হিন্দু ,কখনো অন্যের ভূমি দখল করেনি, ক্রমাগত নিজের ভূমি হারিয়েছে।-সোজাসাপ্টা

মরুদস‍্যুরা ভারতবর্ষ দখল করে নেওয়ার পর,ভারতের ভূমি সন্তানরা তাদের নিজ-ভূমিতে সমস্ত মানবিক মর্যাদা হারিয়ে, গবাদিপশুতুল‍্য ঘৃণিত প্রাণীতে পরিণত হয়েছিল। হিন্দুরা কখনো অন্যের ভূমি দখল করতে পারেনি, ক্রমাগত নিজের ভূমি হারিয়েছে। নিশ্চয়ই ভারতের ভূমিসন্তানদের অনেক ব‍্যর্থতা ও অযোগ্যতা ছিল ; আর যারা বিদেশ থেকে এসে ভারত ভূমি জবরদখল করেছিল, তাদেরও অবশ্যই কিছু বাড়তি যোগ্যতা ছিল। দখলদার মরুদস‍্যুরা হিন্দুদের থেকে দৈহিক শক্তি ও বুদ্ধি বলে যদি এগিয়ে না থাকতো, তাহলে তারা হিন্দুদের নিকট থেকে ভারতভূমি ছিনিয়ে নিতে পারত না। 

 

হিন্দুরা দৈহিক শক্তি ও বুদ্ধি বলে কেন পিছিয়ে ছিল?
হিন্দুদের দৈহিক শক্তি কম থাকার কারণ – তাদের ভ্রান্ত আধ‍্যাত্মিক মতাদর্শের প্রভাবে গড়ে ওঠা পুষ্টিহীন-খাদ্যাভ্যাস। যেমন দখলদার মরুদস‍্যুরা মাংস খেত, আর হিন্দুরা কুসংস্কারবশত পান করত গোমূত্র। গোমূত্রের মধ্যে থাকা রোগজীবাণু সংক্রমণে হিন্দুরা অসুস্থ হয়ে যেত। রুগ্ন শরীর নিয়ে হিন্দুরা কিভাবে গরুখেকো – শক্তিধরের বিরুদ্ধে লড়াই করে মাতৃভূমি রক্ষা করবে! শরীরে শক্তি কম থাকায়, হিন্দুদের মনে সাহস কম ছিল। একজন দুর্বল ভীতু মানুষ, সহসা প্রচলিত চিন্তার বাইরে গিয়ে, নতুন কোন সৃজনশীল ভাবনা ভাবতে পারে না।

 

হিন্দুরা কেন তাদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকা দিয়ে পুষ্টিকর খাবার গুলো বাদ দিয়েছিল? 
কারণ হিন্দু আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্বরা ঐ সময় প্রচার করতো – ‘জগৎ মিথ্যা তত্ত্ব’। হিন্দু ধর্মগুরুরা বলে বেড়াত, ‘ইহ জগতের মায়ায় বিভ্রান্ত হয়ো না ; তোমরা কামনা-বাসনা পরিত্যাগ করে পরকালমুখী হও ; বিষয়-বাসনা ত্যাগ করতে উত্তেজক খাবার পরিহার করো ; উপবাস ও কাম দমনের মাধ্যমে দেহকে কষ্ট দিয়ে ঈশ্বরকে খুশি করো – স্বর্গে পৌঁছার টিকিট নিশ্চিত হয়ে যাবে।’

খ্রিস্টান ও মুসলমান ধর্মগুরুরা তাদের ধর্ম প্রচারে অনবদ্য ভূমিকা রাখলেও, সনাতন ধর্মালম্বী আধ্যাত্বিক ব্যক্তিত্বদের ভূমিকা ছিল যথেষ্ট হতাশাজনক।  খ্রিস্টান ও মুসলমান ধর্মগুরুরা, বাইরে থেকে নিজ ধর্মের লোক এনে – স্বজাতির সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে ; পক্ষান্তরে হিন্দু ধর্মগুরুদের কাজই ছিল যেন – সামান্য ত্রুটি-বিচ‍্যুতি পেলেই হিন্দুসমাজ থেকে লোক তাড়ানোর।

 

হিন্দু আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্বরা নারীদের উপর কঠোর বিধিনিষেধের জোয়াল  চাপিয়ে দিয়েছিল। যে নারীরা সন্তান জন্ম দিয়ে সৃষ্টি টিকিয়ে রেখেছে, সেই নারীদের মৃত স্বামীর চিতায় জীবন্ত অবস্থায় পুড়িয়ে মারার শাস্ত্রীয় বিধান দেওয়া হয়। বিধবা নারীদের পুনর্বিবাহ কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়। অকাল বিধবা নারীদের পুড়িয়ে মারা ও পুনরায় বিয়ে না দেওয়ার ফলে – হিন্দু শিশু জন্মহার সাংঘাতিক রকম ভাবে কমে যায়। হিন্দু আধ‍্যাত্মিক ব‍্যক্তিত্বরা নারীদের শিক্ষা ও সম্পত্তির অধিকার থেকে সম্পূর্ণ ভাবে বঞ্চিত করে রাখে।

দীর্ঘ পরাধীনতার মতো ভয়াবহ রাষ্ট্রীয় বিপর্যয় সত্বেও, হিন্দু ধর্মগুরু ও আধ‍্যাত্মিক ব‍্যক্তিত্বদের  সামান্যতম শিক্ষা হয় নি। রাজা রামমোহন রায় যখন সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ করার জন্য লড়াই করছিলেন, তখন সমস্ত ধর্মগুরু ও আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্বরা রাজা রামমোহন রায়ের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রোশে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর যখন বিধবা বিবাহ প্রচলন-এর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন, তখনও সমস্ত ধর্মজীবীদের হিংস্র নখদন্ত বেড়িয়ে এসেছিল।

 

অকালকুষ্মাণ্ড ধর্মজীবীরা আজকের এই আধুনিক যুগেও হিন্দুজাতির চরমতম সর্বনাশ করে যাচ্ছে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের সুফল-সমূহ প্রকৃষ্টরূপে প্রতিভাত হওয়া সত্ত্বেও, অর্থবান হিন্দুরা – ওই সমস্ত পরগাছা ধর্মগুরুদের সযত্নে সমাজে টিকিয়ে রেখেছে। ধর্মগুরুরা নিজেদের ব‍্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য, মান্ধাতার আমলের চিন্তা-চেতনা হিন্দু-সমাজে জিয়িয়ে রেখে হিন্দু জাতিকে আরন‍্যক-অন্ধকার যুগে ফিরিয়ে নিতে চাইছে। 

এই সকল ধর্মজীবীরা ব‍্যক্তিস্বার্থে ভ্রান্ত-তত্ত্ব প্রচার করে, সাধারণ হিন্দুদের  মগজ পচিয়ে দিচ্ছে। এই অর্বাচীনেরা হিন্দু সমাজে বর্ণভেদ প্রথা সুকৌশলে টিকিয়ে রেখেছে ; যার ফলে হিন্দুজাতি সমমর্যাদায় ঐক্যবদ্ধ হতে পারছে না। মূর্খ ধর্মগুরুগুলো তীব্র নারী-বিদ্বেষ প্রচার করে চলেছে – যার ফলে হিন্দুরা ব্যাপকহারে মাতৃগর্ভে নারী-শিশু ভ্রূণ হত্যা করছে। বেপরোয়া নারী শিশুর ভ্রূণ হত্যার  ফলে, ভারতে হিন্দু নারীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাচ্ছে। হিন্দু নারীর সংখ্যা কমে যাওয়া মানেই হচ্ছে,হিন্দু শিশুর জন্মহার কমে যাওয়া। কাজেই সমস্ত হিন্দুর বোঝা উচিত, ভারতে হিন্দু জনসংখ্যা-হার কমে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে – কাণ্ডজ্ঞানহীন ভাবে ব্যাপক নারী শিশুর ভ্রূণ হত্যা করা।
  

যেহেতু ভারতে হিন্দু পুরুষের তুলনায় হিন্দু নারীর সংখ্যা অনেক কমে গেছে ; এই সুযোগে শত্রুপক্ষ হিন্দু নারীদের টার্গেট করে, ‘লাভ জিহাদ’ ও ‘যৌন জিহাদ’- নামক বিশাল ষড়যন্ত্র-জাল বিস্তার করেছে। মধ‍্যপ্রাচ‍্যের পেট্রো ডলারে পরিপুষ্ট শত্রুপক্ষের সুদর্শন যুবকরা, ধর্মনিরপেক্ষতার মুখোশ পরে – হিন্দু তরুণীদের কাছে গিয়ে, প্রথমে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে ফাঁসাচ্ছে।  শিকার ফাঁদে ফেলে – হিন্দু মেয়েদের ধর্মান্তরিত হতে চাপ দেওয়া হয়। যে হিন্দু মেয়েরা ধর্মান্তরিত হতে রাজি না হয়, তাদের নির্মমভাবে যৌন নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। 

স্বেচ্ছায়-অনিচ্ছায় বা  প্রাণের মায়ায়, যে সমস্ত হিন্দু মেয়েরা ধর্মান্তরিত হয়ে, বিধর্মী যুবকদের বিয়ে করতে রাজি হয় ; ওই হিন্দু মেয়েদের গর্ভে যতগুলো সম্ভব অহিন্দু সন্তান জন্ম দিয়ে – ওই মেয়েদের তাড়িয়ে দিয়ে অথবা মেরে ফেলে – ধর্মান্তরের যৌনযোদ্ধারা, নতুন নতুন হিন্দু মেয়েদের ফাঁদে জড়ায়। ভিন্নধর্মের ধর্মান্তরকামী যৌন-যোদ্ধাদের সুগভীর চক্রান্ত, সাধারণ হিন্দুরা আঁচ করতে পারছে না। হিন্দু ধর্মগুরুদের ‘যত মত তত পথ’- ‘সর্বধর্ম সমন্বয়’ ইত্যাদি মুখরোচক বাণীতে বিভ্রান্ত হয়ে, সাধারণ হিন্দুরা ওই সকল যৌন-যোদ্ধাদের নিজ ঘরে প্রবেশ করতে দিচ্ছে।

 

কন্যা-শিশু ভ্রূণ হত্যার কবল থেকে বেঁচে যাওয়া হিন্দু মেয়েরা লাভ জিহাদ ও যৌন জিহাদের শিকার হয়ে বিধর্মী সন্তান জন্ম দিচ্ছে ; ফলে হিন্দু সন্তান জন্ম দেওয়ার মতো নারীদের সংখ্যা দিনকে দিন কমে যাচ্ছে। এই সুগভীর ষড়যন্ত্রের ফলে, ভারতে বৃদ্ধি পাচ্ছে অহিন্দুর সংখ্যা – কমে যাচ্ছে হিন্দুর সংখ্যা। হিন্দু নারীদের তিলে তিলে ধ্বংস করে দেওয়া  তথা হিন্দুজাতিকে দীর্ঘমেয়াদে নিশ্চিহ্ন করে ফেলার গভীর ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে – ধর্মান্তরকামী যৌন-যোদ্ধাদের সুরক্ষা  দিতে, ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিবিদরা বহু শক্তিশালী আইনি হাতিয়ার তৈরি করে রেখেছে। এই ভয়াবহ সঙ্কট থেকে উত্তরন তথা হিন্দু জাতির অস্তিত্ব রক্ষায়, রাষ্ট্র বিপ্লবের বিকল্প নেই।

আমাদের সাথে থাকতে একটি লাইক দিয়ে রাখুন, ধন্যবাদ………….

রচয়িতা
কৃত্তিবাস ওঝা
লেখক: ইতিহাস গবেষক, সমালোচক এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় জনপ্রিয় এক্টিভিস্ট।