হিন্দু ধর্ম ও বিজ্ঞান : কেন সনাতন ধর্মকে বিজ্ঞান বল হয় ??? জ্ঞান থাকলে জ্ঞানী হওয়া যায়, কিন্তু জ্ঞান না থাকলে? একবার এক ধর্ম নিরপেক্ষ মহিলা সাংবাদিক যিনি সবসময় সনাতন ধর্ম কে ছোট করে দেখান,,, তিনি একবার একজন মহারাজ কে জিজ্ঞাসা করলেন ?
প্রশ্ন: ইসলাম ধর্মের প্রবর্তন কে করেছেন ? উত্তর: প্রফেট মহম্মদ
প্রশ্ন: খ্রিস্টান ধর্মের প্রবর্তন কে করেছেন ? উত্তর : জেসাস ক্রাইস্ট
প্রশ্ন: সনাতন ধর্মের প্রবর্তন কে করেছেন ? উত্তর: স্বামীজী উত্তর না দিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকতে দেখে
মহিলা সাংবাদিক বলল – সনাতন ধর্মের কোন প্রবর্তক নেই, অতএব সনাতন কোন ধর্মই নয়। এবার স্বামীজী বললেন: আপনি একদম ঠিক বলেছেন। সনাতন কোন ধর্ম নয়, এটা বিজ্ঞান ।
মহিলা সাংবাদিক অবাক হয়ে স্বামীজীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো। এবার স্বামীজী ঐ মহিলা সাংবাদিক কে কিছু প্রশ্ন করলেন,,??
পদার্থবিজ্ঞান কে প্রবর্তন করেছেন ? উত্তর: কোন একজন নয়,রসায়ন বিজ্ঞান কে প্রবর্তন করেছেন ? উত্তর: কোন একজন নয় জীববিজ্ঞান কে প্রবর্তন করেছেন ? Ans: কোন একজন নয়।
যা পৃথিবীর সৃষ্টি থেকে ছিল তা কিভাবে কেও প্রবর্তন করতে পারে? প্রবর্তন সেই জিনিস বা বিষয়কে করা যায়, যা পূর্বে ছিলনা। বায়ু, জল, মাটি, আকাশ, আগুন এগুলো কি প্রবর্তন করা যায়? যায় না, কারণ এগুলো পৃথিবী সৃষ্টি থেকে বিভিন্ন অবস্থায় ছিল। অথাৎ এই উপাদন গুলো চির সত্য।
কেউ যদি আপনাকে বলে আমি জল বা মাটি প্রবর্তন করেছি, সেটা কি বিশ্বাস করবেন? জানি উত্তর না। ঠিক তেমনি সত্যকে প্রবর্তন করা যায় না। সত্য তো চিরন্তর। আচ্ছা Religion আর ধর্ম কি এক? জানি আপনার উত্তর হ্যা, কিন্তু দু:খের বিষয় এটা আদও সত্য না। আপনাকে আমাক ভূল শিখানো হয়েছে।
Religion আর ধর্ম কখনোই এক না। Religion শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো দর্শন বা মতদর্শন, আর ধর্ম শব্দের আভিধানিক অর্থ চিরন্তন, অথ্যাৎ চির সত্য (গুন, সাদৃশ্য, ক্ষমতা) যা ছিল, আছে, থাকবে। এক কথায় যা না থাকলে ঐ (যে কোন জিনিস বা বস্তু) বস্তুর অস্তিত্ব থাকে না, তাকে ঐ বস্তুর ধর্ম বলে।
যেমন জলে ধর্ম তারল্য বা নিম্নগামী। আগুনের ধর্ম তপ্ত উদ্ধগামী। কোন কারনে যদি এই গুন গুলো শেষ হয়ে যায়, তখন জল এবং আগুন কিছুই থাকবেনা।
এগুগো কোনটাই কি প্রবর্তন করা যায় ? মোটেও না, সনাতন ধর্মের মধ্যে বহু মত দর্শন বিদ্যমান। সনাতন দর্শন সমূহের একটি অংশ যা প্রাচীন বেদকে জ্ঞানের প্রামাণ্য ও গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসাবে স্বীকার করে। মূল ধারার হিন্দু দর্শনের মধ্যে ছয়টি দার্শনিক শাখা বিদ্যমান, যাকে একত্রে ষড়দর্শন বলা হয়। এগুলো হল: সাংখ্য, যোগ, ন্যায়, বৈশেষিক, মীমাংসা ও বেদান্ত। ষড়দর্শন বেদের প্রামাণ্যতা স্বীকার করে বলে একে আস্তিক দর্শনও বলা হয়।
প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় ভারতে আরও কয়েকটি দার্শনিক শাখার উদ্ভব ঘটেছিল যেগুলো বেদকে অস্বীকার করেলেও, তারাও কিছুটা একই ধরনের দার্শনিক ধারণা প্রচার করেছিল। এগুলো নাস্তিক দর্শন নামে পরিচিত।
ভারতীয় নাস্তিক দর্শনগুলো হল: বৌদ্ধধর্ম, জৈনধর্ম, চার্বাক, আজীবক এবং অন্যান্য। তবে এগুলো হিন্দু দর্শনের অংশ । হিন্দু দর্শন বলতে কেবল আস্তিক দর্শনকেই বুঝানো হয় না, নাস্তিক দর্শনও। তাই ভারতীয় দর্শনে বৌদ্ধ ধর্ম, জৈন ধর্ম কে আলাদা ধর্ম নয় দর্শন বলা হয়। কারণ ধর্ম কি সেটা উপরেই বলে এসেছি। ধর্ম একটাই, দর্শন বহু।
আজ অনেকেই নিজেকে বিজ্ঞানচিন্তা মনষ্ক পরিচয় দিতে গর্ব বোধ করে। কিন্তু দু:খের বিষয় তার আদতেও জানে না এই বিজ্ঞান শব্দটি কি ভাবে আমাদের কাছে এলো। বেদে বহু বার এই শব্দটি আছে। একুটি পড়ুন জানতে পারবেন। শুধু বলি বেদ শব্দের অর্থ জ্ঞান এবং বিজ্ঞান শব্দর অর্থ বিশেষ জ্ঞান।
স্বামীজী আর বললেন: অনেক মানুষ, অনেক বিজ্ঞানী সময়ে সময়ে নিজেদের জ্ঞানের আবিস্কার এর অবদান রেখে গেছেন। ঠিক সনাতনও একই ধারায় বহমান।
হিন্দু ধর্ম হল সেই বিজ্ঞান যেটা আমাদের দেশে ক্রমশ বেড়ে উঠেছে বহু বছর ধরে সাধু সন্ন্যাসী জ্ঞানী মহাত্মাদের সঠিক মার্গ দর্শনে। যেহেতু সনাতন ধর্ম আদি থেকে সেহেতু তার চলার পথে অনেক অবৈজ্ঞানিক বিষয় এখানে অনুপ্রবেশ ঘটেছে,যা সনাতন ধর্ম দ্বারা প্রত্যাক্ষিত।
আর একটা কথা বলি, সাংস্কৃতি ধর্মের অংশ মাত্রা, ধর্ম না। বহু মানুষ এখন ধর্ম বলতে পৈতা, সিঁদুর, শাখা, টিকি, ধাড়ি, টুপি, পোশাকে বোঝে। সত্য কথা বলতে ধর্মে সঙ্গায়, এগুলো কখনোই ধর্ম নয়। যদি কেউ একে ধর্ম বলে তবে সেটা ভূল, বরং Religion, মাজাব,দর্শন, সাংস্কৃতি ইত্যাদি বলা যেতে পারে।
ইসলাম ধর্মের একটাই ধর্ম গ্রন্থ – আল – কোরআন, খ্রিস্টান ধর্মের একটাই ধর্ম গ্রন্থ – বাইবেল ।
বিজ্ঞানের যেমন বহু গ্রন্থ আছে তেমনি সনাতন ধর্মের উপর বহু ধর্ম গ্রন্থ আছে। যা দিয়ে একটা লাইব্রেরি হয়ে যাবে। বিজ্ঞান যেমন সময় উপযোগি জ্ঞান চর্চা করে ঠিক সনাতনও যুগ যুগ ধরে সেই জ্ঞানের চর্চায় করছে। যখনি সনাতনীরা সেই জ্ঞান চর্চা ছেড়ে দিয়েছে, তখনি সনাতনীরা কুসংস্কার অন্ধত্ব হয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
এখানে মানুষকে প্রশ্ন করতে উদ্বুদ্ধ বা উসাহিত করা হয়েছে। গীতার পরমত্মা বলছে, তুমি প্রশ্ন কর। প্রশ্ন ছাড়া কোন কিছু করা না। এমন কি তুমি আমাকে নিয়েও প্রশ্ন করা, যতক্ষুন না তুমি উত্তর পাওয় তোমার অনুসন্ধান চালিয়ে যাও। এর জন্য তোমাকে সাজা পেতে হবেনা। আমাকে ভয় নয়, বন্ধু হিসাবে দেখ। বন্ধু সাজা দেয় না, বন্ধু ভুল শুধরে দেয়। ঠিক বিজ্ঞান একই কথা বলছে প্রশ্ন করা ভয় করনা।
আমার মনে হয় না এর পরেও আপনার সনাতন ধর্মকে একটা বিজ্ঞানসম্মত ধর্ম বলতে দিধা থাকবে।
লেখক-অভিরুপ বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাত বিশ্ববিদ্যালয়।
- সিভি রমন ভারতের গর্ব, চাঁদে পানির আবিষ্কার থেকে শুরু করে ক্যান্সারের তদন্ত পর্যন্ত সিভি রমনের আবিষ্কার।
- Live Cricket Score: টিম ইন্ডিয়াকে বাংলাদেশ থেকে খুব সতর্ক, অ্যাডিলেডের বিখ্যাত সন্ধ্যায় বল অনেক সুইং হবে।
- হিন্দু সৃষ্টিকাল গণনা: বিশ্বের বৃহত্তম এবং বৈজ্ঞানিক সময় গণনা পদ্ধতি।
- হিন্দু ধর্ম ও বিজ্ঞান হিন্দু ধর্ম ও বিজ্ঞান হিন্দু ধর্ম ও বিজ্ঞান হিন্দু ধর্ম ও বিজ্ঞান হিন্দু ধর্ম ও বিজ্ঞান হিন্দু ধর্ম ও বিজ্ঞান