ঘণ্টা বাজানো

হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী ঘণ্টা বাজানোর বিস্ময়কর রহস্য আপনি জানেন কি?

ঘণ্টা বাজানোর: হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী ঘণ্টা বাজানোর বিস্ময়কর রহস্য আপনি জানেন কি? এমন কোনও মন্দির নেই যেখানে ঘণ্টা নেই, প্রতিটি মন্দিরে প্রবেশ করার সময় আপনিও বহুবার ঘণ্টা বাজিয়েছেন।

তবে আপনি সম্ভবত এর পিছনের রহস্য জানেন না, এটি জানা আপনার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ কারণ আপনার চারপাশে প্রতিদিন ঘটে যাওয়া সমস্ত কিছু সম্পর্কে আপনার জানা উচিত।

হিন্দু মন্দিরে ঘণ্টা বাজানোর প্রথা প্রাচীন ঋষি-ঋষিরা শুরু করেছিলেন। এই ঐতিহ্য পরে জৈন, বৌদ্ধ ধর্ম এবং আর পরে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করে। যেখানে বৌদ্ধরা স্তূপে ঘণ্টা, সময়চক্র ইত্যাদি রাখে, সেখানে গির্জায়  ঘণ্টা স্থাপিত করে।

ঘণ্টা বাজানোর সময কখন

সাধারণত ঘণ্টা বাজানো হয় বিশেষ করে সকাল-সন্ধ্যা মন্দির ও বাড়িতে বা প্রার্থনার আচারে ঘণ্টা বাজানো হয়। কিন্ত এছাড়াও বাড়িতে বা কোন স্থানে আচার-অনুষ্ঠানে ঘণ্টা বাজানো হয়।

ঘণ্টা বাজলে কি হয়? 

স্কন্দপুরাণ অনুসারে মন্দিরে ঘণ্টা বাজলে মানুষের শত উদ্ধেগ নাশ হয়ে মনে প্রশান্তি আসে। সৃষ্টির সূচনা হলে যে ধ্বনি ছিল, সেই একই ধ্বনি ঘণ্টা বা গঙ্গার শব্দ থেকে নির্গত হয়। ওমকার পাঠের মাধ্যমেও একই ধ্বনি জাগ্রত হয়। ঘণ্টাটাকে সময়ের প্রতীকও মনে করা হয়। ধর্মীয় পণ্ডিতদের মতে, যখন বিপর্যয়ের সময় আসবে তখন এই ধরনের শব্দও শুনা দেবে।

বৈজ্ঞানিক ধর্মীয় ও ঘণ্টা বাজানোর গুরুত্ব

মন্দিরে ঘণ্টা বাজানোর পেছনে শুধু ধর্মীয় কারণ নয়, বৈজ্ঞানিক কারণও এর পিছনে রয়েছে। বিভিন্ন ধর্মে  ঘণ্টা বাজানো কারণ বিজ্ঞানীরা খোজ করেছেন। যার ফল দেখে বিজ্ঞানীরা অবাক হয়েছেন। 

ঘণ্টা বাজানোর বৈজ্ঞানিক কারণ-

ঘণ্টা বাজলে আমাদের জীবনেও এর বৈজ্ঞানিক প্রভাব পড়ে। প্রতিবেদন অনুসারে, যখন ঘণ্টা বাজানো হয়, তখন এটি শব্দের সাথে একটি উচ্চ কম্পন তৈরি করে। এই কম্পনগুলি আমাদের চারপাশে অনেক দূর যায়, যার সুবিধা হল অনেক ধরণের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হয়ে যায় এবং আমাদের চারপাশের পরিবেশ বিশুদ্ধ হয়। এই কারণেই মন্দির এবং এর আশপাশ অত্যন্ত পবিত্র বোধ হয়।

এছাড়াও আমাদের এই বায়ু মণ্ডলে সব সময় কোটি কোটি শব্দ ভেসে চলেছে যা আপনার আমার তৈরি। ঘণ্টা বাজালে ঐ সকল শব্দ আমাদের মস্তিক থেকে কিছু সময়ের জন্য হারিয়ে যায়। শুধু ঘণ্টা শব্দটি আমাদের মস্তিক শুনতে পাই যা আমাদের মস্তিকে ব্যাপক ভাবে প্রভাহিত করে । এতে নেতিবাচক শক্তি দূর হয়। নেতিবাচকতা দূর করে সমৃদ্ধির দরজা খুলে দেয়। যার কারণে আপনি আমি এক ধরনে শান্তি বা প্রশান্তি অনুভব করে থাকি।

ঘণ্টা বাজানোর ধর্মীয় কারণ-

হিন্দুধর্মে পূজার গুরুত্ব অপরিসীম, পাশাপাশি পূজা ঘণ্টার স্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ । মন্দিরের দরজাই হোক বা বাড়ির মন্দিরেই হোক ঘণ্টা থাকা গুরুত্বপূর্ণ। উপাসনালয় ও বিশেষ স্থানে ঘণ্টা বা ঘণ্টা রাখার প্রচলন আজকের নয়, প্রাচীনকাল থেকেই। ঘণ্টা বাজানোর পেছনে মানুষের বিভিন্ন মতবাদ রয়েছে। কিন্তু ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী ঘণ্টার রহস্য হল বিশেষ কিছু।

ঘণ্টা সম্পর্কত এই শ্লোকটি শাস্ত্রে আছে।

“আগামারধামতু দেবানাম গামানারধামতু রাক্ষসম

কুরু ঘন্টারাবাম ক্রুতা দেবতাবান লঞ্চনাম”

যার মানে আমি এই ঘন্টাটি বাজাচ্ছি…দেবতাদের আগমনের জন্যে আর অশুভ শক্তিদের গমনের জন্যে

ভগবানের আগমনের জন্যে, মূলতঃ ঘন্টা বাঁজানো হয়ে থাকে

 

১। এটা বিশ্বাস করা হয় যে আমরা যখন কোনও মন্দিরে প্রবেশ করি, তখন মন্দিরে উপস্থিত দেবতার অনুমতি পেতে বা তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য ঘণ্টা বাজানো হয়। 

২। মন্দিরের প্রবেশদ্বারে ঘণ্টা বা ঘণ্টা বাজানো দেবতাদের মূর্তির মধ্যে চেতনা জাগ্রত করে এবং পূজা-অর্চনাকে আরও কার্যকর করে তোলে।

৩। দেবতাদের খুশির জন্য ঘণ্টাও বাজানো হয়। কথিত আছে, তেবতারা ঘণ্টা, শঙ্খের এবং খোল ইত্যাদির ধ্বনি পছন্দ করে। ঘণ্টার শব্দে দেবতারা খুশি হন এবং ভক্তদের উপর তাদের আশীর্বাদ বর্ষণ করেন।

এই কারণেই মন্দিরে ঘণ্টা বাজানো হয়। সেজন্য মন্দিরে প্রবেশের সময় ঘণ্টাটি বাজাতে ভুলবেন না এবং ঘণ্টার নিচে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ঘণ্টা শব্দ উপভোগ করুন। আপনি চিন্তা ছাড়াই উজ্জ্বল হয়ে উঠবেন। ঘণ্টার শব্দে আপনার জীবনকে শান্তি ও সুখে ভরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে।

আর পড়ুন…