সময় এসেছে আমাদের ইতিহাস সংশোধন করার। এত দিন ধরে আমাদের কে বিরাট আকারের মিথ্যা ইতিহাস বা অসত্য ইতিহাস পড়ানো হয়েছে। ইতিহাসে আমাদের কে পড়ানোর হয়েছে সেন রাজারা ছিল ব্রাহ্মণ্যবাদী অথচ ভূভারতে সেন রাজাদের মতো ব্রাহ্মণ-বিদ্বেষী রাজবংশ আর একটিও ছিল কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে।
ইতিহাসে থাকে জানা যায় দ্বাদশ শতকে সেন রাজাদের দ্বারা বাংলার ৬০% মানুষ অস্পৃশ্যে পরিনত হয়েছিল। তবে মজার বিষয় হল এদের বেশির ভাগই হল বাংলার তৎকালীন ব্রাহ্মণ, বাদবাকি ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য।
তবে এ কথাও সত্য যদি একাদশ শতকের সেন রাজারা প্রায় ১০০ বছরের জন্য বাংলায় ক্ষমতায় যদি না আসত, তবে বর্তমান ইন্দোনেশিয়া-মালয়েশিয়ার মত এই বাংলাতে হিন্দু শূন্য হয়ে যেত। ৪০০ বছর ধরে বাংলায় চলা বৌদ্ধ-পাল শাসনে থাকা বাংলা প্রায় সনাতন হিন্দু সমাজের উপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়। বাংলার হিন্দুদের অনেক তান্ত্রিক দেবদেবী বৌদ্ধ পালা শাসকের হাত ধরে এসেছে। তাই আমরা যদি একটু লক্ষ করি বর্তমান তিব্বত, ভূটান ও মঙ্গোলিয়ার বহু তান্ত্রিক-বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর উপাস্য দেবদেবী সনাতান সমাজের উপাস্য দেবদেবী হিসাবে পূজিত হচ্ছে।
বাংলার সনাতন সমাজে অষ্টম শতকে শাসকের শূন্যতা দেখা দিলে ক্ষত্রিয়দের থেকে বাংলার ক্ষমতা বৌদ্ধ-পাল রাজাদের হাতে চলে যায়। যার ফলে শক্তিশালী বৌদ্ধ-পাল শাসকের হাতে ক্ষত্রিয়রা ক্ষমতা হারানোর ফলে জীবিকার জন্য তারা মাছ ধরতে শুরু করে। বলা চলে অনেকটা বাধ্য হয়। যারা বর্তমানে কৈবর্ত বা জেলে নামে বর্তমান সনাতন সমাজে পরিচিত। এর কিছুদিন পর যখন বৌদ্ধ রাজারা প্রাণী হত্যা নিষিদ্ধ করলে তাদের মাছ ধরা বন্ধ হয়ে যায়।
এমন অবস্থায় ঐ সকল জেলে বা কৈবর্তদের জীবিকা নির্ভয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। এর ফলে হরি,রুদক,দিব্য প্রমুখ অকুতোভয় সমাজচ্যুত ক্ষত্রিয় যোদ্ধা, জননেতা ভীমের নেতৃত্বে, উত্তর বঙ্গে এক মহাবিপ্লব সংঘটিত করে এবং বিদ্রোহ করে বসে (১০৭৫-১০৮২ খ্রীঃ)। যে বিদ্রোহের নাম ইতিহাসে কৈবর্ত বিদ্রোহ নামে পরিচিত। তবে শক্তিশালী পাল রাজারা ঐ বিদ্রোহ কঠর ভাবে অত্যন্ত নিষ্ঠুর সাথে দমন করে। কিন্তু ঐ বিদ্রোহ সমগ্র বৌদ্ধ সাম্রাজ্যের ভিত নাড়িয়ে দেওয়।
এই বিদ্রোহের সুযোগে শাসন ক্ষমতা কর্ণাটকি সেন বংশের হাতে(১০৯৭-১২২৫ খ্রীঃ) চলে যায়। তার ক্ষমতায় বসার পর দাবি করে যে তারা ব্রহ্মক্ষত্রিয়। অর্থাৎ ব্রাহ্মণ থেকে ক্ষত্রিয় হয়েছে। ঠিক এই স্থানে দাড়িয়ে প্রশ্ন আষে যদি তারা ব্রাহ্মণ বা ক্ষত্রিয় হতেন, তাহলে ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়দের এত ভয়ানক সর্বনাশ করতেন না। সেন শাসকরা, কৈবর্ত সহ অন্যান্য সমাজচ্যুত ক্ষত্রিয়দের পুরাতন সমাজে ফিরে আসতে দেন নি – তাদের অস্পৃশ্য বানিয়ে রাখা হয়। সেন রাজাদের সবচেয়ে বেশি আক্রোশ ছিল, ব্রাহ্মণদের বিরুদ্ধে।
বাংলার সমাজ বৌদ্ধ শাসন থেকে মুক্ত হয়ে যখন সনাতন সমাজে ফিরে আসতে শুরু করে ঠিক তখন সেন শাসকগণ আসা ব্রাহ্মণদের অস্পৃশ্য ঘোষণা করে।সেন মহারাজা বিজয় সেন ও বল্লাল সেনের, ক্ষত্রিয়-ব্রাহ্মণ বিদ্বেষ এবং বিভিন্ন নারীঘটিত অন্যায় আচরণে মর্মাহত হয়ে, কাশ্যপ গোত্রীয় প্রভাবশালী ব্রাহ্মণদের নেতৃত্বে যে সমস্ত ব্রাহ্মণ প্রতিবাদ করেছিলেন – সেন শাসক কর্তৃক ঐ ব্রাহ্মণদের অচ্ছুৎ-শূদ্র ঘোষণা করে, খুলনা-বরিশাল-যশোর-ফরিদপুর প্রভৃতি জঙ্গলাকীর্ণ শ্বাপদসংকুল উপকূলীয় অঞ্চলে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।
রাঢ় ও বরেন্দ্র অঞ্চল থেকে এই বিতাড়ন ছিল ঠিক ১৫০০ বছর আগের জেরুজালেম থেকে ইহুদিদের বিতাড়নের মতন। ভিন্ন রাজ্য থেকে বল্লাল সেন ব্রাহ্মণ পুরুষ এনে স্থানীয় নারীদের সাথে। এই অস্পৃশ্য শূদ্রে পরিনত হওয়া বিশাল জনগোষ্ঠী বেশির ভাগ এক সময় ব্রাহ্মণ ছিল। তারাই পরবর্তীতে বেশির ভাগ সমাজে নমস্য শূদ্র নামে পরিচিত ছিল। নমস্য শূদ্রের অপভ্রংশ হচ্ছে ‘নমঃশূদ্র’। মতান্তরে, নমঃশূদ্ররা ‘নমস মুনি’ নামক এক বংশগত
এক শ্রেণীর ব্রাহ্মণ ঋষির বংশধর – যারা বিজয় সেন ও বল্লাল সেনের নারী নির্যাতনের বিরোধিতা করতে গিয়ে, রাজরোশের প্রকোপে অস্পৃশ্য শূদ্র-এ পরিনত হয়ে, নমস্য ঋষির নাম অনুযায়ী নমঃশূদ্র নামে পরিচিত হয়। ঐনমস ঋষির সরাসরি বংশধর হিসেবে, বংশানুক্রমিক চর্মকার পেশায় নিয়োজিতরা, ‘ঋষি সম্প্রদায়’-নামে পরিচিত। বংশগত ব্রাহ্মণ ঋষির বংশধর হওয়া সত্ত্বেও, ঋষি সম্প্রদায় সমাজে ‘দলিত’। নমঃশূদ্র ও ঋষিরা যে বংশগত ব্রাহ্মণ ছিল, তার
আরেকটি প্রমাণ, একটি বাংলা প্রবচন ― “বামুন নোম মুচি
বিদেশি তুর্কি শাসকরা, বঙ্গ দেশ দখল করে নিলে, এই অসহায় নমঃশূদ্রদের জনগোষ্ঠীর উপর জুলুম-নির্যাতন আরো বেড়ে যায়। সনাতন সমাজের সুবিধাভোগীরা ঐ অত্যাচারিত নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের নতুন নামকরন করে চাঁড়াল। কি নিষ্ঠুর
বহুল আলোচিত ‘Bengal was divided’-গ্রন্থ থেকে জানা যায়, বৃটিশদের চট-কলে পাটের চাহিদা বৃদ্ধির ফলে, নমঃশূদ্র কৃষক সম্প্রদায় পাট-চাষে লাভবান হয়ে, অর্থের মুখ দেখে এবং বৃটিশ প্রবর্তিত শিক্ষার সংস্পর্শে এসে জানতেপারে যে,তারা অতীতে ব্রাহ্মণ ছিল। তখন তারা পৈতা ধারন করে ব্রাহ্মণ ঘোষণা করলে, উচ্চবর্ণ ও মধ্যবর্ণের হিন্দুরা একজোট হয়ে, নমঃশূদ্রদের ব্রাহ্মণ সমাজে পুনঃপ্রবেশ প্রতিহত করে। ব্রাহ্মণদের সংখ্যা বেড়ে গেলে, বংশগত
ব্রাহ্মণদের যজমান কমে যাবে – এজন্য ঐ সময় ব্রাহ্মণরা বাধা দিয়েছিল ; কিন্তু মধ্যবর্ণের হিন্দুরা বাধা দিয়েছিল কেন !নমঃশূদ্ররা ব্রাহ্মণ সমাজে ফিরে এলে, মধ্য বর্ণের আদৌ কি কোন ক্ষতি হতো ?মহাত্মা গুরুচাঁদ ঠাকুরের প্রাণপণ প্রচেষ্টায়, ১৯১১ সালের সেন্সাস রিপোর্টে, চণ্ডাল শব্দটি আপসারন করা হয়।
বংশগত ব্রাহ্মণ বংশে জন্ম নেওয়া নতুন প্রজন্ম প্রায়ই আমাকে বলে,”কাকু মশাই, আপনারা যে করেই হোক জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার একটা উপায় বের করুন। জাতিভেদ প্রথার জন্য সবাই ব্রাহ্মণদের দায়ী করে। পূর্ব পুরুষের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণের জন্য আমরা লজ্জিত। জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে আমরা ব্রাহ্মণ পরিচয় ত্যাগ করতে প্রস্তুত আছি …”
ব্রাহ্মণ পরিচয় ত্যাগ করা যাবে না, বরং অন্যদের ব্রাহ্মণ সমাজে তুলে আনতে হবে। সর্বপ্রথম অধিকার-হারা দলিত ও নমঃশূদ্র সম্প্রদায়কে ব্রাহ্মণ সমাজে ফিরিয়ে এনে, উচ্চ স্থান তথা কুলীন ব্রাহ্মণের মর্যাদা দিয়ে-তাদেরহারানো গৌরব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। এত অত্যাচার-অপমান এবং অন্যদের অর্থের প্রলোভন প্রত্যাখ্যান করে, নমঃশূদ্র ও দলিতরা সনাতন ধর্মের প্রতি সবার চেয়ে বেশি নিবেদিত।মধ্যেবর্ণের হিন্দুদেরও উচিত ব্রাহ্মণ সমাজে উন্নীত হওয়া। সমস্ত
সনাতন হিন্দুর জন্ম – কোন না কোন ব্রাহ্মণ ঋষির গোত্রে। সর্বোপরি আদিপিতা ব্রাহ্মণ মনুর বংশধর সমস্ত সনাতন হিন্দু জন্মগত ভাবে ব্রাহ্মণ। সনাতন ধর্মে জাতিভেদের ব্রাহ্মণ্যবাদী বা মনুবাদী কথাটার মধ্যে বাম জিহাদি শিবিরের কত বড় ছক লুকিয়ে আছে সেটা প্রথম উপলব্ধি করি ইনস্ট্যান্ট তিন তালাক সংক্রান্ত আইন পাশ হওয়ার সময় একটি লেখা পড়তে গিয়ে।
লেখকের নাম মনে নেই। তিনি লিখেছিলেন, ইনস্ট্যান্ট তিন তালাক ইসলামের মধ্যে থাকা মনুবাদ, তবে বর্তমানে এর ব্যাপকতা নেই। তার মানে কি দাড়াল,কিছুতেই ভাসুরকে অপমানিত হতে দেবে না! তাই এখানেও কোন টার্ম ব্যবহার করা হচ্ছে? মনুবাদ! শুধু এক বারের জন্য একটি কথা ভাবুন তো! ব্রাহ্মণ্যবাদ বলতে আপনি কী বোঝেন? একটি কাস্টের ওপর অপর কাস্টের দাপট বা অত্যাচার, ওকে? ইসলাম বা শরিয়তি আইন অন্য ধর্মকে মর্যাদা দেয়? তারা জিজিয়া চাপিয়ে দেয় না? মূর্তি ভাঙার সংস্কৃতিকে প্রমোট করে না?
আপনি কখনো জে এন ইউতে স্লোগান দেখেছেন, শরিয়ত সে চাহিয়ে আজাদি? এখানেই ছক। বামুনবাদী বলে আক্রমণ করলেও আদতে ওদের লক্ষ্য গোটা সনাতনী সমাজ। যোগেন আলি মন্ডল সাক্ষী। ডিম পেঁয়াজের স্ট্যাটাস চেক করুন। কোথাও হিন্দু ধর্ম নিয়ে আক্রমণ নেই। ব্রাহ্মণ্যবাদী সংস্কৃতি চলবে না, এমনটাই বক্তব্য। কিন্তু ওদের আসল লক্ষ্য কী তা কি আপনি জানেন না?! বসিরহাট দাঙ্গার সময় স্লোগান উঠেছিল, আর্য জাতি ভারত ছাড়ো! আসল টার্গেট কারা ছিল বলে মনে হয়?!
আবার বলছি, বাম জিহাদি যখন ব্রাহ্মণ্যবাদকে আক্রমণ করে, রামকৃষ্ণ মিশনকে আক্রমণ করে , ভারত সেবাশ্রমকে আক্রমণ করে, অনুকুল , সাঁইবাবাকে আক্রমণ করে, ওরা সেগুলো জাস্ট সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করে। আসল টার্গেট, সনাতন ধর্ম। এবার পাল্টা কীভাবে দেওয়া যায়? আমি ব্রাহ্মণ্যবাদী কথাটি প্রমোট করারই বিপক্ষে। তাতে ওদেরই পাতা ফাঁদে পা দেওয়া হয়। জাতপাত নিয়ে মাতামাতি করলে স্পষ্ট বলে দিন, হিন্দু ধর্মের মধ্যে শরিয়ত আনা চলবে না, শিয়া সুন্নির মতো বিভেদ আনা চলবে না।। সবাই হিন্দু।
হামে চাহিয়ে আজাদি
শরিয়ত সে আজাদি