একজন কিশোর কুমার দাস বনাম রাইসু গংদের সাম্প্রদায়িক ইতরামী।

“বিদ্যা” আর “আনন্দ” এই শব্দ দুটি থেকেই তৈরি হয়েছে সংগঠনটির নাম। রাখা হয়েছিলো “বিদ্যানন্দ”.। সংগঠন টির মূল উদ্দেশ্য ছিল আনন্দ সাথে বিদ্যাচর্চার।  সেই ভাবনা থেকেই এই নামকরণ করা হয়েছিল । কিন্তু দুঃখের বিষয় অনলাইন জগতের বিখ্যাত নর্দমার কীট ব্রাত্য রাইসু সেই সংগঠনের নামটি কে এমনভাবে বিকৃত করে উপস্থাপন করেছে সেটা একটা অসাম্প্রদায়িক চেতনা সমাজের জন্য দেশের জন্য বড ভয়ঙ্কর । তার বক্তব্য অনুযায়ী এই  বিদ্যানন্দ নামটি  ভারতের বর্তমান সরকার  বিজেপির হিন্দুত্ববাদের  আইকন বিবেকানন্দের নাম অনুসারে করে রাখা হয়েছে। 

কিন্তু আমরা যদি এই সংগঠনের সৃষ্টি লগ্ন থেকে তাদের সবকিছু পর্যালোচনা করি তবে দেখতে পারি যে এই সংগঠনটি গঠনের পিছনে তাদের একটা উদ্দেশ্য ছিল সেটা হল দেশের দরিদ্র মানুষদের কাছে শিক্ষা পৌঁছিয়ে দিয়া।  এই সংগঠনটি যে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি হলেন বাঙ্গালী প্রকৌশলী কিশোর কুমার দাস। তিনি দক্ষিণ আমেরিকার পেরুতে বাস করতেন যেহেতু তিনি পেশায় প্রকৌশলী ছিলেন সেতু একটা পর্যায়ে এসে অল্প সময়ের মধ্যে অনেক টাকা ইনকাম করেন। সে ছোটবেলায় অনেক দরিদ্রতার মধ্যে দিয়ে বড় হয়েছেন।সে খাবারের কষ্ট কি  জিনিসটা জানতো।  তার শিক্ষা অর্জনের সময় সে শুধু অর্থের কারণে অনেক ধরনের প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে বড় হয়েছে এই কারণেই জানো আমাদের সমাজে মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে কিছু করতে পারেন সেই চিন্তা থেকেই তার এই প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু করেছিলেন।

 সবচাইতে মজার বিষয় হলো যে তার এই প্রতিষ্ঠানের 90% মানুষ মুসলিম সম্প্রদায়ের। প্রথমদিকে সংগঠনটি পথ শিশুদের শিক্ষা দান করার মূল উদ্দেশ্য থাকলেও  পরবর্তীতে সংগঠনটি তাদের কার্যক্রম বৃদ্ধি করে এক টাকায় একবেলা খাবারের ব্যবস্থা প্রকল্প চালু করে। সাম্প্রতিক সময়ে  বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস দেখা দিলে সংগঠনটি প্রতিদিন 21 হাজার মানুষের কাছে খাবার পৌঁছে দেয়ার  কর্মসূচি হাতে নেয়। আমরা বিভিন্ন সংগঠন থেকে দেখেছি তাদের এই উদ্যোগকে সহযোগিতা করেছেন দেশের সেনাবাহিনী পর্যন্ত।

শুধু দেশের মানুষের কাছে ত্রাণ সামগ্রী দেই তারা এই মহাসংকটে বসে নাই। সংগঠনটি এই পরিস্থিতিতে দেশের নার্স এবং ডাক্তার দের জন্য পিপি তৈরি করেছে। ঢাকা শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে হ্যান্ড ওয়াশ করার জন্য বেসিনের ব্যবস্থা করেছে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল যাতে করে সাধারণ পথচারীরা তাদের প্রয়োজনমতো ওই স্থান থেকে হাতটা  ধৌত  করতে পারে। সেই সাথে তারা রাস্তাঘাটে বিভিন্ন জায়গায় জীবাণুনাশক স্প্রে করেছেন যাতে করে মানুষজন কিছুটা হলেও নিরাপদ থাকতে পারে।  এই রমজান মাসে হতদরিদ্র মানুষের জন্য সেহরী এবং ইফতারের ব্যবস্থা করেছেন।

 এই মহান দেশ প্রেমিক মানুষটির হাত ধরে বিদ্যানন্দ নামক সংগঠনটি এই মহৎ কাজ গুলো প্রতিনিয়ত করে তুলেছে। সাম্প্রতিক সময়ে তাদের এই সংগঠনে দেশের একটা বিদ্যমান সমাজ বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক সাহায্য করে থাকে। কিন্তু লোক এই সাহায্য গুলোকে ভালোভাবে দেখছিল না কারণ বিদ্যানন্দ যদি না থাকতো তাহলে এই অর্থ তাদের হাতেই   যেত। সেই ধারণা থেকেই তারা এই সংগঠনের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে উঠে পড়ে লেগেছিল।  গত দুই বছর ধরে সংগঠনটি বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে চলে ছিল। কিশোর কুমার দাস যার ধারাবাহিকতায় সাম্প্রতিক সময়ে সংগঠন থেকে পদত্যাগ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। 

আর তার প্রতিদান পেলেন তিনি ব্রাত্য রাইসুদের মতো আবর্জনাদের কাছ থেকে “হিন্দুত্ববাদী বিবেকানন্দ” অভিধায় ভূষিত হয়ে!! আর যে কথিত “হিন্দুত্ববাদী বিবেকানন্দের” কারণে রাইসু সাহেবের অনুভূতি একেবারে আহত হতে হতে নিহত হয়ে যায় , সেই বিবেকানন্দের প্রতিষ্ঠিত রামকৃষ্ণ মিশনই কিন্তু কয়েকদিন আগে দেখা গেছে হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে সকলের মাঝে একইহারে ত্রাণ বিতরণ করতে। আর অন্যদিকে এই ত্রাণ বিতরণের কাজ করতে গিয়েই আজ স্বামীবাগ ইসকন মন্দিরের সদস্যরা হয়েছেন করোনা আক্রান্ত। অন্যদিকে জাতির এই মহাদূর্যোগে ফেসবুকে আবর্জনা ছড়ানো ছাড়া রাইসু সাহেবের নিজের ভূমিকা কতটুকু ছিলো সেটা জানতে খুব ইচ্ছে করে।

এই মানুষটির মানুষের কাছে কিছুই চাওয়ার ছিল না শুধু মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে মানুষের সহযোগিতা করায় তার মূল উদ্দেশ্য ছিল। সে কখনোই কোনো রাজনৈতিক মঞ্চে দাঁড়িয়ে নিয়ে নেতাদের মতন বড় বড় বক্তব্য বা ভাষণ দেয় নাই।ভন্ড ফেসবুক সেলিব্রেটি দের মত নিজেকে তুলে ধরতে চায় না। কিন্তু সমাজের  বুদ্ধিজীবী নামের  কিছু কিট এই না চাওয়ার পিছনেও কিন্তু দাঁড় করিয়ে একটা সাম্প্রদায়িক রূপ দেয়ার চেষ্টা করে চলেছে।

এ দেশের কিছু সংখ্যক মানুষ এই মহান মানুষটির মহান কাজকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলার জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের সাম্প্রদায়িকতার রূপ দেয়ার চেষ্টা করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বড় যে মিথ্যা প্রচার তার বিরুদ্ধে করা হয়েছে সেটা হলো তার প্রতিষ্ঠানের নাম। বলা হচ্ছিল যে তার প্রতিষ্ঠানের নামটা স্বামী বিবেকানন্দের নাম থেকে নেয়া। স্বামী বিবেকানন্দ বর্তমান ভারতের বিজেপি সরকারের আইকন । আর বিজেপি সরকার যেহেতু হিন্দুত্ববাদী সরকার । সেহেতু   এই সংগঠনটি   বিজেপির এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য কাজ করছে। 

এদেশের কিছ সংখ্যক মানুষ সর্বদাই অনলাইনে অফলাইনে সচেষ্ট থাকেন হিন্দুদের ছিদ্রান্বেষণে। ব্রাত্য রাইসু , তুহিন মালিক , ইলিয়াস হোসেইন, মুফাসসিল ইসলাম , ফরহাদ মঝহারদের মতো একটি গোষ্ঠী সবসময়ই সচেষ্ট থাকেন এই কাজটিতে। মাত্র ৭ ভাগ হিন্দু জনগোষ্ঠীর কারণে দুশ্চিন্তায় দিনরাত নিজেদের আরামের ঘুম হারাম করে ফেলেন তারা। কারণ “হিন্দুত্ববাদী” “ভারতীয় বিজেপি” ইত্যাদি শব্দগুলো বেশ জেহাদী জোশের সৃষ্টি করে এদেশের অশিক্ষিত আর কুশিক্ষিত জনগণের মধ্যে। পহেলাবৈশাখ এর মঙ্গল শোভাযাত্রার মাঝে তারা খুঁজে বেড়ান হিন্দুয়ানী , সম্পূর্ণ অহিংসভাবে কর্মকাণ্ড চালানো ইসকনের মাঝে খুঁজে পান উগ্রপন্হী হিন্দুত্ববাদ। 

আমাদের মহান জাতীয় সংগীত “আমার সোনার বাংলা”কে বদলে দাবী তোলেন মুহিব খানের “ইঞ্চি ইঞ্চি মাটি”গানটিকে জাতীয় সংগীত করার্। কারণ “আমার সোনার বাংলা” যে কবিগুরুর লেখা। এরা এটাও জানেনা যে , কবিগুরু হিন্দু ছিলেন না , ছিলেন ব্রাম্ম।  ঠিক এই একই কারণে নির্জলা মিথ্যাচার করা হয় যে কবিগুরু “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন”

কিন্তু তাতে কি? উস্কানি দিতে গেলে এসবইতো বলতে হবে , তাইনা?

“বিদ্যানন্দ” আর “কিশোর কুমার দাশ” কে নিয়ে যা ঘটে গেলো , তা শুধু এরই ধারাবাহিকতা মাত্র। নাহলে যেদেশে সরকারি চাল , তেল আত্মসাৎ করে নেতারা পুলিশের হাতে ধরা পড়েন আর ধিকৃত হন “চোর” হিসেবে , যে দেশে হুজুরেরা “মুসলমানদের করোনা হয়না , করোনা হয় কাফেরদের” বলে মানুষকে মিথ্যা বুঝিয়ে , বর্তমানে নিজেরাই লুকিয়ে পড়েছেন গর্তে জীবন বাচাঁনোর প্রয়োজনে । সে দেশে একজন কাফের “মা……উন” দেশপ্রেম আর মানবতাবাদ দেখিয়ে , জাতি , ধর্ম , বর্ণ নির্বিশেষে সকলের কাছে হয়ে উঠেছেন ভালোবাসার পাত্র , এতো বড় কস্ট কি আর সহ্য করা যায় বলুন???

“পাক সার জমিন সাদ বাদ” উপন্যাসটি লেখায় চাপাতি হামলার শিকার হন হুমায়ূন আজাদ , যা তাঁকে পরবর্তীকালে ঠেলে দেয় মৃত্যুর মুখে। কিন্তু সেই উপন্যাসে যে ভবিষ্যৎ বাঙলাস্তানের কথা।তিনি লিখে গিয়েছিলেন , তারই আরেকটি বাস্তব প্রমাণ হিসেবে লিখিত হলো বিদ্যানন্দের ঘটনাটি।

হুমায়ূন আজাদের আগে , কথাসাহিত্যিক আনিসুল হকও লিখে গিয়েছিলেন সেই ভবিষ্যতের কথা তাঁর “অন্ধাকারের একশ বছর” উপন্যাসে। আনিসুল হক সাহেব বুদ্ধিমান। তাই রিএকশন দেখে পড়ে আর সেই পথ মাড়াননি তিনি। তাই হয়তো তাঁর ভোগ করতে হয়নি হুমায়ূন আজাদ , কার্টুনিস্ট আরিফ বা অভিজিৎ রায়দের দূর্ভাগ্য।

এক অন্ধ সমাজের কাছে মাথা নত করতে করতে পিঠে কুজ গজিয়ে গেছে এই জাতির্। চাইলেও শত চেষ্টা করেও আর সেই মেরুদন্ড সোজা করার ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করার ক্ষমতা নাই। যে জাতি 50 বছর আগে এক সংগ্রামের মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক চেতনা থেকে জন্ম দিয়েছিল বাংলার। সে জাতি আজ ধীরে ধীরে অন্ধকার দিকে ধাবিত হয়ে চলেছে। আমাদের প্রজন্মের চোখের সামনেই আস্তে আস্তে হুমায়ূন আজাদ স্যারের কথিত সেই “বাঙলাস্তানই” হয়ে গেলো আমাদের নেতৃত্বের মেরুদণ্ডহীনতার কারণে। এখন শুধু নীরবে দেখে যাওয়া ছাড়া আর কিছুই করার নেই আমাদের্।

“সবকিছুই নস্টদের অধিকারে চলে গেছে”