বিশ্বের-বৃহত্তম-গির্জাটি

বিশ্বের বৃহত্তম গির্জাটি হয়ে গেল মসজিদ : অথচ সেক‍্যুলাররা চুপ- কৃত্তিবাস ওঝা

                                       লেখক-কৃত্তিবাস ওঝা,ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষক।

বিশ্বের বৃহত্তম গির্জাটি হয়ে গেল মসজিদ : অথচ সেক‍্যুলাররা চুপ । তুরস্কের ইসলামপন্থী প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোগান পৃথিবীর বৃহত্তম গীর্জা আয়া সোফিয়াকে মসজিদে রূপান্তরিত করার নির্দেশনামায় সই করার পর, তুরস্কের বৃহত্তম নগরী ইস্তাম্বুলের আয়া সোফিয়ায় আজান দেয়া হয়েছে।

 

ঐতিহাসিক গির্জাটিকে মসজিদে পরিনত করার সিদ্ধান্ত জানার পর, গত শুক্রবার (১০-০৭-২০২০খ্রিঃ) তুরস্কের বিশাল সংখ্যক ইসলাম ধর্মাবলম্বী আয়া সোফিয়ার সামনে সমবেত হয়। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আয়া সোফিয়ার বাইরে সালাত ( নামাজ) আদায় করেছে এবং সরকারের এই চরমতম সাম্প্রদায়িক সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে৷

 

বিশ্বের বৃহত্তম গির্জাটি

ষষ্ঠ শতকে বাইজেন্টাইন সম্রাট জাস্টিনিয়ানের সময়ে নির্মাণ করা হয় খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের পৃথিবীর বৃহত্তম উপাসনালয় আয়া সোফিয়া গির্জাটি। ১৪৫৩ সালে কনস্টান্টিনোপল জয়ের পর অটোমান খলিফা দ্বিতীয় সুলতান মাহমুদ, স্থানীয় খ্রিষ্টানদের কচুকাটা করার পর এই গির্জাটিকে মসজিদে রূপান্তরিত করেছিলেন। আধুনিক তুরস্কের স্থপতি মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক এটিকে জাদুঘরে পরিণত করেন ১৯৩৫ সালে৷ এরপর থেকে অসাম্প্রদায়িক তুরস্কের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে আসছিল আয়া সোফিয়া গির্জাটিকে।

 

তুরস্কের এই চরম সাম্প্রদায়িক পদক্ষেপ,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গেই শুধু নয়, তুরস্কের চিরাচরিত শত্রু গ্রিসের সাথেও তুরস্কের সম্পর্কের অবনতি ঘটাতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে প্রেসিডেন্ট এরদোগানের উদ্যোগে রাশিয়ার সঙ্গে যে সম্পর্কের উন্নতি হয়েছিল,তাও নষ্ট হয়ে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।

বিশ্বের বৃহত্তম গির্জাটি

বিশ্বের বৃহত্তম গির্জাটি হয়ে গেল মসজিদ

এই জঘন্য পদক্ষেপ গৃহীত হওয়ার পর, গ্রিস তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জানায়, সভ্য সমাজকে খোলাখুলি ভাবে সহিংসতার দিকে উস্কিয়ে দিচ্ছে মুসলিম প্রধান উগ্র সাম্প্রদায়িক দেশ তুরস্ক।গ্রিসের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী লিনা মেনদনি বলেন, “প্রেসিডেন্ট এরদোগানের এই পদক্ষেপ তুরস্ককে ছয় শত বছর পিছিয়ে দিলো।”

প্রচণ্ড ক্ষোভ প্রকাশ করেছে রাশিয়ার অর্থোডক্স গির্জা। গির্জার মুখপাত্র ভ্লাদিমির লেগয়ডা জানিয়েছেন, “শত শত কোটি খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের কথা না ভেবেই, তুরস্ক এই ভয়ঙ্কর সাম্প্রদায়িক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বার বার অনুরোধ করা হয়েছিল, এই বিষয়ে কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিষয়টি ভালো ভাবে বিচার-বিবেচনা করে দেখা হয়। বোঝাই যাচ্ছে, কোনও অনুরোধেকেই পাত্তা দেওয়া হয়নি,সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে।”

 

UNESCO-র প্রধান অড্রি আজুলে বলেন, “ইউএন-এর সংস্কৃতি বিভাগের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই এই বিতর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে তুরস্ক।”

এই সাম্প্রদায়িক সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা এবং কড়া সমালোচনা করেছে ইউএস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম। তাদের মতে, ঐতিহাসিক আয়া সোফিয়া সৌধটি নোংরা সাম্প্রদায়িক রাজনীতির শিকার হলো। তুরস্কের এই চরম সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষমূলক সিদ্ধান্তে, পৃথিবীতে প্রতিবাদের ঝড় উঠলেও ভারতের সেক‍্যুলাররা রহস্যজনক ভাবে চুপ। যে সমস্ত পাকিস্তানি অনুপ্রবেশকারী রাম মন্দিরের বিরুদ্ধে ধর্মনিরপেক্ষ নীতিকথার ফুলঝুরি ঝরাতো, তারা হঠাৎ আমূল পাল্টে গিয়ে তুরস্কের এই ন‍্যক্কারজনক সাম্প্রদায়িক সিদ্ধান্তের পক্ষে গিয়ে কাপড় তুলে ড্যান্স দিচ্ছে।

 

বিশ্বের বৃহত্তম গির্জাটি

প্রশ্ন হচ্ছে, উগ্র সাম্প্রদায়িক এরদোয়ানের নেতৃত্বে তুরস্ক কি বিধর্মী-হত্যার সেই অন্ধকার যুগে ফিরে যাচ্ছে? মাত্র এক শতাব্দী আগেও, তুরস্কের চরম সাম্প্রদায়িক খলিফার নির্দেশে, খ্রিষ্ট ধর্মালম্বী আর্মেনিয়ার ৮৫% অধিবাসীদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। পলায়নরত আর্মেনীয় খ্রিষ্টানদের সিরিয়া ও ইরাকের মরুভূমির মধ্যে ফেলে, মধ্যযুগীয় কায়দায় অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়। সম্প্রতি তুরস্কের মদতপুষ্ট নব‍্য খেলাফতপন্থী ‘আই এস’ – কর্তৃক বিধর্মী ইয়াজিদি ও খ্রিষ্টানদের উপর একই ধরনের নৃশংস গণহত্যা ও গণধর্ষণ সংগঠিত হয়েছে – সেই ইরাক ও সিরিয়ার মরুভূমিতে। মধ্যযুগীয় সাচ্চা খেলাফত ফিরিয়ে আনতে – আই এস জঙ্গিরা, ইয়াজিদি ও খ্রিষ্টান পুরুষদের ক্রীতদাস এবং নারীদের যৌনদাসী হিসেবে ক্রয়-বিক্রয় করেছে।

 

আই এস জঙ্গিদের কাছ থেকে যে সমস্ত অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে, তা সমস্তই তুরস্ক কর্তৃক সরবরাহকৃত। মরু ডাকাতদের বিকৃত মস্তিষ্ক উদ্ভাবিত গণহত্যা ও গণধর্ষণের মতাদর্শ বাস্তবায়নে এরদোগানের তুরস্ক – সহযোগী হিসেবে পাশে পেয়েছে পাকিস্তান ও ভারতীয় সেক‍্যুলারদের।

স্মরণ করা যেতে পারে, বিগত শতাব্দীতে তুরস্কের খলিফা যখন বিধর্মীদের উপর বর্বরোচিত গণহত্যা চালাচ্ছিল, তখন মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর নেতৃত্বে হিন্দু নামধারী ভারতীয় সেক‍্যুলাররা, স্থানীয় জেহাদিদের সাথে মিলে ‘খেলাফত আন্দোলন’-এর নামে খলিফার কাফির-গণহত্যাকে কেবল সমর্থন জানিয়েই ক্ষান্ত হয়নি – হিন্দু নামধারী সেক‍্যুলাঙ্গাররা মুসলিম লীগের কন্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে তুরস্কের কাফির-ঘাতক খলিফা ও আফগান বাদশাকে ভারত আক্রমণে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল – উদ্দেশ্য ছিল হিন্দু জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া।

 

সুতরাং বিশ্বসভ্যতাকে রক্ষা করতে, বিশ্ব সম্প্রদায়ের উচিত, উগ্র সাম্প্রদায়িক তুরস্ক ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। পাশাপাশি উগ্রপন্থী জিহাদি ও পাকিস্তানের পা-চাটা দালাল – ভারতের হিন্দু নামধারী সেক‍্যুলারদের দমন করাও, এখন সময়ের দাবী।

আমাদের সাথে চলতে একটি লাইক দিয়ে রাখুন।ধন্যবাদ

লেখক-কৃত্তিবাস ওঝা,ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষক।
লেখকের আরো লেখা……