আজকের দিনে শ্যামাপ্রসাদজী (ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখ্যোপাধ্যায়) বিশেষ করে পঃ বঙ্গে একটি বিস্মৃত নাম। অনেক ব্যক্তি, যুবক তার অবদান তাে দূরের কথা তার নামই জানে।। কিন্তু পঃ বঙ্গবাসী হিন্দুরা এবং পাঞ্জাবের শিখ হিন্দুরা তাঁর কাছে অশেষ ঋণী। সুতরাং তাকে ভুলে যাওয়াটা পাপ বা অকৃতজ্ঞতার নিদর্শন বলে মনে করি। শ্যামাপ্রসাদজীর জন্মশতবার্ষিকীতে কলিকাতার ইন্ডাের স্টেডিয়ামে একটি অনুষ্ঠানের আয়ােজন করা হয়েছিল। উক্ত অনুষ্ঠানে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনন্ত কুমার, স্বর্গীয় তপন সিকদার, মমতা ব্যানার্জী, প্রয়াত নেতার প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেছিলেন। কিন্তু তকালীন মুখ্যমন্ত্রী তথা তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মতাদর্শ কারণে উক্ত অনুষ্ঠান বর্জন করেছিলেন এবং মন্তব্য করেছিলেন উনি বিদ্বান হলেও মহান নন এবং ওনার বিষাক্ত মতবাদ থেকে আগামী প্রজন্মকে রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য। কি সেই বিষাক্ত মতবাদ। উনি নাকি হিন্দুদের নেতা, মুসলিম বিরােধী তথা ধর্মনিরপেক্ষ ছিলেন না। অথচ এই শ্যামাপ্রসাদজী সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির উর্ধে উঠে বিদ্রোহী করি নজরুল ইসলামকে অসুস্থতার সময় সাহায্য করতে দ্বিধাবােধ করেন নি যাহা মুজফফর আহমেদ পর্যন্ত স্বীকার করেছিলেন, কবিও অন্তর থেকে ওনাকে শ্রদ্ধা করতেন যদিও তিনি হিন্দু মহাসভার সদস্য ছিলেন। (শ্যামাপ্রসাদকে লেখা কবি নজরুলের চিঠি শেষে লিপিবদ্ধ ভরা আছে)
আজকে পঃবঙ্গ রাজ্য পাওয়ার ফলেই আমরা ডঃ বিধানচন্দ্র রায়, ডঃ প্রফুল্ল ঘােষ, প্রফুল্ল সেন, অজয় মুখার্জী, সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়, জ্যোতি বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, মমতা ব্যানাজীকে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে পেয়েছি, না হলে ওনাদের স্থান রাজনীতিতে কোথায় থাকত বলা মুস্কিল ছিল। এবং পঃ বঙ্গে হিন্দুদের অবস্থা কী হত ভাবলেই শিউরে উঠতে হয়। অথচ কি নিষ্ঠুর পরিহাস এই শ্যামাপ্রসাদজীই বেশীরভাগ জনগণের কাছে সাম্প্রদায়িক, তার নামই জানে না। শ্যামাপ্রসাদজী সম্পর্কে বলতে গেলে বলতে হয় তিনি একজন কৃতী ছাত্র, স্যার আশুতােষ মুখার্জীর সুযােগ্য পুত্র। পিতামহ গঙ্গাপ্রসাদ একজন বিচক্ষণ চিকিৎসক। আদি নিবাস হুগলী জেলার জিরাট গ্রামে। অবশ্য তারও আগে ওনাদের পিতৃভূমি ছিল হুগলী জেলার দিগসুই গ্রাম।ওখানে ১৭৮৭ সালে ১৮ই অক্টোবর গঙ্গাপ্রসাদের বাবা বিশ্বনাথের জন্ম। যেহেতু তিনি অল্প বয়সে পিতৃহীন হন, তাই বিধবা জননী শিশু পুত্রটিকে সঙ্গে করে
অবহেলিত ও বিস্মৃত নায়ক ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখােপাধ্যায়
বাপের বাড়ীতে চলে আসতে বাধ্য হন। মাতুলালয়ে অতি কষ্টের মধ্যে জীবন অতিবাহিত করায় খুব একটা শিক্ষালাভ করতে পারেন নি। পরে তিনি জিরাটেই নিজস্ব বসতবাটী নির্মাণ করেন। গঙ্গাপ্রসাদ ছয় বৎসর বয়সে মাতৃহারা ও তের বছর বয়সে পিতৃহারা হন অথাৎ বিশ্বনাথের মৃত্যু হয়। জ্যেষ্ঠভ্রাতা দুর্গাপ্রসাদের বয়স তখন মাত্র সতের বছর। তিনি খুব কষ্টে সৃষ্টে’ ভাইদের মানুষ করেন এবং পিতা বিশ্বনাথের সমস্ত ঋণ শােধ করেন। জিরাটে ১৮৩৬ সালে ১৭ই ডিসেম্বর গঙ্গাপ্রসাদ জন্মগ্রহণ করেন। গঙ্গাপ্রসাদ তখন মেডিকেল কলেজের ছাত্র এবং মালাঙ্গা লেনের এক বাসায় থাকতেন। এখানেই কঁাসারীপাড়া নিবাসী হরলাল চট্টোপাধ্যায়ের কন্যা জগত্তারিণী দেবীর সঙ্গে বিবাহ হয়। ১৮৬১ সালে বি.এ. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। এবং ১৮৬৬ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে এম. বি. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি মিষ্টভাষী, পরহিতেষী, তাঁকে দেখলেই ভক্তি হত। হিন্দু কুসংস্কারগুলির উপর গঙ্গাপ্রসাদের কিছুমাত্র শ্রদ্ধা ছিল না। তিনি ধীর ও প্রবলচিত্তের লােক ছিলেন, কাহারও মতামত গ্রাহ্য করিতেন না। ধর্ম সম্পর্কে তিনি সম্পূর্ণ স্বাধীনচেতা, কৰ্বজ্ঞানে কঠোর আবার অত্যন্ত সদয়। পরবর্তীকালে যখন ডাক্তারী পেশা শুরু করলেন তখন রসা রােডে (অধুনা আশুতােষ মুখার্জী রােড) নিজস্ব বাসভবন নির্মাণ করেন।
| গঙ্গাপ্রসাদের প্রথম সন্তান আশুতােষের জন্ম ১৮৬৪ সালে ২৮শে জুন মালাঙ্গা লেনের বাসাবাড়ীতে। আশুতােষের দ্বিতীয় পুত্র শ্যামাপ্রসাদের জন্ম ১৯০১ সালের ৬ই জুলাই ভবানীপুরের বাড়ীতে ৭৭ নং রসা রােডে যাহা পরবর্তীকালে সারা ভারতে আইন শিক্ষা ও রাজনীতির পীঠস্থানে পরিণত হয়েছিল। মাতা ছিলেন যােগমায়া দেবী। শ্যামাপ্রসাদ ১৯০৬ সালে মিত্র ইন্সটিটিউশন (ভবানীপুরে) ভর্তি হন। ১৯১৭ সালে বৃত্তি সহ ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় পাশ করেন এবং ১৯১৯ সালে প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে আই.এ. পরীক্ষায় প্রথমস্থান নিয়ে পাশ করেন। ১৯২১ সালে বি.এ-তে সাম্মানিক ইংরাজীসহ শীর্ষস্থান লাভ করেন। উপরােক্ত দুই পরীক্ষাতেই তিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে শীর্ষ স্থান দখল করে রৌপ্য ও স্বর্ণ পদক লাভ করেন। মাত্র তিন বছর আগে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতীয় ভাষা সমূহের এম.এ পরীক্ষা গ্রহণের নিয়ম প্রবর্তিত হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফলে স্যার আশুতােষ কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাতৃভাষার মাধ্যমে এম. এ পড়ানাের ব্যবস্থা করেন এজন্য শিক্ষিত সমাজের একাংশ সন্তুষ্ট হন নাই এবং তার এই ব্যাপারে সমালােচনা শুরু করেন বিভিন্ন পত্র পত্রিকায়। কিন্তু একরােখা ‘বাংলার বাঘ তাদের সমালােচনার জবাবে এবং বাংলা ভাষাকে মর্যাদা দেওয়ার জন্য শ্যামাপ্রসাদকে বাংলায় এম.এ ক্লাসে ভর্তি করিয়ে দিলেন যদিও শ্যামাপ্রসাদ ইংলিশে অনার্সে সর্বোচ্চ স্থানাধিকারী। বলাবাহুল্য এই পরীক্ষায় শ্যামাপ্রসাদ শীর্ষস্থান অধিকার করেন। সালটা ছিল ১৯২৩ সাল। সেই পরীক্ষায় দুই পেপারের পরিবর্তে যে থিসিস তথা মৌলিক প্রবন্ধ রচনা 150 o 1507 “The Social Plays of Girish Chandra”.
অবহেলিত ও বিস্মৃত নায়ক ডঃ শামাপ্রসাদ মুখােপাধ্যায়
ইতিমধ্যে এম. এ পড়ার সময় ১৯২২ সালে ১৬ই এপ্রিল শ্যামাপ্রসাদের বিবাহ সংঘটিত হয়। পাত্রী ছিলেন কবি বিহারীলাল চক্রবর্তীর পৌত্রী ডাঃ বেনীমাধব চক্রবর্তীর কন্যা-সুধা দেবী। ছাত্রাবস্থাতেই পিতা আশুতােষের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের আদর্শ, কাৰ্য্যপদ্ধতি ও বিধিবিধান নিয়ে আলােচনা করতেন। তাঁর প্রতিভা যাহাতে সমুখী হয় সেজন্য পিতার তীক্ষ দৃষ্টি ছিল সেজন্য তিনি পুত্রকে এই ব্যাপারে উৎসাহিত করতেন। ১৯২৪ সালে এম.এ. ডিগ্রী পাবার আগেই তিনি পােষ্ট-গ্রাজুয়েট শিক্ষা কমিটির সদস্য ও কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলাে নির্বাচিত হন, ঐ বছর তিনি ল’ও (Law) পাশ করেন।
এখানে উল্লেখ্য যে স্যার আশুতােষের প্রথম কন্যা রাণী যাঁকে আশুতােষ ‘আমার রাণীমা’ বলে সম্বােধন করতেন তার ১৯০৪ সালে নয় বৎসর বয়সে বিবাহ হয়। পাত্র বঙ্কিমচন্দ্রের দৌহিত্র শুভেন্দু সুন্দর বন্দ্যোপাধ্যায়। দুর্ভাগ্য যে ১৯০৫ সালে মাত্র একবছর বাদে তিনি বিধবা হন। জেদী আশুতােষ এই মেয়ের পুনরায় বিবাহের ব্যবস্থা করেন। এবার পাত্র ছিলেন আইনজ্ঞ যােগীন্দ্রলাল কাঞ্জিলালের ভাইপাে ব্রজেন্দ্রনাথ। সালটা ছিল ১৯০৮। দুর্ভাগ্য ১৯০৯ সালে তিনি আবার বিধবা হন। সেই দিদিই ছিলেন তাদের গৃহকত্রী। মাতৃস্থানীয় এই দিদিও মাত্র ২৮ বছর বয়সে ১৯২৩ সালে ৫ই জানুয়ারী মাত্র পাঁচ দিনের অসুখে মারা যান। পুত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার আগেই দিদির মৃত্যুর এক বছর পরেই ১৯২৪ সালে ২৫ শে মে শ্যামাপ্রসাদের পিতৃ বিয়ােগ হয়। পাটনা শহরে হঠাৎই তিনি মারা যান। এই ঘটনা শ্যামাপ্রসাদের কাছে বিনা মেঘে বজ্রাঘাতের মত এসেছিল। তখন থেকেই তার জীবনের গতির পরিবর্তন হয়ে গেল। জীবনের নূতন অধ্যায় শুরু হল। | আর একটা কথা বলা হয়নি। ১৯১২ সালে স্যার আশুতােষ মধুপুরে নূতন বাড়ী নির্মাণ করেন তখন শ্যামাপ্রাসাদের বয়স এগার বৎসর।
ঐ বছর অথাৎ ১৯২৪ সাল থেকেই তিনি আইন ব্যবসায় যােগদান করেন। ১৯২৬ সালে তিনি ইংল্যাণ্ডে ব্যরিস্টারী পড়তে যান এবং ১৯২৯ সালে ব্যরিস্টারী পাশ করে আসেন। বিলাতি থেকে ফিরে এসে তিনি আইন ব্যবসা, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাট টাইম অধ্যাপনা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কাজে আত্মনিয়ােগ করেন। ১৯২৯ সালে কংগ্রেস সদস্যরূপে পরিষদীয় কাউন্সিলে নির্বাচিত হন এবং ১৯৩০ সালে কংগ্রেস কাউন্সিল বর্জনের সিদ্ধান্ত নিলে তিনি পদত্যাগ করেন এবং পরে স্বতন্ত্র সদস্যরূপে নির্বাচিত হন। আগেই তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেট তথা সিন্ডিকেটের সদস্য রূপে নির্বচিত হয়েছিলেন। এই পােষ্টে থেকে তিনি বাবার অসমাপ্ত কাজ পূর্ণ করার চেষ্টা করেছিলেন। ঐ সময় ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা হয় তাঁরই অক্লান্ত প্রচেষ্টায়। স্যার দেবপ্রসাদ সর্বাধিকারী, ডঃ উপেন্দ্র ব্রহ্মচারী তাঁর কাজের ভূয়সী
অবহেলিত ও বিস্মৃত নায়ক ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখােপাধ্যায়
প্রশংসা করেছিলেন। তিনি রবীন্দ্রনাথকে বাংলা বিভাগে বিশেষ অধ্যাপক হিসাবে নিয়ােগ করাতে বিশেষ উৎসাহ দেখান এবং রবীন্দ্রনাথকে কমলা লেকচারার’ বক্তৃতা দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। দুর্ভাগ্য যেন শ্যামাপ্রসাদের পিছু ছাড়ছে না। হঠাৎ ১৯৩৩ সালে স্ত্রী সুধাদেবী মারা যান। তখন তার চারটি নাবালক পুত্রকন্যা। কিন্তু তিনি আর কখনও বিবাহ করেন নাই। বড়দা রমাপ্রসাদের স্ত্রী তারাদেবী বালক বালিকাদের দায়িত্ব নেন। তিনি বিভিন্ন কার্যে ও দেশের কাজে ব্যস্ত থাকতেন। এরপর ১৯৩৪ সালে মাত্র ৩৩ বছর বয়সে সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসাবে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিযুক্ত হন। ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত দুবার তিনি এই পদ অলঙ্কৃত করেন। তিনি কনিষ্ঠতম উপাচার্য হয়েও বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়েও বিচক্ষণতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে গিয়েছিলেন যা দেখে অনেক প্রবীণ কর্মকর্তারা বিস্মিত হয়েছিলেন
তাঁর কার্যপ্রণালীর মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল—
১। ভারতীয় কালচারের সঙ্গে মানানসই প্রতীক চিহ্ন পরিবর্তন করেছিলেন। ২। বাংলা বানান পদ্ধতির সংস্কার।। ৩। ম্যাট্রিকুলেশন স্তরে মাতৃভাষার মাধ্যমে পঠন ও পরীক্ষা দেবার ব্যবস্থা করা। ৪। বৈজ্ঞানিক শব্দের পরিভাষা নির্মাণ। ৫। রবীন্দ্রনাথকে সমাবর্তন ভাষাদানে আহ্বান। ৬। বাংলা ভাষায় পি, এইচ, ডি গবেষণা পত্র করার অনুমােদন ৭। কলেজে আই, এসসি, কোর্স চালু করা। ৮। সেকেন্ডারী থেকে এম. এ পর্যন্ত ভূগােল পড়ার ব্যবস্থা। ৯। চৈনিক ও তিব্বতীয় ভাষার চর্চার ব্যবস্থা। ১০। প্রাচীন সভ্যতা ও সংস্কৃতির রক্ষণাবেক্ষণ ও গবেষণার জন্য আশুতােষ মিউজিয়াম | প্রতিষ্ঠা। ১১। সােস্যাল ওয়েলফেয়ার, বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ও ফলিত পদার্থবিদ্যায় কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স চালু করা। ১২। ইউনিভারসিটি রােয়িং ক্লাব ও অ্যাথলেটিক ক্লাবের প্রতিষ্ঠা। ১৩। শিক্ষকদের জন্য টিচারস ট্রেনিং কোর্সের প্রবর্তন। ১৪। ছাত্রদের জন্য স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার বাের্ড স্থাপন। ১৫। মুসলিম ইতিহাস চর্চার উদ্দেশ্যে ইসলামিক ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের উদ্বোধন করেছিলেন। ১৬। কৃষি বিষয়ে পড়ানাের ব্যবস্থা। অবহেলিত ও বিস্মৃত নায়ক ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখােপাধ্যায় এই সময় বাংলার ভাগ্যে দুর্যোগের মেঘ ঘনিয়ে এল।
ব্রিটীশ সরকার সাম্প্রদায়িক ও ধর্মভিত্তিক পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা শুরু করতে আরম্ভ করলেন। রামজে ম্যাকডােনাল্ড’ সূত্র অনুসারে হিন্দুদেরও উন্নত ও অনুন্নত শ্রেণীতে বিভক্ত করার চক্রান্ত শুরু করলেন। ইহার প্রতিবাদে গান্ধীজি তার নীতি অনুযায়ী অনশন শুরু করলেন। তখন তপশীলি প্রতিনিধিদের সংখ্যা বাড়ানাে হয়। তাদের একাংশ মুসলিম লীগের সংস্পর্শে এসে সমাজকে পঙ্গু করে দেওয়ার চেষ্টা শুরু করল।
এই অবস্থায় ১৯৩৫ সালে গভর্ণমেন্ট অফ ইন্ডিয়া অ্যাক্ট পাস হয় এবং ১৯৩৭ সালে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের উদ্দেশ্যে নির্বাচন হয়। এই নির্বাচনে কংগ্রেস হিন্দুদের সব ভােট পেয়েছিল। ফজলুল হকের কৃষক প্রজা পার্টি মুসলমানদের ভাল ভােট পায়। সেই ফাঁকে সাম্প্রদায়িক মুসলিম লীগ রাজনীতিতে জাঁকিয়ে বসল। এখানে উল্লেখ্য ১৯২৯ সালে লাহাের সম্মেলনে ‘মুসলীম লীগ গঠনের প্রস্তাব পাস হয়। এই সময় যদি কংগ্রেস ও ফজলুল হকের কৃষক প্রজা পার্টি মিলিতভাবে কোয়ালিশন সরকার গঠন করত তাহলে বৃটিশ মুসলিম লীগের ষড়যন্ত্র ও সাম্প্রদায়িক শক্তিকে পরাজিত করে বাংলায় একটি অসাম্প্রদায়িক, শক্তিসম্পন্ন প্রদেশে পরিণত হত এবং সাম্প্রদায়িকতার বিষ থেকে বাংলাকে বাঁচানাে যেত। কিন্তু কংগ্রেস দূরদর্শী হতে পারল না। তাই বাংলায় প্রথম নির্বাচনেই সাম্প্রদায়িক মুসলীম লীগের শাসন প্রতিষ্ঠিত হল। যদিও বাংলার শিক্ষা, সংস্কৃতি, সাহিত্য, অর্থনীতি সর্বত্র হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ কিন্তু শাসন ব্যবস্থায় তাদের কোনওপ্রকার কার্যকরী ভূমিকা রইল না, শুধু বিধানসভায় গরম গরম বক্তৃতা দেওয়া ছাড়া এবং যােগ্যতার মানদণ্ড না বিচার করে সরকারী চাকুরীতে সাম্প্রদায়িক বিচারে কর্মচারী নিয়ােগের ব্যবস্থা শুরু হল। এই ঘটনার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতীক চিহ্নে ‘শ্রী ও পদ্ম’ এবং ‘বন্দেমাতরম’ সঙ্গীতের মধ্যে হিন্দুত্বের ছোঁয়া আছে বলে সাম্প্রদায়িকতার ধূয়া তুললেন মুসলীম লীগ।
এই সরকার কলিকাতা মিউনিসিপ্যাল বিল পাস করিয়ে হিন্দুদের প্রতিনিধি হ্রাস করলেন। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাত থেকে সরিয়ে সেকেন্ডারী বাের্ড স্থাপন করলেন, লক্ষ্য মুসলীম লীগের কর্তৃত্ব স্থাপন, যদিও বৃহত্তর শিক্ষাক্ষেত্রে মুসলীমদের অবদান শত করা পাঁচ ভাগ। কংগ্রেস হিন্দুদের ভােটে নির্বাচিত তবুও মুসলীম লীগের সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার মত ক্ষমতা বা দৃঢ়তা দেখাতে পারলেন না পাছে সাম্প্রদায়িকতার ছাপ লাগে। কোনওরকম সংখ্যালঘু হিন্দুদের স্বার্থরক্ষায় এগিয়ে এল না। | এতদিন পর্যন্ত শ্যামাপ্রসাদের সমর্থন কংগ্রেসের প্রতিই ছিল যদিও তিনি প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতিতে ছিলেন না এবং শিক্ষাক্ষেত্রেই তিনি বিচরণ করছিলেন। হিন্দুদের স্বার্থক্ষুন্ন হচ্ছে দেখে কংগ্রেস নেতাদের দ্বারস্থ হলেন যাতে করে তারা হিন্দু স্বার্থবিরােধী সরকারী নীতির প্রতিবাদ করেন ও বিরােধীতা করেন। কিন্তু কংগ্রেস অবিশ্বাস্যভাবে হিন্দু স্বার্থ রক্ষায়।
অবহেলিত ও বিস্মৃত নায়ক ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-দ্বিতীয় পর্ব।
অবহেলিত ও বিস্মৃত নায়ক ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-দ্বিতীয় পর্ব।
শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির অবদান, অবহেলিত ও বিস্মৃত নায়ক ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-(তৃতীয় পর্ব)
বাংলার বাঘ আশুতোষ মুখোপাধ্যায় সন্তান শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির অবদান-(৪র্থ পর্ব)
বাংলার দুই মহান সন্তান, কৃতী সন্তান, একজনের নাম নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, অপরজন ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখােপাধ্যায়। দুজনেই ভদ্র বংশজাত, দেশহিতৈষী, রাজনীতিবিদ, . নিঃস্বার্থভাবে দেশের সেবা করে গেছেন, কিছু পাওয়ার প্রত্যাশা না করে। একজনকে ষড়যন্ত্র করে সূদুর কাশ্মীরে হত্যা করা হয়েছিল আর একজনকে তাে নিরুদ্দেশই করে দেওয়া হয়েছিল, তিনি জীবিত না মৃত, মৃত হলেও কবে সেটা সংঘটিত হয়েছিল কেউ জানে না। এত প্রচার সত্ত্বেও নেতাজী প্রত্যেকটি ভারতবাসীর হৃদয়ে স্থান করে নিতে পেরেছেন কিন্তু শ্যামাপ্রসাদজী, তাকে লােকে ভুলতে বসেছে। আজকের জনগণ অনেকে তাঁর নামই জানে না, কি তাঁর অবদান তাইই জানে না, সেই দুঃখে ও বেদনায় মন ভারাক্রান্ত হয়ে এই ক্ষুদ্র লেখার উদ্দেশ্য। জনগণের কাছে শ্যামাপ্রসাদজীর পরিচিতি, জনগণের হৃদয়ে তার স্থান করে দেওয়ার মুখ্য উদ্দেশ্য নিয়ে সহজবােধ্য এই লেখা। যদি জনসাধারণ তার অবদানের কথা মনে রাখে বা তঁাকে হৃদয়ে স্থান দেয় তবে আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা সার্থক হবে। এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টায় যদি কেউ আঘাত বা ক্ষুব্ধ হয়ে থাকেন তামার ভাবাবেগের কথা স্মরণ করে তাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
কৃতিত্ব
লেখক-কমল মুখার্জী
তারিখ -২১/১০/২০১৪ কুঁচুড়া
লেখাটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হবে পর্ব আকারে পরবর্তী পর্ব পড়ার জন্য এখানে চোখ রাখুন।