বাল্মীকি রামায়ণ

বাল্মীকি রামায়ণ কখন, কোথায় এবং কিসের উপর রচিত হয়েছিল এবং কিভাবে এতদিন নিরাপদ ছিল?

বাল্মীকি রামায়ণ কখন, কোথায় এবং কিসের উপর রচিত হয়েছিল এবং কিভাবে এতদিন নিরাপদ ছিল? বাল্মীকি রামায়ণ সংস্কৃত সাহিত্যের একটি প্রাথমিক মহাকাব্যযা সংস্কৃত ভাষা এটি অনুষ্টুপ পদে রচিত। রাম ও তাঁর চরিত্রের সর্বোত্তম ও ব্যাপক বর্ণনা কাব্যিক আকারে উপস্থাপিত হয়েছে।

মহর্ষি বাল্মীকি এটিকে ‘বাল্মিকি রামায়ণ’ বলা হয় কারণ এটি রচিত হয়েছিল মহর্ষি বাল্মীকি হতেই। বর্তমানে, রাম চরিত্রের উপর ভিত্তি করে উপলব্ধ সমস্ত গ্রন্থের উৎপত্তি মহর্ষি বাল্মীকির বাল্মীকি রামায়ণ থেকে। ‘বাল্মীকি রামায়ণ’-এর প্রতিষ্ঠাতা মহর্ষি বাল্মীকিকে ‘আদিকবি’ মনে করা হয়।

আর সেই কারণেই এই মহাকাব্যকে ‘আদিকাব্য’ বলে মনে করা হয়। এই মহাকাব্য ভারতীয় সংস্কৃতি সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ মাত্রার প্রতিফলন হওয়ায় সাহিত্যের আকারে এটি একটি নবায়নযোগ্য সাহিত্যে তহবিল।

আপনার এই প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে হিন্দু ধর্মের সবচেয়ে বড় দুটি ধর্মগ্রন্থের মধ্যে। যদিও অধিকাংশ মানুষ তার সাথে পরিচিত নয়। আশা করি উত্তরের শেষের দিকে, শুধু আপনার সন্দেহই দূর হবে না, আমরা সবাই হিন্দু ধর্মগ্রন্থের সেই দুটি ধর্মগ্রন্থের সম্পর্কেও জানতে পারব। তাই আগে আপনার সন্দেহের সমাধান খুঁজে নেওয়া যাক।

আপনার প্রশ্ন ন্যায্য যে বৈদিক যুগে এত জ্ঞান কিভাবে সঞ্চিত ছিল। তখন কোনো কাগজপত্র ছিল না।কাগজের অনেক আগে থেকেই শিলালিপি ও তালপাতা থাকত । যেখানে শিলালিপির সবকিছু পাথরে খোদাই করে সুরক্ষিত রাখা হয়েছিল, সেই সময় তালপাতা, গাছের বাকল এবং বিভিন্ন পাতায় লেখা হত।

বাল্মীকি রামায়ণ

আজ যেভাবে কাগজ ব্যবহার করা হয় সেভাবেই তালপাতা,শিলালিপি বিভিন্ন পাতা ব্যবহার হত। কিন্তু আমরা যদি মহাভারত, রামায়ণ এমনকি প্রাচীন বৈদিক যুগের কথা বলি, তাহলে সেই সময়ে কোন শিলালিপি এবং তাল পাতা ছিল না। তাহলে এত জ্ঞান কিভাবে সঞ্চিত হলো?

প্রাচীনকাল থেকেই হিন্দুধর্মে গুরু-শিষ্যের ঐতিহ্য রয়েছে । সেই সময়ে গুরু যে জ্ঞান অর্জন করতেন, তা শিষ্যদের মধ্যে বিতরণ করতেন। শিষ্যরা তাদের গুরুর কাছ থেকে যা শুনতেন তাকে বলা হত “শ্রুতি” ।শ্রুতি মানে শোনা। 

সেই জ্ঞান শুনে তারা মুখস্থ করার চেষ্টা করত। তন্মধ্যে যে সকল শিষ্য সর্বশ্রেষ্ঠ, যাঁরা সেই জ্ঞানকে সর্বাধিক স্মরণ করতে পেরেছিলেন, তাঁরা ঋষিপদ লাভ করেন। এই ধরনের উচ্চমার্গীয় শিষ্যদের বলা হত ঋষি বা মহর্ষি । প্রথম শ্রুতির জ্ঞান পরম পিতা ব্রহ্ম তাঁর ১৬ জন মনসপুত্রকে দিয়েছিলেন।

আজকাল, আমরা যে কাউকে মহর্ষি বলি, কিন্তু প্রাচীনকালে এই পদটি অর্জন করা খুব কঠিন ছিল এবং শুধুমাত্র কিছু নির্বাচিত অত্যন্ত মেধাবী লোককে মহর্ষি বলা হত। যেমন মহর্ষি বাল্মীকি, মহর্ষি বেদব্যাস ইত্যাদি। 

একইভাবে, মহর্ষি তাঁর গুরুর কাছ থেকে শোনার পরে যা কিছু স্মরণ করে রেখেছিলেন তাকে “স্মৃতি” বলা হয় । স্মৃতি মানে মনে রাখা বা স্মরণ করা। তারপর সেই শিষ্যরা তাদের যা কিছু জ্ঞান ছিল তা তাদের শিষ্যদের কাছে পৌঁছে দিলেন। এইভাবে এই জ্ঞান গুরু থেকে শিষ্যে স্থানান্তরিত হয়েছিল, তারপর সেই শিষ্যদের থেকে তাঁর শিষ্যদের কাছে। এটি সেই কৌশল যার মাধ্যমে প্রাচীন হিন্দু ধর্মের অগাধ জ্ঞান আজ পর্যন্ত সংরক্ষণ করা হয়েছে। 

আজ অবধি, হিন্দু ধর্মের সমস্ত ধর্মগ্রন্থ মূলত দুটি ভাগে বিভক্ত – “শ্রুতি” এবং “স্মৃতি” । শ্রুতি পরম এবং স্মৃতি তার পরে দ্বিতীয়। আজ যদি আমরা আধনিক কম্পিউটারে দিকে তাকায় সেখানেও “শ্রুতি” এবং “স্মৃতি” আমরা দেখতে পাই। “শ্রুতি” এবং “স্মৃতি” সেই পরমপরা আজও আধনিক যুগে সমান প্রযোজনীও।

১। শ্রুতি : এতে চারটি বেদ রয়েছে যা পরম পিতা ব্রহ্মার কাছ থেকে উদ্ভূত হয়েছে। এগুলো হল ঋগ্বেদ , সামবেদ , যজুর্বেদ এবং অথর্ববেদ । প্রতিটি বেদ চার ভাগে বিভক্ত। এগুলো হলো- কোড , ব্রাহ্মণ , আরণ্যক ও উপনিষদ । এই সব অনেক অংশ আছে. এছাড়াও শ্রুতির অধীনে চারটি উপবেদকেও বিবেচনা করা হয়। এগুলো হলো- আয়ুর্বেদ , নুরবেদ , গন্ধর্বেদ ও বিতর্ক ।

২। স্মৃতি : বেদ ছাড়া যা কিছু আছে সবই স্মৃতিতে আসে। রামায়ণ, মহাভারত, গীতা, 18টি পুরাণ, 18টি উপ-পুরাণ এবং অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ স্মৃতির অধীনে আসে।

আমাদের পূর্বপুরুষদের জন্য আমাদের যতটুকু গর্ব করা উচিত তা হল তারা এই অগাধ জ্ঞানের সাগরকে আগলে রেখেছিলেন, তা না হলে আমরাও আজ পশ্চিমা দেশগুলোর মতো অজ্ঞতায় নিমজ্জিত হতাম। তাই আপনার প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ (শ্রুতি) অধ্যয়ন করুন এবং আপনার পরবর্তী প্রজন্মের (স্মৃতি) কাছে প্রেরণ করুন।

আর পড়ুন…