লেখক-কৃত্তিবাস ওঝা,ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষক।
পৃথিবীর বর্বর অগণতান্ত্রিক রাষ্ট্র শক্তিসমূহের নেতা চীন। এই অপশক্তি বিভিন্ন অপকৌশলে বিশ্বমানবতাকে ধ্বংস করে ফেলতে উদ্যত। সম্প্রতি চীন, ভারতীয় ভূখণ্ড দখল করার অপচেষ্টা চালাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী বীরত্বের সাথে আগ্রাসী চাইনিজ বাহিনীকে প্রতিহত করতে সমর্থ হয়েছে। রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে গিয়ে, ভারতের ২৩ জন বীর জওয়ান শহীদ হয়েছেন। ভারতীয় বাহিনীর পাল্টা হামলায় চীনের কমপক্ষে ৪৩ জন সৈন্য হতাহত হয়েছে।
চীন স্বীকার করেছে যে, তাদের বেশকিছু সৈন্য হতাহত হয়েছে ; কিন্তু চীনের নিহত সৈন্যের সংখ্যা, ভারতীয় নিহত সৈন্য সংখ্যার অধিক হওয়ায় – তারা নিহতের সংখ্যা প্রকাশ করছে না। নিজেদের অসভ্যতা ও ব্যর্থতা আড়াল করতে, চীন অভিযোগের আঙুল তুলেছে ভারতের দিকে। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, সোনিয়া গান্ধী-রাহুল গান্ধী- অধীর চৌধুরী সহ কংগ্রেসের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের নেতৃত্বে।
ভারতের সেক্যুলার শিবির চীনের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে কেবল যে ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলেছে – তা কিন্তু নয়; তারা সুস্পষ্টভাবে চীনের পক্ষ নিয়ে ভারত সরকারকে একেবারে ঠেসে ধরেছে। ভারতের এই সঙ্কটময় সময়ে বিজেপি-র নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার – চীনের আগ্রাসন প্রতিহত করতে যুদ্ধ প্রস্তুতি ও কূটনৈতিক তৎপরতা চালাবে; নাকি এই সমস্ত সেক্যুলার গৃহশত্রুদের সামলাবে!
ইতোপূর্বে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পরিচালিত সার্জিক্যাল স্ট্রাইক-এর সময় দেখা গেছে – ভারতের সেক্যুলার, বামপন্থী ও ধর্মযোদ্ধা লুঙ্গি বাহিনী একেবারে নখদন্ত বের করে পাকিস্তানের পক্ষে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ভারতের জনগণ এই বজ্জাত অপশক্তিকে এমন শিক্ষা দিয়েছে, এরা টানা দু’বার বিরোধীদলে বসার যোগ্যতাও হারিয়েছে। কংগ্রেস এই বিপর্যয় থেকে কোন শিক্ষা নিয়েছে বলে মনে হয় না। যদি শিক্ষা গ্রহণ করত, তাহলে নিজের দেশের বিরুদ্ধে গিয়ে বিদেশী শক্তির পদলেহন করত না। একসময় ভারতের জনগণ কংগ্রেসকে অন্ধভাবে বিশ্বাস করেছে;
কিন্তু সেই বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে কংগ্রেস-এর নেতৃত্ব অপদখল করা জহরলাল নেহেরু ও তার পারিবার, জাতির ক্রান্তিকালে ভারতীয় জনগণের চরমতম সর্বনাশ করে গেছে। অনেক কংগ্রেস সমর্থকের মুখে শুনেছি, আজকের দিনে কংগ্রেসের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা সোনিয়া গান্ধী কিংবা রাহুল গান্ধীর যোগ্যতা নেই – কংগ্রেসের একটি পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি হওয়ার। কিন্তু তারা পরিবারতন্ত্রের লেজ ধরে, পেট্রোডলারের ছত্রছায়ায় – হিন্দু জাতির সর্বনাশ সাধনের উদ্দেশ্যে বিশাল ষড়যন্ত্রের জাল বিছিয়ে বসে আছে।
সোনিয়া গান্ধীর প্রকৃত নাম এন্টোনিয়া মাইনো। তিনি একজন ইতালীয় বংশোদ্ভূত খ্রিস্টান। সঙ্গত কারণেই তিনি জন্মগতভাবে প্রচণ্ড হিন্দুবিদ্বেষী। রাহুল গান্ধীর পিতৃকুল ইরানি, আর মাতৃকুল ইতালীয়। অনেক এক্স-কংগ্রেসী ঠাট্টা করে তাকে বলে, ইরানি-ইতালীয় ক্রোস প্রডাক্ট এবং কংগ্রেসকে বলে, মা-ছেলে লিমিটেডের কোম্পানি।
পরিবারতন্ত্রের এই আবর্জনাগুলো যার রাজনৈতিক উত্তরাধিকার ধারণ করে – সেই জহরলাল নেহেরু নির্লজ্জ ভাবে যে চীনের চামচাগিরি করেছিলেন, সেই সম্পর্কে আলোকপাত করা বর্তমান পরিস্থিতিতে অত্যন্ত জরুরী। কমিউনিস্ট বিপ্লবের পর চীন এক ঘরে হয়ে পড়েছিল। জহরলাল নেহেরু তার ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে আন্তর্জাতিক দরবারে চীনকে গ্রহণযোগ্য করে তুলেছিলেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে ভারতকে ভেটো পাওয়ার সহ রাষ্ট্রসঙ্ঘের স্থায়ী সদস্যপদ গ্রহণ করার প্রস্তাব দিলে, নেহেরু সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে দাবী তুলেছিলেন – ভারতকে নয়, ভেটো পাওয়ার সহ রাষ্ট্রসঙ্ঘের স্থায়ী সদস্যপদ দিতে হবে চীনকে।
চীন যখন স্বাধীন দেশ তিব্বত দখল করে নেয়, তখন স্থলবেষ্টিত তিব্বতকে চীনের করাল গ্রাস উদ্ধার করতে, আমেরিকা ভারতের মাটি ব্যবহার করার অনুমতি চেয়েছিল। নেহেরু আমেরিকাকে সেই অনুমতি দেননি। নেহেরু যদি তখন আমেরিকাকে ভারতের মাটি ব্যবহার করার অনুমতি দিতেন, তাহলে আমেরিকা চীনের জবরদখল থেকে দক্ষিণ কোরিয়াকে যেভাবে উদ্ধার করেছিল – তিব্বতকেও একইভাবে উদ্ধার করতে পারত। তিব্বত যদি আজ স্বাধীন থাকতো, তাহলে ভারত ও চীনের মধ্যে কোন সীমান্ত থাকত না।
তার ফলে চীন ও ভারতের মধ্যে যেমন সীমান্ত সংঘর্ষের কোন সম্ভাবনা ছিল না ; তেমনি আজ চীনও পারত না তিব্বত ডিঙিয়ে লাদাখের ভূমির দিকে লোলুপ দৃষ্টি দিতে। কাজেই আজকের সমস্ত সমস্যার মূলে রয়েছে নেহেরুর ভণ্ডামি,দালালি ও অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত। সুতরাং নেহেরুর রাজনৈতিক উত্তরাধিকারের ধারক সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী,অধীর চৌধুরীদের নেতৃত্বে সেক্যুলার শিবির যে চীন-এর সমর্থনে গলা ফাঁটাবে-এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক।
ভালো লাগলে একটি লাইক।
লেখক-কৃত্তিবাস ওঝা
ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষক।
লেখকের অন্য আর লেখা