হিন্দু ধর্মের কথা বলতে গেলে প্রথমেই যে দেশটির কথা চলে আসে সেটা হচ্ছে ভারত বর্ষ। একটা সময় এই ভারতবর্ষের যে সংস্কৃতি ছিল সেই সংস্কৃতি চর্চা হতো আফগানিস্তান থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত। এমনকি বর্তমানে কিছু প্রত্নতত্ত্ববিদরা ধারণা পশ্চিমে মধ্যপ্রাচ্যসহ জার্মানিতেও হিন্দু ধর্মের বিস্তার ছিল। বর্তমান পৃথিবীতে হিন্দু প্রধান যে চারটি রাষ্ট্র আছে তার মধ্যে মধ্যে মরিসাস অন্যতম। আমরা এই প্রবন্ধে আজ বিশ্বের অন্যতম সনাতন প্রধান দেশ মরিশাস সম্পর্কে জানব।
একটা সময় মরিশাস দেশটি যুক্তরাজ্যের শাসনব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত ছিল। যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে ১৯৬৮সালের ১২ ই মার্চ মরিশাস রাষ্ট্রটি একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ব্রিটিশরা চলে গেলেও মরিশাসে একটি ব্রিটিশ রানীর পথ থাকে। ১৯৯২ সালে বৃটিশ রানীর রাষ্ট্রে প্রধানের পদ বিলুপ্ত হয়। এখানে একটা জিনিস উল্লেখ করা খুবই জরুরী, সেটা হল আফ্রিকার কথা আসলেই আমাদের মাথায় সর্বপ্রথম যে বিষয়টি আসে সেটি হচ্ছে দরিদ্রতা। তবে এখানে মরিসাস আফ্রিকার একটা দেশ হল আফ্রিকার মধ্যে অন্যতম ধনী দেশ।
বর্তমানে এই দেশটির প্রধানমন্ত্রী হল একজন সনাতন ধর্মাবলম্বী। আফ্রিকা অঞ্চলের দেশগুলো দরিদ্র হওয়ার পিছনে একটা বড় কারণ হচ্ছে দুর্নীতি এবং সন্ত্রাসী। কিন্তু এখানে উল্লেখ করার মতো বিষয় হলো মরিশাসে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবাদের আকার নেই বললেই চলে। দেশটির বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১৩ লক্ষ তার মধ্যে প্রায় ৭.৫ লক্ষ মানুষ “সনাতন ধর্ম হিন্দু” ধর্মাবলম্বী। দেশটির বর্তমান মাথাপিছু আয় ১৬,৭৭৭ মার্কিন ডলার। (এখানে একটু বলে রাখি বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ১,৩০০ মার্কিন ডলার)। দেশটিতে “সনাতন ধর্ম হিন্দু”ধর্মাবলম্বীর সে দেশের জনসংখ্যার ৫৭.৫ % এবং খ্রিষ্টান ৩২ % আর অন্যান্য ধর্মাবলম্বী ১০.৫ %। এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে আগামী 25 বছরের মধ্যে মরিশাসে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা 90 পার্সেন্ট হয়ে যাবে। ওই প্রতিবেদনে এর কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে একটা বিষয় উঠে এসেছে, সেটা হচ্ছে হিন্দুধর্ম মরিশাসে শান্তি এবং মানবতার ধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
ভারত-বাংলাদেশ নেপালের পরেই যদি মন্দিরের দেশ বলা হয় সেটা হচ্ছে মরিশাস। মরিশাসে এমন কিছু সুন্দর মন্দির রয়েছে যেটা দেখার জন্য প্রতিবছর অসংখ্য পর্যটক সেখানে ভিড় জমায়। তবে এখানে একটা কথা ছোট্ট করে বলা উচিত সেটা হলো মরিশাসে হিন্দু জনসংখ্যা বেশি হলেও অন্য যে সমস্ত ধর্ম অবলম্বনে আছে তারাও হিন্দু অনুষ্ঠানে ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করে। দেশটির অন্যতম আয়ের খাত হচ্ছে পর্যটক। আর এই সমস্ত পর্যটক খাতের অন্যতম পর্যটক স্থান গুলো স্থানীয় হিন্দু মন্দির গুলো। মরিশাস এর মন্দির গুলো অনেক সুন্দরময় যার কারণে প্রতি বছর প্রচুর পর্যটক এই দেশটিতে আসে। তবেই দেশটির জনসংখ্যা মুসলিম বা অন্য সম্প্রদায়ের কম হলেও এখানে রাষ্ট্রপতি বর্তমানে মুসলিম মহিলা। আমিনাহ গুরীব ফাকিম নামের এক মুসলিম মহিলা হিন্দুপ্রধান রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি!!
যেটা আসলেই উল্লেখ করার মতো বিষয়। বিশ্বের আর কোথাও এ ধরনের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে রাষ্ট্রপতি এটা ভাবা সম্ভব না। বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের এর উল্টোটাই আমরা দেখি। এই হিন্দু প্রধান দেশের রাষ্ট্রপতি সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে হয়েছে অপরদিকে বাংলাদেশ পাকিস্তানের সংখ্যালঘু নির্যাতনের ছোট্ট একটা পরিসংখ্যান নিচে দিয়ে দিলাম। বাংলাদেশঃ প্রতিনিয়ত চলছে হিন্দু বাড়ি ঘর মন্দিরে হামলা। ২০১৩ সাল ও ২০১৪সাল। পাকিস্তান, প্রতি বছরে হাজার হাজার হিন্দু মেয়েকে অপহরন করে জোর করে মুসলিম বানানো হয়। সূত্র,আল জাজিরা। এখানে আফগানিস্তানে হেলমান্দ প্রদেশে হিন্দুদের স্কুলে যেতে দেয়া হয় না। সৌদি আরব হিন্দুদের ধর্ম পালন করতে দেয়া হয় না।পালন করলে ফাঁসি যদিও সৌদিতে ১.১% হিন্দু ও ৫.৫% খ্রিস্টান আছে। সূত্র:-pew research center,2011
উপরে আমরা একটা হিন্দু প্রধান দেশের সংখ্যালঘুদের প্রেক্ষাপট এবং একটা সংখ্যালঘু হিন্দু প্দেশের হিন্দুদের অবস্থানের সামান্য বর্ণনা দেয়া হয়েছে। আমরা আবার মূল আলোচনায় ফিরে আসি। আজ এই মরিশাসে হিন্দু প্রধান হওয়ার পিছনে কিছু হিন্দু সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এদের মধ্যে ইসকন এবং আর্য সমাজের বড় ভূমিকা রয়েছে। ছোট্ট পরিসরে এখানে আর্য সমাজ সম্পর্কে কিছু আজ বর্ণনা করছি। অন্য সংগঠনগুলোর ভূমিকা পরবর্তী অন্য কোন লেখায় মরিশাসে হিন্দু সম্প্রদায়ের এই প্রসারণের সম্পর্কে বর্ণনা করব।
পরবতী অংশ পরতে ২ নং পেজে যান নিচ থেকে-