নিখিল হত্যা,”Justice for Nikhil” প্রতিবাদ হয়ে গেল নিউ ইয়র্কে। বাংলাদেশের গোপালগঞ্জের বাসিন্দা, ৩২ বছর বয়সী কৃষক নিখিল তালুকদারকে এএসআই, শামীমুদ্দিন নৃশংসভাবে লাঞ্ছিত ও হত্যা করে। হ্যাঁ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ফ্লয়েড’এর মতোই ঠিক একইরকম নির্মমতার সঙ্গে। নিখিল যখন তার তিন বন্ধুর সাথে তাস খেলছিল তখন তাকে তাড়া করে ধরেন শামীমুদ্দিন। নিখিলের পিঠে তার হাঁটু চেপে ধরে মেরুদণ্ড ভেঙে ৩ টুকরো করে ফেলেছিল। নিখিলকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও এই চরম আঘাতে সে মারা যায়।
অবশ্যই বাংলাদেশে ঘটা এক সংখ্যালঘুর উপর বাংলাদেশী পুলিশের এই প্রাণঘাতী আক্রমণের বিষয়টি নিয়ে তেমন কোনও ক্ষোভ প্রদর্শনের প্রশ্নই আসে না। কারণ, বাংলাদেশ আমেরিকার মতো কোনও পুঁজিবাদী রাষ্ট্র নয় । জর্জ ফ্লয়েড আমেরিকান বলেই সারা দেশ ও বিশ্ব তার হত্যার প্রতিবাদ করেছে৷
আমেরিকান পুলিশ হাটুঁ গেড়ে ক্ষমা চেয়েছে৷ সারা পৃথিবীর মানুষ তীব্রভাবে ঘৃনা জানিয়েছে৷ অপরদিকে হতভাগ্য নাগরিক নিখিল তালুকদার একজন জন্মসূত্রে বাংলাদেশী সংখ্যালঘু হিন্দু৷ পেশায় একজন কৃষক। তাঁকেও এএসআই শামীম নির্মমভাবে পিটিয়েছে। পেটানোর ফলে নিখিলের মৃত্যু ঘটে। কিন্তু দুঃখের বিষয় নিখিল হত্যার বিচারের দাবিতে কেউ পথে নামেনি যেমনটা জর্জ ফ্লয়েড বেলায় দেখা গিয়েছিল!
তবে আশার কথা হলো তার নিজ দেশে প্রতিবাদ সমাবেশ না হলোও। নিখিলের দেশ থেকে বহু দূরে আমেরিকাতে গুটিকয়েক মানুষ মিলিত হয়ে এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। মানুষগুলোর সংখ্যা হয়তো কম ছিল। কিন্তু তারা এই ছোট্ট প্রতিবাদের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছে। বিশ্বজুড়ে আজ সিলেক্টেড মানবতার কারণেই মানবতা আজ লাঞ্ছিত। আমেরিকার পুলিশের হাতে আমেরিকার নাগরিক হত্যা হলে সারা বিশ্বে বাঙালি ফেসবুকে প্রতিবাদের ঝড় তুললেও নিখিলের বেলায় চুপ।
সেই সিলেক্টেড মানবতাবাদীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ তুলেছে কিছু আমেরিকান প্রবাসী বাঙালি। তাদের প্রতিপাদ্য ছিল বৈষম্য আর বিদ্বেষের বিরুদ্ধে মানবতার এ আহ্বানে বিশ্বের সব অধিকার সচেতন মানুষের সম্পৃক্ত হওয়ার সময় আজ। ক্ষোভ আর দ্রোহের এ উচ্চারণ শুধু আমেরিকার নাগরিকদের উচ্চারণ নয়। এই উচ্চারণ আপনার, আমার, সবার হোক প্রতিবাদ।
স্থান: ডায়ভারসিটি প্লাজা,১৪ই জুন, রবিবার।
সময়: বিকেল পাচঁ
জ্যাকসন হাইটস, নিউইয়র্ক।
এই প্রতিবাদ সমাবেশ হওয়ার পরে সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে সমাবেশ আয়োজন কারিদের প্রতি বহু সংখ্যক মানুষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে। সাথে অনেকেই দেখছে এই প্রতিবাদকে নিখিলের প্রতি প্রবাসী বাঙালিদের ভালোবাসা, সমবেদনা, মানবিকতা এবং মূল্যবোধের এক অনন্য নজির।
পাশ্চাত্য থেকে প্রাচ্য। পশ্চিমে আমেরিকা থেকে পূর্বে বাংলাদেশ। নানা ভাবে, নানা নামে চলছে। বর্ণ, ধর্ম, শ্রেণী বিদ্বেষ। শুধু আইন করে, কিম্বা প্রতিবাদ সভা সমাবেশ করে একে বন্ধ করা যাবে না। মানুষের একেবারে ভিতর থেকেই বের করে আনতে হবে এই বিষ। সামাজিক সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তুলে গণসচেতনতা তৈরী করাই হবে বর্ণ, ধর্ম ও শ্রেণী বিদ্বেষ রুখে দেয়ার শক্তিশালী পথ।
দীনেশ চন্দ্র মজুমদার, নিউইয়র্ক।
লেখক: ইতিহাস গবেষক, সমালোচক এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় জনপ্রিয় এক্টিভিস্ট।