৭১ এর মিথ্যাচার -জিন্নাহর বায়বীয় রাষ্ট্র কাঠামোর ভণ্ডামির উপাখ্যান।

৭১ এর মিথ্যাচার -জিন্নাহর বায়বীয় রাষ্ট্র কাঠামোর ভণ্ডামির উপাখ্যান ‘‘কি ঘর বানাইলা জিন্নাহ শুন্যের মাঝারে’’ একাত্তরের সময় পশ্চিম পাকিস্তানের যা আজকের পাকিস্থান, তার সেই সময়কার অবস্থান নিয়ে কিছু কথা । সবাইকে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সেই বিজয়ের শুভেচ্ছা জানিয়ে এই লেখা শুরু করছি। পেটের দায়ে কাজের সন্ধানে সময় করে উঠতে পারিনি বলেই, বাংলাদেশের বিজয় দিবসের পর এই লেখা সবার সামনে কিছু কথা তুলে ধরা চেস্টা করলাম।

এক বঙ্গ সন্তান আমি তাই এই লেখাটি আমার দায়িত্ব বলে মনে করি। লেখাটি বিজয় দিবসের পর প্রকাশ করার জন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। এ বিজয় দিবসে না হলেও পরে বিজয় দিবসে এই লেখাটি পড়ে একটা উদ্দেশ্য হয়তো সাধন হবে। ১৬ ই ডিসেম্বর অথবা ২৬ এ মার্চ অনেক ছাগ সন্তান তাদের পিতৃরূপ দেশটির জন্য কলঙ্কময় দিনের জন্য শীতঘুমে থাকে। তাই তারা পিতৃরূপ দেশটির জন্য বহু মিথ্যাচার নাজিল করে থাকে। সেই সকল ছাগ সন্তানদের জন্য আমার আজকের এই লেখা।

প্রযোজনে ঐ দিন গুলোতে তারা ম্যাৎকার করলেই আমার এই লেখা হাতে ধরিয়ে দিন। আমরা জানি ৭১ এ যুদ্ধ শেষ হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর আসলে যুদ্ধ শেষ হয়েছিল ১৭ ডিসেম্বর,এক দিন পরে মানে আক্ষরিক অর্থে সম্মুখ সমরের শেষ ভাগে। সেই পবিত্র মহান সেনাবাহিনী ১৬ তারিখ বুঝতে পারেনি যে তাদের পরাজয় হয়েছে। তাই তারা পশ্চিম প্রান্তের রণাঙ্গনে আরো এক দিন বেশি প্যাদানি খেয়েছিল।

আজ আমি আমার এই লেখার মধ্যে সেই পশ্চিম প্রান্তের প্যাদানি খাওয়ার উপর মূলত আলোচনা করব। বর্তমানে আমরা নেটের কল্যাণে বিবিধ উৎস থেকে সেই ৭১ সালের অনেক বিষয় জানি। তাই আমি আজ সেই জানা বিষয় আপনাদের কাছে তুলে ধরব না। বরং আজ সম্পূর্ণ নতুন বিষয়। তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান এবং আজকের পাকিস্তানের (এখনো পর্যন্ত ) এর সংবাদ মাধ্যমের অবস্থা কি ছিল সেটাই তুলে ধরবো।

সাধারণ পাকিস্তানের মানুষের কাছে কতটা সত্য খবর সে দিন পৌঁছালি।

আপনি আমি হয় তো পূর্ব রণাঙ্গনের কম বেশি খবর রাখছিলাম সে দিন কিন্তু একই সময়ে ইয়াহিয়ারা পশ্চিম রণাঙ্গনে কি করছে তার খবর কি রেখেছিলেন? কারন তারা এবং বাকিরা তো কালো এবং নিচু জাতের বাঙালি ছিল অতীব বর্জনীয় একটি জাত।

তাদের নিজেদের ভূমি আর আজীবন লালিত স্বপ্ন কাশ্মীর ইত্যাদি দখলের কাজ করতে গিয়ে কি করেছিল সে দিন? ভারতের দু পাশে পাক পিয়ারু মানব তার সাথে যোগ হওয়া কিছু আলোকপ্রাপ্ত মানুষ আজও ধারণা করে সে দিন ভারত ওই যুদ্ধ শুরু করেছিল।

 

না, সে দিনও পাকিরা ওটাও ১৯৬৫,১৯৪৮ এর মতই আগে শুরু করেছিল। পাকিস্তানের সিআইএ এর ৯ই নভেম্বর করা একটি রিপোর্টের ভিত্তিতে  ইয়াহিয়ার নির্দেশে এ ৩ ডিসেম্বর পাকিস্তানের বায়ু সেনা ভারতের উপর অতর্কিত আক্রমণ করে বসল। যার নাম দিয়েছিল ‘‘অপারেশন চেঙ্গিজ খান”।

এটা পাকিস্তান এর ভারতের উপর অতর্কিত আক্রমণ প্রথম না। এর আগেও August-1965 সালে “অপারেশন জিব্রাল্টার” আইয়ুব খান চালিয়েছিল। তাই ভারত আগে থেকে সতর্ক ছিল। ইয়াহিয়ার ‘‘অপারেশন চেঙ্গিজ খান” এর পরিবর্তে ভারত “অপারেশন ট্রাইডেন্“ শুরু করেছিল।

১। পাকিস্তান এর অতর্কিত আক্রমন ছিল কাশ্মীর এবং রাজস্থানের বিবিধ সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে। পাকিস্তানের আক্রমনের পরপরি ভারতীয় বায়ু সেনা পাল্টা জবাব দিতে শুরু করে। সেই সাথে ভারতীয় নৌবাহিনী পাকিস্তানের করাচির হাল খারাপ করে দেয়।

পাকিস্তানের PNS খাইবার এবং মুহাফিজ এর শুইয়ে দেওয়ার কাজ করে দেয় ভারতীয় বাহিনি ৪ আর ৫ ডিসেম্বর এর মধ্যেই। ওদিকে বঙ্গোপসাগরে পাকিস্তানি সাবমেরিন PNS Ghazi জিহাদ করতে ছুটে এসেছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় তার সলিল সমাধি করিয়ে দেয় ভারতের বিমানবাহী রণতরী বিক্রান্ত। অবশ্য ভারতীয় নৌবাহিনি একটা ফ্রিগেট INS Khukri হারাই করাচির কাছে সম্মুখ সমরে।

২। কাশ্মীর কে ভারতের মূল ভূখণ্ডের সংযোগ থেকে আলাদা করতে পাকিস্তান তিনটি ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশন আর একটি সশস্ত্র ব্রিগেডের নিয়ে চেষ্টা করেছিল ৩ ডিসেম্বর ৭১ সালে। এই  ছাম্ব, রবি-চিনাব করিডোর দিয়ে এর আগে ১৯৬৫ তে পাকিস্তান প্রবেশের চেষ্টা করেছিল সেটা ব্যর্থ হয়েছিল।

ঠিক আবার সেই ব্যর্থতার চুনকালি, কিন্তু ভারতের সেনারা সেটা প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়েছিল। পাকিস্তান সেনার সারা জীবন জন্য মনে রাখবে এই ছাম্ব, রবি-চিনাব করিডোরেএর কোনো গণ প্রতিরোধ ছিল না তবু পাকিস্তানিরা যে আসলে মারখোর এর সন্তান তা আবার প্রমান হয়েছিল সে দিন।

এর আগে ১৯৬৫তে হয়েছিল। এই পর্যন্ত পড়ার পর কারো যদি পাক অনুভূতিতে আঘাত লাগে সম্পূর্ণ সহীহ পাক দেশের ডন কাগজের সূত্রটি দেখে নিতে পারেন।

৩। রাজস্থানের জয়সলমীর দখল করার জন্য ইয়াহিয়া একটা গোটা ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশন পাঠায়। যে ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশন দল ৯০ মাইল মরুভুমি পথ পাড়ি দেয় এই মহান জিহাদের জন্য।

উর্বর মস্তিষ্কের বুদ্ধি না হলে এই কাজ কেউ করে ? যা হবার তাই হল, সেনা বহনকারী গাড়ি গুলো ছিল সাধারণ আর বালিতে সাধারণ গাড়ির যা হয় তাই হলো কিছু দূর আসার পর সব বিকল হয়ে পড়ল। যেই একমাত্র T-59 ট্যাংক এর বাহিনী শেষ পর্যন্ত পৌছাল, ঠিক তখনি ভারতীয় বায়ু সেনা বহর স্রেফ উড়ে যায় বাকিটা ইতিহাস।

আসলে যুদ্ধ জন্য ঘোড়া বা উটের পিঠে চড়ার দিন যে শেষ হয়ে গিয়েছিল সেটা ঐ মোটা মাথায় ঢোকেনি। যুদ্ধ যে মাথা দিয়ে করতে হয় সেটা মোটা মাথায় ঢোকেনি সে দিন। যার ফলাফল ইতিহাসে লেখা আছে। এই পর্যন্ত পড়ার পর যে সকল পাকি পিয়ারু মানুষের ওটা মিথ্যা বলে নিচের দিকে পড়তে যাচ্ছে তাদের জন্য  পবিত্রদেশের একটি সূত্র দিলাম।

৪। অপর দিকে লেফটেনেন্ট জেনারেল কে কে সিং এর নেতৃত্বে পশ্চিম রণাঙ্গনে শোচনীয় মার খায় পাকি-বাইনি। পাকিস্তানের ১০০ উপরে সেনা অফিসার এই যুদ্ধক্ষেত্রে মারা যায়। পশ্চিমে ভারতীয় সেনা পাকিস্তানের একটি ঘাঁটি দখল করে রাখে সেই ঘাঁটিটি ছাড়ানোর জন্য পাকিস্তানের সেনা বাহিনীর খুব চেস্টা চাইলাই।

আর তার জন্য পরপর দুইটি ইউনিট সেই ঘাঁটি দিকে পাঠায় কিন্তু তাদের ভাগ্য সহয় না থাকায় দুটো ইউনিট এর বেহেস্ত প্রাপ্তি হয় ভারতীয় ট্যাঙ্কের হাতে। একদিকে বর্তমান বাংলাদেশে পাক বাহিনীর আত্মসমর্পণ চলছে অন্য দিকে ভারতের পশ্চিম প্রান্তে পাক বাহিনীর মরিয়া চেষ্টা তাদের ঘাঁটি পুনরায় উদ্দারের।

সর্বশেষ ফলাফল দাড়ায় ১৬ই ডিসেম্বর প্রথম ইউনিট উপরে যায় এবং তার পরে দ্বিতীয় ইউনিট। এক দিকে পূর্ব রণাঙ্গনে পাক-বাঘ রূপ পরিবর্তন করে পাঠা বলি হয়ে গিয়েছে। অন্য দিকে ঘাঁটি উদ্ধারের আপ্রাণ চেষ্টা। স্পষ্টতই যুদ্ধবিরতির কোনো ধার ধারেনি। ফলাফল তো সবার জানা তবুও পাক দেশের একটি সত্যতার সূত্র দিলাম।

৫। যখন ৩ ডিসেম্বর পাক বাহিনী যুদ্ধ শুরু করে প্রথমে তাদের লক্ষ্য ছিল গুজরাটের ওখা বন্দরে দিকে। কারণ ঐ অঞ্চলের খনিজ তেলের ভান্ডারে যদি আগুন লাগানো যায়। তবে ভারতে ব্যাপক ক্ষতি সাধণ করা যাবে। কিন্ত বিধির বাম এই হামলা তিন দিন পর ৮ ডিসেম্বর ভারতীয় বাহিনী অপারেশন পাইথন শুরু করে।

যার ফলে পাকিস্তানের তিনটি বাণিজ্যিক জাহাজ একদম ধ্বংস করে দেয়। এছাড়াও করাচি বন্দর এর ২২ টি তেলের গুদাম নষ্ট হয় ভারতের বাহিনীর আক্রমনে। যাদের এটি শুনে মানতে কষ্ট হচ্ছে তাদের জন্য সেই পাক-দ্যাশের সূত্র থাকল।

তবে পূর্ব প্রান্তের রমনা ময়দানের কথা না বললেই অনেক কিছু বাকি থেকে যাবে। সেই ঐতিহাসিক দিনটিতে পাক-পাঠার আত্বসমর্পন দেখার জন্য প্রায় ১০ লক্ষ বাঙ্গালি একত্রিত হয়েছিল। এখানে মজার বিষয় পাক ৯৩ হাজার সেনা এবং তাদের ঘিরে রাখা ভারতীয় সেনা কোন অংশে উপস্থিত বাঙালিদের থেকে কম ছিলো না।

কিছু না সে দিন যদি বাঙ্গালি ক্ষিপ্ত হত তবে কেউ সে দিন পাক- বাহিনীকে জনতার রোষের হাত থেকে তাদের রক্ষা করতে পারত না। সে দিন সেই উচু জাতের মানুষ ভাবা ঐ মারখোর এর সন্তান রা দেখেছিল কি ভাবে বাঙালি সংযম দেখিয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধে ইতিহাসে কোন মিডিয়া এই বাঙ্গালি সংযত দিকটি কখনোই তুলে ধরে না। হামুদুর রহমান কমিশনের কথা অনুযায়ী ৯০হাজার ৩৬৮ জনের অধিকাংশ কিন্তু নিয়মিত সৈন্য ছিল পাক বাহিনীতে।  সূত্র- পাকিস্থানি দিচ্ছি।

কিন্তু সেই ৩ থেকে ১৬ তারিখ পর্যন্ত পাক পত্রিকা ডন এক এর পর এক মিথ্যাচার করে গিয়েছে। ডন পত্রিকার সেই দিন গুলো  মিথ্যাচার ভিতরে ভিতরে দিওয়া হল। যেখানে দেখবেন  মিথ্যা ভাবে দিনের পর দিন লিখে গিয়েছে ভারতের সর্বনাশের কথা আদতে যা সত্য না।

আমার আপনাদের নতুন করে কিছু বলার দরকার হবে না শুধু আপনারা পত্রিকার ছবি এবং লিং গুলো মিলিয়ে দেখলেই হবে।

৭১ এর আগে ভুট্টো বাঙালি প্রতিবাদী জনতা কে ঢাকার একটি সমাবেশে বলেছিল “শুয়ার কি বাচ্চে জাহান্নাম মে যাও”। এই জাহান্নাম যে কি জিনিস সেটা তিনি ফাঁসির মাধ্যমে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিল। শুধু খারাপ লাগে যখন দেখি কিছু পাক বেজন্মা যখন সেই নরপশুদের হয়ে কথা বলে।

না আমি তথ্যসূত্র ছাড়া কোন গাল গল্প বলবো না তাই একদম শেষ পাতে দু একটা ভিডিও প্রতিবেদন দিলাম। ভুট্টোর যে তত্কালীন পুর্বপাকিস্থানের এক জনসভায় বিক্ষুব্ধ বাঙালিদের বলেছিল “ শুয়ার কে বাচ্চে জাহান্নাম মে যাও” যারা নিজেদের বাঘ ভাবত তারা কিভাবে নির্লজ্জ মতন অত্বসমর্পর্ন করেছিল সেই ভিডিও।

ইন্টারনেট আর প্রযুক্তি খুব পাজি জিনিস কোনো বিষয় এখন আর পর্দার ভিতরে রাখতে দেয় না। তথ্যসূত্র গুলি লেখার ভিতরে দিলাম। ছবির পরিচিতি ছবির সাথে জুড়ে দিলাম। সবকিছু ওই পাকিস্থানের কাগজের সেই সময়ের আর্কাইভ থেকে নেওয়া।