গঙ্গায় স্নান

গঙ্গায় স্নান করলে কি পাপ ধুয়ে যায়?

গঙ্গায় স্নান করলে কি পাপ ধুয়ে যায়?  মা পার্বতী শিবকে জিজ্ঞেস করলেন, গঙ্গায় ডুব দিলে কি সত্যিই পাপ ধুয়ে যায়?

* ভবানীশঙ্করৌ বন্দে শ্রাদ্ধা বিশ্বরূপীণৌ।
याभ्यां विना न पश्यन्ति सिद्धाः स्वन्तःस्थमीश्वरम्⁇ ॥

অর্থ:- আমি শ্রী পার্বতীজী ও শ্রী শঙ্করজীকে বিশ্বাস ও বিশ্বাসের মূর্ত প্রতীকরূপে পূজা করি, যাঁদের ছাড়া সিদ্ধগণ তাদের বিবেকে বিরাজমান ভগবানকে দেখতে পারেন না।

বলা হয় গঙ্গায় স্নান করলে পাপ নাশ হয়, কিন্তু যারা নিয়মিত গঙ্গায় স্নান করে তাদেরও পাপ করতে দেখা যায়। তা হলে কি তারা পাপ মুক্ত? 

একবার শিবাজী মহারাজ পার্বতীর সাথে হরিদ্বারে ঘুরছিলেন। পার্বতীজী দেখলেন হাজার হাজার মানুষ গঙ্গায় স্নান করে হর-হর বলছে কিন্তু প্রায়ই সবাই অসুখী ও পাপী। পার্বতীজী মহা বিস্ময়ের সাথে শিবজীকে জিজ্ঞাসা করলেন যে হে ভগবান! এতবার গঙ্গা স্নান করেও কেন তাদের পাপ-দুঃখ নাশ হল না? গঙ্গায় কি শক্তি ছিল না?’

শিব বললেন , প্রিয়! গঙ্গারও ক্ষমতা আছে, কিন্তু এই মানুষগুলো পাপনাশিনী হয়ে গঙ্গায় স্নান করেনি, তাহলে তাদের লাভ হবে কী করে?

পার্বতীজী অবাক হয়ে বললেন, “স্নান করনি কী করে? সবাই স্নান করে আসছে, এমনকি তাদের শরীর এখনো শুকায়নি।

শিব বললেন, ‘ওরা শুধু জলে ডুব দিয়ে আসছে। আগামীকাল আমি এর রহস্য ব্যাখ্যা করব।

পরের দিন প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়। রাস্তাঘাট কাদায় ভরা। চওড়া পথের মধ্যে একটা গভীর খাদ ছিল, চারিদিকে কাদা ভরা। শিব লীলা থেকে একজন বৃদ্ধের রূপ ধারণ করলেন এবং অসহয়ের মতো তিনি গর্তে পড়ে গেলেন, যেমন একজন মানুষ হাঁটতে হাঁটতে গর্তে পড়ে যায় এবং বের হওয়ার চেষ্টা করেও বের হতে পারে না।

তিনি পার্বতীজীকে গর্তের কাছে বসিয়ে বুঝিয়ে বললেন, ‘দেখ, তুমি লোকে এভাবে ডাকতে থাকে যে আমার বৃদ্ধ স্বামী হঠাৎ গর্তে পড়ে গেছে, এমন কোনো পুণ্যবান আত্মা কি আছেন? যে আমারর স্বামীকে গর্ত থেকে বের করে জীবন বাঁচাতে পারে এবং আমার অসহায়ের সাহায্য করতে পারে?

শিবজি আরও ব্যাখ্যা করলেন যে, যখন কেউ আমাকে গর্ত থেকে বের করে আনতে প্রস্তুত হবে, তখন আরও বলবে যে ‘ভাই, আমার স্বামী একেবারেই পাপহীন, তাকেই স্পর্শ করুন যিনি নিজে পাপহীন, যদি আপনি নিষ্পাপ হন তবেই তার হাত স্পর্শ করুন, অন্যথায় স্পর্শ করবেনা। যদি কোন পাপি ব্যাক্তি তাকে স্পর্শ করে তবে সে ধ্বংস হয়ে যাবে।’

পার্বতী ‘তথাস্তু’ বলে খাদের ধারে বসলেন এবং দর্শনার্থীদের শুনিয়ে শিব যা শিখিয়েছিলেন তা বলতে লাগলেন। গঙ্গায় স্নান সেরে দলে দলে মানুষ আসছে। সুন্দরী মেয়েটিকে এভাবে বসে থাকতে দেখে অনেকের মনে পাপ এসেছিল, অনেকে লজ্জায় ভয় পেয়েছে, কেউ ধর্মকে ভয় পেয়েছে, অনেকে ভয় পেয়েছে বিভিন্ন ভাবে।

কেউ কেউ পার্বতীজিকেও বলেছিল যে কেন সে তার বৃদ্ধ স্বামীর জন্য মরতে যাবে? সামনে আরও কিছু সদাচারী লোক ছিল, তারা করুণার বশবর্তী হয়ে মেয়েটির স্বামীকে বের করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু পার্বতীর কথা শুনে তারাও থেমে যায়। তারা ভাবল, আমরা যদিও গঙ্গায় স্নান করে এসেছি, তাতে কী হয়েছে, আমরা পাপী,উপকার করতে গিয়ে নিজে ধ্বংস ডেকে আনা ঠিক হবে না।

তাই কেউ সাহস করেনি। বহু মানুষ সাহায্য করেতে এসেছে, কিন্তু শর্ত  শুনে চলে গেছে। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। শিব বললেন, ‘পার্বতী! দেখেছে এর কি কেউ গঙ্গায় স্নান করতে এসেছে?’

কিছুক্ষণ পর এক যুবক হাতে পদ্ম নিয়ে এলেন, পার্বতী তাকে একই কথা বললেন। মমতায় ভরে উঠল যুবকের মন। তিনি শিবকে বের করার প্রস্তুতি নিলেন। পার্বতী থেমে গিয়ে বললেন, ‘ভাই, তুমি যদি সম্পূর্ণ পাপমুক্ত না হও তবে আমার স্বামীকে স্পর্শ করলেই তুমি পুড়ে যাবে।’

যুবকটি কথা শুনে কোনো দ্বিধা না করে পার্বতীকে দৃঢ় সংকল্পে বললেন, ‘মা! আমার নির্দোষতা নিয়ে সন্দেহ কেন? গঙ্গায় স্নান করেই যে এসেছি, দেখছি না। আচ্ছা, গঙ্গায় ডুব দিলেও কি পাপ থেকে যায়? আমি তোমার স্বামীকে বের করে দেব।’

যুবকটি ধরে বৃদ্ধকে উপরে তুলল।  শিব-পার্বতী তাকে কৃতজ্ঞতার সাথে তাদের আসল রূপ প্রকাশ করলেন এবং তাকে দর্শন দিলেন। শিব পার্বতীকে বললেন, ‘এত লোকের মধ্যে এই একজন গঙ্গায় স্নান করেছে।’

এই দৃষ্টান্ত অনুসারে, যারা কেবল অহংকারে বিশ্বাসে গঙ্গায় স্নান করে, তারা প্রকৃত ফল পায় না, কিন্তু এর মানে এই নয় যে গঙ্গা স্নান বৃথা। বিশ্বাস সহকারে গঙ্গা স্নান করলে প্রকৃত ফল পাওয়া যায়।

*বিনিশ্চিতম্ বদামি তে না অন্যথায় বচনসি।
হরিম নরা ভজন্তি য়তিদুষ্ট্রম তারন্তি তে
অর্থ:- আমি তোমাকে একটি সুনির্দিষ্ট নীতি বলি- আমার কথা অন্যথায় (মিথ্যা) নয় যে, যারা শ্রী হরির উপাসনা করে, তারা (স্বতঃস্ফূর্তভাবে) জগতের অতি খারাপ সমুদ্র অতিক্রম করে।

আমাদের পাশে থাকতে একটি লাইক দিয়ে রাখুন।-ধন্যবাদ

আরো পড়ুন…