জবাবে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছিলেন, “ভারত COVID-19 মহামারীর অর্থনৈতিক প্রভাব হ্রাসে মালদ্বীপকে সমর্থন অব্যাহত রাখবে। আমাদের বিশেষ বন্ধুত্ব সর্বদা ভারত মহাসাগরের জলের মতো গভীর থাকবে।”
ভারতের বিদেশমন্ত্রক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে যে এটি মালদ্বীপের বৃহত্তম অবকাঠামো প্রকল্প হবে, যা পার্শ্ববর্তী দ্বীপপুঞ্জ উইলিংলি, থিলাফুশি এবং গুলহিফাহুর সাথে মাল (মালদ্বীপের রাজধানী) সংযুক্ত করবে। দু’দেশের সম্পর্ক গভীর হওয়ার বিষয়টি নিয়ে উভয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে মালদ্বীপে প্রতিবেশী দেশগুলির সাথে মোদির সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার জন্য “প্রথম প্রতিবেশী” এর বৈদেশিক নীতি টিকে আছে। বিশেষত মোদী সরকারের প্রথম পাঁচ বছরে মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের প্রসঙ্গে মালদ্বীপের সাথে বন্ধুত্ব ঘনিষ্ঠ হয়েছে, যা প্রশংসনীয়।
চিত্রের কপিরাইট
কিন্তু মালদ্বীপে চীনের প্রভাব কি কমবে?
প্রাক্তন কূটনীতিক রাজীব ডোগরা তাঁর বইতে মোদীর বিদেশ নীতি নিয়ে গভীরভাবে লিখেছেন। রাজীব ডোগরা বলেছে যে মালদ্বীপে চীনের প্রভাব কমাতে সময় নিতে পারে। তাঁর মতে, চীন বিদেশে যে কোনও প্রকল্প গ্রহণ করে এবং তা দ্রুত শেষ করে যেখানে ভারত একটি প্রকল্প শেষ করতে সময় নেয় বেশি।
তবে রাজীব ডোগরা জোর দিয়ে বলেছেন যে, চীন ও ভারতের মধ্যে পার্থক্য বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেছেন, “ভারত প্রতিবেশী দেশগুলিকে অর্থনৈতিক লাভ বা রাজনৈতিক চাপের জন্য সাহায্য দেয় না। এটি ভুটানের হাইড্রো বৈদ্যুতিক কেন্দ্র হক বা আফগানিস্তানের সংসদ ভবন হোক। চীন যখন সহায়তা সরবরাহ করে তবে তার উদ্দেশ্য থাকে। সাহায্য প্রলুব্ধ দেখিয়ে চীন সব সময় গরীব দেশগুলোকে হাতে মুঠোয় আনতে চাই” ভারত সে ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ভিন্নি নীতিতে বিশ্বাসী।
চিত্রের কপিরাইট
চীন সম্পর্কে প্রায়শই বলা হয়ে থাকে যে তারা দেশগুলিকে ঋণের জালে আটকে দেয় যা থেকে দেশগুলি বেরোতে পারে না। রাজীব ডোগরার মতে, ভারত কোনও দেশকে সাহায্য দিয়ে শোষণ করে না।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশে চীনের প্রভাব ভারতের দ্বিপক্ষীয় সুরক্ষা সম্পর্ক এবং কৌশলগত স্বার্থের পক্ষে ভাল হয়নি।
মালদ্বীপের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আবদুল্লাহ ইয়ামিনের সময়ে মালদ্বীপ চীনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়েছিল। তবে বর্তমানে সেই প্রভাব কাটতে শুরু করেছে।
শ্রীলঙ্কায় মহেন্দ্র রাজাপাকসের ক্ষমতায় ফিরে আসা চীনের জন্য একটি বড় সুসংবাদ ছিল, অপরদিকে ভারতের জন্য একটি উদ্বেগজনক ঘটনা ছিল, কারণ রাজাপাকস তার আগের আমলে চীনের খুব কাছাকাছি চলে গিয়েছিল এবং শ্রীলঙ্কা তখন প্রকাশ্যে চীনের পিএলএ নৌবাহিনীর সাবমেরিন চালু করেছিল। এবং ইতোমধ্যে চীনের সাথে গভীর অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে।
তবে এটি কেবল আর্থিক সহায়তার কথা নয়।
বেশিরভাগ দেশেই ভারতের চেয়ে চীনের চেয়ে অনেক ভাল চিত্র রয়েছে । ডোগরা বলেছে যে আফ্রিকা, প্রতিবেশী দেশ এবং মুসলিম দেশগুলির মালদ্বীপের পক্ষে ভারতের সাথে বন্ধুত্ব হওয়া ভারতের পক্ষে সদিচ্ছা। সমস্ত অর্থ ব্যয় করেও চীন এই সদিচ্ছা কিনতে পারে না। কারণ চীন তার অর্থ বিনিয়োগের পিছনে কোন না কোন উদ্দেশ্য নিয়েই থাকে। সেই কারণের বিশ্বে চীনেকে এখন সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করেছে। বিশেষ কের করোনা পরিস্থিতির পর থেকে এই সন্দেহ আর প্রকট হয়েছে।
অন্য দিকে ভারতের অর্থ সহযোগিতা বরর্বরে মতন সচ্ছ। মোদীর প্রথম মেয়াদে ভারত বাংলাদেশের সাথে তার সম্পর্কগুলি বেশ ভালভাবে পরিচালনা করেছিল, সেই জাগাটি এখন একটু অসচ্ছ হয়েছে। কারণ চিন চাই বাংলাদেশ তাদের কলোনী হয়ে যাক। আর সেই লক্ষ্যে চীন অর্থ বিনিযোগ করে চলেছে বাংলাদেশের বৃহত্তম প্রকল্প গুলিতে। অন্য দিকে বাংলাদেশের একটা মোটা সংখ্যাক জনগন ৪৭ সালের পূর্ব মুড়ে ফিরতে চাইছে।
৪৭ সালে আগে যে ধর্মীয় উন্মাদনা বাংলা ভাগ হয়েছিল সেই ধর্মীয় উন্মাদনা আবারো বাংলাদেশ জনগন ভাসতে শুরু করেছে। তাই অনেক সময় বাংলাদেশর জনগণ চীনের মুসলিম নির্যাতনের কথা জানা সত্তেও চীন ভারর উত্তজেনাই চীনে প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে চলেছে।
ভারতের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় থিঙ্ক ট্যাঙ্ক অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (ওআরএফ) ডাঃ রাজেশ্বরী পিল্লাই রাজাগোপালান তার একটি নিবন্ধে বলেছেন, “ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধন আইন (সিএএ), পাশের পর ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের মধ্যে কিছু মানুষ একটি ফাটল সৃষ্টি চেস্টা করেছিল। কিন্তু দুদেশের সরকার সেটিকে ভালোভাবেই মোকাবেলা করেছে।
পাকিস্তানের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন কিছু নেই তবে নেপালের সাথে সম্পর্ক ভাল চলছে। এখন চীন পিছন থেকে নেপালকে ভারতে বিরুদ্ধে দাড়করানোর চেস্টা করছে। তবে সেটা বেশি সুবিদা চীনকে দিতে পারবে না এখন পর্যন্ত মনে হয়। কারণ চীনের মূল উদ্দেশ্য কি সেটা নেপাল সরকারও একটু একটু করে বুঝতে শুরু করেছে।
অন্যদিকে, ভারত-আফগানিস্তানের সম্পর্ক আগের মতোই দৃঢ়। রাজীব ডোগরা বলেছেন যে প্রতিবেশী দেশগুলিতে সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে ভারতের পররাষ্ট্রনীতির পরিবর্তন ঘটে। তাঁর মতে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ওঠানামা রয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সৌদি আরবের সাথে ভারতের সম্পর্ক মোদির আমলে যথেষ্ট জোরদার হয়েছে। মালদ্বীপকে সমর্থন করা ভারতে নতুন নয়।
মালদ্বীপের সর্বোচ্চ সম্মান পেলেন মোদী
ভারতে অনেক প্রকল্প এখনও সেখানে চালু রয়েছে। তবে ভারতীয় বিদেশমন্ত্রক মতে, এখন যে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে তার পিছনে কারণ হ’ল মালদ্বীপকে মহামারীর খারাপ প্রভাব থেকে বাঁচানো।
বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে জানা গেছে, ভারত এখনও পর্যন্ত ৬৪ টি দেশের জন্য ৩০.৬৬ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে। মহামারী ও লকডাউনের পর থেকে ভারত 90 টি দেশে ওষুধ এবং অন্যান্য চিকিত্সা সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে। এই দেশগুলির মধ্যে রয়েছে মালদ্বীপ।
মালদ্বীপ মজলিসের (সংসদের) স্পিকার মোহাম্মদ নাশিদ সম্প্রতি বলেছিলেন যে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য মালদ্বীপকে বন্ধু পছন্দ করার ক্ষেত্রে বুদ্ধিমান হওয়া উচিত, এবং “ভারতের সাথে হাত মিলানো” উচিত।
মালদ্বীপের গুরুত্বপূর্ণ ভৌগলিক তাত্পর্য তুলে ধরে তিনি বলেছিলেন, “মালদ্বীপ এবং তাদের নির্বাচিত নেতারা বুদ্ধিমান হবেন এবং আমাদের পররাষ্ট্রনীতি এবং আমাদের নিকটতম মিত্র ও প্রতিবেশীদের সাথে আমাদের সম্পর্কে বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত নেবেন।” আমাদের ভূলে গেলে চলবেনা ভারত আমাদের নিকটতম প্রতিবেশি। “
পড়ুন………
মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি বদলে যাচ্ছে, ভারতের ভূমিকা কি?- সোজাসাপ্টা
আমাদের পাশে থাকতে একটি লাইক দিয়ে রাখুন ধন্যবাদ।
(অস্বীকৃতি: এই নিবন্ধে প্রকাশিত মতামতগুলি লেখকের ব্যক্তিগত মতামত)
লেখক- অপু ঢালি ,ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষক কলকাতা।
আরো লেখা পড়ুন….