বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত চার মাস কেটে গেছে। কিন্তু এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বিষয় যেটি হল এখন পর্যন্ত 2 লাখ 20 হাজারের উপরে মানুষের জীবন নিয়েছে এই ভয়ঙ্কর করো না। প্রায় 32 লাখ মানুষ সারা বিশ্বে করনা আক্রান্ত বর্তমানে রয়েছে। বিজ্ঞানীরা এই ভাইরাসকে প্রতিহত করার জন্য দিনরাত এক করে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমাদেরকে কোন আশার সংবাদ জানাতে পারেনি তারা।
করোনার ভাইরাসের টিকা আবিষ্কার এর জন্য সারা বিশ্বের প্রায় 100 উপরে গবেষণাগার গবেষণার কাজ চলছে। যদিও এই সমস্ত গবেষণাগার থেকে আমাদেরকে এখনো কোনো আশার সংবাদ শোনাতে পারিনি। তবে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ইতিমধ্যে তাদের আবিষ্কৃত ভ্যাকসিনের ট্রায়াল ভার্সন নিয়ে কাজ করছে। এখানে বলে রাখা ভালো যে ব্রিটিশ অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক অনেকটা পথেই এগিয়ে গিয়েছে। এই দলে যারা কাজ করছে তাদের মধ্যে দুইজন বাঙালি কৃতি সন্তান রয়েছে এটাই আমাদের কাছে সবচাইতে আনন্দের বিষয়। এই মহান দুই বাঙ্গালী কন্যা হলো সুমি বিশ্বাস এবং চন্দ্র দত্ত।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির জেনার ইনস্টিটিউটের অধীনে করোনা প্রতিষেধক নিয়ে যে গবেষণা চলছে, সেই দলে রয়েছেন সুমি। আর চন্দ্রা কাজ করছেন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ক্লিনিকাল বায়োম্যানুফ্যাকচারিং ফেসিলিটির কোয়ালিটি অ্যাসিওরেন্স ম্যানেজার হিসেবে।
এই ফেসিলিটি থেকেই তৈরি হয়েছে নভেল করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক চ্যাডক্স১। যদি সব কিছু ঠিক থাকে তাহলে এই মহান যুদ্ধে দুই বাঙালি কৃতি সন্তান তাদের নাম তুলে ধরবে। সেইসাথে বাঙালি হিসেবে আমরাও গর্বিত হব।
তাদের আবিষ্কৃত ভ্যাকসিন গত সপ্তাহে থেকে মানব শরীরে প্রবেশ শুরু হয়েছে। আশার কথা এটাই যে প্রকৃত এই ভ্যাকসিন মানব শরীরে আশানুরূপ ফল ইতিমধ্যে প্রকাশ করেছেন। যদি সব কিছু ঠিক থাকে তাহলে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছে এই প্রতিশোধ থেকে প্রায়ই 80% সফলতা পাওয়া সম্ভব।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় সারা গিলবার্টের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের বিজ্ঞানীর দলে রয়েছেন সুমি। এই বাঙ্গালী কন্যা পেশায় ইমিউনোলজিস্ট। সুমি ভারতের বেঙ্গালুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাইক্রোবায়োলজি নিয়ে পড়াশোনা শেষ করে ইংল্যান্ড চলে যান। লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিকাল মেডিসিনে বছরখানেক কাজ করার পরে যোগ দেন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে।
এরপর ২০১৩ সালে জেনার ইনস্টিটিউটে ম্যালেরিয়ার প্রতিষেধক তৈরির কাজ শুরু করেন সুমি। এই মুহূর্তে ম্যালেরিয়ার প্রতিষেধক নিয়ে জেনার ইনস্টিটিউটের গবেষণাদলের শীর্ষেও রয়েছেন এই বাঙালি মেয়ে। এছাড়া অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের অন্তর্গত গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্পাইবায়োটেকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবেও কর্মরত ইমিউনোলজিস্ট সুমি।
অপর বাঙালি কন্যা চন্দ্রা কলকাতার টালিগঞ্জের গলফ গার্ডেনের মেয়ে। হেরিটেজ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজিতে বিটেক করার পর কলকাতার মেয়ে চন্দ্রা ২০০৯ সালে ব্রিটেনে চলে যান। লিডস ইউনিভার্সিটি থেকে বায়োসায়েন্সে (বায়োটেকনোলজি) এমএসসি করেন। এরপর থেকে তিনি একাধিক দায়িত্বশীল পদে কাজ করেছেন তিনি।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ক্লিনিকাল বায়োম্যানুফ্যাকচারিং ফেসিলিটিতে যোগ দেয়ার পর ভ্যাকসিন তৈরির গুণগতমানের দিকটি নজরে রাখেন চন্দ্রা। যথাযথ পদ্ধতি এবং নিয়ম মেনে ভ্যাকসিন তৈরি হয়েছে কি-না, সবকিছু ঠিকমতো করা হয়েছে কি-না, অর্থাৎ কোয়ালিটি অ্যাসিওরেন্সের বিষয়টি সুনিশ্চিত করাই চন্দ্রার দায়িত্ব। একজন বাঙালি মেয়ে হিসেবে তার দায়িত্ব শুধু তার পরিবার নায় বাঙালি হিসেবে আমাদের সকলকে ও গর্বিত করে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে কতদিনে সাধারণ মানুষের নাগালে আসবে এই ভ্যাকসিন-এমন প্রশ্নের উত্তরে চন্দ্রা সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ট্রায়াল শেষ হওয়ার আগেই পুনের সেরাম ইনস্টিটিউটে ভ্যাকসিন তৈরির কাজ শুরু হয়ে যাবে। অর্থাৎ বিজ্ঞানীরা এই ভ্যাকসিন এর কার্যকারিতা শুভ ধরে নিয়েই এই নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। চন্দ্রার কথা মতে ট্রায়াল শেষ হয়ে গেলেই বাজারে আসতে পারে এই ভ্যাকসিন। অর্থাৎ ট্রালের পাশাপাশি ওষুধ উৎপাদন শুরু হয়ে যাবে।
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট এর বরাত দিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়ার জানিয়েছে সেপ্টেম্বরের মাসের মধ্যে আনুমানিক প্রায় দুই কোটি ভ্যাক্সিন তৈরি করে ফেলবে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির এই কৃতিত্বের ভাগিদার বাঙালি হিসেবে আমরাও পেয়ে যাব।
পুনের ভারত সেরাম ইনস্টিটিউট কে অক্সফোর্ড ইনভারসিটি উৎপাদন অংশীদার বানিয়েছে। সব ঠিক থাকলে আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে পুরোদমে ভারত সেরা ইনস্টিটিউট উৎপাদনের পুরোদমে চলে যাবে। যার দিকে সারা বিশ্ব তাকিয়ে রয়েছে।