ছাগলাদ্য নেতৃত্ব ও কাশ্মীর
কাশ্মীর ছিল উত্তাল এখন অগ্নিগর্ভ। এ পরিস্থিতি আকস্মিক নয়, অনিবার্য। ভারতের মহানবৃহৎ ছাগলাদ্য রাজনৈতিক নেতাদের সৃষ্ট। এ ইতিহাসের রূপকথা নয়, সাম্প্রতিককালের অপরূপকথা। জনগণ স্মৃতিভ্রষ্ট, তাই তার অনেক কথাই মনে থাকে না। রাজনৈতিক দলের নেতা ও কর্মীরা আত্মপ্রবঞ্চক, ভাবের ঘরে চুরি করে, জেনেও না জানার ভান করে। রাজা হরি সিং ভেবেছিলেন আমরা ভারত পাকিস্থান কোনপক্ষেই যােগ না দিয়ে কাশ্মীরকে স্বাধীন রাজ্য রেখে দেবাে। এই দুর্বলতার পূর্ণ সুযোেগ নিল পাকিস্থান। রেগুলার আর্মিকে লুঙ্গি টুপি পরিয়ে উপজাতি হানাদার সাজিয়ে পাঠিয়ে দিল কাশ্মীর দখল করতে। মহারাজ বিপদ বুঝে ভারতে যুক্ত হতে চাইলেন। বৃটিশ আমলে রাজা হরি সিং একবার নেহেরুকে গ্রেপ্তার করেছিলেন। সেকথা নেহেরুজী ভােলেননি। তাই সুযোেগ পেয়ে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করলেন। বললেন কাশ্মীর ভারতে যুক্ত হলে শেখ আবদুল্লাকে প্রধানমন্ত্রী করতে হবে। কারণ তিনি কাশ্মীরের জনপ্রতিনিধি। আর আপনি সারাজীবন কাশ্মীরে প্রবেশ করতে পারবেন না। শেখ আবদুল্লা কে? মুসলীমকনফারেন্সের নেতা। একজন বিশুদ্ধ ভারতবিরােধী মহান নেতা নেহেরুর দৃষ্টিতে ইনি হলেন জনপ্রতিনিধি। জুনাগড় এবং হায়দ্রাবাদের ভারতভুক্তির প্রশ্নে জনপ্রতিনিধির প্রয়ােজন হয়নি। নবাব ও নিজামের সঙ্গে চুক্তিই ছিল শেষ কথা। অন্যায় জেনেও রাজা হরি সিং সব শর্ত মেনে নিলেন। কারণ পাকিস্থানী দখলদারদের হাত থেকে কাশ্মীরকেবাঁচাতে হবে। ভারত সঙ্গে সঙ্গে তার নৈতিক দায়িত্ব পালন করল। ভারতের বীর সৈনিকেরা তাড়িয়ে নিয়ে চলল পাকিস্থানী হানাদারদের। আর তিন চারটে দিন যুদ্ধ চললে সম্পূর্ণ কাশ্মীর মুক্ত হয়ে যেতাে। কিন্তু হলাে বিপরীত। রাস্তা দিয়ে ষাঁড় হেঁটে চলে যাচ্ছে, তাকে খড় দেখিয়ে ডেকে এনে গুঁতিয়ে দিতে বলার মতই অপকর্ম করলেন পন্ডিত নেহেরু।একতরফা ছাগলাদ্য নেতৃত্ব এবং কাশ্মীর যুদ্ধবিরতি ঘােষণা করে গেলেন রাষ্ট্রসংঘে। উদ্দেশ্য সুবিচার প্রার্থনা। সেই উনিশশাে আটচল্লিশ সাল থেকে রাষ্ট্রসংঘ ভারত পাকিস্থান দুপক্ষকেই সমান দোষী সাব্যস্ত করে বিচার চালাচ্ছে আজও।
আসলে কংগ্রেস এবং নেহেরু ইচ্ছা করে অর্ধেক কাশ্মীর পাকিস্থানকে দিয়ে রেখে দিল।শ্যামাপ্রসাদ ছাড়া কেউ এ ঘটনার প্রতিবাদ করেনি। সব রাজনৈতিক দল নেহেরুকে সমর্থন করেছিল। নেহেরুর এই আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের পিছনে ছিল এক নােংরা ইতিহাস। আদুরে ভাষায় আমাদের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন একটু বামাক্ষ্যাপা। মেয়ে দেখলে ক্ষেপে ওঠা ছিল তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। লেডি মাউন্টব্যাটেনেরসঙ্গের অবৈধ সম্পর্কের কাহিনীসর্বজনবিদিত। যার সান্নিধ্য লাভের আকষণে তিনি লর্ড মাউন্টব্যাটেনকে স্বাধীন ভারতের বড়লাট করে রেখে দিলেন মাথার ওপর। এই দুর্বলতার সুযােগ নিলেন তারা পুরাে মাত্রায়। লেডী মাউন্টব্যাটেনের মধুর অনুরােধে নেহেরুজী অর্ধেককাশ্মীর ছেড়ে দিলেন পাকিস্থানকে। বাকীটা করে রাখলেন অগ্নিগর্ভ। গােটা সমস্যাটা ঝুলিয়ে রাখলেন রাষ্ট্রসংঘে গিয়ে। পাকিস্থান দখলীকৃত কাশ্মীর আজাদ কাশ্মীররূপে স্থায়ী হয়ে গেল। যেটা ভারতের সঙ্গে রইল তার আচরণ ভঙ্গী এমন হল যে ওটাই ভারতবর্ষে আছে কি না থাকবে কিনা সন্দেহে আমরা ভুগতে লাগলাম। যেটা উদ্ধারের কথা সেটা একেবারে ভুলে গেলাম। এর পূর্ণ সুযােগ গ্রহণ করে পাকিস্থান। ১৯৭৮ সালে পাকিস্থানের জুনিয়র ক্রিকেট টিম ভারতে খেলতে এসেছিল। প্রথম খেলা পড়েছিল কাশ্মীরে।তারা বলল কাশ্মীরে আমরা খেলতে পারি না। কাশ্মীর ভারতের অঙ্গ নয়। ওটা বিতর্কিত স্থান। জনতা সরকার তা মেনে নিয়ে খেলার ব্যবস্থা করল আজমীড়ে।
এদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘকাল ছাগলাদ্য পরম্পরা। কংগ্রেসের মধ্যে এবং যারা কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে এসেছে তাদের মধ্যেও। এমন কি মার্ক্সবাদীরাও। ছাগলের মতাে অদূরদর্শী এবং সর্বনাশ দেখেও বুঝতে না পারার মতাে বুদ্ধি। ১৯৫০ সালে রচিত হলাে সংবিধান। এই ছাগলাদ্য বুদ্ধিরই প্রেরণায় অকারণে ছাগলাদ্য নেতৃত্ব এবং কাশ্মীর কাশ্মীরেরজন্য প্রযুক্ত হলাে ৩৭০ ধারার বিশেষ মর্যাদা। ভারতের সঙ্গে কাশ্মীরের স্থায়ী দূরত্ব সৃষ্টির চক্রান্তটা জনগণকে বােঝানাে হলাে এটাই কাশ্মীরের চূড়ান্ত ভারতভূক্তি। কাশ্মীরের পতাকা পৃথক,সংবিধান পৃথক, কাশ্মীরের প্রধানও পৃথক রইল।তবু দেশের নেতারা বােঝাতে চাইলেন কাশ্মীর ভারতেরঅবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। শ্যামাপ্রসাদ প্রতিবাদ করায় শুধু যুক্ত হলাে এই ধারা টেম্পােরারী, অবিলম্বে তুলে দেওয়া হবে। বাস্তবিক পক্ষে জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হলাে। কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী হলাে প্রধানমন্ত্রী।রাজ্যপাল হলাে সদর-ই-রিয়াস।পতাকা প্রায় মুসলীম লীগের। সংবিধানও সম্পূর্ণ আলাদা। এখানেই শেষ হলাে না। অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হওয়া সত্ত্বেও কাশ্মীরে যেতে গেলে পাশপাের্টের মত পারমিট প্রথা চালু হল। এতবড় অন্যায় ভারতের সব রাজনৈতিক দল হাসি মুখে মেনে নিল।এছাড়াও ৩৭০ ধারার নামে সার্বভৌম একটি দেশেসৃষ্টি করা হল যুক্তিহীন বৈষম্য। যে কোনাে কাশ্মীরী ভারতের যে কোনাে রাজ্যে বিনা বাধায় জমি কিনতে পারবেন। কাশ্মীরে কিন্তু ভারতের রাষ্ট্রপতিও এক ইঞ্চি জমি কেনার অধিকারী নন। সেখানে উৎকৃষ্ট বাসমতী চাল দিতে হয় আটআনা কেজি, মােটা দানা চিনি একটাকা। এম-এ পৰ্য্যন্তবিনাব্যয়ে শিক্ষা, পাঠ্যপুস্তকপর্যন্ত বিনামূল্যে সরবরাহ। সারা ভারতকেবঞ্চিত করেহাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেবার দায়িত্ব নিল কেন্দ্র। সাম্যের কথা যারা বেশী বলেন সেই মার্ক্সবাদীরা এই বৈষম্যকে সমর্থন করলেন।কাশ্মীরের প্রধানমন্ত্রী তখন শেখ আবদুল্লা।বিশ্বাসের অযােগ্য ব্যক্তি। তিনি কখনও বলেন কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। কখনও বলেন কাশ্মীর শুধুমাত্র কাশ্মীরীদের জন্য। একটা দোদুল্যমান অবস্থায় রেখে দিয়ে ভারতকে এক ধরণের ব্ল্যাকমেল করে গেলেন সারাজীবন। ছাগলাদ্য বুদ্ধিসম্পন্ন কোন রাজনৈতিক নেতা এই ব্যক্তিকে চিনতে পারেননি। | এই ষড়যন্ত্র, শেখ আবদুল্লার এই ডবল গেম চিনেছিলেন একমাত্র ডক্টর শ্যামাপ্রসাদ মুখােপাধ্যায়। কাশ্মীরের যথার্থ ভারতভুক্তির জন্য আন্দোলন শুরু করল প্রজা পরিষদ। সেই আন্দোলনকে সর্বভারতীয় রূপ দিলেন শ্যামাপ্রসাদ এবংতাঁর প্রতিষ্ঠিতদল ভারতীয় জনস। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মিথ্যাচারী, কাশ্মীর
ছাগলাদ্য নেতৃত্ব এবং কাশ্মীর
ভারতের অঙ্গ নয়, জনগণকে এই সত্য চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানাের জন্য শ্যামাপ্রসাদ কাশ্মীরে গেলেন। ভারত থেকে ভারতে যাওয়ার অপরাধে তাকে শেখ আবদুল্লার পুলিশ গ্রেপ্তার করল সত্যের স্বপক্ষে রাষ্ট্রের স্বপক্ষে একটিমাত্র কণ্ঠ ছিল সােচ্চার। অজাকুলে একমাত্র ব্যাঘ্রটিকে ষড়যন্ত্র করে হত্যা করল শেখ আবদুল্লা এবং পন্ডিত নেহেরু।বিনা চিকিৎসায়, উপেক্ষায়, অবজ্ঞায় মারা গেলেন ভারতের শেষ জাগ্রত প্রহরী। ভারতের ঐক্যের জন্য স্বাধীন ভারতে প্রথম আত্মত্যাগ করলেন শ্যামাপ্রসাদ। সারা দেশ দাবী জানাল শ্যামাপ্রসাদ হত্যার তদন্ত চাই। বৃদ্ধা মা যােগমায়া দেবী বিধান রায় এবং জহরলালকে চিঠি লিখলেন শ্যামাপ্রসাদের মৃত্যুর তদন্ত হােক। তদন্তের দাবীতে উত্তাল কলকাতাকে স্তব্ধ করার জন্য বিধান রায় সি. পি. আইকে ডেকে বললেন, আমি এক পয়সা ট্রাম ভাড়া বাড়িয়ে দিচ্ছি। তােমরা এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করে ট্রামে, বাসে আগুন দিয়ে জনমতকে ঘুরিয়ে দাও। কম্যুনিস্টরা তাই করল। আর মহান জহরলাল সংবাদপত্রে বিবৃতি দিলেন-শ্যামাপ্রসাদের মৃত্যুতে আমি দুঃখিত। লেকিনতদন্তের কথা শুনে আরাে দুঃখিত। এটা বেদনায় দুঃখে আঁকা রেবতীভূষণের কার্টুনের ক্যাপশান। তবু শ্যামাপ্রসাদের আত্মদান ব্যর্থ হয়নি। পারমিট প্রথা রদ হল। যে শেখ আবদুল্লা ছিল নেহেরুর জিগরী দোস্থ দেশদ্রোহিতার অপরাধে তাকে দীর্ঘদিন জেলখানায় রেখে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। | জেল থেকে বেরিয়ে এসে শেখ আবদুল্লা কি করেছিলেন? একজন আদর্শ বিচ্ছিন্নতাবাদীর যা করণীয়। ভারতের অধিকাংশ রাজনৈতিক নেতা তাঁকে তােশ্লাই দিয়ে কাশ্মীরের সমস্যায় জলসিঞ্চন করেছেন। আজও এরা সবাই একই লাইনে। তাই কাশ্মীর সমস্যার সমাধানও সুদূর পরাহত। পাকিস্থান কিন্তু অর্ধেক কাশ্মীর দখল করে নিশ্চিন্ত থাকেনি। বাকীটা দখলের জন্য অনুপ্রবেশ, গুপ্তচর সংগঠন, অন্তর্ঘাতের ট্রেনিং দেওয়া, প্যান্ইসলামকে আগ্রহী করে ভােলা এবং বিশ্বজনমত তৈরী করতে থাকল তাদের অনুকুলে। ১৯৫৭ সালে পাকিস্থান কাশ্মীর প্রশ্ন উত্থাপন করল রাষ্ট্রসঙ্ঘে। দাবীকাশ্মীর পাকিস্থানে যুক্ত হওয়া উচিত। ভারতের
ছাগলাদ্য নেতৃত্ব এবং কাশ্মীর
পক্ষ থেকে প্রতিনিধিত্ব করলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী কৃষ্ণমেনন। ভারতের পক্ষে তিনি টানা আটঘন্টা বক্তৃতা দিয়ে অজ্ঞান হয়ে বিখ্যাত হয়ে গেলেন। তারপর বক্তৃতা করলেন পাকিস্থানের প্রতিনিধি জাফরুল্লা খান। মাত্র পাঁচ মিনিট। পরে বিষয়টি ভােটে দেওয়া হলে সমস্ত সদস্য ভোেট দিল পাকিস্থানকে। কৃষ্ণমেননের এই দীর্ঘ ছাগলাদ্য বক্তৃতার কোন প্রতিক্রিয়া হল না। এটাই স্বাভাবিক। ছাগলাদ্য শব্দটি অর্থবহ। কবিরাজরা বৃহৎ ছাগলাদ্য ঘৃত তৈরী করেন প্রজনন ক্ষমতাশূন্য ছাগল দিয়ে। ভারতের ছাগলাদ্য নেতারা তাই কিছু সৃষ্টিতে অক্ষম। হারানাে, ধ্বংস, আত্মাঘাতেএদের দারুণ সক্ষমতা।তাই সেদিন রাষ্ট্রসঙ্কোশ্মীর পাকিস্থানে চলে যাচ্ছিল কৃষ্ণমেননের কৃতিত্বে। ভেটো প্রয়ােগ করল রাশিয়া। তারা বলল কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, ভারতেই থাকবে। আজ অগ্নিগর্ভ হয়েও যেটুকু কাশ্মীর ভারতের সঙ্গে আছে বলা হয় এটা রাশিয়ার দয়ায়। রাশিয়া দাক্ষিণ্য দেখিয়েছিল অকারণে নয়, তার জাতীয় স্বার্থে। কাশ্মীর পাকিস্থানে গেলে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নির্মিত হবে মার্কিন ঘাঁটি। রাশিয়ার শিয়রে শমন চলে আসবে। এই কারণে কাশ্মীর রয়ে গেল ভারতে। | রাশিয়ান প্রতিনিধিরা কৃষ্ণমেননকে বললেন এভাবে আপনারা কাশ্মীরকে কতদিন ভারতে রাখতে পারবেন? ৩৭০ ধারার উচ্ছেদ করে দিন। ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে কয়েক লাখ হিন্দু এনে কাশ্মীরে বসিয়ে দিন। জনসংখ্যার অনুপাত বদল হলেই কাশ্মীরে ভারসাম্য ফিরে আসবে। ভারতের সমস্যা এবং সমাধান রাশিয়া বােঝে এবং সৎ পরামর্শ দেয়। ১৯৬৪ সালে ক্রুশ্চেভ, জহরলালকে একটা চিঠি লিখেছিলেন। আপনি ৩৭০ ধারা তুলে দিয়ে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান করতে চাইছেন না কেন? এরপর কিন্তু কাশ্মীর সমস্যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। এই কঠিন সত্য বাক্যেও কর্ণপাত করলেননা পন্ডিত জহরলাল নেহেরু। ভারতের কাধে চিরকালের জন্য চাপিয়ে দিয়ে গেলেন কাশ্মীর সমস্যাকে। ইন্দিরা গান্ধী ৭৯র নির্বাচনে কাশ্মীরে গিয়ে বলে এলেন, ৩৭০ ধারা আমরা প্রবর্তন করেছি। আমরা কি তুলতে পারি? ভারতবর্ষ হচ্ছে সেই বিচিত্র দেশ
ছাগলাদ্য নেতৃত্ব এবং কাশ্মীর
যেখানে প্রধানমন্ত্রীরাও ভােটের তুচ্ছ স্বার্থে ঐক্যবিরােধী সংবিধান বিরােধী উক্তি করতে পারেন। ৩৭০ ধারা একটি সাময়িক চুক্তি। তার অস্তিত্ব দীর্ঘ করা মানেই কাশ্মীরের চুড়ান্ত ভারতভুক্তি না হওয়া। এই সব ঘটনা নির্বিচারে চালানাের নাম এখন রাজনীতি। কাশ্মীর একটা পরীক্ষাক্ষেত্র ছিল মুসলমানদের কাছে। তারা যে সত্যি ভারতীয় অসাম্প্রদায়িক এবং ধর্মনিরপেক্ষ তার প্রমাণ দিতে পারতাে একজন হিন্দুকে মুখ্যমন্ত্রী করে। কোনাে রাজনৈতিক কর্মীর মনে এ প্রশ্ন জাগে । তার কারণ এদেশের রাজনৈতিক ক্ষেত্রের নেতা ও কর্মীরা ছাগলের মত শুধু সামনের খাদ্যটুকু দেখতে পায়। দূরের সর্বনাশ চোখে পড়ে না। এদেশের সাংবাদিক, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবিরাও একই দোষে দুষ্ট।এর পিছনে অবশ্য আছে দুটি কারণ। এক, কিছু ব্যক্তি আত্মবিক্রয় করেছেন পেট্রোডলারের কাছে। তারা ইসলামিক সাম্রাজ্যবাদের গতিপ্রকৃতিউদ্দেশ্য বিধেয় সব জেনেও কিছুই বলবেন ।
সব ঘটনার রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ঐতিহাসিক বিচিত্র বিশ্লেষণ করে ইসলামের প্রকৃত লক্ষ্যকে আড়াল করবেন। অন্য বড় গােষ্ঠীটির প্রকৃত অবস্থা বুঝতে না পারার কারণ ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতা। কোরাণ হাদিসে অমুসলমান মানুষ এবং অমুসলমান দেশের জন্য মুসলমানের ধর্মীয় কর্তব্য কি না জানা। কাশ্মীর সম্পর্কে আগাগােড়া ভুল নীতি অনুসরণ করার এও অন্যতম কারণ। শেখ আবদুল্লার মত একজন রাষ্ট্রদ্রোহী যিনি সর্বতােপ্রকারে দেশের ক্ষতিসাধন করে গেছেন, তাঁর মৃত্যুর পর প্রতিটি রাজনৈতিক নেতা এবং সাংবাদিকের মুক্তকচ্ছ আবেগ দেখেই পেট্রোডলার এবং অজ্ঞতা নামক ব্যাধিটি স্পষ্ট বােঝ যায়। এমন কোনাে গুণবাচক শব্দ ছিল না যা তার নামের সঙ্গে সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক নেতারা যুক্তকরেননি।ধর্মনিরপেক্ষতার মূর্তি, জাতীয় ঐকেন্দ্র প্রতীক, শের-ই-কাশ্মীর, কাশ্মীরের পিতা। নিজের পিতৃবিয়ােগে এতটা ব্যাথাকাতর দেখা যায় না মানুষকে, যতটা শেখ আবদুল্লার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে হয়েছিল। অথচ এই আবেগ ছিল মিথ্যে, উচ্ছাস ছিল কৃত্রিম।সকলেই জানেন তিনি একটুও ভারতপ্রেমী ছিলেন না। কাশ্মীর ভারতে যুক্ত হােক এতে তার মােটেই
ছাগলাদ্য নেতৃত্ব এবং কাশ্মীর
ইচ্ছা ছিল না। জুনাগড়ের প্রধানমন্ত্রী শাহনওয়াজ ভুট্টোর মত শেখ সাহেব জিন্নার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে যাচ্ছিলেন। শাহনওয়াজ ভুট্টো হচ্ছে জুলফিফার আলি ভুট্টোর পিতা এবং বেনজির ভুট্টোর ঠাকুরদা। সর্দার প্যাটেল জুনাগড়ে সেনা পাঠালে শাহনওয়াজ ভুট্টো পাকিস্থানে পালিয়ে যান। তখন ষড়যন্ত্রের নথিপত্র পাওয়া যায়।শাহনওয়াজ অফিসিয়ালি ভারতে যুক্ত হবার জন্য সরকারের সাথে কথা চালিয়ে যাচ্ছিলেন,অন্যদিকে গােপনে জুনাগড়কে পাকিস্থানের হাতে তুলে দেবার পাকা ব্যবস্থাকরেছিলেন কাশ্মীর দখল করে শেখ সাহেবকেক্ষমতায় বসাতে হবে এই নিশ্চয়তার দাবী প্রত্যাখ্যান করেছিলেন জিন্না। পাকিস্থান কাশ্মীর অধিকার করলে শেখ আবদুল্লার শুধু স্বপ্ন সমাধি নয়, সারাটি জীবন হয়তাে পাকিস্থানের জেলখানাতেই কাটাতে হতাে। তার লােকদেখানাে ভারতপ্রীতির এটাই আসল রহস্য।
কাশ্মীরের প্রতি তার ভালােবাসা কতটা খাঁটি তারও প্রমাণ রয়েছে তদানীন্তন ঘটনায়। পাক হানাদার বাহিনী যখন শ্রীনগরের দিকে এগিয়ে আসছে শের-ই কাশ্মীর তখন শেয়ালের মতই লুকিয়ে বিমানে চড়ে পালিয়ে এলেন ইন্দোর। তার শালার কাছে। তার শালা হােলকারের মহারাজার কাছে চাকরী করতেন। ভারতীয় ফৌজনা পৌছানাে পৰ্য্যন্ত অধ্যাপক বলরাজ মাধােক তার কলেজের কয়েকশাে ছাত্রকে নিয়ে শ্রীনগর রক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন। জনগণের মানােবল অক্ষুন্ন রেখেছিলেন। ভারতীয় বাহিনী পাক হানাদারদের যখন তাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে তখন শেখ শ্রীনগরে ফিরে এলেন।৪৭ সালের ২৭শে অক্টোবর ফিরেই তিনি একটি সভায় বললেন ঃ “কাশ্মীরের রাজার মুকুট আমরা ধূলায় মিশিয়ে দিয়েছি। আমরা ভারতে যাব কি পাকিস্থানে সেটা পরে বিবেচনা করা যাবে।” উজ্জ্বল অন্ধকারের মত শেখ সাহেবের আরাে ইতিহাস আছে। তার আমলেই কাশ্মীরে গীতা নিষিদ্ধ হয়েছিল। পাশ হয়েছিল পুনর্বাসন বিল। ১৯৪৮ সালে বেহেস্তে বাসের বাসনা নিয়ে যারা স্বেচ্ছায় পাকিস্থানে চলে গিয়েছিল তাদের জমি সম্পত্তিসহ নাগরিকত্ব দিয়ে পুর্নবসতি দেওয়া হয়েছিল।
এখান থেকে পড়ুন……………….ছাগলাদ্য নেতৃত্ব ও কাশ্মীর- শিবপ্রসাদ রায় (দ্বিতীয় পর্ব)
এটি একটি ধারাবাহিক তিন পর্বে পোস্ট, আজ প্রথম পর্ব বাকি পর্ব পড়ার জন্য নজর রাখুন আমদের পেজে।-ধন্যবাদ
ছাগলাদ্য নেতৃত্ব ও কাশ্মীর
লেখক- শিবপ্রসাদ রায়