মুসলিম দেশের স্থাপিত বিশ্বের বৃহত্তম ভগবান বিষ্ণু গরুড় মূর্তি। যা স্ট্যাচু অফ লিবার্টি কে হার মানায়। যদি আপনাকে বলা হয় বিশ্বের বুকে সবচেয়ে উঁচু মূর্তি টি কোথায় অবস্থিত এবং নাম কি। তবে আপনি চোখ বুজে বলে দিতে পারবেন নাম এবং স্থানের কথা। কারণ বেশিদিন নয় 2018 সালের 31 অক্টোবর উদ্বোধন হয়েছে আমাদের এই ভারতবর্ষে বিশ্বের সবচাইতে উঁচু মূর্তি। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেতা সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের এই মূর্তিটি ১৮২ মিটার উচ্চতার, নাম ‘স্ট্যাচু অফ ইউনিটি’ বা ‘ঐক্যের মূর্তি’। এই মূর্তিটি উদ্বোধন হওয়ার পূর্বে বিশ্বের সবচাইতে উঁচু মূর্তি ছিল স্টার্ট অফ লিবার্টি।
স্ট্যাচু অফ লিবার্টি উচ্চতা, ৯২.৯৯ মিটার। স্টার্ট অফ লিবার্টি হারমনিয়ে এই বিশ্বের বুকে নতুন নজির তৈরি করল গরুড় বিষ্ণু কাঞ্চনা মূর্তি (অথবা জিডব্লিউকে মূর্তি )। তবে আপনি হয়তো জানলে অবাক হবেন এই বৃহৎ আকৃতির মূর্তিটি ইউরোপ-আমেরিকা বা ভারতবর্ষের নয়। বিশ্বের সবচাইতে বৃহত্তম মুসলিম দেশে এই মূর্তিটি স্থাপিত হয়েছে। হ্যাঁ, আপনি ঠিকই শুনেছেন, বিশ্বের বুকে দ্বিতীয় উঁচু মূর্তি মালিক এখন ইন্দোনেশিয়া।
গরুড় বিষ্ণু কাঞ্চনা মূর্তি (অথবা জিডব্লিউকে মূর্তি ) ১২১ মিটার লম্বা মূর্তিটি, যা ইন্দোনেশিয়ার গরুড় বিষ্ণু কাঞ্চনা কালচারাল পার্কে অবস্থিত। গরুড় বিষ্ণু কাঞ্চনা মূর্তিটি মূলত হিন্দু ধর্মের বিষ্ণুর অবতার মূর্তি।এই বিশাল আকৃতির মূর্তিটি ডিজাইন করেছেন নিওমান নুয়ারতা নামের এক ব্যক্তি। এই বিশাল আকৃতির মূর্তিটি উদ্ধার করা হয় 2018 সেপ্টেম্বর মাসে। মূর্তিটি স্ট্যাচু অফ লিবার্টির থেকে প্রায় ৩০ মিটার উঁচু, কিন্তু লিবার্টি লম্বা ও পাতলা এবং গরুড় প্রায় ততটাই চওড়া যতটা প্রশস্ত – এর পক্ষপ্রসার ৬৪ মি। এই মূর্তিটি ইন্দোনেশিয়ার সবচেয়ে লম্বা মূর্তি হিসেবে নির্মিত হয়েছিল, যা অমৃত অনুসন্ধান সম্পর্কে হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিল। মূর্তিটি পশ্চিম জাভার ৭৫৪ বিচ্ছিন্ন মডিউল এ নির্মিত হয়েছিল এবং তারপর এটি বালির বানদুং এ স্থানান্তরিত হয়েছিল।
ক্রেনের সর্বাধিক লোড মিটমাট করার জন্য মডিউলগুলি ১,৫০০ ছোট টুকরতে কেটে ফেলা হয়েছিল। বিস্ময়কর শিল্পকর্মের উপর স্থাপিত শেষ টুকরাটি তার লেজে ছিল। যা মূর্তির সর্বোচ্চ বিন্দুতে অবস্থিত। গরুড়ের আকৃতি এত জটিল যে প্রকৌশলীরা একে সমর্থনকারী কাঠামোর বিশেষ সংযোজকগুলিকে ডিজাইন করেন।যাতে একই সাথে ১১ টি বড় স্টিলের গার্ডার একসঙ্গে আছে। তবে স্বাভাবিক নির্মাণ জয়েন্টগুলিতে চার বা ছয়টি গার্ডার রয়েছে। গরুড় বিষ্ণু কাঞ্চনা মূর্তিটি ঝড় ও ভূমিকম্প প্রতিরোধের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে এবং পরবর্তী ১০০ বছরের জন্য এটি টিকে থাকার আশা করা হচ্ছে।
সম্পূর্ণ স্মৃতিস্তম্ভটি ২১ তলা ভবনের সমান লম্বা। এটি ইন্দোনেশিয়ার সবচেয়ে ভারী মূর্তি । এর ওজন ৪০০০ টন । শিল্পকর্মটি তামা ও পিতল দিয়ে তৈরি হয়েছে । এটি ২১,০০০ ইস্পাত বার এবং ১৭০,০০০ ব্লোট দ্বারা সমর্থিত। মূর্তিটি তামা এবং পিতলের শিট দিয়ে তৈরি । যাতে একটি স্টেইনলেস স্টিলের ফ্রেম এবং কাঠামোর সাথে একটি ইস্পাত এবং কংক্রিট কোর কলাম আছে। বাইরের আচ্ছাদন ব্যবস্থা ২২০০ মি স্কয়ার ব্যবস্থা। বিষ্ণুর মুকুটটি সোনালি মোজাইক দিয়ে আচ্ছাদিত এবং মূর্তির একটি নিবেদিত আলোক ব্যবস্থা রয়েছে। ভাস্কর্যটি বিল্ডিং বেসের উপরে বসানো। যা একটি রেস্টুরেন্ট, যাদুঘর, এবং দেখার গ্যালারি হিসাবে কাজ করবে।
তবে এখানে উল্লেখ করার মতো বিষয় যে বিশ্বের বড় বড় মিডিয়াগুলো এই মুহূর্তের উদ্বোধন এর কোন নিউজ প্রচার করেনি বললেই চলে। বালি সরকার তাদের পর্যটক শিল্পকে আরো উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের সংস্কৃতির তুলে ধরার চিন্তা থেকেই এই ধরনের মূর্তি তৈরির ভাবনা। 2018 সালে ভারতের যখন সর্দার প্যাটেলের মূর্তি উদ্বোধন হয়। তখন দেশীয় মিডিয়াসহ বিশ্ব মিডিয়ায় এর ব্যাপক সমালোচনা করেছিল। সরকারি মূর্তি স্থাপনের পিছনের পর্যটনশিল্পকে বিকাশের কথা সে সময় বলেছিল। পাশাপাশি সর্দার প্যাটেলের ভারত একিভূত করনের পিছনে যে ভূমিকা ছিল তার প্রতি শ্রদ্ধা থেকে তৈরি করা হয়েছিল।
প্রাচীন বালিতে পসুপ্ত, ভৈরব, শিব সিদান্ত, বৈষ্ণব, বৌদ্ধ, ব্রহ্মা, ঋষি, সরা ও গণপতি – এ নয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের আবাস ছিল। প্রত্যেক সম্প্রদায়ের লোকজন তাঁদের নির্দিষ্ট দেবতার পুজো দিতেন। বালীয় সংস্কৃতির পুরোটাই ভারতীয়, চীনাদের দ্বারা প্রভাবান্বিত। জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে বালি’র সুনাম রয়েছে।প্রাচীন ও আধুনিক নৃত্যকলা, ভাস্কর্য, চিত্রকলা, চামড়া, ধাতবশিল্প ও সঙ্গীতের ন্যায় উচ্চ পর্যায়ের শিল্পকলা এ শহরে বিশেষ গুরুত্বতা পেয়েছে। সাংবার্ষিক ইন্দোনেশীয় আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব এখানে অনুষ্ঠিত হয়। বিংশ শতকের গোড়ার দিকে পর্যটন শিল্পের দিকে ঝুঁকে পড়ে এ শহরটি। সাম্প্রতিককালে বালিতে ২০১১ সালের আসিয়ান সম্মেলন, ২০১৩ সালে এপেক সম্মেলনসহ মিস ওয়ার্ল্ড সুন্দরী প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আমাদের পাশে থাকতে একটি লাইক দিয়ে রাখুন, ধন্যবাদ।
তথ্যসূত্র
- বাংলা উইকিপিডিয়া।
- “Meet the Designer of Garuda Wisnu Kencana : Nyoman Nuarta – NOW! Bali”। NOW! Bali। ১ সেপ্টেম্বর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮।
- ↑ Media, Kompas Cyber (৫ জুলাই ২০১৮)। “INFOGRAPHY: The Journey of Building the Statue of GWK”। KOMPAS.com (Indonesian ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮।
- ↑ “President Joko Widodo unveils Indonesia’s tallest statue”। The Straits Times। সংগ্রহের তারিখ ২৮ নভেম্বর ২০১৮।
- ↑ “Jokowi resmikan patunng GWK terwujud setelah 28 Tahun”। Kompas। সংগ্রহের তারিখ ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮।
- ↑ “Garuda Wisnu Kencana: Precious gift for Independence Day”। The Jakarta Post। সংগ্রহের তারিখ ২৮ নভেম্বর ২০১৮।
- ↑ “5 Astonishing Facts of Bali`s Garuda Wisnu Kencana Statue”। Tempo। সংগ্রহের তারিখ ২৮ নভেম্বর ২০১৮।
- ↑ “Nuarta ‘resurrects’ tallest Wisnu statue”। জুলাই ২৪, ২০১৩। জুলাই ২৪, ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ “Spectacular GARUDA WISNU KENCANA STATUE on Bali in Final Stage of Completion”। Ministry of Tourism, Republic of Indonesia। ১১ জুন ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮।
- ↑ “Bali statue of Hindu god Wisnu to be world’s largest”। ABC। সংগ্রহের তারিখ ২৮ নভেম্বর ২০১৮।