! যার দরুন ২০১০ সাল থেকে আসিয়া নামে সেই হতভাগ্য নারী জেল খাটছে।প্রথম দিকে সে দোষী সাব্যস্ত না হলেও পরবর্তীতে সে লাহোর হাই কোটে দোষী সাব্যস্ত হয়। যার ফলে সাজা হিসাবে তার ফাঁসির হুকুম হয়। সালমান তাসীর ১১ সালের দিকে আসিয়া পক্ষে কথা বলেলে তাকে গুলি করে তার দেহরক্ষীর। যে সালমান তাসীর ছিলেন পাঞ্জাব গভর্নর। যদিও ২০১৬ সালে দিকে সেই দেহরক্ষী মুমতাজ কাদরীরে ফাঁসির হয়। এখন কট্টরপন্থীদের কাছে এই কাদরি শহীদের মর্যাদা পাচ্ছেন।

তার আইনজীবী শেষ ভরসা হিসাবে, দেশের সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেন ।তিন সদস্য বিচারকের বেঞ্চ ১৮ সালে অক্টোবরের তারিখে বসলে দেখে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের কোন সত্যতা নাই। যার দরুন ২০১৮ সালে অক্টোবরের তারিখে সর্বোচ্চ আদালতে এই মামলা থেকে আসিয়াকে অব্যহতি দিয়েছে।পাকিস্থানে ধর্মের অবমাননার ভয় তো টাই যে, এই মামলার তিন জন বিচারকে এক জন ২০১৬ সালে এসে মামলা থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়।যার জন্য এই মামলা ফলা, ফল আসতে এত সময় লাগল।

কারা এই অভিযোগ করেছিল?

আসিয়া বিরুদ্ধে অভিযোগের সাক্ষী দাতার হলেন দুজন একজন মাফিয়া বিবি আর একজন আসমা বিবি। তারা দাবি করেছেন যে আসিয়া নবী এবং ইসলামে বিরুদ্ধে কুবাক্য ব্যবহার করেছে।যার উপর ভিক্তি করে গ্রামের সালিশ হয়। ক্কারী মহম্মদ সালাম নামের একজ সাক্ষী দিয়েছেন। যিনি একজন ধর্মীয় নেতা তবে ওনি নিজে শুনেনি ওনি শুনেছে দুই মহিলা থেকে।যার দরুন তিনি পুলিশের কাছে আভিযোগ দায়ের করেন।পরে পুলিশ আর একজনের সাক্ষ্য খাড়ার করেন যার নাম আফজাল।আফজাল দাবি করেন তিনি আসিয়ার মুখেই শুনেছে।আমি যখন এই বিষয়ে জানার জন্য খোজ করছিলাম গুগলে। তখন আমার সামানে আসে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ জাস্টিস এর একটি প্রশ্নমালা এবং তার বাখ্যার। সেই প্রশ্নমালার ইন্টারনেট ক্লিক করে অনুলিপিটা আপনারা চাইলে দেখে নিতে পারেন।

আসিযার স্বামী আশিক মাসিহ রায়ে দিবার পর তিনি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। তবে তারিখের রায়ের পর থেকে পাকিস্থানের বড়, বড় শহরে গুলো তুমুল বিক্ষোভ চলছে এই রায়ের বিরুদ্ধে। যে সকল বিচারপতিরা আসিয়ার আইনজীবীর এই রায় দিয়েছে তাদের মৃত্যু চেয়ে পাকিস্তানে প্রকাশ্যে কট্টরপন্থী দলগুলি তুমুল অশান্তি শুরু করেছে। পরিস্থিরি চাপে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন আসিয়ার আইনজীবী সাইফুল মুলুক।সাইফুল মুলুক নেদারল্যান্ডসে থেকে বলেছেন যদি সরাকর তার নিরাপত্তা দেওয় তিনি এই মামলা আবারো লড়তে চান।তিনি আরো দাবি করেছে সরকার দিন,দিন কট্টরপন্থী দিকে ঝুঁকে পড়ছে।আসিয়া মুক্তির পর সংবাদ মাধ্যমে জানানতিনি বিশ্বাসই করতে পারছেন না। যে তিনি দীর্ঘ আট বছর পর জেলের বাইরে।

শেষ পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারবে কি

খাদিম হুসেইন রিজভী তেহরিকলাবায়েক পাকিস্তান নামে এক কট্টরপন্থী সংগঠন প্রধান। তিনি হুঁশিয়ারি করে বলেন যদি এই রায় কার্যকর হয়। তবে তিনি সকল নবী প্রেমি পাকিস্তানিদের নিয়ে এই রায়ের বিরুদ্ধে সমস্ত দেশ অচল করে দিবার আন্দোলনে নামবে। জামায়াতউলেমাইসলাম এর প্রধান ফজলুল রহমান, লস্করতৈয়বার প্রধান হাফিজ সাইদ, জামায়েতআহলে হাদিস প্রমুখ ইসলামি কট্টরপন্থী দলগুলি একই ধরণে হুঁশিয়ারি দিয়েছে।রাযের দিন থেকে পাকিস্থানের বড় শহর গুলিতে অবরোধ চলছে।সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে জন্য নেট, মোবাইল সেবা সাময়িক বন্ধ করে দেওয়।শেষমেষ দেখা যাচ্ছে, প্রথম দিকে সরকার এর বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নিলেও এখন নির্লজ্জভাবে আত্মসমর্পণ পথে বেছে নিচ্ছে। আসিয়া বিবি যাতে দেশের বাইরে না যেতে পারে তার জন্য কট্টরপন্থীরা আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছে।

জানি না আসিয়া এবং তার পরিবার শেষ পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারবে কি না।হয় তো আমার মত আপনারাও এই দুর্ভাগ্যের পূর্বাপর জানেন না। কোর্টের রায় আসিয়ার পক্ষে গেলেও এখনো তারে সেই অন্ধকার জেলে পচে মরতে হচ্ছে। সকল ধার্মিকদের কাছে আমার একটা বিনিত প্রশ্নএক জন সাধারণ নিরীহ মহিলার কথায় আপনার ধর্ম বিশ্বাস মাটিতে লুটিয়ে যায়? ধর্ম রক্ষার নামে কোটি কোটি মানুষের এই হিংস্র রুপ আর যায় হোক পৃথিবীর বিন্দু মাত্র শান্তি আসবে কি? বাংলাদেশেও সরকার এই ‘ব্যালেন্স’ করে চলা নীতি গ্রহণ করেছে। দেশ দেশের মানুষকে বলছি ভাবে ব্যালেন্স করে ভালো কিছু অর্জন হবে না; বড় উদাহরণপাকিস্তান। ডায়ারিয়া হলে তার জন্য সালাইন খাওয়াতে হয়। তার জন্য ঝা ফূ দিয়ে ভালো কিছু পাওয়া যায় না।

তথ্যসূত্র:-

. https://bn.wikipedia.org

. https://eisamay.indiatimes.com/

. https://www.dawn.com/

. https://timesofindia.indiatimes.com

. http://istishon.blog/node/26022

https://www.dawn.com/live-blog/

. https://www.bbc.com/news/world-asia-46040515

. ইসলামাবাদ সমেত পুরো দেশ অচল করতে তেহরিক নালায়েক থুক্কু লাব্বায়েক দলের বিক্ষোভের খবর,একদম সহি সূত্র ধরে https://www.pakistantoday.com.pk/2018/10/31/traffic-jam-in-islamabad-as-tlp-workers-stage-sit-in/

. দেশ অচলের খবর মানে ভিডিও দেখতে এই সুত্রে দেখুন https://www.geo.tv/latest/216749-asia-bibi-acquittal-tehreek-e-labbaik-pakistan-tlp-protests-in-various-cities-across-pakistan

১০. আসিয়া বিবির গপ্প:- আজিজুল সাহাজি।

১১. আসিয়া বিবির মৃত্যুদন্ড বাতিল:- মুহাম্মদ আবদুল কাইয়ুম।

লেখক-রক্তিম বিপ্লব।

যদি আপনি মনে করেন এটা মানুষের জানা উচিৎ তবে দয়া করে শিয়ার করুন।

[kkstarratings]