যে ইতিহাস হয়নি জানা, টিপু সুলতান কি ইতিহাসের নায়ক, না খলনায়ক?

টিপু সুলতান

যে ইতিহাস হয়নি জানা, টিপু সুলতান কি ইতিহাসের নায়ক, না খলনায়ক? বর্তমান কর্ণাটক যা পূর্বের  নাম ছিলো  মহীশূর। এই রাজ্যেরী  শাসক ছিলেন ‘শের-ই-মহীশূর’  অর্থাৎ টিপু সুলতান ৷ হায়দার আলী ছিলেন টিপু সুলতান পিতা । যিনি মহীশূর রাজ্যের প্রধান সেনাপতি ছিলেন৷ হায়দার আলী পরবর্তীতে এই মহীশূরের শাসক হন। তিনি শাসন করতেন কাবেরী নদীর ধারে শ্রীরঙ্গপত্তনম গ্রামে ব-দ্বীপে নির্মিত একটি দূর্গ থেকে। হায়দার আলীর মৃত্যু পর তার রাজ্যের শাসক হন টিপু সুলতারন।

আমরা যদি টিপু সুলতানের বীরত্ব কথা বলা শুরু করি তবে, রাতের পর রাত কেটে যাবে তবু তা শেষ হবার না। এমনটাই আমরা আমাদের পাঠ্য পুস্তক থেকে শুরু করে সকল টিভি ধারাবাহিকে শুনে বা দেখে এসেছি। টিপু সুলতান ছিলেন ক্ষীপ্রতা, বীর যোদ্ধা,  বুদ্ধিমত্তা, দক্ষ আর কৌশলপূর্ণ শাসক। তাঁর শৌর্যবীর্যের বীরত্ব কারণে ইংরেজরা তার কাছে বার বার পরাজিত হয়েছে। এক ফকিরের দোয়ায় টিপু সুলতানের মা-বাবা তাকে পুত্র সন্তান হিসাবে পান। আর তার জন্যই টি

 

টিপু সুলতান কি ইতিহাসের নায়ক, না খলনায়ক?Picture search by google

পুর বার ঐ ফকিরের নাম অনুসারে টিপু রাখা হয়। ‘‘কানাড়ী ভাষা’’ মহীশূরের স্থানীয় ভাষায়, এই ভাষার ‘টিপু’ শব্দের অর্থ হলো বাঘ। আর হয় তো এই কারণেই তাঁকে ‘শের-ই-মহীশূর’ নামে ডাকা হত। ভারতবর্ষের ইতিহাসে তাকে স্বাধীনতাকামী বীরপুত্র বলা হয়ে থাক।

 

যে ইতিহাস হয়নি জানা কখনো

কি বন্ধ এটাই তো শুনে এসেছেন? এ পর্যন্ত হয়তো আপনাদের কাছে ঠিক আছে। এর থেকে বেশি বললে হয়তোবা আপনি বলবেন আরে, আরে তুমি কি বলছ। হ্যাঁ বন্ধু, আজ আমি আপনাদের এমন কিছু ইতিহাসের কথা বলব। যে ইতিহাস হয়নি জানা কখনো। এই ইতিহাসের পিছনেও কিছু ইতিহাস থেকে গেছে হয়তো আপনারা বা আমরা সেটা খেয়াল করে নি বা আমাদের খেয়াল করতে দেয়া হয়নি।

আজ আমি আপনাদেরকে সেই ইতিহাস কথা বলবো। খুব মন দিয়ে পড়বেন, প্রথমেই আমি আপনাদের একটা প্রশ্ন করি, আপনাদের কখনো কি মনে হয় নাই? যে হায়দার আলী অর্থাৎ টিপু সুলতানের বাবা কিভাবে শাসক হলেন বা রাজ্য পেলেন? এই প্রশ্নের মধ্যেই লুকিয়ে আছে অনেক অজানা প্রশ্নের উত্তর। হে বন্ধু, আরবদের সেই ৮০০ বছরের রাজত্বের সময় আর ভারত স্বাধীন হওয়ার পর থেকে আমাদেরকে সঠিক ইতিহাস জানানো হয়নি।

ইতিহাসের ভিলেন গুলোকেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমাদের কাছে হিরো হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। আর যারা হিরো ছিল তাদেরকে আমাদের থেকে বহু দূরে ঠেলে দেয়া হয়েছে। যেমন তৈমুর লং, তিতুমীর এর আজ ইতিহাসে হিরো। কিন্তু রানা প্রতাপ,শিবাজি,রলব সিং এরা ইতিহাসে নাই।

 

ইতিহাসে শুভঙ্করের ফাঁকি

যে ইতিহাস হয়নি জানা, টিপু সুলতান
                                                    Picture search by google

আজ যখন টিপু সুলতানের জীবনী লিখতে বসলাম। তখন আমার কাছে এক ইতিহাসে শুভঙ্করের ফাঁকি ধরা পড়ল। বেশিরভাগ বাংলা ব্লগ বা সাইট গুলোতে টিপু সুলতান সম্পর্কে যা লেখা আছে তা সবই মনগড়া বা নিজের চিন্তা ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে।

যারা টিপু সুলতানের জীবনী বা টিপু সুলতান সম্পর্কে লিখেছেন তারা বেশিরভাগই ৯০দশকের টিপু সুলতানের জীবনী উপর তৈরি সিরিয়াল থেকে  তথ্য সংগ্রহ করে তার সাথে মনের রং মিশিয়ে একটা টাইগার বা বাঘ টিপু সুলতানের রূপ দেয়ার চেষ্টা করেছেন। বাস্তবিক অর্থে বাংলায় যে সমস্ত ব্লাগ বা সাইটে, টিপু সুলতানের সম্পর্কে লিখা আছে। তা বেশির ভাগই লেখকের মনগড়া বা সেই নব্বই দশকের সিরিয়ালের কাহিনী।

 

বাস্তবিক অর্থে আমরা যদি দেখি এই লিখাগুলো বেশিরভাগই লিখেছে বাংলাদেশ বা বাংলাদেশের বংশগত মানুষেরা, যাদের সাথে টিপুর সরাসরি কোন যোগাযোগ ছিলো না কিন্তু ভালোবাসা ছিলো। ফলে ইতিহাসে, টিপু সুলতানের একটা স্বর্ণ খচিত ইতিহাস রচিত হয়েছে বাংলাতে। কিন্তু বাস্তবে আজ যখন ইতিহাস জানার জন্য বিভিন্ন ইংরেজি, হিন্দি ব্লক সাইটে বা বই পড়ালাম।

তখন আমার চক্ষু চড়ক গাছের রূপ নিল। একটা উদাহরণ দি, টিপু সুলতান সম্পর্কে বাংলা উইকিপিডিয়া যে তথ্য দিয়েছে তাতে অনেকটা গোজামিল দেয়ার মতন । দয়া করে একটু ঢুকে দেখে আসবেন বাংলা উইকিপিডিয়া টিপু সুলতানের বাবা হায়দার আলীর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সেই হায়দার আলী কিভাবে ক্ষামতা পেল তার সম্পকে কিছুই বলা হয়নি। আর হায়দার আলীর  সাথে যে লিংকটা দেয়া আছে। সে লিং কে ঢুকলে আপনি অবাক হয়ে যাবেন সেই হায়দার আলী নাকি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। কি বিশ্বাস হয় না? তাহলে এই লিংকে ঢুকে হায়দার আলীতে ক্লিক করুণ।

 

হায়দার আলী কিভাবে শাসক হলেন ?

আজ যখন এদের সঠিক ইতিহাস জানতে পাই। তখন আমরা দেখছি এরা এক একটা ছিল নর নামধারী নরপিচাশ। হ্যাঁ বন্ধু, আমরা এখন সেই মূল প্রশ্নে ফিরে যাব কিভাবে হায়দার আলী অর্থাৎ টিপু সুলতানের বাবা শাসক হলেন?এই প্রশ্ন ধরেই সামনের দিকে আলোচনা এগিয়ে নিতে চাই। টিভি সিরিয়াল থেকে তাহলে বলি- কোন এক রাতে হায়দার ও মহীশূর রাজা এক সাথে বসে মদ পান করছিল।

মদ পানের দিকে যদি লক্ষ করি তবে দেখা যায়। হায়দার আলী প্রথমে দু-এক ঢক খেলেও পরে খাওয়ার ভান করে পিছনে ফেলে দিচ্ছিল।তার পর মদ পান করে রাজা যখন মাতাল, কোন তাল নাই। তখন রাজাকে হায়দার আলী হত্যা করে দোতলা থেকে লাফ দিয়ে পালিয়ে যায়। তার পর কি হলো। যখন রাজাই নাই তবে আর কি করা। প্রধান সেনাপতি সব ক্ষমতা উৎস।

তাই হায়দার আলী হলো রাজা। আর তার ধারবাহিকতাই এলো টিপু।আমাদের ইতিহাস বইতে এই ইতিহাস কখনই বলা হয় নি। শুধুই টিপু সলতানকে মহান শাসক হিসাবে তুলে ধরার চেস্টা করা হয়েছে। আজ আমি আপনাদের কাছে তার কিছু অংশ তুলে ধরব মাত্র।

 

টিপু সুলতানে জন্মদিন পালন করার বিরোধীতা

ইতিহাসে টিপুকে নিয়ে বার বার প্রকৃত সত্য লুকিয়ে একটা মহান নেতা বানোর চেস্টা করেছে টিপুর পরবর্তী সকল শাকসরা। ২০১৫ সালের এক জন ভিএইচপি কর্মী টিপু সুলতানে জন্মদিন পালন করার বিরোধীতা করলে তাকে হত্যা করা হয়্। যেটা হলুদ পেড মিডিয়ার চোখে কোন অপরাধ ছিলো না।

ঐ বছরে মাঝা মাঝি গিরিশ কার্নাডের, যেনি কর্নাটকে একজন নাট্যকার ও মঞ্চাভিনেতা তিনি বলেন “বেঙ্গালুরুর কেম্পেগৌড়া ”আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তন করে মহান শাসক টিপু সুলতানের নামে, নাম করণ করা হোক। যার দরুণ ঐ সময় তার কথার প্রবল বিরোধিতা শুরু হয় সারাদেশে। কিন্তু পেড মিডিয়া এই বিষয়টাকে অসহিষ্ণু বলে প্রচার করে।

মানুষ কিভাবে টিপু সুলতানকে চিনতে শুরু

যে ইতিহাস হয়নি জানা, টিপু সুলতান কি ইতিহাসের নায়ক, না খলনায়ক?

“দ্য সোর্ড অব টিপু সুলতান” মনে আছে? হ্যাঁ, ৯০ দশকের একটা মন মাতানো মেগাধারাবাহিক। এই ধারবাহিকে মাধ্যমে সাধারণ মানুষ টিপু সুলতানকে প্রথম চিনতে শুরু করে।”দ্য সোর্ড অব টিপু সুলতান” লেখক ভগওয়ান এস গিদওয়ানি যিনি একজন সেক্যুলার।

তিনি তার মনে রং মিসিয়ে একটা আধা-কাল্পনিক উপন্যাস টিপু সুলতানকে নিয়ে লেখেন।তার দরুন এটা যখন প্রকাশ পায় তখন এটা মার্কেটে একটা ভালো মার্কেট পায়। বন্ধুরা মনে পড়ে তসলিমা নাসরিন সেই কথাটা ‘‘সব লেখকই ধান্ধাবাজ’’ সেক্যুলার গিদওয়ানি ঠিকই বুঝতে পেরেছিল যে ভারতে বেশির ভাগ মানুষ সেক্যুলার চর্চা করে। তাই তিনি উপন্যাসটি অনেকটা নিজের মন মতন রং তুলি দিয়ে একটা সেক্যুলা ঐতিহাসিক রুপ দেন। যার ফলে সাধারণ মানুষ তার উপন্যাসটি ভালো ভাবেই খায়।

এই জনপ্রিয় দেখে সঞ্জয় খান, ঋত্বিকের সাবেক স্ত্রীর বাবা  এতটাই মুগ্ধ হন যে, তিনি এই উপন্যাসটিকে একটা মেগাধারাবাহিক বানোর সিন্ধান্ত নেন। যার ফলে খান আর গিদওয়ানী মিলে তৈরি করে ফেলেন “দ্য সোর্ড অব টিপু সুলতান”। এই সোর্ড টাতে হিন্দুদের বিরুদ্ধেই ইংরেজদের  থেকেও বেশি ব্যবহার হয়।

 

“দ্য সোর্ড অব টিপু সুলতান”

এই মেগা ধারাবাহিকে সাথে বাস্তবে টিপুর বেশির ভাগ মিল থাকলে আমার হয়তো এতো কষ্ট করে আজ লিখতে হত না।যে বাস্তবের কথা আমি বলছি সেটা উপন্যাসে সাথে সম্পূর্ণ ছিল ভিন্ন। সেটা ভারতীয় হিন্দুদের জন্য বড়ই বেদনা দায়ক।সেই ধান্দাবাজ লেখক, আপনারা হয় আপত্তি করবেন এই লেখকে ধান্দাবাজ বললে। হ্যাঁ, সেই কথায় আসছি।

কেন আমি গিদওয়ানিকে ধান্দাবাজ বলছি তার ভাবটা এবার প্রকাশ করছি। গিদওয়ানি যখন টিপুকে নিয়ে উপন্যাস লিখতে বসেছিল তিনি অবশ্যই অনেক, অনেক গবেষণা করেছিলেন; তাই নয় কি? উপন্যাস থেকে বুঝা যায় তিনি এই ব্যাপারেও ভালেই সচেতন ছিল উপন্যাসে কোন, কোন বিষয় থাকবে আর কোন, কোন বিষয় থাকবে না।

গিদওয়ানি ভালই বুঝেছিলেন যে তার এই উপন্যাসের বড় বাজার ভারত তথা ভারতের আশে-পাশের দেশের জনসাধারণ। ভারতের সেকুলা ৮০% হিন্দু আর প্রতিবেশি দেশের ১০০% মানুষে যাতে খায় গিদওয়ানি তেমনি একটা রুপ দিয়েছিলেন।

উপন্যাসে গোজামিল

সব মিলে তিনি উপন্যাসটি এমন একটা রুপ দিয়েছেন যাতে হিন্দুরাও না চটে আবার মুসলিমারা যেন ঘোষা না হয়। যাতে করে দু-পক্ষই উপন্যাসটি ভাল ভাবে খায়। ফলে টিপুকে লেখক একজন যুদ্ধা, দেশপ্রেমিক, জনদরদী এবং ইংরেজ বিরোধী নেতা হিসাবে উঠিয়ে এনেছে। যার ফলে মূল কাহিনী থেকে যে বিষয়টা একেবারেই বাদ গিয়েছে। তা হলো টিপুর হিন্দু বিরোধীত তার সাথে হিন্দু নির্যাতনের বিষয় গুলো।

লেখাটির বাকি অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন